ঢাকা ০৯:০৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সিলেটে যান্ত্রিক যানে উধাও পালকি!

কোম্পানীগঞ্জ সিলেট প্রতিনিধি

সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় বিয়ের বর ও কনে বহনের ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন বাহন পালকি এখন আর আগের মতো দেখা যায় না। একসময় বিয়ে ছাড়াও অসুস্থ রোগীদের যাতায়াতসহ বিভিন্ন কাজে ব্যবহার হতো পালকি। সময়ের ব্যবধানে এখন প্রায় বিলুপ্ত।

পালকি এখন স্থান পেয়েছে জাদুঘরে প্রদর্শনের জন্য। পালকির সেই ঐতিহ্যময় ব্যবহার ক্রমে গ্রাস করেছে যান্ত্রিক সভ্যতার বিদেশি নানান রংয়ের বাহারি গাড়ি। পালকি বহনের দৃশ্য এখন যেন স্বপ্ন। সেই সঙ্গে হারিয়ে গেছে ছন্দমাখা পালকি বহনের গান।
এক বা দু’জন যাত্রী নিয়ে পালকি ব্যবহার করা হতো। এটিকে কাঁধে তুলে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে নিয়ে যেত ৪ বা ৮ জন বাহক।

সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিরা কোথাও যাতায়াত করলে পালকি ছাড়া চলতোই না যেন। তাদের সামান্য পথটুকু চলতেও পালকি লাগতো। তখনকার দিনের বিয়ে এবং পালকি এ যেন ছিলো একই সুতোয় গাঁথা। আমাদের দেশে এমন এক সময় গেছে যখন বিয়ের অনুষ্ঠান পালকি ছাড়া হতোই না, পালকি ছাড়া বিয়ে অনুষ্ঠান সম্পন্ন হলে যেন নিজেদের হতভাগা বলে মনে করা হতো। নতুন বউ তুলে দেয়া হতো বরের বাড়িতে পালকিতে করে। আবার এ বিয়ে উপলক্ষে পালকি সাজানো হতো মনোলোভা ও দৃষ্টিনন্দন সৌন্দর্যে। সব পরিবারে আবার পালকি ছিলো না। তখনকার দিনে বিত্তশালী ও উচ্চবংশীয় লোকদের প্রত্যেকের বাড়িতে পালকি ছিল বংশের মর্যাদার প্রতীক। সাধারণ পরিবারের লোকদের বাড়িতে পালকি ছিল না বললেই চলে। তাই বলে তাদের উৎসব পালকি ছাড়া হতো তা কিন্তু নয়। সে সময়ে কিছু কিছু মানুষ এ পালকি নিয়ে ব্যবসা করতো, মানে পালকি বানিয়ে অর্থের বিনিময়ে চুক্তিতে দিতো। এ জন্য পালকি মালিকদের দিতে হতো মোটা অংকের কড়ি বা টাকা অথবা তার সমতুল্য অন্য কোনো জিনিস।

পালকিতে চড়ে বর ও কনে বাড়িতে পৌঁছামাত্র ধান ও দূর্বা ছিটিয়ে তাদের বরণ করত এবং বাড়ির লোকজন কাদামাটি ও রং ছিটিয়ে উল্লাস করত। একসময় পালকির পাশাপাশি যাতায়াতের মাধ্যম হিসেবে স্টিমার ও রেলগাড়ি চালু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পালকির ব্যবহার কমতে শুরু হয়। থেকে যায় শুধু যেকোনো পারিবারিক বিয়ে সাদির অনুষ্ঠানে এই পালকির প্রচলন। যুগে যুগে ক্রমশ সড়ক ব্যবস্থার উন্নতি হতে থাকে। বাড়তে থাকে বেবিট্যাক্সি, ট্যাক্সি, বাস, রিকশার মতন নানারকম ছোটবড় যানবাহন। এসব ছোটবড় যানবাহন বাড়ার সাথে সাথে, দিনদিন পালকির মতো পশুচালিত গরুর গাড়ি, ঘোড়ার গাড়ি, মহিষের গাড়ি যানবাহনগুলোও বন্ধ হয়ে যায়। আধুনিককালে পালকির ব্যবহার নেই বললেই চলে। যুগের সাথে তালমিলিয়ে সবকিছুই হচ্ছে আধুনিক। হারিয়ে যাচ্ছে, পুরানো সবকিছু। ঐতিহ্যবাহী এই চাকাবিহীন যানবাহন পালকিও কোনোএকদিন চিরতরে হারিয়ে যাবে মনে হয়।

কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার পাড়ুয়া লামাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা ময়না মিয়া জানান, ৩০-৩৫ বছর আগে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় পালকীর দল ছিল এবং বিয়ের সময় পালকি ব্যবহার করা হতো। বিয়েসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের জন্য কয়েকদিন আগ থেকেই পালকির বাহকদের ও মালিকদের বুকিং করে রাখা হতো।যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত ও সিএনজি এবং গাড়ির প্রচলন হওয়ার পর থেকে পালকির ব্যবহার উঠে গেছে। রাতে বিবাহ হতো আর ভোরবেলা পালকিতে করে বর ও কনেকে ৮ জন বাহক দীর্ঘ রাস্তা পাড়ি দিয়ে বাড়িতে পৌঁছে দিত। সেই পালকির আনন্দ আর নেই। বর্তমান প্রজন্মের কাছে পালকি শব্দটি এখন ইতিহাস।

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

আপডেট সময় ০৭:৪৭:২৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৫ জুলাই ২০২৪
৩৪ বার পড়া হয়েছে

সিলেটে যান্ত্রিক যানে উধাও পালকি!

