ঢাকা ১২:৫৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মুদি দোকানদার থেকে কথিত ‘মোড়ল’ শায়েস্তাগঞ্জের ইকবাল।

স্টাফ রিপোর্টারঃ

হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ রেলওয়ে পার্কিং এলাকায় করতেন মুদি দোকানদারি। বসবাস করতেন আধ-পাকা টিনশেডের পুরাতন পৈতৃক ভিটায়। বর্তমানে তিনি আড়াই কোটি টাকা খরচ করে তৈরি করেছেন ডুপ্লেক্স বাড়ি। সর্বশেষ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিজয়ী হতে খরচ করেছেন ২ কোটি টাকারও বেশি ।

এছাড়াও নামে বেনামে গড়েছেন অসংখ্য সম্পত্তি। বিভিন্ন কোম্পানির কার্যাদেশ বাণিজ্য, জোরপূর্বক খোয়াই নদীর বালু-মাটি লুটপাট, বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে মাসিক হারে চাঁদাবাজি, বিরোধী মতাদর্শীদের মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি, নিজস্ব লাটিয়াল বাহিনী দিয়ে হামলা ছিল তার নেশা।

স্বঘোষিত মোড়ল হয়ে উঠা ওই ব্যক্তি হলেন শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুর রশিদ তালুকদার ইকবাল। হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও হবিগঞ্জ-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আবু জাহিরের ডান হাত হিসেবে পরিচিত ইকবাল শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলায় রীতিমতো কয়েম করেছিলেন ত্রাসের রাজত্ব।

জানা যায়, মুদি দোকানদার ইকবাল ২০০৩ সালে হবিগঞ্জ সদর উপজেলা যুবলীগের মাধ্যমে যোগ দেন রাজনীতিতে। হবিগঞ্জ সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক থাকাকালীন ২০১০ সালে শায়েস্তাগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করে ব্যাপক ভরাডুবি শিকার হন তিনি।

পরবর্তীতে তৎকালীন এমপি আবু জাহিরের আশীর্বাদে জেলা পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। ২০১৮ সালে শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলা পরিষদ গঠিত হলে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং ২০১৯ সালে প্রথম উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের নির্বাচিত হন ইকবাল। এরপর থেকে বেপরোয়া হয়ে ওঠেন তিনি অল্পদিনেই হয়ে উঠেন আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ। বিচার সালিশের নামে জাহির করতে থাকেন মোড়লগিরি।

উপজেলার বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান থেকে চাঁদা আদায় করে একটা অংশ পৌঁছে দিতেন আবু জাহিরের কাছে। খায়রুল আলম ও জামাল আহমেদ দুলাল নামে দুই ব্যক্তির মাধ্যমে পরিচালনা করতেন ওয়ান-টেন জুয়ার বোর্ড ও নারীদের দেহ ব্যবসা। এসব খাত থেকে মাসিক কয়েক লক্ষ টাকা ভাগ পেতেন তিনি।

নিজে অষ্টম শ্রেণী পাস হলেও খবরদারি করতেন উপজেলার সকল কলেজ-মাদ্রাসাসহ উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে। এমনকি শায়েস্তাগঞ্জ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাপতির পদও বাগিয়ে নেন তিনি।

সর্বশেষ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে মোটা অংকের টাকা খরচ করে জনপ্রিয় প্রার্থীকে পরাজিত করেন তিনি। সে নির্বাচনে দাখিল করা হলফনামায় দেখা যায়, কৃষিখাত থেকে তার বাৎসরিক ৬ হাজার টাকা, দোকান ভাড়া বাবদ ৪০ হাজার টাকা, ব্যবসা থেকে ১ লক্ষ ৪৫ হাজার টাকা এবং উপজেলা চেয়ারম্যানের সম্মানী বাবদ ৪ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা আয় তার। তার হাতে নগদ ছিলো মাত্র ২ লক্ষ টাকা।

অথচ ওই নির্বাচনে তিনি খরচ করেছেন দুই কোটি টাকারও উপরে। আয়কর রিটার্নে ৫ লক্ষ ২৬ হাজার টাকা বাৎসরিক আয় দেখালেও নির্বাচনের বছরখানেক আগে আড়াই কোটি টাকা খরচ করে কিভাবে তৈরি করেছেন ডুপ্লেক্স বাড়ি তা নিয়েও আছে প্রশ্ন। কিংবা নির্বাচনে খরচ করা ২ কোটি টাকা পেলেন কোথায়? তাও খতিয়ে দেখার দাবি এলাকাবাসীর।

