ঢাকা ১২:২২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ৩ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

চুনারুঘাটে দিন-দুপুরে বনাঞ্চল উজাড় করছে হাতিমারা চা বাগান কর্তৃপক্ষ

চুনারুঘাট (হবিগঞ্জ) প্রতিনিধি

চুনারুঘাটে কালেঙ্গা বনাঞ্চলের রশিদপুর বন বিটের বাঁশের ঝাঁড় কেটে উজাড় করে নিচ্ছে হাতিমারা চা বাগান কর্তৃপক্ষ। এতে বনাঞ্চলে থাকা বন্যপ্রানী গুলো প্রবেশ করছে লোকালয়ে। দিন দিন ওই বনাঞ্চল থেকে বন্যপ্রাণী গুলো চলে যাওয়ায় হুমকির মুখে পড়েছে জীববৈচিত্র। এছাড়া বন্যপ্রাণীর আক্রমনের শিকার হচ্ছে ওই বনাঞ্চলের পাশ^বর্তী এলাকায় থাকা পশু পাখি ও হাঁস মোরগ। অন্যদিকে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী বন্যপ্রাণীদের নির্বিচারে হত্যা করছে। এদিকে, সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে সাংবাদিকরা বনাঞ্চলে গেলে বিষয়টি জানতে পারেন হাতিমারা চা বাগানের ম্যানেজার গোলাম মহিউদ্দিন। এক পর্যায়ে তিনি সাংবাদিকদের খবর দিয়ে তার অফিসে নিয়ে যান। এ সময় সাংবাদিকদের দেখেই উত্তেজিত হয়ে উঠেন। কিভাবে সাংবাদিকরা প্রবেশ করলো বলে শুরুতেই প্রশ্ন ছুড়ে দেন তিনি। এক পর্যায়ে তিনি অশোভন আচরণ করতে থাকেন। ক্ষিপ্ত হয়ে বলেন, ‘হবিগঞ্জের অনেক সাংবাদিকরা আমার কাছে আসে। তাদের সাথে আমার সখ্যতা রয়েছে। আমি কোন সাংবাদিকদের ভয় পাই না। চাইলেই বাগানের শ্রমিকদের দিয়ে আপনাদের ক্ষতি করতে পারি’। স্থানীয় সূত্র জানায়, কালেঙ্গা বনাঞ্চলের একাংশে থাকা পাহাড় গুলোতে বাঁশের ঝাঁড় দিন দুপুরে কেটে নিচ্ছে হাতিমারা চা বাগানের লোকজন। অভিযোগ রয়েছে, হাতিমারা চা বাগান কর্তৃপক্ষ স্থানীয় একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছে। আর এ সিন্ডিকেট চক্রটি বাঁশ কেটে বাগানের বেড়া ও চা গাচের চারায় খুঁটি হিসেবে ব্যবহার করছে। পাশাপাশি বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি করে আসছে। এছাড়া দীর্ঘদিন ধরে বাগান কর্তৃপক্ষের এই বাঁশ কাটার কার্যক্রম অব্যাহত থাকায় বনাঞ্চলে থাকা বন বিড়াল, হরিণ, বন্য শুকর, বানর, মুখপোড়া হনুমান, লজ্জাবতী বানর, উল্লুক, বনরুই, গুইসাপসহ বিভিন্ন প্রজাতির বন্যপ্রাণী চলে যাচ্ছে। এতে করে ওইসব বন্যপ্রাণী পাশ^বর্তী এলাকায় প্রবেশ করছে। আর এসব বন্যপ্রানীর তান্ডবে পাশ^বর্তী দারাগাও, সুতাপাড়া, পুরান হাতিমারা, পুরান টিলা, কামাইছড়াসহ কয়েকটি এলাকার ফসলের জমি নষ্ট হচ্ছে অন্যদিকে বাড়ি-ঘরে থাকা হাস-মোরগসহ অন্যান্য পশু পাখি বন্যপ্রাণীর আক্রমনে শিকার হচ্ছে। পাশাপাশি অনেক সময় ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী এসব বন্য প্রানীদের নির্বিচারে মেরে ফেলছে। ফলে বনাঞ্চল থেকে দিন দিন প্রানী গুলো বিলুপ্ত হওয়ায় হুমকির মুখে পড়েছে জীববৈচিত্র। গতকাল শুক্রবার সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, কালেঙ্গা বনাঞ্চলের বনদূর্গা পাহাড়ের বিভিন্ন স্পটে অর্ধশতাধিক শ্রমিক প্রকাশ্যে বাঁশ কর্তন করছে। একপর্যায়ে এসব বাঁশ উজাড় করে নিয়ে যায়। বিকেলে এসব বাঁশ তার গাড়ি ভর্তি করে পাচার করে। শ্রমিকরা জানায়, টিলা বাবু রজত শুভ্র লিটন নামে এক ব্যক্তি দৈনিক ১২০ টাকা মজুরীতে তাদের নিয়োগ করেছেন। যে কারণে তারা এসব বাঁশ কর্তন করে বাগান কর্তৃপক্ষের কাছে পৌছে দেয়। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত প্রতিদিন বাঁশ কর্তনের কাজ করে আসছে। দারাগাও গ্রামের বাসিন্দা আছকির মিয়া বলেন, ‘কয়েকদিন ধরে বিভিন্ন বন্যপ্রানীরা এলাকায় প্রবেশ করছে। এসব বন্যপ্রানী বাড়িতে থাকা হাস-মোরগ খেয়ে ফেলছে। একটি বিষাক্ত সাপ আমার ঘরের সামনে ৫টি মোরগকে আক্রমন করে মেরে ফেলছে। এছাড়া বন বিড়াল ও শিয়াল আমার ঘরে থাকা হাস-মোরগ ধরে নিয়ে যাচ্ছে। একই এলাকার পরিবেশকর্মী বিলাল মিয়া বলেন, ‘হাতিমারা চা বাগান কর্তৃপক্ষ বন উজাড় করায় বন্যপ্রাণী গুলো আমাদের এলাকায় প্রবেশ করছে। পাশু পাখির উপর আক্রমন করছে। এক পর্যায়ে ক্ষুব্ধ হয়ে স্থানীয় লোকজন অনেক সময় বন্যপ্রানীদের মেরে ফেলছেন।প্রকৃতি ও পরিবেশ বিষয়ক সংগঠন মিতা ফাউন্ডেশনের সমন্বয়কারী রবি কস্তা বলেন, ‘হাতিমারা বাগান কর্তৃপক্ষ বাঁশ উজাড় করায় বিলুপ্ত হতে বসেছে বন্যপ্রানী। বন উজাড়ে বাধাঁদিলেও তারা কোন কর্ণপাত করছেন না। ‘হাতিমারা কর্র্র্তৃপক্ষ উল্টো আমাদের হুমকি-ধামকি দিয়ে আসছেন’। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে উত্তেজিত হয়ে উঠেন হাতিমারা চা বাগানের ম্যানেজার গোলাম মহিউদ্দিন। বাগানের ভিতরে সাংবাদিকরা কিভাবে প্রবেশ করলো প্রশ্ন ছুড়ে দেন। এক পর্যায়ে বন উজারের বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি বাঁশ কাটার স্থানটি হাতিমারা চা বাগানের এরিয়া বলে দাবী করেন। এ সময় তিনি উত্তেজিত হয়ে বলেন ‘আমার বাগানে আমি যা খুশি তা করবো’।

