ঢাকা ০১:৪৩ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ঘাইল-ছিয়ার ধুড়ুম-ধাড়ুম এখন শোনা যায় কম

শায়েস্তাগঞ্জের বাণী ডেস্ক ,

ঈদের এলেই গ্রামবাংলার খুশির আমেজে গৃহবধূদের ঘাইল-ছিয়ার ঢেঁকুর-ঢাকুর শব্দে সরগরম হয়ে উঠতো পাড়ামহল্লা। ঈদ উৎসবের আতিথেয়তায় বিভিন্ন পদের পিঠা তৈরি করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন নারীরা। খুশির বার্তায় পিঠার মাধ্যমে আপ্যায়ন করা হয়। নারীরা শৈল্পিকভাবে তৈরি করেন হরেক রকমের পিঠা।

পিঠা তৈরির অন্যতম উপকরণ
চালের গুঁড়ি। পিঠা খাওয়ার আনন্দে চাউল ভিজিয়ে ঘাইলে রেখে ছিয়ার ধুমধাম আঘাতে নারীরা গুঁড়ি তৈরি করতেন। এ কাজে কখনো কখনো দুইজন নারী দু’টি ছিয়া দিয়ে তালে তালে চাল কুটতেন (গুঁড়ি করতেন)। পাড়া-মহল্লার ঘরে ঘরে ঘাইলে ছিয়া ব্যাবহারের শব্দ ছড়িয়ে পড়ত এ বাড়ি থেকে ওই বাড়িতে।এক সময় শীতের পিঠেপুলি তৈরির প্রধান উপকরণ

চালের গুঁড়ি (ভাঙানো) প্রস্তুতের জন ঘাইল ও ছিয়াই ছিল একমাত্র ভরসা। অগ্রহায়ণ মাসে ধান ঘরে তোলার পর নবান্ন উৎসব পালন করে পিঠা তৈরির ধুম পড়ত। কখনো পরিবারে আনন্দ উল্লাসে বাড়ির উঠানে অথবা খালি জায়গায় ঘাইল-ছিয়া দিয়ে চালের গুঁড়ি কুটতেন। এক কালে গ্রামের নারীরা ধান ভানা থেকে শুরু করে চালের গুঁড়ি কুটার জন্য কাজ করতেন এ ঘাইল ছিয়া দিয়েই।

গৃহবধূদের
চালের গুঁড়ি কুটা ও পিঠা নিয়ে এ চিত্রের দেখা মেলে বিয়ানীবাজারের গ্রামীণ জনপদের বিভিন্ন গ্রাম ও পাড়া-মহল্লায়। কালের বিবর্তনে আধুনিকতার ছোঁয়ায় শহরাঞ্চলে এখন তার কদর কমেছে। তবে চিরায়ত গ্রামবাংলার জনপদে এখনো ঐতিহ্য নিয়েই আছে এই স্মারকটি। গ্রামীণ বাংলার এক সময়ের শত বছরের ঐতিহ্য ঘাইল ও ছিয়া।উপজেলার মুড়িয়া ইউনিয়নের সারপার গ্রামের বাসিন্দা গৃহবধূ ডলি বেগম বলেন, ঘাইল-ছিয়া দিয়ে

চাল কুটা খুবই কষ্টদায়ক। শারীরিক পরিশ্রম করে ঘাইল-ছিয়ায় গুঁড়ি করার পর শরীরের হাড়ে-পাঞ্জরে ব্যথায় ছেয়ে যেত। কিন্তু এখন মেশিন বের হয়েছে তেমন আর কষ্ট করতে হয় না। তবে মেশিনের বানানো গুঁড়ি থেকে ঘাইল-ছিয়ার তৈরি গুঁড়ির পিঠা খেতে অনেক মজা।

