ঢাকা ০৪:২৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ৩ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

হবিগেঞ্জে আবারও সক্রিয় সিএনজি চোর ‘ল্যাংড়া তালেব’ সিন্ডিকেট চক্র

নিজস্ব প্রতিবেদক

বাহুবলে ধানের জমি থেকে সিএনজি চালকের মৃতদেহ উদ্ধার হলেও এখনও সন্ধান মিলেনি চোরাইকৃত সিএনজিটির। যদিও হত্যার রহস্য ও সিএনজি উদ্ধারে তৎপর রয়েছে বলে জানিয়েছে বাহুবল থানা পুলিশ। পুলিশ জানায়, যাত্রীবেশি ছিনতাইকারীরা তাকে হত্যা করে লাশ ধানের জমিতে ফেলে রাখে। খবর পেয়ে লাশটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

এদিকে, চালক হত্যা ও সিএনজি চুরির ঘটনায় জেলাজুড়ে শুরু হয়েছে তোলপাড়। যে কারনে ফের আলোচনায় এসেছে আবু তালেব ওরফে ল্যাংড়া তালেব সিএনজি চোর সিন্ডিকেট চক্র। এ সিএনজি চুরির ঘটনায় ওই চক্রটি জড়িত থাকতে পারে বলেও মন্তব্য করছেন অনেকেই। ফলে সন্দেহের তীর পুরোটাই দেখা দিয়েছে আবু তালেব ওরফে ল্যাংড়া তালেব চোর চক্রের বিরুদ্ধে। ওই চক্রের সদস্যদের গ্রেফতার করা হলেই এ ঘটনার রহস্য উদঘাটন হতে পারে বলে জানান স্থানীয়রা। জানা যায়, পেশাদার গাড়ি চোর চক্রের গ্যাং লিডার আবু তালেব।

সবাই যাকে ল্যাংড়া তালেব নামেই চেনে। চুনারুঘাট উপজেলার উবাহাটা গ্রামের আব্দুস সহিদের ছেলে ল্যাংড়া তালেব গাড়ি চোর চক্রের গ্যাং লিডার হিসেবে সারাদেশে পরিচিতি। তার বিরুদ্ধে সিলেট বিভাগের বিভিন্ন থানায় মামলা রয়েছে। সিলেট বিভাগের ৪ জেলা ও ব্রাম্মনবাড়িয়া জেলা নিয়ন্ত্রন করে ল্যাংড়া তালেব সিন্ডিকেট চক্র।

এছাড়া তার গ্যাংয়ে দেশজুড়ে রয়েছে ৫ শতাধিক সদস্য। এই গ্যাং প্রাইভেটকার, মোটরবাইক, সিএনজি অটোরিকশা চুরি করে। অভিযোগ রয়েছে এসব গাড়ি তারা কৌশলে আবার টাকার বিনিময়ে মালিককে ফেরত দেয়। অনেকটা মুক্তিপণের মতো। এমন অভিনব প্রতারণার মাধ্যমে চুরি অব্যাহত রেখেছিল ল্যাংড়া তালেব ও তার গ্রুপের সদস্যরা।

২০২১ সালের ২০ এপ্রিল ভোরে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব-৯) অভিযান চালিয়ে শায়েস্তাগঞ্জ পুরান বাজার এলাকা থেকে আবু তালেবকে বিদেশি রিভালবার, গুলি মাদকসহ গ্রেফতার করে। পরে তার দেয়া তথ্যমতে মাধবপুর থানা এলাকা থেকে ১টি সিএনজিসহ দুইজন ও বাহুবল এবং মৌলভীবাজার সদর থানা থেকে ৩টি চোরাই সিএনজিসহ অন্য ৩ জন আসামিকে গ্রেফতার করা হয়। পরবর্তীতে ছাড়া পেয়ে ছদ্মবেশে সারাদেশে ঘুরে বেড়ায় আবু তালেব। সর্বশেষ গেল বছরের ২৮ আগষ্ট চট্টগ্রামের হালি শহর এলাকা থেকে কুখ্যাত ডাকাত ও ১৮ মামলার পলাতক আসামি আবু তালেব ওরফে ল্যাংড়া তালেবকে (৪৮) গ্রেপ্তার করে র‌্যাব-৭।

