হবিগঞ্জ জেলা ছাত্রদল পূর্ণাঙ্গ কমিটির তালিকা তৈরি, অনুমোদনের অপেক্ষা
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)-এর সহযোগী সংগঠন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল দীর্ঘদিন ধরে দলীয় আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে সংগঠনটি সবসময় অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে। হবিগঞ্জেও ছাত্রদল নানা আন্দোলন-সংগ্রামে সাহসী ভূমিকা পালন করেছে, যেখানে অনেক নেতাকর্মী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে জীবন বাজি রেখে লড়াই করেছেন।
তবে সম্প্রতি এসব ত্যাগী নেতাকর্মীদের মধ্যে হতাশা ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে, কারণ দীর্ঘ দেড় বছরেও হবিগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়নি।
তবে জেলা কমিটির নেতারা বলছেন, এরই মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটির তালিকা তৈরী হয়েছে। এখন শুধু অনুমোদনের অপেক্ষা।
পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণার নির্দেশ বাস্তবায়ন হয়নি
২০২৩ সালের ৮ জুন, সাত বছর পর হবিগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের ছয় সদস্যের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। এতে শাহ রাজিব আহমেদ রিংগনকে সভাপতি ও জিল্লুর রহমানকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। এছাড়া সিনিয়র সহ-সভাপতি হাফিজুল ইসলাম হাফিজ, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আহাদ তুষার, সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম মাহবুব ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মুহিবুর রহমান শাওনের নামও তালিকায় ছিল।
ঘোষণার সময় ছাত্রদলের তৎকালীন কেন্দ্রীয় সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ ও সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল এক মাসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন। কিন্তু প্রায় দেড় বছর পার হলেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি প্রকাশ করা হয়নি, যা নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে।
ত্যাগী নেতা-কর্মীদের বক্তব্য
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ছাত্রদল নেতা বলেন, “আমরা স্বৈরাচার সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে সামনের সারিতে ছিলাম। জেল খেটেছি, বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে বেড়িয়েছি। এখন দলের সুসময় আসতে শুরু করেছে, আর তখনই কিছু সুবিধাবাদী নেতা সামনে এসে নেতৃত্বের চেষ্টা করছে। আমাদের দাবি, অতিদ্রুত পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হোক এবং প্রকৃত ত্যাগীদের যথাযথ মূল্যায়ন করা হোক।”
তারা আরও বলেন, “অনেক নেতা রাতের পর রাত বাড়িতে থাকতে পারেননি, হাওরে রাত কাটিয়েছেন। তাদের খুঁজে বের করে কমিটিতে স্থান দিতে হবে। একইসঙ্গে, যারা হাইব্রিড নেতা, তাদের যেন ছাত্রদল বা বিএনপির কাছাকাছিও আসতে না দেওয়া হয়।”
বিভিন্ন আন্দোলনে সামনের সাড়িতে থেকে নেতৃত্ব দেওয়া এক নেতা বলেন, “দেড় বছর আগে ৬ সদস্যের কমিটি করা হলেও একজন নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছেন। ফলে পাঁচজন দিয়েই কার্যক্রম চলছে। আন্দোলনের সময় সভাপতি-সাংগঠনিক সম্পাদক কারাগারে ছিলেন, ফলে দল অনেকটাই অভিভাবকহীন হয়ে পড়েছিল। তবুও নেতাকর্মীরা নিজেদের জায়গা থেকে আন্দোলন চালিয়ে গেছেন।”
হবিগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজ রাসেল বলেন, “ছাত্রদল গণতান্ত্রিক সংগঠন। এখানে প্রকৃত ছাত্রদের নেতৃত্বে আনা জরুরি। দীর্ঘদিন আন্দোলন করা অনেক নেতা পদবঞ্চিত রয়েছেন। আমি কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে অনুরোধ করবো, দ্রুত পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করে জেলা ছাত্রদলকে আরও গতিশীল করা হোক।”
কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া
জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক জিল্লুর রহমান বলেন, “এতদিন আমরা আন্দোলন ও জেল-জুলুমের জন্য কমিটি গঠন করতে পারিনি। তবে ৫ আগস্টের আন্দোলনের পর স্বৈরাচার সরকার বিতাড়িত হয়েছে, এখন আমরা দল গোছানোর কাজ করছি। ইতোমধ্যে কেন্দ্রীয় ছাত্রদল কলেজ কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছে। সেই কাজ শেষ হলেই জেলা কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার কাজ শুরু হবে।”
সভাপতি শাহ রাজিব আহমেদ রিংগন বলেন, “বর্তমানে সারাদেশেই পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া স্তব্ধ রয়েছে। তবে আমরা ইতোমধ্যে একটি তালিকা তৈরি করেছি, কেন্দ্র থেকে চাওয়া হলেই আমরা সেটি অনুমোদনের জন্য জমা দেব। ৫ আগস্টের আন্দোলনের সময় যারা মাঠে ছিলেন, তাদের সর্বোচ্চ মূল্যায়ন করা হবে। পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে কোনো তদবির চলবে না।”