তিলপারা ইউনিয়নের গৃহবধূ রাহেনা বেগম বলেন, যান্ত্রিক মেশিন তৈরি হওয়ায় ঘাইল-ছিয়ার ব্যবহার এখন কমে গেছে।
চাল কুটা আগের তুলনায় কম হয়। তবে ঘাইল-ছিয়া দুটোই আছে প্রয়োজনে ব্যবহার করি। এখনকার মানুষ শৌখিন হয়ে গেছে। তাই আধুনিক যুগের তৈরি যান্ত্রিক মেশিনের ওপর নির্ভরশীল হতে চলেছেন।তিনি বলেন, আমি নিজেও একসময় বেশিই ঘাইল-ছিয়ায় গুঁড়ি করেছি। কিন্তু এখন যুগ পাল্টিয়েছে। তবে মেশিনের কুটা গুঁড়ির স্বাদ ঘরোয়া গুঁড়ির মতো পাওয়া যায় না।

উল্লেখ্য, বিশাল গাছের গুড়ি থেকে ঘাইল প্রস্তুত করা হয়। গাছের গুড়ির ভিতরটা গর্ত করে মসলা বা শস্যাদি রাখার স্থান তৈরি করা হয়। আর, একটা লম্বা মসৃণ দণ্ড দিয়ে সেই গর্তে রাখা মসলা বা শস্যে জোরে জোরে আঘাত করা হয়। লম্বা মসৃণ যে দণ্ড তাকে ছিয়া বলা হয়ে থাকে।

সিলেট অঞ্চলে মসলা ও চাল কুটার কাঠে তৈরি এই বিশেষ জিনিসকে বলা হয় ঘাইল-ছিয়া। অঞ্চলভেদে এর নামের ভিন্নতা রয়েছে। বগুড়া অঞ্চলে একে ছেচা বলা হয়। উত্তরবঙ্গে জিনিসটার নাম উরুনগান বা সামগান। এর অন্য নাম হচ্ছে উদূখল বা উখলি। মূলত আর্য সংস্কৃতিতে এর আবিষ্কার হয়।

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

আপডেট সময় ০২:১০:৫২ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৯ জুন ২০২৪
৮৫ বার পড়া হয়েছে

ঘাইল-ছিয়ার ধুড়ুম-ধাড়ুম এখন শোনা যায় কম

আপডেট সময় ০২:১০:৫২ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৯ জুন ২০২৪

ঈদের এলেই গ্রামবাংলার খুশির আমেজে গৃহবধূদের ঘাইল-ছিয়ার ঢেঁকুর-ঢাকুর শব্দে সরগরম হয়ে উঠতো পাড়ামহল্লা। ঈদ উৎসবের আতিথেয়তায় বিভিন্ন পদের পিঠা তৈরি করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন নারীরা। খুশির বার্তায় পিঠার মাধ্যমে আপ্যায়ন করা হয়। নারীরা শৈল্পিকভাবে তৈরি করেন হরেক রকমের পিঠা।

পিঠা তৈরির অন্যতম উপকরণ
চালের গুঁড়ি। পিঠা খাওয়ার আনন্দে চাউল ভিজিয়ে ঘাইলে রেখে ছিয়ার ধুমধাম আঘাতে নারীরা গুঁড়ি তৈরি করতেন। এ কাজে কখনো কখনো দুইজন নারী দু’টি ছিয়া দিয়ে তালে তালে চাল কুটতেন (গুঁড়ি করতেন)। পাড়া-মহল্লার ঘরে ঘরে ঘাইলে ছিয়া ব্যাবহারের শব্দ ছড়িয়ে পড়ত এ বাড়ি থেকে ওই বাড়িতে।এক সময় শীতের পিঠেপুলি তৈরির প্রধান উপকরণ

