ঢাকা ০৪:৫১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৫ জুলাই ২০২৫, ১০ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

হবিগঞ্জ আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় কঠোর পদক্ষেপ পুলিশ সুপার

নবীগঞ্জ(হবিগঞ্জ)প্রতিনিধিঃ

নবীগঞ্জে সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া স্মরণকালের ভয়াবহ সংঘর্ষ, ভাঙচুর, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ও ডাবল মার্ডারের ঘটনায় উত্তপ্ত পরিস্থিতি তৈরি হয়। সামাজিক সম্প্রীতি ও শান্তিশৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে কঠোর অবস্থান নেন হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার এ.এন.এম. সাজেদুর রহমান। তার কার্যকর ভূমিকা ও সেনাবাহিনীর দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের সমন্বিত পদক্ষেপে ধীরে ধীরে স্বাভাবিকতা ফিরে আসে এলাকায়। জনমনে ফিরে আসে স্বস্তি।

এই সংঘর্ষের সূত্রপাত হয় দুই গণমাধ্যমকর্মী — আশাহিদ আলী আশা ও সেলিম তালুকদারের পারস্পরিক বিরোধ ও হাতাহাতির জেরে। বিষয়টি তিমিরপুর ও আনমনু—দুই গ্রামের মধ্যে গোষ্ঠীগত দ্বন্দ্বে রূপ নেয়। একপর্যায়ে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে দুই পক্ষ। এতে প্রাণ হারান দুইজন এবং আহত হন শতাধিক। সংঘর্ষ চলাকালে শহরের অন্তত ৫০টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের শিকার হয়। প্রায় ৪ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয় বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।

এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত পাঁচটি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে একটি মামলা পুলিশ বিশেষ ক্ষমতা আইনে দায়ের করে। মামলাগুলিতে অভিযুক্ত করা হয়েছে নবীগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ ১৬ জন সাংবাদিক এবং প্রায় ১০ হাজার সাধারণ মানুষকে।
ঘটনার পর সামাজিক সম্প্রীতি রক্ষায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে গঠন করা হয় একটি সালিশ কমিটি। দুই দফা বৈঠকের মাধ্যমে কমিটি বিচার কাঠামো নির্ধারণ করে এবং দুই পক্ষই সালিশি প্রক্রিয়া মেনে নিতে সম্মত হয়। বিচারকাজের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে উভয় পক্ষকে ২৫ লাখ টাকা করে মোট ৫০ লাখ টাকা জামানত জমা দেওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

বর্তমানে নবীগঞ্জে আতঙ্কের পরিবেশ কাটিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য ও স্বাভাবিক জনজীবন ফিরতে শুরু করেছে।

সিলেট মহানগর জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ও নবীগঞ্জ সালিশ কমিটির উপদেষ্টা সদস্য মো. শাহজাহান আলী জানান, “এতো বড় একটি ঘটনার সমাধানে প্রশাসনের পূর্ণ সহযোগিতা আমরা পেয়েছি। উভয় পক্ষকেই একটি কাঠামোর আওতায় এনে সালিশি মাধ্যমে বিষয়টি নিষ্পত্তি করতে চাই।”

এ বিষয়ে হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার এ.এন.এম. সাজেদুর রহমান বলেন, “ডাবল মার্ডারসহ এ সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত পাঁচটি মামলা নেওয়া হয়েছে। অপরাধী যেই হোক, তার বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতিতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কোন দল বা সংগঠনের পরিচয়ে নয়—আমরা দেখবো যাতে নিরপরাধ কেউ হয়রানির শিকার না হয়। যারা ভুল তথ্য দিয়ে নিরীহ মানুষকে ফাঁসাতে চাইবে, তাদের ব্যাপারে আমরা কঠোর। সালিশি প্রক্রিয়া আইনের আওতায় থাকলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহায়তা দেওয়া হবে।”