অভিযোগ আছে, শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলা পরিষদের মাটি ভরাটের নামে জোরপূর্বক পূর্বলেঞ্জাপাড়া এবং আলাপুর অংশের খোয়াই নদীর চর কেটে মাটি বিক্রি করে হাতিয়ে নিয়েছেন কয়েক কোটি টাকা। এসব কাজে তিনি ব্যবহার করেছেন এমপি আবু জাহির ও উপজেলা প্রশাসনকে।

এছাড়াও পৌরসভার ভিতরে জনস্বাস্থ্যের নলকূপ দেওয়ার বিধান না থাকলেও ২০২২-২৩ অর্থবছরে নিজের আপন ভাই, শ্যালক ও ব্যক্তিগত সহকারীর নামে দিয়েছেন গভীর নলকূপ। এডিপির বরাদ্দ বিতরণেও প্রাধান্য দিতেন নিজস্ব বলয়ের লোকদের। এসব কাজ বাস্তবায়নের টেন্ডার নিজের লোকদেরকে দিয়ে করিয়ে হাতিয়ে নিতেন মোটা অংকের টাকা।

বিরোধীদলকে হেনস্তা করতে ব্যবহার করতেন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়দেরকেও। শায়েস্তাগঞ্জ পৌর যুবদলের দলের এক নেতার ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বকে কেন্দ্র করে উস্কানি দিয়ে মন্দিরে চাঁদাবাজির মতো গুরুতর নাটকও সাজানোর অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এছাড়াও তার ভাই আব্দুল আউয়াল তালুকদারের মাধ্যমে শায়েস্তাগঞ্জ পৌর মার্কেটের ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ৫০ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি।

সর্বশেষ উপজেলার পরিষদ নির্বাচনে তার বিরোধিতাকারীদের বিরুদ্ধে দিয়েছিলেন মিথ্যা রাজনৈতিক মামলা। সেই মামলায় শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ফজলুল করিম ও পৌর বিএনপির সভাপতি ফরিদ আহমেদ অলিকে করান গ্রেফতারও।
বর্তমানে সেই কথিত মোড়ল আব্দুর রশিদ তালুকদার ইকবাল বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ২ টি হত্যা মামলা সহ তিনটি মামলার এফআইআর ভুক্ত আসামী হয়ে আছেন পলাতক। আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ হয়ে ওঠা ইকবালকে গ্রেফতার করে তার সম্পদের হিসেব নেওয়ার দাবী জানিয়েছেন এলাকাবাসী।

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

আপডেট সময় ০৯:০৭:০২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৪ অক্টোবর ২০২৪
১৯ বার পড়া হয়েছে

মুদি দোকানদার থেকে কথিত ‘মোড়ল’ শায়েস্তাগঞ্জের ইকবাল।

আপডেট সময় ০৯:০৭:০২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৪ অক্টোবর ২০২৪

হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ রেলওয়ে পার্কিং এলাকায় করতেন মুদি দোকানদারি। বসবাস করতেন আধ-পাকা টিনশেডের পুরাতন পৈতৃক ভিটায়। বর্তমানে তিনি আড়াই কোটি টাকা খরচ করে তৈরি করেছেন ডুপ্লেক্স বাড়ি। সর্বশেষ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিজয়ী হতে খরচ করেছেন ২ কোটি টাকারও বেশি ।

এছাড়াও নামে বেনামে গড়েছেন অসংখ্য সম্পত্তি। বিভিন্ন কোম্পানির কার্যাদেশ বাণিজ্য, জোরপূর্বক খোয়াই নদীর বালু-মাটি লুটপাট, বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে মাসিক হারে চাঁদাবাজি, বিরোধী মতাদর্শীদের মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি, নিজস্ব লাটিয়াল বাহিনী দিয়ে হামলা ছিল তার নেশা।

স্বঘোষিত মোড়ল হয়ে উঠা ওই ব্যক্তি হলেন শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুর রশিদ তালুকদার ইকবাল। হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও হবিগঞ্জ-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আবু জাহিরের ডান হাত হিসেবে পরিচিত ইকবাল শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলায় রীতিমতো কয়েম করেছিলেন ত্রাসের রাজত্ব।

জানা যায়, মুদি দোকানদার ইকবাল ২০০৩ সালে হবিগঞ্জ সদর উপজেলা যুবলীগের মাধ্যমে যোগ দেন রাজনীতিতে। হবিগঞ্জ সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক থাকাকালীন ২০১০ সালে শায়েস্তাগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করে ব্যাপক ভরাডুবি শিকার হন তিনি।

পরবর্তীতে তৎকালীন এমপি আবু জাহিরের আশীর্বাদে জেলা পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। ২০১৮ সালে শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলা পরিষদ গঠিত হলে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং ২০১৯ সালে প্রথম উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের নির্বাচিত হন ইকবাল। এরপর থেকে বেপরোয়া হয়ে ওঠেন তিনি অল্পদিনেই হয়ে উঠেন আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ। বিচার সালিশের নামে জাহির করতে থাকেন মোড়লগিরি।

