ঢাকা ১২:২৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম

হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালে শিশু ওয়ার্ডে রোগীর সংখ্যা ১০ গুণ

হবিগঞ্জ প্রতিনিধি

হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তীব্র গরমের কারণে ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়াসহ বিভিন্ন ধরনের ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত শিশুদের হাসাপাতালটিতে এনে ভর্তি করছেন অভিভাবকরা। রোগীর সংখ্যা এতোটাই বৃদ্ধি পেয়েছে যে নবজাতকদের বিশেষায়িত সেবা কেন্দ্র (স্ক্যানুতে) শয্যার বিপরীতে ১০ গুণ বেশি শিশু ভর্তি রয়েছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, হাসপাতালে শিশুরোগ বিশেষজ্ঞের দুটি পদ থাকলেও চিকিৎসক রয়েছেন একজন।

তারা শিশু ওয়ার্ডে সবসময় চিকিৎসা নিশ্চিত করে যাচ্ছেন। হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, তীব্র গরমের কারণে গত এক সপ্তাহে হাসপাতালটিতে ১৯ নবজাতক (২৮ দিন বয়সের মধ্যে) ও দুই শিশুর মৃত্যু হয়েছে।

সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) সরেজমিনে সদর হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, শিশু ওয়ার্ড, স্ক্যানু এবং বহির্বিভাগ সর্বত্রই শিশু রোগীতে ঠাসা। তাদের কারো হাতে ক্যানুলা ও কারো মুখে নেবুলাইলার লাগানো। বহির্বিভাগ শিশুদের কোলে নিয়ে চিকিৎসকের অপেক্ষায় থাকতে দেখা গেছে অভিভাবকদের। স্ক্যানুতে ১১টি শয্যার বিপরীতে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ছিল ৯৫ জন। এর লাগোয়া কটিও শিশু রোগী ও তাদের স্বজনদের উপস্থিতিতে কানায় কানায় পূর্ণ ছিল।

হাসপাতালের দায়িত্বরতরা জানান, স্ক্যানুতে রোজ একাধিক নবজাতকের মৃত্যু হচ্ছে। তাদের স্বজনদের কান্নায় দিনভর ওয়ার্ডের আশপাশে শোকের ছায়া লেগে থাকে। গত ১২ সেপ্টেম্বর থেকে গত ২০ সেপ্টেম্বর শুক্রবার পর্যন্ত স্ক্যানুতে মারা গেছে ১৯ নবজাতক। হাসপাতালের নার্সরা জানান, স্ক্যানুতে ১১টি ওয়ার্মার সিট রয়েছে। ১০ গুণ রোগী থাকায় সিট ভাগ করে ও শিফট করে শিশু রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। হবিগঞ্জ সদর উপজেলার বাগুনীপাড়া গ্রামের জনাব আলী জানান, চিকিৎসক বলেছেন, তার শিশুকে ৭২ ঘণ্টা থেরাপি দিতে। স্ক্যানুতে লম্বা লাইন থাকায় ৫ মিনিট পরপর থেরাপি দেওয়া হচ্ছে। ভেতরে নবজাতক ছটফট করতে থাকে। অনেক শিশুকে হবিগঞ্জ থেকে সিলেটে প্রেরণ করা হচ্ছে। বহির্বিভাগে যোগাযোগ করলে দায়িত্বরত চিকিৎসক মাসুদ রানা বলেন, ‘প্রতিদিন বহির্বিভাগে ৩০০ জনের বেশি রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন।

আবহাওয়া পরিবর্তনের জন্যেই রোগীর আধিক্য।’ হাসপাতালের পঞ্চম তলার শিশু ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায়, রোগী ও তাদের স্বজনদের উপস্থিতিতে তিল ধারণের ঠাঁই নেই। সেখানে শয্যা আছে ৫০টি। ভর্তি ছিল ২৪৭ শিশু। সেখানে শিশুদের চিকিৎসা দিচ্ছেলেন ডা. দেবাশীষ দাশ। তিনি জানান, প্রচণ্ড গরমে শিশুদের শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে।

এ কারণে শিশু ওয়ার্ডে রোগী বেড়েছে। স্ক্যানুতে রোগীর সংখ্যা বেশি হওয়ার কারণে এখানে যে নবজাতকরা আসেন তাদের অবস্থা সাধারণত অত্যন্ত খারাপ থাকে। অদ হাতে প্রসবের কারণেও নবজাতকরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তিনি আরও বলেন, শিশুরা যাতে গরমে না ঘামে তার জন্য যত্ন নিতে হবে। তাদের পাতলা সুতি কাপড় পড়াতে হবে। কোনভাবেই শিশুদের কক্ষে কয়েল ও এ্যারোসল ব্যবহার করা যাবে না।

হবিগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেলা সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আমিনুল ইসলাম সরকার বলেন, ‘হাসপাতালে শিশুরোগ বিশেষজ্ঞের দুটি পদ থাকলেও চিকিৎসক রয়েছেন একজন। তারপরও আমরা শিশু ওয়ার্ডে সবসময় চিকিৎসা নিশ্চিত করে যাচ্ছি।’