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

আপডেট সময় ০৬:৫৭:৫২ অপরাহ্ন, শনিবার, ৫ অক্টোবর ২০২৪
৮ বার পড়া হয়েছে

চুনারুঘাটে দিন-দুপুরে বনাঞ্চল উজাড় করছে হাতিমারা চা বাগান কর্তৃপক্ষ

আপডেট সময় ০৬:৫৭:৫২ অপরাহ্ন, শনিবার, ৫ অক্টোবর ২০২৪

চুনারুঘাটে কালেঙ্গা বনাঞ্চলের রশিদপুর বন বিটের বাঁশের ঝাঁড় কেটে উজাড় করে নিচ্ছে হাতিমারা চা বাগান কর্তৃপক্ষ। এতে বনাঞ্চলে থাকা বন্যপ্রানী গুলো প্রবেশ করছে লোকালয়ে। দিন দিন ওই বনাঞ্চল থেকে বন্যপ্রাণী গুলো চলে যাওয়ায় হুমকির মুখে পড়েছে জীববৈচিত্র। এছাড়া বন্যপ্রাণীর আক্রমনের শিকার হচ্ছে ওই বনাঞ্চলের পাশ^বর্তী এলাকায় থাকা পশু পাখি ও হাঁস মোরগ। অন্যদিকে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী বন্যপ্রাণীদের নির্বিচারে হত্যা করছে। এদিকে, সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে সাংবাদিকরা বনাঞ্চলে গেলে বিষয়টি জানতে পারেন হাতিমারা চা বাগানের ম্যানেজার গোলাম মহিউদ্দিন। এক পর্যায়ে তিনি সাংবাদিকদের খবর দিয়ে তার অফিসে নিয়ে যান। এ সময় সাংবাদিকদের দেখেই উত্তেজিত হয়ে উঠেন। কিভাবে সাংবাদিকরা প্রবেশ করলো বলে শুরুতেই প্রশ্ন ছুড়ে দেন তিনি। এক পর্যায়ে তিনি অশোভন আচরণ করতে থাকেন। ক্ষিপ্ত হয়ে বলেন, ‘হবিগঞ্জের অনেক সাংবাদিকরা আমার কাছে আসে। তাদের সাথে আমার সখ্যতা রয়েছে। আমি কোন সাংবাদিকদের ভয় পাই না। চাইলেই বাগানের শ্রমিকদের দিয়ে আপনাদের ক্ষতি করতে পারি’। স্থানীয় সূত্র জানায়, কালেঙ্গা বনাঞ্চলের একাংশে থাকা পাহাড় গুলোতে বাঁশের ঝাঁড় দিন দুপুরে কেটে নিচ্ছে হাতিমারা চা বাগানের লোকজন। অভিযোগ রয়েছে, হাতিমারা চা বাগান কর্তৃপক্ষ স্থানীয় একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছে। আর এ সিন্ডিকেট চক্রটি বাঁশ কেটে বাগানের বেড়া ও চা গাচের চারায় খুঁটি হিসেবে ব্যবহার করছে। পাশাপাশি বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি করে আসছে। এছাড়া দীর্ঘদিন ধরে বাগান কর্তৃপক্ষের এই বাঁশ কাটার কার্যক্রম অব্যাহত থাকায় বনাঞ্চলে থাকা বন বিড়াল, হরিণ, বন্য শুকর, বানর, মুখপোড়া হনুমান, লজ্জাবতী বানর, উল্লুক, বনরুই, গুইসাপসহ বিভিন্ন প্রজাতির বন্যপ্রাণী চলে যাচ্ছে। এতে করে ওইসব বন্যপ্রাণী পাশ^বর্তী এলাকায় প্রবেশ করছে। আর এসব বন্যপ্রানীর তান্ডবে পাশ^বর্তী দারাগাও, সুতাপাড়া, পুরান হাতিমারা, পুরান