রিকশাভ্যানে শরবত ও পপকর্ন বিক্রি করে সংসার চলছে কাদিরের
জীবন জীবিকার অন্বেষণে শরবত ও পপকর্ন বিক্রিকে এখন পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন হবিগঞ্জের লাখাই উপজেলার মোড়াকরি গ্রামের মো. তনছর আলী ওরফে আব্দুল কাদির।
চার সন্তান, স্ত্রী আর মাকে নিয়ে অভাবের সংসারে উপায়হীন কাদির সৎপথে থেকে শরবত ও পপকর্ন বিক্রি করে স্বচ্ছল জীবন কাটচ্ছেন বলে জানালেন।
তার সঙ্গে দেখা হয় হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ বাজারে। এখানেই আলাপচারিতা হয় কাদিরের সঙ্গে। কাদির জানান তার জীবনের অনেক ঘাতপ্রতিঘাতের কথা। বললেন লেখাপড়া কম থাকায় অনেক দিন বেকার ছিলেন। কষ্টে দিন যাচ্ছিল। জীবিকার প্রয়োজনে কৃষি কাজ শুরু করেন। কিন্তু টানাপোড়েনেই চলছিল জীবন। প্রয়োজনে মাঝেমধ্যে যেতেন হাট-বাজারে। বাজারে মাঝে মধ্যে অ্যালোভেরা ও বেল শরবত, পপকর্ন- এসব কিনে খেতেন। এটা ভালো লাগত তার। একদিন এ বিষয়টিই মাথায় ঢুকে যায় তার। ভাবনা মতেই কাজ। নেমে পড়েন এ ব্যবসায়। অ্যালোভেরা, বেলের শরবত ও পপকর্ন তৈরি করার ওপর প্রশিক্ষণ নেন। বিক্রিও শুরু করেন।
কাদির জানান, প্রথমে চট্টগ্রাম পরে ঢাকা ও সিলেট ভোলাগঞ্জে শরবত ও পপকর্ন বিক্রি করেন। এ ব্যবসা করে সংসারে অনেকটাই সচ্ছলতা ফিরেছে তার। বসবাস করছেন জেলার শায়েস্তাগঞ্জ পৌর শহরের মহলুলসুনাম গ্রামে ভাড়া বাসায়। এভাবে প্রায় ২০ বছর ধরে অ্যালোভেরা ও বেলের শবরত বিক্রি করে আসছেন। আর শীতকালে পপকর্ন (ভুট্টার খৈ) বিক্রি করেন।
তিনি জানান, কিছুটা গরম আসায় পপকর্ন বিক্রি বন্ধ করে প্রতিদিন রিকশাভ্যানে করে শায়েস্তাগঞ্জ এলাকার বিভিন্ন স্থানে অ্যালোভেরা ও বেলের শরবত বিক্রি করছেন। বেলের শরবত প্রতি গ্লাস ২০ ও অ্যালোভেরা ১০ থেকে ৫০ টাকা। প্রতিদিন ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা লাভ হয়। সামনে রোজা আসছে। এ রোজায় তার শরবতের চাহিদা বেড়ে যায় বলে জানান কাদির।
কাদির এগুলো বিক্রি করতে করতে এর উপকারিতা নিয়ে অনেক কিছু জেনেছেন। তিনি বলেন, “লোকজন এখন স্বাস্থ্য সচেতন। গরমে অনেকে আমার তৈরি শরবত পান করেন।ভেষজ উদ্ভিদ অ্যালোভেরা বা ঘৃতকুমারীর অনেক গুণ। এটি রস হিসেবে খাওয়া যায়, ত্বকের প্রদাহে প্রতিষেধক হিসেবে লাগান যায়। এতে রয়েছে ক্যালসিয়াম, সোডিয়াম, জিংক, আয়রন, পটাশিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, জিঙ্ক, ফলিক অ্যাসিড, অ্যামিনো অ্যাসিড ও ভিটামিন-এ, বি৬ ও বি২ ইত্যাদি।”
তিনি বলেন, “সারা দিন বাইরের কাজ শেষে শরীরে পানির ঘাটতি দেখা দেয়। শরীরে পানিশূন্যতা পূরণে পান করতে পারেন বেলের শরবত। বেলের শরবত খুবই স্বাস্থ্যসম্মত ও শরীর ভালো রাখে। বেলের শরবত হজমশক্তি বাড়ায় এবং তা বলবর্ধক।”
কাদির বলেন, “বর্তমানে নিত্যপণ্যের দাম আকাশচুম্বি। এখানে শরবত বিক্রির লাভে পরিবারের জীবিকা নির্বাহের পাশাপাশি সন্তানদের পড়াশুনা করাচ্ছি।”
তার তৈরি অ্যালোভেরা ও বেলের শরবতের প্রশংসা করেন শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান আ স ম আফজল আলী। তিনি বলেন, “অ্যালোভেরা ও বেল শরবত মাঝে মাঝে খাওয়া হয়। এসব অনেক উপকারী।”