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

আপডেট সময় ০৫:৩৯:০৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪
২৩ বার পড়া হয়েছে

হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালে শিশু ওয়ার্ডে রোগীর সংখ্যা ১০ গুণ

আপডেট সময় ০৫:৩৯:০৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪

হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তীব্র গরমের কারণে ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়াসহ বিভিন্ন ধরনের ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত শিশুদের হাসাপাতালটিতে এনে ভর্তি করছেন অভিভাবকরা। রোগীর সংখ্যা এতোটাই বৃদ্ধি পেয়েছে যে নবজাতকদের বিশেষায়িত সেবা কেন্দ্র (স্ক্যানুতে) শয্যার বিপরীতে ১০ গুণ বেশি শিশু ভর্তি রয়েছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, হাসপাতালে শিশুরোগ বিশেষজ্ঞের দুটি পদ থাকলেও চিকিৎসক রয়েছেন একজন।

তারা শিশু ওয়ার্ডে সবসময় চিকিৎসা নিশ্চিত করে যাচ্ছেন। হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, তীব্র গরমের কারণে গত এক সপ্তাহে হাসপাতালটিতে ১৯ নবজাতক (২৮ দিন বয়সের মধ্যে) ও দুই শিশুর মৃত্যু হয়েছে।

সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) সরেজমিনে সদর হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, শিশু ওয়ার্ড, স্ক্যানু এবং বহির্বিভাগ সর্বত্রই শিশু রোগীতে ঠাসা। তাদের কারো হাতে ক্যানুলা ও কারো মুখে নেবুলাইলার লাগানো। বহির্বিভাগ শিশুদের কোলে নিয়ে চিকিৎসকের অপেক্ষায় থাকতে দেখা গেছে অভিভাবকদের। স্ক্যানুতে ১১টি শয্যার বিপরীতে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ছিল ৯৫ জন। এর লাগোয়া কটিও শিশু রোগী ও তাদের স্বজনদের উপস্থিতিতে কানায় কানায় পূর্ণ ছিল।

হাসপাতালের দায়িত্বরতরা জানান, স্ক্যানুতে রোজ একাধিক নবজাতকের মৃত্যু হচ্ছে। তাদের স্বজনদের কান্নায় দিনভর ওয়ার্ডের আশপাশে শোকের ছায়া লেগে থাকে। গত ১২ সেপ্টেম্বর থেকে গত ২০ সেপ্টেম্বর শুক্রবার পর্যন্ত স্ক্যানুতে মারা গেছে ১৯ নবজাতক। হাসপাতালের নার্সরা জানান, স্ক্যানুতে ১১টি ওয়ার্মার সিট রয়েছে। ১০ গুণ রোগী থাকায় সিট ভাগ করে ও শিফট করে শিশু রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। হবিগঞ্জ সদর উপজেলার বাগুনীপাড়া গ্রামের জনাব আলী জানান, চিকিৎসক বলেছেন, তার শিশুকে ৭২ ঘণ্টা থেরাপি দিতে। স্ক্যানুতে লম্বা লাইন থাকায় ৫ মিনিট পরপর থেরাপি দেওয়া হচ্ছে। ভেতরে নবজাতক ছটফট করতে থাকে। অনেক শিশুকে হবিগঞ্জ থেকে সিলেটে প্রেরণ করা হচ্ছে। বহির্বিভাগে যোগাযোগ করলে দায়িত্বরত চিকিৎসক মাসুদ রানা বলেন, ‘প্রতিদিন বহির্বিভাগে ৩০০ জনের বেশি রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন।

আবহাওয়া পরিবর্তনের জন্যেই রোগীর আধিক্য।’ হাসপাতালের পঞ্চম তলার শিশু ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায়, রোগী ও তাদের স্বজনদের উপস্থিতিতে তিল ধারণের ঠাঁই নেই। সেখানে শয্যা আছে ৫০টি। ভর্তি ছিল ২৪৭ শিশু। সেখানে শিশুদের চিকিৎসা দিচ্ছেলেন ডা. দেবাশীষ দাশ। তিনি জানান, প্রচণ্ড গরমে শিশুদের শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে।

এ কারণে শিশু ওয়ার্ডে রোগী বেড়েছে। স্ক্যানুতে রোগীর সংখ্যা বেশি হওয়ার কারণে এখানে যে নবজাতকরা আসেন তাদের অবস্থা সাধারণত অত্যন্ত খারাপ থাকে। অদ হাতে প্রসবের কারণেও নবজাতকরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তিনি আরও বলেন, শিশুরা যাতে গরমে না ঘামে তার জন্য যত্ন নিতে হবে। তাদের পাতলা সুতি কাপড় পড়াতে হবে। কোনভাবেই শিশুদের কক্ষে কয়েল ও এ্যারোসল ব্যবহার করা যাবে না।

হবিগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেলা সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আমিনুল ইসলাম সরকার বলেন, ‘হাসপাতালে শিশুরোগ বিশেষজ্ঞের দুটি পদ থাকলেও চিকিৎসক রয়েছেন একজন। তারপরও আমরা শিশু ওয়ার্ডে সবসময় চিকিৎসা নিশ্চিত করে যাচ্ছি।’