ঢাকা ০২:৩২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫, ২১ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
Logo শায়েস্তাগঞ্জ থানার সাবেক ওসি কামালের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা: সাংবাদিকসহ ২ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ Logo হবিগঞ্জে ছুরিকাঘাতে এসএসসি পরীক্ষার্থী নিহত Logo শেখ হাসিনাকে ৬ মাসের কারাদণ্ড Logo নবীগঞ্জে দুর্ঘটনা, নারীসহ নিহত ২ Logo মাধবপুর বাস ও পিকআপের মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত ১, আহত ২০ Logo হবিগঞ্জে ভুয়া চিকিৎসকের একমাসের কারাদণ্ড Logo স্বৈরাচার পতনে ১৬ বছর অপেক্ষা নয়, তাৎক্ষণিক প্রতিরোধ গড়ার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার Logo বাংলাদেশের মানুষ কল্পনাও করেনি যে কেবল চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে গড়ে ওঠা আন্দোলনই শেষ পর্যন্ত ‘জুলাই বিদ্রোহে’ রূপ নেবে। গত বছরের ১ জুলাই বাংলাদেশ এক অবিশ্বাস্য ঘটনার সাক্ষী হয়। এদিন শিক্ষার্থীদের ‘কোটা সংস্কার আন্দোলন’ ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে’ রূপ নেয়। এটি ছিল প্রায় ১৬ বছরের স্বৈরতান্ত্রিক আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের সূচনাবিন্দু। মানুষ কল্পনাও করেনি যে শুরুতে কেবল চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে গড়ে ওঠা আন্দোলনই শেষ পর্যন্ত ‘জুলাই বিদ্রোহে’ রূপ নেবে, শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ একত্রিত হয়ে সরকারের বিরুদ্ধে বৃহত্তর গণআন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়বে। ছাত্রদের এই অসন্তোষের সূচনা ঘটে ২০১৮ সালের কোটা বাতিলের সরকারি প্রজ্ঞাপনকে হাইকোর্ট কর্তৃক অবৈধ ঘোষণা করার রায়ের পর। সরকার ২০১৮ সালে তীব্র ছাত্র আন্দোলনের চাপে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিল করেছিল। কিন্তু হাইকোর্টের রায়ে ৫৬ শতাংশ কোটা পুনঃপ্রবর্তিত হয়, যাতে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য ৩০ শতাংশ, নারীদের জন্য ১০ শতাংশ, পশ্চাৎপদ জেলার জন্য ১০ শতাংশ, সংখ্যালঘুদের জন্য ৫ শতাংশ এবং প্রতিবন্ধীদের জন্য ১ শতাংশ বরাদ্দ করা হয়। ছাত্ররা এই ব্যবস্থাকে মেধাবীদের প্রতি বৈষম্য হিসেবে মনে করে প্রতিবাদে রাস্তায় নামে। সরকার প্রতিবাদকারীদের কঠোরভাবে দমন করতে চাইলে পরিস্থিতি বিদ্রোহে রূপ নেয়। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সরকারপন্থী সন্ত্রাসীরা একযোগে আক্রমণ চালালে অন্তত ১ হাজার ৪০০ জন নিহত এবং প্রায় ২০ হাজার জন আহত হয়। স্বাধীনতা পরবর্তী ইতিহাসে এটা ছিল সবচেয়ে নিষ্ঠুর দমনপীড়ন। অনেকে বিশ্বাস করেন, এই জুলাই বিদ্রোহের মধ্য দিয়েই ২০০৮ সাল থেকে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ সরকারের পতন অনিবার্য হয়ে ওঠে। ২০২৪ সালের ১ জুলাই এই আন্দোলন পুরো মাত্রায় শুরু হলেও এর গোড়াপত্তন ঘটে ৫ জুন। ওইদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থীরা হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় রাস্তায় নামে। আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক এবং বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া তার ‘জুলাই : মাতৃভূমি অথবা মৃত্যু’ বইতে লিখেছেন, ‘৫ জুন বিকেলে আমি ঢাকা মেডিকেল কলেজের পাশে চানখারপুলে স্কুটি মেরামত করাচ্ছিলাম। তখন ফেসবুকে দেখি- হাইকোর্ট কোটা পুনর্বহাল করেছে। মনে হলো ২০১৮ সালের অর্জনগুলো ধূলিসাৎ হয়ে যাচ্ছে।’ এরপর কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিয়ে এক বৈঠকের মাধ্যমে প্রতিবাদ কর্মসূচির সূচনা হয়। রাত সাড়ে ৭টায় ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী’ ব্যানারে একটি মিছিল বের হয় এবং সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মধ্যদিয়ে তা শেষ হয়। এই সমাবেশে তারা হাইকোর্টের রায়কে ‘মেধাবীদের সাথে তামাশা’ বলে প্রত্যাখ্যান করে। সমাবেশে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র, বর্তমানে জাতীয় নাগরিক পার্টি- এনসিপির প্রধান নাহিদ ইসলাম পরদিন ৬ জুন বিকেল ৫টায় রাজু ভাস্কর্যে সমাবেশের ঘোষণা দেন। প্রায় পাঁচ থেকে ছয় শ’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ওই মিছিলে অংশ নেয় এবং স্লোগান দেয়- ‘কোটা পদ্ধতি মানি না’, ‘হাইকোর্টের রায় মানি না’, ‘কোটা বাতিল করতেই হবে’। আসিফের বক্তব্যের সাথে একমত প্রকাশ করে নাহিদও ৫ জুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে তাদের প্রথম বৈঠকের কথা এবং কিভাবে সাধারণ শিক্ষার্থীদের আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আন্দোলনে সম্পৃক্ত করতে পেরেছিলেন তা স্মরণ করেন। নাহিদ পরে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বলেন, ‘আমরা ঈদুল আজহার ছুটির আগে মাত্র তিন দিন আন্দোলনের সুযোগ পেয়েছিলাম।’ ৬ জুন ঢাবি, জাহাঙ্গীরনগর, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, জগন্নাথসহ দেশের বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীরা কোটা বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ করে। ৯ জুন শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মিছিল করে অ্যাটর্নি জেনারেল বরাবর একটি স্মারকলিপি জমা দেয়। এর প্রেক্ষিতে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল বিভাগে রায় স্থগিত চেয়ে আবেদন করে। শুনানির দিন ধার্য হয় ৪ জুলাই। ১০ জুন আবারো মিছিল হয় এবং শিক্ষার্থীরা সরকারকে ৩০ জুনের মধ্যে ২০১৮ সালের প্রজ্ঞাপন পুনর্বহাল করতে আল্টিমেটাম দেয়, না হলে সর্বাত্মক আন্দোলন শুরু করার ঘোষণা দেয়। আসিফ স্মরণ করেন, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় ৩০ জুন পর্যন্ত ঈদের ছুটি ঘোষণা করেছিল, তাই আমরা সেই দিনটিকে আল্টিমেটামের সময়সীমা হিসেবে নির্ধারণ করি। আমরা সরকারকে সতর্কও করেছিলাম- যদি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আমাদের দাবি পূরণ না হয়, তাহলে আমরা আবার আন্দোলন শুরু করব।’ ৩০ জুন সরকারের পক্ষ থেকে কোনো ঘোষণা না আসায় ১ জুলাই ঢাবি, জগন্নাথ, জাবি, রাবি, চবি, বরিশাল ও কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারাদেশের শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নেমে পড়ে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কিছু সময়ের জন্য ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর ব্যানারে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার প্রাঙ্গণ থেকে একটি মিছিল বের করে, যা রাজু ভাস্কর্যে শেষ হয়। সমাবেশ থেকে নাহিদ ইসলাম ঘোষণা দেন, আগামী ৪ জুলাই পর্যন্ত দেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে শ্রেণিকক্ষে পাঠদান ও পরীক্ষার বর্জন চলবে। তিনি তিন দিনের কর্মসূচিও ঘোষণা করেন- ২ জুলাই দেশব্যাপী মহাসড়কে মিছিল, ৩ ও ৪ জুলাই রাজধানীর রাজু ভাস্কর্যে, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সাত সরকারি কলেজ এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতাধীন অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের সমাবেশ। সমাবেশে নাহিদ ইসলাম ঘোষণা দেন- ৪ জুলাই পর্যন্ত দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন চলবে। সেই সাথে তিনি চারটি দাবি উত্থাপন করেন- ১. দ্রুত কোটা সংস্কারে কমিশন গঠন, যেন পশ্চাৎপদ জনগোষ্ঠী উপকৃত হয়। ২. কোটা পূরণ না হলে মেধাভিত্তিক নিয়োগ নিশ্চিত করা। ৩. নিয়োগে একাধিকবার কোটা সুবিধা ব্যবহার বন্ধ করা। ৪. প্রশাসনে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা। Logo হবিগঞ্জে শুঁটকি উৎপাদনে ভাটা Logo নবীগঞ্জ মসজিদে মাইকিং করে পুলিশের ওপর হামলা, আসামি ছিনতাই আটক ১৩