এর আগে ২০১৯ সালের ২১ নভেম্বর ল্যাংড়া তালেবকে চার সহযোগীসহ গ্রেফতার করে পুলিশ। তখন তার কাছ থেকে পাঁচটি চোরাই সিএনজি অটোরিকশা উদ্ধার করা হয়। এসব ঘটনায় ল্যাং লিডার আবু তালেব চক্রের ভয়ে সিএনজি চালকদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দেয়। সম্প্রতি আবারও সক্রিয় হয়ে উঠেছে ল্যাংড়া তালেব সিন্ডিকেট চক্র।

জেলার বিভিন্ন এলাকায় চক্রের সদস্যরা সিএনজিসহ বিভিন্ন ধরনের গাড়ি চুরি অব্যাহত রেখেছে। উল্লেখ্য, গত শুক্রবার (২৭ সেপ্টেম্বর) সকালে উপজেলার লামাতাশি ইউনিয়নের রামপুর গ্রামের পার্শ্ববর্তী একটি ধানী জমি থেকে সিএনজি চালক মাসুক মিয়ার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এর আগে মরদেহ জমিতে পড়ে থাকতে দেখে পুলিশকে খবর দেন স্থানীয় লোকজন।

মাসুক মিয়া বানিয়াচং উপজেলার কাটখাল গ্রামের মৃত জিতু মিয়ার ছেলে। এ বিষয়ে বাহুবল মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) সোহেল মাহমুদ জানান-স্থানীয়রা খবর দিলে ধানী জমি থেকে সিএনজি চালকের উদ্ধার করা হয়।

পরে ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে তার লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে। ধারনা করা হচ্ছে, যাত্রীবেশি ছিনতাইকারীর তাকে কোন এক স্থানে হত্যা করে ধানী জমিতে লাশ ফেলে রাখে। বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে এবং ঘটনার রহস্য উদঘাটন ও সিএনজিটি উদ্ধারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

আপডেট সময় ০২:২৭:৪৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪
১১ বার পড়া হয়েছে

হবিগেঞ্জে আবারও সক্রিয় সিএনজি চোর ‘ল্যাংড়া তালেব’ সিন্ডিকেট চক্র

আপডেট সময় ০২:২৭:৪৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪

বাহুবলে ধানের জমি থেকে সিএনজি চালকের মৃতদেহ উদ্ধার হলেও এখনও সন্ধান মিলেনি চোরাইকৃত সিএনজিটির। যদিও হত্যার রহস্য ও সিএনজি উদ্ধারে তৎপর রয়েছে বলে জানিয়েছে বাহুবল থানা পুলিশ। পুলিশ জানায়, যাত্রীবেশি ছিনতাইকারীরা তাকে হত্যা করে লাশ ধানের জমিতে ফেলে রাখে। খবর পেয়ে লাশটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

এদিকে, চালক হত্যা ও সিএনজি চুরির ঘটনায় জেলাজুড়ে শুরু হয়েছে তোলপাড়। যে কারনে ফের আলোচনায় এসেছে আবু তালেব ওরফে ল্যাংড়া তালেব সিএনজি চোর সিন্ডিকেট চক্র। এ সিএনজি চুরির ঘটনায় ওই চক্রটি জড়িত থাকতে পারে বলেও মন্তব্য করছেন অনেকেই। ফলে সন্দেহের তীর পুরোটাই দেখা দিয়েছে আবু তালেব ওরফে ল্যাংড়া তালেব চোর চক্রের বিরুদ্ধে। ওই চক্রের সদস্যদের গ্রেফতার করা হলেই এ ঘটনার রহস্য উদঘাটন হতে পারে বলে জানান স্থানীয়রা। জানা যায়, পেশাদার গাড়ি চোর চক্রের গ্যাং লিডার আবু তালেব।

