নবীগঞ্জের আউশকান্দি কিবরিয়া রোড সংস্কার যেন স্বপ্ন! আশা পূরণ হতে যাচ্ছে
জল্পনা- কল্পনার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ককের নবীগঞ্জ উপজেলার ব্যস্ততম জনবহুল আউশকান্দি ইউনিয়নের আউশকান্দি হীরাগঞ্জ বাজার হয়ে নিলাম বাজার পর্যন্ত কিবরিয়া রোড মেরামত কাজের অনুমোদন করেছেন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়। দীর্ঘদিন দিন ধরে আউশকান্দি- নিলাম বাজার পর্যন্ত রাস্তাটি কয়েক বছর ধরে বেহাল অবস্থা। এতে, প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক মিডিয়া, দেশ-বিদেশের বিভিন্ন অন লাইন পত্র- পত্রিকা সহ যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে রাস্তাটির বেহাল অবস্থা তুলে ধরলেও দেখার যেন কেউ নেই!
৫নং আউশকান্দি ইউনিয়ন ও ৪নং দীঘলবাক ইউনিয়নের কয়েক হাজার মানুষ এই রাস্তা দিয়ে চলাফিরা করতে গিয়ে নানান দূভোগ পুহাতে হচ্ছে।
এ ব্যাপারে ঐ এলাকার শতাধিক লোকজনের সাথে কথা হলে তারা চাপা ক্ষোভ নিয়ে বলেন, কত চেয়ারম্যান, মেম্বার, উপজলা চেয়ারম্যান সহ এমপি- মন্ত্রীরাও এসে দেখে গেলেন। সবাই আশ্বাস দিয়ে যান রাস্তা সংস্কারের। কিন্তু নির্বাচিত হওয়ার পর আর কেউই এই কিবরিয়া রোড (মরণ ফাঁদ) নামে পরিচিত রাস্তাটির সংস্কার করেন নি, বা কোন খোঁজ খবরও নেননি।
এতে আমরা নিরোপায় হয়ে এলাকার সচেতন মহলের লোকজন গণস্বাক্ষর করে বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন করলেও কোন কাজ হয়নি! তবে, সাবেক জনৈক এক এমপি থাকাকালীন সময়ে এলাকার মানুষ ঐ রাস্তাটি সংস্কারের দাবী করেছিলেন। এ দাবীর প্রেক্ষিতে এমপি বলেছিলেন, রাস্তা সংস্কার করতে পারি, যদি রাস্তার নামকরণ বদল করে আমার বাবার নামে হয় তাহলে আমি চেষ্টা করতে পারি! এমপির এমন কথা উপস্থিত লোকজন শুনে হতভম্ব হয়ে পড়েন।
পরে এ বিষয়টি এলাকার সর্ব সাধারণ একে পরের কাছ থেকে জানতে পেরে প্রতিবাদ মূখর হয়ে ওঠেন। এবং এলাকাবাসী ও স্থানীয় সিএনজি অটোরিক্সা শ্রমিকরা মিলে ভাঙ্গাঁ রাস্তাটিতে কংকিট, বালু ও মাঠি দিয়ে মেরামত করেন। এবং এমপি কর্তৃক কিবরিয়া রোডের নাম পরিবর্তন করার কথার জবাব অনেকেই যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকের মাধ্যমে এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।
খোঁজ নিয়ে আরো জানাযায়, গত সংসদ নির্বাচনের পূর্বে প্রচার- প্রচারনা করতে নবীগঞ্জের ব্যস্ততম জনবহুল আউশকান্দি ইউনিয়নের দেওতৈল গ্রাম সহ আশপাশ এলাকায় আসেন বর্তমান এমপি আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরী (ঈগল মার্কা) নিয়ে। এতে দেওতৈল গ্রামের দিকে গাড়ি নিয়ে প্রবেশ করার সময় রাস্তাটির বেহাল অবস্থা দেখে হতাশ হয়ে পড়েন।
গণ সংযোগকালের এক পর্যায়ে জুহরের আজান হয়। এতে তিনি ঐ গ্রামের একটি বাড়িতে নামাজ আদায় করে রাস্তা সংস্কারের জন্য
মোনাজত করেন। এবং তিনি বলেছিলেন, আমি যদি নির্বাচিত হই তাহলে এই এলাকার মানুষ রাস্তার জন্য আর কষ্ট করতে হবেনা।
আর যদি এমপি না ও হই তার পরেও আপনাদের এই রাস্তা সংস্কারের জন্য আমি কথা দিলাম কাজ করবো, ইনশাআল্লাহ।