ফের কোটা বাতিলের দাবিতে আন্দোলনে শিক্ষার্থীরা

শায়েস্তাগঞ্জের বাণী ডেস্ক ,

সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের দাবিতে ফের ফুঁসে উঠেছেন দেশের উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। এরই মধ্যে ক্যাম্পাসসহ আশপাশের এলাকায় দফায় দফায় বিক্ষোভ মিছিল ও ছাত্র সমাবেশসহ নানামুখী কর্মসূচি পালন করছেন তারা। সরকার সহসাই দাবি মেনে না নিলে আন্দোলনের উত্তাপ দ্রুত চারদিকে ছড়িয়ে দিতেও শিক্ষার্থীরা নানামুখী প্রস্তুতি নিচ্ছেন। কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে এর আলামত ইতোমধ্যে লক্ষ করা গেছে।

এ পরিস্থিতিতে দেশের উচ্চ শিক্ষাঙ্গন আবারও যে কোনো সময় নতুন করে অস্থির হয়ে উঠতে পারে এবং আন্দোলনের উত্তাপ ক্যাম্পাস পেরিয়ে রাজপথে গড়াতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন গোয়েন্দারা। এতে বহিরাগত সন্ত্রাসী ও রাজনৈতিক ক্যাডারদের অনুপ্রবেশ এবং আন্দোলনের নামে নাশকতা ও সহিংসতারও শঙ্কা রয়েছে। এ ব্যাপারে একটি গোয়েন্দা সংস্থা সরকারকে সতর্ক করেছে।

গোয়েন্দা এ তথ্যের ভিত্তিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এরই মধ্যে এ ব্যাপারে র‌্যাব ও পুলিশকে অ্যালার্ট থাকার নির্দেশ দিয়েছে। শিক্ষার্থীদের এ আন্দোলনকে পুঁজি করে কোনো বিশেষ মহল যাতে কোনো ষড়যন্ত্রের জাল বিছাতে না পারে সে ব্যাপারেও তাদের গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানোর তাগিদ দেওয়া হয়েছে। উসকানিদাতাদের চিহ্নিত করতেও নেওয়া হচ্ছে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি।

এদিকে সরকারি চাকরিতে কোটা পুনর্বহালের প্রতিবাদে মঙ্গলবার বিকাল পৌনে ৪টার দিকে শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন চাকরি প্রার্থী কয়েকশ’ শিক্ষার্থী। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে বিক্ষোভ মিছিল করেন। সেখানে প্রায় এক ঘণ্টা অবস্থানের পর ৫টার দিকে সরে যান। অবরোধের কারণে বাংলামোটর থেকে শাহবাগ, শাহবাগ থেকে সায়েন্সল্যাব, কাকরাইল সড়ক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়। পরে শাহবাগ থেকে মিছিলটি নিয়ে সরকারি চাকরি প্রত্যাশী শিক্ষার্থীরা ঢাবি উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নেন।এর আগে দুপুর ১২টার দিকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অনায্য ও অযৌক্তিক কোটা বাতিলের দাবিতে দ্বিতীয় দিনের মতো বিক্ষোভ মিছিল ও ছাত্র সমাবেশ করেন। পরে মিছিলটি রায় সাহেববাজার মোড় হয়ে বাহাদুর শাহ পার্ক প্রদক্ষিণ করে ক্যাম্পাসে ফিরে আসে। ক্যাম্পাসের প্রধান ফটকের সামনে অনুষ্ঠিত ওই ছাত্র সমাবেশে দাবি আদায় না হলে টানা আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়। সমাবেশে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়’ ব্যানারে শিক্ষার্থীরা আগের ৪ দফা দাবি পেশ করেন।
আন্দোলনের সংগঠক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘আমরা কোটা বাতিলে ২০১৮ সালের পরিপত্র পুনর্বহালের দাবি করছি। সরকার যদি যৌক্তিকভাবে কোটা সংস্কার করতে চায়, তবে আমরা তা মেনে নেব। কিন্তু আমরা সরকারি চাকরিতে কোটা পুনর্বহালের বিষয়টি মানি না।’

প্রসঙ্গত, সরকারি চাকরিতে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির ক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল করে জারি করা পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। এ বিষয়ে জারি করা রুল যথাযথ ঘোষণা করে গত ৫ জুন বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন। এ রায়ের ফলে সরকারি চাকরিতে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা পদ্ধতি বহাল থাকল।

হাইকোর্টের এই আদেশের পরপরই দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে প্রতিবাদ লক্ষ্য করা গেছে। হাইকোর্টের আদেশের পরদিন বিকালে কোটা পুনর্বহালের রায়ের প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে ওঠে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। এছাড়া জগন্নাথ, জাহাঙ্গীরনগর, খুলনা এবং বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়সহ আরও বেশ কিছু উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোটা পুনর্বহালের রায়ের প্রতিবাদে শিক্ষার্থীদের ফুঁসে ওঠার খবর পাওয়া যায়।

ঈদুল আজহার ছুটির কারণে শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ গ্রামে ফিরে যাওয়ায় কয়েক দিনের জন্য এ আন্দোলনে কিছুটা ভাটার টান ধরে। তবে ছুটি শেষে ক্যাম্পাসে ফেরার পর আবারও কোটাবিরোধী শিক্ষার্থীরা সংঘবদ্ধ হতে শুরু করেন। আন্দোলনে সবাইকে সম্পৃক্ত করতে কী ধরনের উদ্যোগ নেওয়া যায় তা নিয়ে নিজেরা দফায় দফায় আলোচনায় বসেন। বিগত ২০১৮ সালে কোটাবিরোধী আন্দোলনে সফলতার নেপথ্যের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো সামনে রেখে আগামী দিনের কর্মসূচি ঘোষণার প্রস্তুতি নেন।