চালের গুঁড়ি (ভাঙানো) প্রস্তুতের জন ঘাইল ও ছিয়াই ছিল একমাত্র ভরসা। অগ্রহায়ণ মাসে ধান ঘরে তোলার পর নবান্ন উৎসব পালন করে পিঠা তৈরির ধুম পড়ত। কখনো পরিবারে আনন্দ উল্লাসে বাড়ির উঠানে অথবা খালি জায়গায় ঘাইল-ছিয়া দিয়ে চালের গুঁড়ি কুটতেন। এক কালে গ্রামের নারীরা ধান ভানা থেকে শুরু করে চালের গুঁড়ি কুটার জন্য কাজ করতেন এ ঘাইল ছিয়া দিয়েই।

গৃহবধূদের
চালের গুঁড়ি কুটা ও পিঠা নিয়ে এ চিত্রের দেখা মেলে বিয়ানীবাজারের গ্রামীণ জনপদের বিভিন্ন গ্রাম ও পাড়া-মহল্লায়। কালের বিবর্তনে আধুনিকতার ছোঁয়ায় শহরাঞ্চলে এখন তার কদর কমেছে। তবে চিরায়ত গ্রামবাংলার জনপদে এখনো ঐতিহ্য নিয়েই আছে এই স্মারকটি। গ্রামীণ বাংলার এক সময়ের শত বছরের ঐতিহ্য ঘাইল ও ছিয়া।উপজেলার মুড়িয়া ইউনিয়নের সারপার গ্রামের বাসিন্দা গৃহবধূ ডলি বেগম বলেন, ঘাইল-ছিয়া দিয়ে

চাল কুটা খুবই কষ্টদায়ক। শারীরিক পরিশ্রম করে ঘাইল-ছিয়ায় গুঁড়ি করার পর শরীরের হাড়ে-পাঞ্জরে ব্যথায় ছেয়ে যেত। কিন্তু এখন মেশিন বের হয়েছে তেমন আর কষ্ট করতে হয় না। তবে মেশিনের বানানো গুঁড়ি থেকে ঘাইল-ছিয়ার তৈরি গুঁড়ির পিঠা খেতে অনেক মজা।

তিলপারা ইউনিয়নের গৃহবধূ রাহেনা বেগম বলেন, যান্ত্রিক মেশিন তৈরি হওয়ায় ঘাইল-ছিয়ার ব্যবহার এখন কমে গেছে।
চাল কুটা আগের তুলনায় কম হয়। তবে ঘাইল-ছিয়া দুটোই আছে প্রয়োজনে ব্যবহার করি। এখনকার মানুষ শৌখিন হয়ে গেছে। তাই আধুনিক যুগের তৈরি যান্ত্রিক মেশিনের ওপর নির্ভরশীল হতে চলেছেন।তিনি বলেন, আমি নিজেও একসময় বেশিই ঘাইল-ছিয়ায় গুঁড়ি করেছি। কিন্তু এখন যুগ পাল্টিয়েছে। তবে মেশিনের কুটা গুঁড়ির স্বাদ ঘরোয়া গুঁড়ির মতো পাওয়া যায় না।

উল্লেখ্য, বিশাল গাছের গুড়ি থেকে ঘাইল প্রস্তুত করা হয়। গাছের গুড়ির ভিতরটা গর্ত করে মসলা বা শস্যাদি রাখার স্থান তৈরি করা হয়। আর, একটা লম্বা মসৃণ দণ্ড দিয়ে সেই গর্তে রাখা মসলা বা শস্যে জোরে জোরে আঘাত করা হয়। লম্বা মসৃণ যে দণ্ড তাকে ছিয়া বলা হয়ে থাকে।

সিলেট অঞ্চলে মসলা ও চাল কুটার কাঠে তৈরি এই বিশেষ জিনিসকে বলা হয় ঘাইল-ছিয়া। অঞ্চলভেদে এর নামের ভিন্নতা রয়েছে। বগুড়া অঞ্চলে একে ছেচা বলা হয়। উত্তরবঙ্গে জিনিসটার নাম উরুনগান বা সামগান। এর অন্য নাম হচ্ছে উদূখল বা উখলি। মূলত আর্য সংস্কৃতিতে এর আবিষ্কার হয়।