তিনির এমন কথাবার্তা শুনে আউশকান্দি হীরাগঞ্জ বাজারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে কানাগুশা শুরু হয়। অনেকেই বলেন যে, নির্বাচন আসলেই এমন আশ্বাস সকল এমপিরা আমাদের কত দিয়েছেন।
কিন্তু নির্বাচিত হয়ে গেলে আমাদের কথা তারা ভূলে যান। দুটি ইউনিয়নের স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও এতিমখানার শিক্ষার্থী, গার্মেসকর্মী, শিক্ষক, শিক্ষিকা, এডভোকেট সহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার নারী- পুরুষের এক মাত্র যাতায়াতে রাস্তা এটি। গুরুতর অসুস্থ রোগী বা কোন গর্ববতী মহিলা এই রাস্তা দিয়ে আসা যাওয়া করলে তাদের গর্বের সন্তান সহ শারিরীক অবস্থা খারাপের চেয়েও খারাপ হয়ে যায়। সিএনজি অটোরিক্সা এই ভাঙ্গা রাস্তা দিয়ে চলাতে গিয়ে সারাদিন শ্রমিকরা যা রুজি করে তার চেয়েও বেশী গাড়ি মেরামত করতে ইঞ্জিনিয়ারকে দিতে হয়! এলাকার লোকজন এই রাস্তাটি আর সংস্কার হবে না ভেবে নিরাশ হয়ে গিয়েছিলেন।
কিন্তু এবার বিপুল ভোটে বিজয়ী হওয়ায় পর দেওতৈল সংখ্যালগু সম্পদায়ে লোকজনের জন্য অনুদান ও মিঠাপুর বটতলায় পূর্ণ নিমানের জন্য অনুদান নিয়ে আসেন। এতে সকলের উদ্দেশ্যে এমপি আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরী তিনির বক্তব্যে বলেন, দেওতৈল রাস্তাটির এমন অবস্থা দেখে আমার মনে অনেক কষ্ট হচ্ছিল। এতে আমি সকল দপ্তরে খোঁজ খবর নেই। কিন্তু এই রাস্তার কোন কাগজপত্র খোঁজে পাই নাই। রাস্তাটি কে বা কাহারা অন্য একটি রাস্তার সাথে ডুকিয়ে দিয়েছে! এর জন্য এটা এই রাস্তার কাজ হচ্ছেনা। আপনারা চিন্তা করবেন না। আমি এসব সংশোধন করে আপনাদের রাস্তাটির জন্য সরকারের কাছ থেকে অনুদান এনে দেব৷
এরই প্রেক্ষিতে গতকাল (১ জুলাই) সোমবার বিকালে হবিগঞ্জ-১ (নবীগঞ্জ-বাহুবল) আসনের সংসদ সদস্য আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরী’র ফেইসবুকে রাস্তা মেরামতের জন্য বরাদ্দের কপি সহ একটি পোস্ট করেন যে, নবীগঞ্জের আউশকান্দি ইউনিয়নের (আউশকান্দি- নিলাম বাজার) রাস্তা সংস্কার কাজের জন্য ৩,৬৯,৭৪,৬৮০ টাকা ও বাহুবল উপজেলার স্নানঘাট ইউনিয়নের (স্নানঘাট ইউপি অফিস থেকে রইসগঞ্জ বাজার) পর্যন্ত রাস্তা সংস্কারে ৭,৮৮,৫১,১৬৯ টাকা বরাদ্দের অনুমোদন পেয়েছেন। এতে, আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরী এমপি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানান। এবং তিনি নবীগঞ্জ- বাহুবল উপজেলার প্রতিটি কাজ পর্যায়ক্রমে সমাপ্ত করবেন বলেও পোষ্টে লিখেন। পরিশেষে তিনি সকলের কাছে দোয়া চান। ফেইসবুকে এমন পোষ্ট করার পরপরই দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে পড়ে। এতে, চতুরদিকে নানান আলোচনার জন্ম নেয়। এবং ঐ এলাকার লোকজন সাথে সাথে যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও এমপি আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরীকে অভিনন্দন জানিয়ে পোষ্ট করতে থাকেন। এ যেন এক স্বপ্ন বাস্তবায়ন হতে যাচ্ছে।