আন্দোলনের সংগঠকরা জানান, বিগত আন্দোলনে যে সব ভুল-ত্রুটি ও দুর্বলতা ছিল, সেগুলো তারা আগেভাগেই চিহ্নিত করেছেন। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে যাতে বহিরাগত সন্ত্রাসী বা রাজনৈতিক ক্যাডাররা অনুপ্রবেশ করে কৌশলে তাণ্ডব চালিয়ে তা পণ্ড করতে না পারে সেদিকে তারা সর্বোচ্চ সতর্ক থাকবেন।

সংশ্লিষ্টদের ভাষ্য, নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের মাধ্যমে তারা তাদের দাবি আদায় করতে চান; কোনো ধরনের নৈরাজ্য সৃষ্টির মাধ্যমে নয়। এছাড়া কোনো রাজনৈতিক দল বা সংগঠন তাদের নিজেদের স্বার্থ-সিদ্ধির ফন্দি এঁটে এ আন্দোলনকে যাতে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে না পারে সেদিকেও তারা সবাইকে সতর্ক থাকার তাগিদ দেবেন।

তবে কোটাবিরোধী আন্দোলনের সংগঠকদের সতর্কতা কতটা কাজে লাগবে তা নিয়ে সন্দিহান গোয়েন্দারা। তাদের ভাষ্য, সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর দাবিতে এখনো আন্দোলন অব্যাহত রেখেছেন চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ প্রত্যাশী শিক্ষার্থীরা। এর সঙ্গে নতুন করে কোটা ইস্যুতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ বৃদ্ধি পেলে সংগঠকদের পক্ষে আন্দোলনে নৈরাজ্য নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হবে। এছাড়াও কোনো বিশেষ মহল মূল সংগঠকদের কৌশলে সরিয়ে দিয়ে এ আন্দোলনের নেতৃত্ব তাদের হাতে নিয়ে নিতে পারে। পরবর্তী সময়ে তারা হয়তো তাদের স্বার্থ হাসিলে বিশেষ ফন্দি আঁটবে। এদিকে শিক্ষাবিদরাও অনেকে এ নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, আন্দোলনের সাধারণ শিক্ষার্থীরা সম্পৃক্ত হলে এবং এর জোয়ার তীব্র হলে নানা ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হতে পারে। আর অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতি সামাল দিতে র‌্যাব-পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কঠোর হলে বিগত সময়ের কোটা আন্দোলনের মতো হতাহতের ঘটনা ঘটার আশঙ্কা রয়েছে।

প্রসঙ্গত, সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশি অ্যাকশন ও দফায় দফায় সংঘর্ষে ২০১৮ সালের ৮ এপ্রিল রাজধানীর শাহবাগ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। পুলিশের মুহুর্মুহু রাবার বুলেট, কাঁদানে গ্যাস, জলকামান ও লাঠিপেটার জবাবে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন আন্দোলনকারীরা। এ সময় শতাধিক শিক্ষার্থী এবং পাঁচজন পুলিশ আহত হন। রাত দেড়টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির বাসভবনের গেট ভেঙে ভেতরে আগুন দেন আন্দোলনকারীরা।

এদিকে পুলিশের আক্রমণে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে ঘটনাস্থল থেকে সরে যাওয়ার সময় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের মারধরের শিকার হন অনেকেই। ঘটনার ভিডিও চিত্র ধারণ করার সময় সংবাদকর্মীদেরও হেনস্তার শিকার হতে হয়। সংঘর্ষের সময় শাহবাগ থেকে টিএসসির মোড় পর্যন্ত সড়কের দু’ধারে টায়ার ও কাঠের টুকরোয় আগুন দেওয়া হয়। উপড়ে ফেলা হয় সড়ক বিভাজকের বেশ কয়েকটি গাছ। বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার কয়েকটি ভবনের গেটও ভেঙে ফেলেন আন্দোলনকারীরা।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, কোটাবিরোধী নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনে কোনো বাধা দেবে না আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তবে বিগত সময়ের তিক্ত অভিজ্ঞতা বিবেচনায় রেখে কোটাবিরোধী আন্দোলনের বিশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের ছক কষা হচ্ছে।

এ আন্দোলনে বহিরাগত কেউ কিংবা স্বার্থন্বেষী কোনো গোষ্ঠী নৈরাজ্য চালানোর চেষ্টা চালালে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ২০১৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে ৫৬ শতাংশ কোটা প্রচলিত ছিল। এর মধ্যে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা, ১০ শতাংশ নারী কোটা, অনগ্রসর জেলার বাসিন্দাদের জন্য ১০ শতাংশ কোটা, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষের জন্য ৫ শতাংশ আর প্রতিবন্ধীদের জন্য ১ শতাংশ আসন সংরক্ষিত ছিল। ওই বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কোটা সংস্কারের দাবিতে বড় বিক্ষোভ হয়। কোটাব্যবস্থার সংস্কার করে ৫৬ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনার দাবি জানিয়েছিলেন আন্দোলনকারীরা। পরে সে বছরের ৪ অক্টোবর কোটা বাতিলবিষয়ক পরিপত্র জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়৷