সবাই যাকে ল্যাংড়া তালেব নামেই চেনে। চুনারুঘাট উপজেলার উবাহাটা গ্রামের আব্দুস সহিদের ছেলে ল্যাংড়া তালেব গাড়ি চোর চক্রের গ্যাং লিডার হিসেবে সারাদেশে পরিচিতি। তার বিরুদ্ধে সিলেট বিভাগের বিভিন্ন থানায় মামলা রয়েছে। সিলেট বিভাগের ৪ জেলা ও ব্রাম্মনবাড়িয়া জেলা নিয়ন্ত্রন করে ল্যাংড়া তালেব সিন্ডিকেট চক্র।

এছাড়া তার গ্যাংয়ে দেশজুড়ে রয়েছে ৫ শতাধিক সদস্য। এই গ্যাং প্রাইভেটকার, মোটরবাইক, সিএনজি অটোরিকশা চুরি করে। অভিযোগ রয়েছে এসব গাড়ি তারা কৌশলে আবার টাকার বিনিময়ে মালিককে ফেরত দেয়। অনেকটা মুক্তিপণের মতো। এমন অভিনব প্রতারণার মাধ্যমে চুরি অব্যাহত রেখেছিল ল্যাংড়া তালেব ও তার গ্রুপের সদস্যরা।

২০২১ সালের ২০ এপ্রিল ভোরে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব-৯) অভিযান চালিয়ে শায়েস্তাগঞ্জ পুরান বাজার এলাকা থেকে আবু তালেবকে বিদেশি রিভালবার, গুলি মাদকসহ গ্রেফতার করে। পরে তার দেয়া তথ্যমতে মাধবপুর থানা এলাকা থেকে ১টি সিএনজিসহ দুইজন ও বাহুবল এবং মৌলভীবাজার সদর থানা থেকে ৩টি চোরাই সিএনজিসহ অন্য ৩ জন আসামিকে গ্রেফতার করা হয়। পরবর্তীতে ছাড়া পেয়ে ছদ্মবেশে সারাদেশে ঘুরে বেড়ায় আবু তালেব। সর্বশেষ গেল বছরের ২৮ আগষ্ট চট্টগ্রামের হালি শহর এলাকা থেকে কুখ্যাত ডাকাত ও ১৮ মামলার পলাতক আসামি আবু তালেব ওরফে ল্যাংড়া তালেবকে (৪৮) গ্রেপ্তার করে র‌্যাব-৭।

এর আগে ২০১৯ সালের ২১ নভেম্বর ল্যাংড়া তালেবকে চার সহযোগীসহ গ্রেফতার করে পুলিশ। তখন তার কাছ থেকে পাঁচটি চোরাই সিএনজি অটোরিকশা উদ্ধার করা হয়। এসব ঘটনায় ল্যাং লিডার আবু তালেব চক্রের ভয়ে সিএনজি চালকদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দেয়। সম্প্রতি আবারও সক্রিয় হয়ে উঠেছে ল্যাংড়া তালেব সিন্ডিকেট চক্র।

জেলার বিভিন্ন এলাকায় চক্রের সদস্যরা সিএনজিসহ বিভিন্ন ধরনের গাড়ি চুরি অব্যাহত রেখেছে। উল্লেখ্য, গত শুক্রবার (২৭ সেপ্টেম্বর) সকালে উপজেলার লামাতাশি ইউনিয়নের রামপুর গ্রামের পার্শ্ববর্তী একটি ধানী জমি থেকে সিএনজি চালক মাসুক মিয়ার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এর আগে মরদেহ জমিতে পড়ে থাকতে দেখে পুলিশকে খবর দেন স্থানীয় লোকজন।

মাসুক মিয়া বানিয়াচং উপজেলার কাটখাল গ্রামের মৃত জিতু মিয়ার ছেলে। এ বিষয়ে বাহুবল মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) সোহেল মাহমুদ জানান-স্থানীয়রা খবর দিলে ধানী জমি থেকে সিএনজি চালকের উদ্ধার করা হয়।

পরে ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে তার লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে। ধারনা করা হচ্ছে, যাত্রীবেশি ছিনতাইকারীর তাকে কোন এক স্থানে হত্যা করে ধানী জমিতে লাশ ফেলে রাখে। বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে এবং ঘটনার রহস্য উদঘাটন ও সিএনজিটি উদ্ধারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।