অনিয়মের বেড়াজালে নবীগঞ্জ কলেজ শিক্ষক-ছাত্রলীগকে দায় দিচ্ছেন অধ্যক্ষ
নানা অনিয়মের আবর্তে বন্দি নবীগঞ্জ সরকারী কলেজে চলছে দৈন্যদশা। নিয়মনীতীর বাইরে গিয়ে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ফি আদায়, সরকারী নির্দেশনা না মানা, শিক্ষকদের মধ্যে দলাদলি, শিক্ষার্থীদের অনৈতিক সুযোগ দেওয়াসহ লাখ লাখ টাকা তছরুপের অভিযোগ উঠেছে প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ ফজলুর রহমানের বিরুদ্ধে।
তবে নিজেকে বাচাঁতে কখনো কলেজের অন্যন্য শিক্ষকদের আবার কখনো কলেজ ছাত্রলীগের উপর সকল দূর্নীতির দায় দিচ্ছেন তিনি।
অভিযোগ রয়েছে, যোগাদনের পর থেকেই শিক্ষার্থীদের থেকে নিয়ম বহির্ভূতভাবে অতিরিক্ত টাকা আদায় থেকে শুরু করে একের পর এক মনগড়া সিদ্ধান্ত, অদূরদর্শিতা ও নানা অনিয়মের কারণে দীর্ঘদিন ধরেই কলেজের অধ্যক্ষ ফজলুর রহমানকে নিয়ে চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা।
অতিরিক্ত টাকা আদায়, রশিদ ছাড়াই অর্থ আদায়, বিভিন্ন খাত দেখিয়ে শিক্ষার্থীদের অর্থ আত্মসাৎ, কলেজ পুকুরের অর্থ আত্নসাৎ, শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি এবং নানা সুযোগ সুবিধায় বানিজ্যসহ অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে।
সবমিলিয়ে কলেজ শিক্ষার্থীদের নিরব ক্ষোভ ক্রমান্বয়ে বিক্ষোভে রূপ নিতে যাচ্ছে। এ সকল অনিয়মের কারণে কলেজ অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামারও হমকি দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
সার্বিক বিষয়ে কলেজটির বর্তমান ও সাবেক অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থীর সাথে কথা হলে তারা জানান, কলেজে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা আদায়ে চলছে তুঘলকি যতসব কাজ। কোন খাতে কিসের টাকা জমা নেয়া হচ্ছে সেই তথ্য জানেন না অধিকাংশ শিক্ষার্থীরা। ভর্তি-ফরম পূরণের খাত ভিত্তিক ফি তালিকা থাকলেও তা অনুসরণ না করে মোট টাকা বসিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
একই ফি একাধিকবার আদায়েরও প্রমাণ আছে বলে দাবি শিক্ষার্থীদের। সর্বশেষ অনার্সের ফরম পূরণ ও একাদশ শ্রেণীর ভর্তিতে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের অভিযোগও রয়েছে অধ্যক্ষর বিরুদ্ধে। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে মাসিক ২০-২৫ টাকা হারে বেতন নেওয়ার কথা থাকলেও ২০০ থেকে ৫০০ টাকা করে মাসিক বেতন নেওয়া হচ্ছে। এছাড়া ভর্তিসহ অন্যান্য ফিও নেওয়া হচ্ছে অতিরিক্ত।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, কলেজ ক্যাম্পাসে বাহরগিতদের উৎপাত ও ছাত্র রাজনীতির কারনে অনেক শিক্ষার্থীই কলেজে যেতে চান না। অধ্যক্ষের ছত্র ছায়ায় থেকেই বেপরোয়া হয়ে উঠেছে কলেজে আসা বহিরাগতরা।
কলেজ শিক্ষার্থীদের নেই কোন স্টুডেন্ট আইডি কার্ড। ৪ বছর ধরে কলেজে পড়ালেখা করলেও অনেকেই এখনও কলেজ থেকে আইডি কার্ড পান নি। কলেজ খোলা থাকলে এবং শিক্ষার্থীরা ক্লাসে আসলেও কলেজে ক্লাস হয়না। অনেকেই ক্লাস করার জন্য কলেজে আসলেও হতাশ হয়ে ফিরে যান।
সার্বিক বিষয়ে কলেজের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের মাঝে ক্ষোভের সঞ্চার হলে গত ৬ আগষ্ট মঙ্গলবার ও গতকাল ৭ আগষ্ট বুধবার কলেজ অধ্যক্ষর সাথে অনির্ধারিত এক আলোচনায় বসেন তারা। এসময় অধ্যক্ষ ফজলুর রহমান সকল অভিযোগ স্বীকার করলেও ৬ আগষ্ট (মঙ্গলবার) সকল দায় দেন কলেজের শিক্ষক শাহীন আহমেদ ও মুজাম্মিল আলী শিকদারের উপড়।
পরদিন গতকাল ৭ আগষ্ট বুধবার তাদের উপস্থিতিতে তাকে এসব বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি সকল দায় দেন কলেজ ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের উপর। কলেজের অধ্যক্ষসহ এসব অনিয়ম-দূর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত সকলের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী জানিয়েছেন শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও সচেতন মহল।