এর মাধ্যমে ৪৬ বছর ধরে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে যে কোটাব্যবস্থা ছিল, তা বাতিল হয়ে যায়। ২০২১ সালে সেই পরিপত্রের মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের অংশটিকে চ্যালেঞ্জ করে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান উচ্চ আদালতে রিট করেন। সেই রিটের রায়ে গত ৫ জুন পরিপত্রের ওই অংশ অবৈধ ঘোষণা করা হয়। এর পর থেকেই চাকরি প্রত্যাশী শিক্ষার্থীরা মাঠে নেমেছেন।

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

আপডেট সময় ১২:০৪:০৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৪ জুলাই ২০২৪
৮২ বার পড়া হয়েছে

বাংলাদেশের মানুষ কল্পনাও করেনি যে কেবল চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে গড়ে ওঠা আন্দোলনই শেষ পর্যন্ত ‘জুলাই বিদ্রোহে’ রূপ নেবে। গত বছরের ১ জুলাই বাংলাদেশ এক অবিশ্বাস্য ঘটনার সাক্ষী হয়। এদিন শিক্ষার্থীদের ‘কোটা সংস্কার আন্দোলন’ ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে’ রূপ নেয়। এটি ছিল প্রায় ১৬ বছরের স্বৈরতান্ত্রিক আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের সূচনাবিন্দু। মানুষ কল্পনাও করেনি যে শুরুতে কেবল চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে গড়ে ওঠা আন্দোলনই শেষ পর্যন্ত ‘জুলাই বিদ্রোহে’ রূপ নেবে, শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ একত্রিত হয়ে সরকারের বিরুদ্ধে বৃহত্তর গণআন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়বে। ছাত্রদের এই অসন্তোষের সূচনা ঘটে ২০১৮ সালের কোটা বাতিলের সরকারি প্রজ্ঞাপনকে হাইকোর্ট কর্তৃক অবৈধ ঘোষণা করার রায়ের পর। সরকার ২০১৮ সালে তীব্র ছাত্র আন্দোলনের চাপে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিল করেছিল। কিন্তু হাইকোর্টের রায়ে ৫৬ শতাংশ কোটা পুনঃপ্রবর্তিত হয়, যাতে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য ৩০ শতাংশ, নারীদের জন্য ১০ শতাংশ, পশ্চাৎপদ জেলার জন্য ১০ শতাংশ, সংখ্যালঘুদের জন্য ৫ শতাংশ এবং প্রতিবন্ধীদের জন্য ১ শতাংশ বরাদ্দ করা হয়। ছাত্ররা এই ব্যবস্থাকে মেধাবীদের প্রতি বৈষম্য হিসেবে মনে করে প্রতিবাদে রাস্তায় নামে। সরকার প্রতিবাদকারীদের কঠোরভাবে দমন করতে চাইলে পরিস্থিতি বিদ্রোহে রূপ নেয়। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সরকারপন্থী সন্ত্রাসীরা একযোগে আক্রমণ চালালে অন্তত ১ হাজার ৪০০ জন নিহত এবং প্রায় ২০ হাজার জন আহত হয়। স্বাধীনতা পরবর্তী ইতিহাসে এটা ছিল সবচেয়ে নিষ্ঠুর দমনপীড়ন। অনেকে বিশ্বাস করেন, এই জুলাই বিদ্রোহের মধ্য দিয়েই ২০০৮ সাল থেকে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ সরকারের পতন অনিবার্য হয়ে ওঠে। ২০২৪ সালের ১ জুলাই এই আন্দোলন পুরো মাত্রায় শুরু হলেও এর গোড়াপত্তন ঘটে ৫ জুন। ওইদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থীরা হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় রাস্তায় নামে। আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক এবং বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া তার ‘জুলাই : মাতৃভূমি অথবা মৃত্যু’ বইতে লিখেছেন, ‘৫ জুন বিকেলে আমি ঢাকা মেডিকেল কলেজের পাশে চানখারপুলে স্কুটি মেরামত করাচ্ছিলাম। তখন ফেসবুকে দেখি- হাইকোর্ট কোটা পুনর্বহাল করেছে। মনে হলো ২০১৮ সালের অর্জনগুলো ধূলিসাৎ হয়ে যাচ্ছে।’ এরপর কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিয়ে এক বৈঠকের মাধ্যমে প্রতিবাদ কর্মসূচির সূচনা হয়। রাত সাড়ে ৭টায় ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী’ ব্যানারে একটি মিছিল বের হয় এবং সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মধ্যদিয়ে তা শেষ হয়। এই সমাবেশে তারা হাইকোর্টের রায়কে ‘মেধাবীদের সাথে তামাশা’ বলে প্রত্যাখ্যান করে। সমাবেশে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র, বর্তমানে জাতীয় নাগরিক পার্টি- এনসিপির প্রধান নাহিদ ইসলাম পরদিন ৬ জুন বিকেল ৫টায় রাজু ভাস্কর্যে সমাবেশের ঘোষণা দেন। প্রায় পাঁচ থেকে ছয় শ’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ওই মিছিলে অংশ নেয় এবং স্লোগান দেয়- ‘কোটা পদ্ধতি মানি না’, ‘হাইকোর্টের রায় মানি না’, ‘কোটা বাতিল করতেই হবে’। আসিফের বক্তব্যের সাথে একমত প্রকাশ করে নাহিদও ৫ জুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে তাদের প্রথম বৈঠকের কথা এবং কিভাবে সাধারণ শিক্ষার্থীদের আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আন্দোলনে সম্পৃক্ত করতে পেরেছিলেন তা স্মরণ করেন। নাহিদ পরে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বলেন, ‘আমরা ঈদুল আজহার ছুটির আগে মাত্র তিন দিন আন্দোলনের সুযোগ পেয়েছিলাম।’ ৬ জুন ঢাবি, জাহাঙ্গীরনগর, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, জগন্নাথসহ দেশের বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীরা কোটা বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ করে। ৯ জুন শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মিছিল করে অ্যাটর্নি জেনারেল বরাবর একটি স্মারকলিপি জমা দেয়। এর প্রেক্ষিতে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল বিভাগে রায় স্থগিত চেয়ে আবেদন করে। শুনানির দিন ধার্য হয় ৪ জুলাই। ১০ জুন আবারো মিছিল হয় এবং শিক্ষার্থীরা সরকারকে ৩০ জুনের মধ্যে ২০১৮ সালের প্রজ্ঞাপন পুনর্বহাল করতে আল্টিমেটাম দেয়, না হলে সর্বাত্মক আন্দোলন শুরু করার ঘোষণা দেয়। আসিফ স্মরণ করেন, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় ৩০ জুন পর্যন্ত ঈদের ছুটি ঘোষণা করেছিল, তাই আমরা সেই দিনটিকে আল্টিমেটামের সময়সীমা হিসেবে নির্ধারণ করি। আমরা সরকারকে সতর্কও করেছিলাম- যদি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আমাদের দাবি পূরণ না হয়, তাহলে আমরা আবার আন্দোলন শুরু করব।’ ৩০ জুন সরকারের পক্ষ থেকে কোনো ঘোষণা না আসায় ১ জুলাই ঢাবি, জগন্নাথ, জাবি, রাবি, চবি, বরিশাল ও কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারাদেশের শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নেমে পড়ে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কিছু সময়ের জন্য ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর ব্যানারে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার প্রাঙ্গণ থেকে একটি মিছিল বের করে, যা রাজু ভাস্কর্যে শেষ হয়। সমাবেশ থেকে নাহিদ ইসলাম ঘোষণা দেন, আগামী ৪ জুলাই পর্যন্ত দেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে শ্রেণিকক্ষে পাঠদান ও পরীক্ষার বর্জন চলবে। তিনি তিন দিনের কর্মসূচিও ঘোষণা করেন- ২ জুলাই দেশব্যাপী মহাসড়কে মিছিল, ৩ ও ৪ জুলাই রাজধানীর রাজু ভাস্কর্যে, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সাত সরকারি কলেজ এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতাধীন অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের সমাবেশ। সমাবেশে নাহিদ ইসলাম ঘোষণা দেন- ৪ জুলাই পর্যন্ত দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন চলবে। সেই সাথে তিনি চারটি দাবি উত্থাপন করেন- ১. দ্রুত কোটা সংস্কারে কমিশন গঠন, যেন পশ্চাৎপদ জনগোষ্ঠী উপকৃত হয়। ২. কোটা পূরণ না হলে মেধাভিত্তিক নিয়োগ নিশ্চিত করা। ৩. নিয়োগে একাধিকবার কোটা সুবিধা ব্যবহার বন্ধ করা। ৪. প্রশাসনে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা।