টিলা, কামাইছড়াসহ কয়েকটি এলাকার ফসলের জমি নষ্ট হচ্ছে অন্যদিকে বাড়ি-ঘরে থাকা হাস-মোরগসহ অন্যান্য পশু পাখি বন্যপ্রাণীর আক্রমনে শিকার হচ্ছে। পাশাপাশি অনেক সময় ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী এসব বন্য প্রানীদের নির্বিচারে মেরে ফেলছে। ফলে বনাঞ্চল থেকে দিন দিন প্রানী গুলো বিলুপ্ত হওয়ায় হুমকির মুখে পড়েছে জীববৈচিত্র। গতকাল শুক্রবার সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, কালেঙ্গা বনাঞ্চলের বনদূর্গা পাহাড়ের বিভিন্ন স্পটে অর্ধশতাধিক শ্রমিক প্রকাশ্যে বাঁশ কর্তন করছে। একপর্যায়ে এসব বাঁশ উজাড় করে নিয়ে যায়। বিকেলে এসব বাঁশ তার গাড়ি ভর্তি করে পাচার করে। শ্রমিকরা জানায়, টিলা বাবু রজত শুভ্র লিটন নামে এক ব্যক্তি দৈনিক ১২০ টাকা মজুরীতে তাদের নিয়োগ করেছেন। যে কারণে তারা এসব বাঁশ কর্তন করে বাগান কর্তৃপক্ষের কাছে পৌছে দেয়। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত প্রতিদিন বাঁশ কর্তনের কাজ করে আসছে। দারাগাও গ্রামের বাসিন্দা আছকির মিয়া বলেন, ‘কয়েকদিন ধরে বিভিন্ন বন্যপ্রানীরা এলাকায় প্রবেশ করছে। এসব বন্যপ্রানী বাড়িতে থাকা হাস-মোরগ খেয়ে ফেলছে। একটি বিষাক্ত সাপ আমার ঘরের সামনে ৫টি মোরগকে আক্রমন করে মেরে ফেলছে। এছাড়া বন বিড়াল ও শিয়াল আমার ঘরে থাকা হাস-মোরগ ধরে নিয়ে যাচ্ছে। একই এলাকার পরিবেশকর্মী বিলাল মিয়া বলেন, ‘হাতিমারা চা বাগান কর্তৃপক্ষ বন উজাড় করায় বন্যপ্রাণী গুলো আমাদের এলাকায় প্রবেশ করছে। পাশু পাখির উপর আক্রমন করছে। এক পর্যায়ে ক্ষুব্ধ হয়ে স্থানীয় লোকজন অনেক সময় বন্যপ্রানীদের মেরে ফেলছেন।প্রকৃতি ও পরিবেশ বিষয়ক সংগঠন মিতা ফাউন্ডেশনের সমন্বয়কারী রবি কস্তা বলেন, ‘হাতিমারা বাগান কর্তৃপক্ষ বাঁশ উজাড় করায় বিলুপ্ত হতে বসেছে বন্যপ্রানী। বন উজাড়ে বাধাঁদিলেও তারা কোন কর্ণপাত করছেন না। ‘হাতিমারা কর্র্র্তৃপক্ষ উল্টো আমাদের হুমকি-ধামকি দিয়ে আসছেন’। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে উত্তেজিত হয়ে উঠেন হাতিমারা চা বাগানের ম্যানেজার গোলাম মহিউদ্দিন। বাগানের ভিতরে সাংবাদিকরা কিভাবে প্রবেশ করলো প্রশ্ন ছুড়ে দেন। এক পর্যায়ে বন উজারের বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি বাঁশ কাটার স্থানটি হাতিমারা চা বাগানের এরিয়া বলে দাবী করেন। এ সময় তিনি উত্তেজিত হয়ে বলেন ‘আমার বাগানে আমি যা খুশি তা করবো’।