আপডেট সময় ০৭:৪৭:২৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৫ জুলাই ২০২৪

সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় বিয়ের বর ও কনে বহনের ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন বাহন পালকি এখন আর আগের মতো দেখা যায় না। একসময় বিয়ে ছাড়াও অসুস্থ রোগীদের যাতায়াতসহ বিভিন্ন কাজে ব্যবহার হতো পালকি। সময়ের ব্যবধানে এখন প্রায় বিলুপ্ত।

পালকি এখন স্থান পেয়েছে জাদুঘরে প্রদর্শনের জন্য। পালকির সেই ঐতিহ্যময় ব্যবহার ক্রমে গ্রাস করেছে যান্ত্রিক সভ্যতার বিদেশি নানান রংয়ের বাহারি গাড়ি। পালকি বহনের দৃশ্য এখন যেন স্বপ্ন। সেই সঙ্গে হারিয়ে গেছে ছন্দমাখা পালকি বহনের গান।
এক বা দু’জন যাত্রী নিয়ে পালকি ব্যবহার করা হতো। এটিকে কাঁধে তুলে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে নিয়ে যেত ৪ বা ৮ জন বাহক।

সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিরা কোথাও যাতায়াত করলে পালকি ছাড়া চলতোই না যেন। তাদের সামান্য পথটুকু চলতেও পালকি লাগতো। তখনকার দিনের বিয়ে এবং পালকি এ যেন ছিলো একই সুতোয় গাঁথা। আমাদের দেশে এমন এক সময় গেছে যখন বিয়ের অনুষ্ঠান পালকি ছাড়া হতোই না, পালকি ছাড়া বিয়ে অনুষ্ঠান সম্পন্ন হলে যেন নিজেদের হতভাগা বলে মনে করা হতো। নতুন বউ তুলে দেয়া হতো বরের বাড়িতে পালকিতে করে। আবার এ বিয়ে উপলক্ষে পালকি সাজানো হতো মনোলোভা ও দৃষ্টিনন্দন সৌন্দর্যে। সব পরিবারে আবার পালকি ছিলো না। তখনকার দিনে বিত্তশালী ও উচ্চবংশীয় লোকদের প্রত্যেকের বাড়িতে পালকি ছিল বংশের মর্যাদার প্রতীক। সাধারণ পরিবারের লোকদের বাড়িতে পালকি ছিল না বললেই চলে। তাই বলে তাদের উৎসব পালকি ছাড়া হতো তা কিন্তু নয়। সে সময়ে কিছু কিছু মানুষ এ পালকি নিয়ে ব্যবসা করতো, মানে পালকি বানিয়ে অর্থের বিনিময়ে চুক্তিতে দিতো। এ জন্য পালকি মালিকদের দিতে হতো মোটা অংকের কড়ি বা টাকা অথবা তার সমতুল্য অন্য কোনো জিনিস।

পালকিতে চড়ে বর ও কনে বাড়িতে পৌঁছামাত্র ধান ও দূর্বা ছিটিয়ে তাদের বরণ করত এবং বাড়ির লোকজন কাদামাটি ও রং ছিটিয়ে উল্লাস করত। একসময় পালকির পাশাপাশি যাতায়াতের মাধ্যম হিসেবে স্টিমার ও রেলগাড়ি চালু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পালকির ব্যবহার কমতে শুরু হয়। থেকে যায় শুধু যেকোনো পারিবারিক বিয়ে সাদির অনুষ্ঠানে এই পালকির প্রচলন। যুগে যুগে ক্রমশ সড়ক ব্যবস্থার উন্নতি হতে থাকে। বাড়তে থাকে বেবিট্যাক্সি, ট্যাক্সি, বাস, রিকশার মতন নানারকম ছোটবড় যানবাহন। এসব ছোটবড় যানবাহন বাড়ার সাথে সাথে, দিনদিন পালকির মতো পশুচালিত গরুর গাড়ি, ঘোড়ার গাড়ি, মহিষের গাড়ি যানবাহনগুলোও বন্ধ হয়ে যায়। আধুনিককালে পালকির ব্যবহার নেই বললেই চলে। যুগের সাথে তালমিলিয়ে সবকিছুই হচ্ছে আধুনিক। হারিয়ে যাচ্ছে, পুরানো সবকিছু। ঐতিহ্যবাহী এই চাকাবিহীন যানবাহন পালকিও কোনোএকদিন চিরতরে হারিয়ে যাবে মনে হয়।

কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার পাড়ুয়া লামাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা ময়না মিয়া জানান, ৩০-৩৫ বছর আগে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় পালকীর দল ছিল এবং বিয়ের সময় পালকি ব্যবহার করা হতো। বিয়েসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের জন্য কয়েকদিন আগ থেকেই পালকির বাহকদের ও মালিকদের বুকিং করে রাখা হতো।যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত ও সিএনজি এবং গাড়ির প্রচলন হওয়ার পর থেকে পালকির ব্যবহার উঠে গেছে। রাতে বিবাহ হতো আর ভোরবেলা পালকিতে করে বর ও কনেকে ৮ জন বাহক দীর্ঘ রাস্তা পাড়ি দিয়ে বাড়িতে পৌঁছে দিত। সেই পালকির আনন্দ আর নেই। বর্তমান প্রজন্মের কাছে পালকি শব্দটি এখন ইতিহাস।