ফের কোটা বাতিলের দাবিতে আন্দোলনে শিক্ষার্থীরা

আপডেট সময় ১২:০৪:০৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৪ জুলাই ২০২৪

সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের দাবিতে ফের ফুঁসে উঠেছেন দেশের উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। এরই মধ্যে ক্যাম্পাসসহ আশপাশের এলাকায় দফায় দফায় বিক্ষোভ মিছিল ও ছাত্র সমাবেশসহ নানামুখী কর্মসূচি পালন করছেন তারা। সরকার সহসাই দাবি মেনে না নিলে আন্দোলনের উত্তাপ দ্রুত চারদিকে ছড়িয়ে দিতেও শিক্ষার্থীরা নানামুখী প্রস্তুতি নিচ্ছেন। কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে এর আলামত ইতোমধ্যে লক্ষ করা গেছে।

এ পরিস্থিতিতে দেশের উচ্চ শিক্ষাঙ্গন আবারও যে কোনো সময় নতুন করে অস্থির হয়ে উঠতে পারে এবং আন্দোলনের উত্তাপ ক্যাম্পাস পেরিয়ে রাজপথে গড়াতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন গোয়েন্দারা। এতে বহিরাগত সন্ত্রাসী ও রাজনৈতিক ক্যাডারদের অনুপ্রবেশ এবং আন্দোলনের নামে নাশকতা ও সহিংসতারও শঙ্কা রয়েছে। এ ব্যাপারে একটি গোয়েন্দা সংস্থা সরকারকে সতর্ক করেছে।