উপজেলার বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান থেকে চাঁদা আদায় করে একটা অংশ পৌঁছে দিতেন আবু জাহিরের কাছে। খায়রুল আলম ও জামাল আহমেদ দুলাল নামে দুই ব্যক্তির মাধ্যমে পরিচালনা করতেন ওয়ান-টেন জুয়ার বোর্ড ও নারীদের দেহ ব্যবসা। এসব খাত থেকে মাসিক কয়েক লক্ষ টাকা ভাগ পেতেন তিনি।

নিজে অষ্টম শ্রেণী পাস হলেও খবরদারি করতেন উপজেলার সকল কলেজ-মাদ্রাসাসহ উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে। এমনকি শায়েস্তাগঞ্জ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাপতির পদও বাগিয়ে নেন তিনি।

সর্বশেষ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে মোটা অংকের টাকা খরচ করে জনপ্রিয় প্রার্থীকে পরাজিত করেন তিনি। সে নির্বাচনে দাখিল করা হলফনামায় দেখা যায়, কৃষিখাত থেকে তার বাৎসরিক ৬ হাজার টাকা, দোকান ভাড়া বাবদ ৪০ হাজার টাকা, ব্যবসা থেকে ১ লক্ষ ৪৫ হাজার টাকা এবং উপজেলা চেয়ারম্যানের সম্মানী বাবদ ৪ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা আয় তার। তার হাতে নগদ ছিলো মাত্র ২ লক্ষ টাকা।

অথচ ওই নির্বাচনে তিনি খরচ করেছেন দুই কোটি টাকারও উপরে। আয়কর রিটার্নে ৫ লক্ষ ২৬ হাজার টাকা বাৎসরিক আয় দেখালেও নির্বাচনের বছরখানেক আগে আড়াই কোটি টাকা খরচ করে কিভাবে তৈরি করেছেন ডুপ্লেক্স বাড়ি তা নিয়েও আছে প্রশ্ন। কিংবা নির্বাচনে খরচ করা ২ কোটি টাকা পেলেন কোথায়? তাও খতিয়ে দেখার দাবি এলাকাবাসীর।

অভিযোগ আছে, শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলা পরিষদের মাটি ভরাটের নামে জোরপূর্বক পূর্বলেঞ্জাপাড়া এবং আলাপুর অংশের খোয়াই নদীর চর কেটে মাটি বিক্রি করে হাতিয়ে নিয়েছেন কয়েক কোটি টাকা। এসব কাজে তিনি ব্যবহার করেছেন এমপি আবু জাহির ও উপজেলা প্রশাসনকে।

এছাড়াও পৌরসভার ভিতরে জনস্বাস্থ্যের নলকূপ দেওয়ার বিধান না থাকলেও ২০২২-২৩ অর্থবছরে নিজের আপন ভাই, শ্যালক ও ব্যক্তিগত সহকারীর নামে দিয়েছেন গভীর নলকূপ। এডিপির বরাদ্দ বিতরণেও প্রাধান্য দিতেন নিজস্ব বলয়ের লোকদের। এসব কাজ বাস্তবায়নের টেন্ডার নিজের লোকদেরকে দিয়ে করিয়ে হাতিয়ে নিতেন মোটা অংকের টাকা।

বিরোধীদলকে হেনস্তা করতে ব্যবহার করতেন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়দেরকেও। শায়েস্তাগঞ্জ পৌর যুবদলের দলের এক নেতার ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বকে কেন্দ্র করে উস্কানি দিয়ে মন্দিরে চাঁদাবাজির মতো গুরুতর নাটকও সাজানোর অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এছাড়াও তার ভাই আব্দুল আউয়াল তালুকদারের মাধ্যমে শায়েস্তাগঞ্জ পৌর মার্কেটের ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ৫০ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি।

সর্বশেষ উপজেলার পরিষদ নির্বাচনে তার বিরোধিতাকারীদের বিরুদ্ধে দিয়েছিলেন মিথ্যা রাজনৈতিক মামলা। সেই মামলায় শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ফজলুল করিম ও পৌর বিএনপির সভাপতি ফরিদ আহমেদ অলিকে করান গ্রেফতারও।
বর্তমানে সেই কথিত মোড়ল আব্দুর রশিদ তালুকদার ইকবাল বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ২ টি হত্যা মামলা সহ তিনটি মামলার এফআইআর ভুক্ত আসামী হয়ে আছেন পলাতক। আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ হয়ে ওঠা ইকবালকে গ্রেফতার করে তার সম্পদের হিসেব নেওয়ার দাবী জানিয়েছেন এলাকাবাসী।