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

আপডেট সময় ০৪:৪৯:৫৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৫ জুলাই ২০২৫
১ বার পড়া হয়েছে

হবিগঞ্জ আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় কঠোর পদক্ষেপ পুলিশ সুপার

আপডেট সময় ০৪:৪৯:৫৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৫ জুলাই ২০২৫

নবীগঞ্জে সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া স্মরণকালের ভয়াবহ সংঘর্ষ, ভাঙচুর, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ও ডাবল মার্ডারের ঘটনায় উত্তপ্ত পরিস্থিতি তৈরি হয়। সামাজিক সম্প্রীতি ও শান্তিশৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে কঠোর অবস্থান নেন হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার এ.এন.এম. সাজেদুর রহমান। তার কার্যকর ভূমিকা ও সেনাবাহিনীর দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের সমন্বিত পদক্ষেপে ধীরে ধীরে স্বাভাবিকতা ফিরে আসে এলাকায়। জনমনে ফিরে আসে স্বস্তি।

এই সংঘর্ষের সূত্রপাত হয় দুই গণমাধ্যমকর্মী — আশাহিদ আলী আশা ও সেলিম তালুকদারের পারস্পরিক বিরোধ ও হাতাহাতির জেরে। বিষয়টি তিমিরপুর ও আনমনু—দুই গ্রামের মধ্যে গোষ্ঠীগত দ্বন্দ্বে রূপ নেয়। একপর্যায়ে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে দুই পক্ষ। এতে প্রাণ হারান দুইজন এবং আহত হন শতাধিক। সংঘর্ষ চলাকালে শহরের অন্তত ৫০টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের শিকার হয়। প্রায় ৪ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয় বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।

এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত পাঁচটি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে একটি মামলা পুলিশ বিশেষ ক্ষমতা আইনে দায়ের করে। মামলাগুলিতে অভিযুক্ত করা হয়েছে নবীগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ ১৬ জন সাংবাদিক এবং প্রায় ১০ হাজার সাধারণ মানুষকে।
ঘটনার পর সামাজিক সম্প্রীতি রক্ষায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে গঠন করা হয় একটি সালিশ কমিটি। দুই দফা বৈঠকের মাধ্যমে কমিটি বিচার কাঠামো নির্ধারণ করে এবং দুই পক্ষই সালিশি প্রক্রিয়া মেনে নিতে সম্মত হয়। বিচারকাজের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে উভয় পক্ষকে ২৫ লাখ টাকা করে মোট ৫০ লাখ টাকা জামানত জমা দেওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

বর্তমানে নবীগঞ্জে আতঙ্কের পরিবেশ কাটিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য ও স্বাভাবিক জনজীবন ফিরতে শুরু করেছে।

সিলেট মহানগর জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ও নবীগঞ্জ সালিশ কমিটির উপদেষ্টা সদস্য মো. শাহজাহান আলী জানান, “এতো বড় একটি ঘটনার সমাধানে প্রশাসনের পূর্ণ সহযোগিতা আমরা পেয়েছি। উভয় পক্ষকেই একটি কাঠামোর আওতায় এনে সালিশি মাধ্যমে বিষয়টি নিষ্পত্তি করতে চাই।”

এ বিষয়ে হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার এ.এন.এম. সাজেদুর রহমান বলেন, “ডাবল মার্ডারসহ এ সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত পাঁচটি মামলা নেওয়া হয়েছে। অপরাধী যেই হোক, তার বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতিতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কোন দল বা সংগঠনের পরিচয়ে নয়—আমরা দেখবো যাতে নিরপরাধ কেউ হয়রানির শিকার না হয়। যারা ভুল তথ্য দিয়ে নিরীহ মানুষকে ফাঁসাতে চাইবে, তাদের ব্যাপারে আমরা কঠোর। সালিশি প্রক্রিয়া আইনের আওতায় থাকলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহায়তা দেওয়া হবে।”