গোয়েন্দা এ তথ্যের ভিত্তিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এরই মধ্যে এ ব্যাপারে র‌্যাব ও পুলিশকে অ্যালার্ট থাকার নির্দেশ দিয়েছে। শিক্ষার্থীদের এ আন্দোলনকে পুঁজি করে কোনো বিশেষ মহল যাতে কোনো ষড়যন্ত্রের জাল বিছাতে না পারে সে ব্যাপারেও তাদের গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানোর তাগিদ দেওয়া হয়েছে। উসকানিদাতাদের চিহ্নিত করতেও নেওয়া হচ্ছে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি।

এদিকে সরকারি চাকরিতে কোটা পুনর্বহালের প্রতিবাদে মঙ্গলবার বিকাল পৌনে ৪টার দিকে শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন চাকরি প্রার্থী কয়েকশ’ শিক্ষার্থী। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে বিক্ষোভ মিছিল করেন। সেখানে প্রায় এক ঘণ্টা অবস্থানের পর ৫টার দিকে সরে যান। অবরোধের কারণে বাংলামোটর থেকে শাহবাগ, শাহবাগ থেকে সায়েন্সল্যাব, কাকরাইল সড়ক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়। পরে শাহবাগ থেকে মিছিলটি নিয়ে সরকারি চাকরি প্রত্যাশী শিক্ষার্থীরা ঢাবি উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নেন।এর আগে দুপুর ১২টার দিকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অনায্য ও অযৌক্তিক কোটা বাতিলের দাবিতে দ্বিতীয় দিনের মতো বিক্ষোভ মিছিল ও ছাত্র সমাবেশ করেন। পরে মিছিলটি রায় সাহেববাজার মোড় হয়ে বাহাদুর শাহ পার্ক প্রদক্ষিণ করে ক্যাম্পাসে ফিরে আসে। ক্যাম্পাসের প্রধান ফটকের সামনে অনুষ্ঠিত ওই ছাত্র সমাবেশে দাবি আদায় না হলে টানা আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়। সমাবেশে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়’ ব্যানারে শিক্ষার্থীরা আগের ৪ দফা দাবি পেশ করেন।
আন্দোলনের সংগঠক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘আমরা কোটা বাতিলে ২০১৮ সালের পরিপত্র পুনর্বহালের দাবি করছি। সরকার যদি যৌক্তিকভাবে কোটা সংস্কার করতে চায়, তবে আমরা তা মেনে নেব। কিন্তু আমরা সরকারি চাকরিতে কোটা পুনর্বহালের বিষয়টি মানি না।’

প্রসঙ্গত, সরকারি চাকরিতে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির ক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল করে জারি করা পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। এ বিষয়ে জারি করা রুল যথাযথ ঘোষণা করে গত ৫ জুন বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন। এ রায়ের ফলে সরকারি চাকরিতে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা পদ্ধতি বহাল থাকল।

হাইকোর্টের এই আদেশের পরপরই দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে প্রতিবাদ লক্ষ্য করা গেছে। হাইকোর্টের আদেশের পরদিন বিকালে কোটা পুনর্বহালের রায়ের প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে ওঠে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। এছাড়া জগন্নাথ, জাহাঙ্গীরনগর, খুলনা এবং বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়সহ আরও বেশ কিছু উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোটা পুনর্বহালের রায়ের প্রতিবাদে শিক্ষার্থীদের ফুঁসে ওঠার খবর পাওয়া যায়।

ঈদুল আজহার ছুটির কারণে শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ গ্রামে ফিরে যাওয়ায় কয়েক দিনের জন্য এ আন্দোলনে কিছুটা ভাটার টান ধরে। তবে ছুটি শেষে ক্যাম্পাসে ফেরার পর আবারও কোটাবিরোধী শিক্ষার্থীরা সংঘবদ্ধ হতে শুরু করেন। আন্দোলনে সবাইকে সম্পৃক্ত করতে কী ধরনের উদ্যোগ নেওয়া যায় তা নিয়ে নিজেরা দফায় দফায় আলোচনায় বসেন। বিগত ২০১৮ সালে কোটাবিরোধী আন্দোলনে সফলতার নেপথ্যের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো সামনে রেখে আগামী দিনের কর্মসূচি ঘোষণার প্রস্তুতি নেন।

আন্দোলনের সংগঠকরা জানান, বিগত আন্দোলনে যে সব ভুল-ত্রুটি ও দুর্বলতা ছিল, সেগুলো তারা আগেভাগেই চিহ্নিত করেছেন। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে যাতে বহিরাগত সন্ত্রাসী বা রাজনৈতিক ক্যাডাররা অনুপ্রবেশ করে কৌশলে তাণ্ডব চালিয়ে তা পণ্ড করতে না পারে সেদিকে তারা সর্বোচ্চ সতর্ক থাকবেন।

সংশ্লিষ্টদের ভাষ্য, নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের মাধ্যমে তারা তাদের দাবি আদায় করতে চান; কোনো ধরনের নৈরাজ্য সৃষ্টির মাধ্যমে নয়। এছাড়া কোনো রাজনৈতিক দল বা সংগঠন তাদের নিজেদের স্বার্থ-সিদ্ধির ফন্দি এঁটে এ আন্দোলনকে যাতে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে না পারে সেদিকেও তারা সবাইকে সতর্ক থাকার তাগিদ দেবেন।

তবে কোটাবিরোধী আন্দোলনের সংগঠকদের সতর্কতা কতটা কাজে লাগবে তা নিয়ে সন্দিহান গোয়েন্দারা। তাদের ভাষ্য, সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর দাবিতে এখনো আন্দোলন অব্যাহত রেখেছেন চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ প্রত্যাশী শিক্ষার্থীরা। এর সঙ্গে নতুন করে কোটা ইস্যুতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ বৃদ্ধি পেলে সংগঠকদের পক্ষে আন্দোলনে নৈরাজ্য নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হবে। এছাড়াও কোনো বিশেষ মহল মূল সংগঠকদের কৌশলে সরিয়ে দিয়ে এ আন্দোলনের নেতৃত্ব তাদের হাতে নিয়ে নিতে পারে। পরবর্তী সময়ে তারা হয়তো তাদের স্বার্থ হাসিলে বিশেষ ফন্দি আঁটবে। এদিকে শিক্ষাবিদরাও অনেকে এ নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, আন্দোলনের সাধারণ শিক্ষার্থীরা সম্পৃক্ত হলে এবং এর জোয়ার তীব্র হলে নানা ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হতে পারে। আর অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতি সামাল দিতে র‌্যাব-পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কঠোর হলে বিগত সময়ের কোটা আন্দোলনের মতো হতাহতের ঘটনা ঘটার আশঙ্কা রয়েছে।

প্রসঙ্গত, সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশি অ্যাকশন ও দফায় দফায় সংঘর্ষে ২০১৮ সালের ৮ এপ্রিল রাজধানীর শাহবাগ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। পুলিশের মুহুর্মুহু রাবার বুলেট, কাঁদানে গ্যাস, জলকামান ও লাঠিপেটার জবাবে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন আন্দোলনকারীরা। এ সময় শতাধিক শিক্ষার্থী এবং পাঁচজন পুলিশ আহত হন। রাত দেড়টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির বাসভবনের গেট ভেঙে ভেতরে আগুন দেন আন্দোলনকারীরা।

এদিকে পুলিশের আক্রমণে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে ঘটনাস্থল থেকে সরে যাওয়ার সময় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের মারধরের শিকার হন অনেকেই। ঘটনার ভিডিও চিত্র ধারণ করার সময় সংবাদকর্মীদেরও হেনস্তার শিকার হতে হয়। সংঘর্ষের সময় শাহবাগ থেকে টিএসসির মোড় পর্যন্ত সড়কের দু’ধারে টায়ার ও কাঠের টুকরোয় আগুন দেওয়া হয়। উপড়ে ফেলা হয় সড়ক বিভাজকের বেশ কয়েকটি গাছ। বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার কয়েকটি ভবনের গেটও ভেঙে ফেলেন আন্দোলনকারীরা।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, কোটাবিরোধী নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনে কোনো বাধা দেবে না আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তবে বিগত সময়ের তিক্ত অভিজ্ঞতা বিবেচনায় রেখে কোটাবিরোধী আন্দোলনের বিশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের ছক কষা হচ্ছে।

এ আন্দোলনে বহিরাগত কেউ কিংবা স্বার্থন্বেষী কোনো গোষ্ঠী নৈরাজ্য চালানোর চেষ্টা চালালে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ২০১৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে ৫৬ শতাংশ কোটা প্রচলিত ছিল। এর মধ্যে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা, ১০ শতাংশ নারী কোটা, অনগ্রসর জেলার বাসিন্দাদের জন্য ১০ শতাংশ কোটা, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষের জন্য ৫ শতাংশ আর প্রতিবন্ধীদের জন্য ১ শতাংশ আসন সংরক্ষিত ছিল। ওই বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কোটা সংস্কারের দাবিতে বড় বিক্ষোভ হয়। কোটাব্যবস্থার সংস্কার করে ৫৬ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনার দাবি জানিয়েছিলেন আন্দোলনকারীরা। পরে সে বছরের ৪ অক্টোবর কোটা বাতিলবিষয়ক পরিপত্র জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়৷

এর মাধ্যমে ৪৬ বছর ধরে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে যে কোটাব্যবস্থা ছিল, তা বাতিল হয়ে যায়। ২০২১ সালে সেই পরিপত্রের মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের অংশটিকে চ্যালেঞ্জ করে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান উচ্চ আদালতে রিট করেন। সেই রিটের রায়ে গত ৫ জুন পরিপত্রের ওই অংশ অবৈধ ঘোষণা করা হয়। এর পর থেকেই চাকরি প্রত্যাশী শিক্ষার্থীরা মাঠে নেমেছেন।