ঢাকা ০৬:১৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৫ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
Logo শায়েস্তাগঞ্জ সুতাং নদী থেকে অবৈধভাবে সিলিকা বালু উত্তোলনের মহোৎসব চলছে Logo নেচে-গেয়ে সংস্কৃতি আর ঐতিহ্য তুলে ধরল চা শ্রমিকেরা Logo মাধবপুরে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করায় ২ জনকে জরিমানা Logo মাধবপুরে ‘নিশান’র নির্বাহী পরিচালকসহ গ্রেফতার ২ Logo হবিগঞ্জ জেলায় প্রাথমিক বিদ্যালয় গুলোতে শিক্ষক সংকট চরমে Logo শায়েস্তাগঞ্জে জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক খেলোয়াড় নাজমুল হোসেনকে সংবর্ধনা Logo হবিগঞ্জে ৪ কোটি ৬৯ লাখ টাকার ভারতীয় পণ্য জব্দ Logo আজ সালমান শাহর ২৯তম মৃত্যুবার্ষিকী Logo সংস্কার কাজের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যুগ্ম-সচিব বর্তমান কমিটির প্রচেষ্টায় শায়েস্তাগঞ্জ প্রেসক্লাব নান্দনিক হয়েছে Logo সাতছড়ি, রেমা-কালেঙ্গাঘেরা চুনারুঘাটে পর্যটনের বিপুল সম্ভাবনা, অভাব পরিকল্পনার

মাধবপুরে ‘নিশান’র নির্বাহী পরিচালকসহ গ্রেফতার ২

নিজস্ব প্রতিবেদক

হবিগঞ্জের মাধবপুরে প্রতারণার অভিযোগে ‘নিশান পরিবেশ ও স্বাস্থ্য সোসাইটি’ নামক একটি এনজিওর নির্বাহী পরিচালক মঈন উদ্দিন বেলাল এবং কর্মকর্তা গোবিন্দ কৈরিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) বেলা ৩টার দিকে উপজেলার তেলিয়াপাড়ায় অবস্থিত নিশান সোসাইটির কার্যালয় থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, উপজেলার তেলিয়াপাড়া গ্রামের স্বপ্না রানী রায় কর্তৃক দায়ের করা একটি প্রতারণার মামলায় মইন উদ্দিন বেলাল, গোবিন্দ কৈরিসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়। এর প্রেক্ষিতে মাধবপুর থানার একটি দল সোমবার বিকেলে তেলিয়াপাড়ায় অবস্থিত নিশান’র প্রধান কার্যালয়ে অভিযান চালিয়ে অভিযুক্তদের গ্রেফতার করে।

জানা গেছে, প্রায় ২০ বছর আগে মঈন উদ্দিন বেলাল ব্র্যাক এনজিওর চাকরি ছেড়ে তেলিয়াপাড়ায় তার শ্বশুরের জমিতে ‘নিশান স্বাস্থ্য ও পরিবেশ সোসাইটি’ নামে একটি কার্যালয় স্থাপন করেন। এই এনজিওটি চা বাগানসহ বিভিন্ন এলাকায় প্রচার চালাতো যে, তাদের কাছে টাকা জমা রাখলে প্রতি লাখে মাসে ২ হাজার টাকা মুনাফা দেওয়া হবে। এই উচ্চ মুনাফার প্রলোভনে হবিগঞ্জের চা বাগানের শ্রমিক এবং এলাকার প্রায় ৪ হাজার মানুষ বেলাল, তার ছেলে সায়েম, সালমান, শ্যালক জালাল, মাসুদ এবং স্ত্রী আমেনার কাছে প্রায় দেড়শ কোটি টাকা জমা রাখেন।

শুরুতে কয়েক বছর আমানতকারীদের নিয়মিতভাবে মাসিক মুনাফা পরিশোধ করা হলেও, গত তিন বছর ধরে আসল টাকা এবং মুনাফা ফেরত চাওয়া হলে বিপত্তি দেখা দেয়। নিশান কর্তৃপক্ষ টাকা ফেরত দেওয়া বন্ধ করে দেয়। এতে গত এক বছর ধরে টাকা হারিয়ে অসংখ্য গ্রাহক চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছেন। অনেক নিম্ন আয়ের মানুষ তাদের গরু-ছাগল ও জমি বিক্রি করে নিশানে টাকা জমা করেছিলেন।

গ্রাহকদের চাপের মুখে একপর্যায়ে নিশানের পরিচালক সায়েম ও সালমান গোপনে পালিয়ে যান। পরে গ্রাহকরা নিশানের নির্বাহী পরিচালক বেলাল ও তার স্ত্রী আমেনাকে তেলিয়াপাড়ার কার্যালয়ে নজরবন্দি করে রাখেন। তবে, আমেনা মাস খানেক আগে গোপনে পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। নিশানের এমডি জালাল উদ্দিন একাধিকবার সভা করে টাকা ফেরত দেওয়ার আশ্বাস দিলেও, শেষ পর্যন্ত তিনিও আত্মগোপনে চলে গেছেন।

গোয়াছনগর গ্রামের সাইফুল নামে একজন ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহক জানান, তিনি জমি বিক্রি করে লাভের আশায় নিশানে টাকা জমা করেছিলেন, কিন্তু তাদের টাকা মেরে সবাই পালিয়ে গেছে।

সুরমা গ্রামের মানিক মিয়া জানান, তার বাবা আরজু মিয়া নিশানে টাকা জমা রেখেছিলেন এবং টাকা ফেরত না পেয়ে সেই কষ্টে হঠাৎ মারা গেছেন।

পরমানন্দপুর গ্রামের রফিক বলেন, কৃষিকাজ করে কষ্টার্জিত অর্থ তিনি নিশানে রেখেছিলেন, কিন্তু তারা সেই টাকায় বিলাসবহুল জীবনযাপন করেছে, আর নিরীহ মানুষ বিপদে পড়েছে। তিনি সরকারের কাছে তাদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে সাধারণ মানুষের টাকা ফেরত দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।

মাধবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, নিশানের মঈন উদ্দিন বেলাল ও গোবিন্দের বিরুদ্ধে প্রতারণা ও টাকা আত্মসাতের মামলায় আদালতের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থাকায় তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে।

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

আপডেট সময় ১২:০৬:১৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫
২ বার পড়া হয়েছে

মাধবপুরে ‘নিশান’র নির্বাহী পরিচালকসহ গ্রেফতার ২

আপডেট সময় ১২:০৬:১৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫

হবিগঞ্জের মাধবপুরে প্রতারণার অভিযোগে ‘নিশান পরিবেশ ও স্বাস্থ্য সোসাইটি’ নামক একটি এনজিওর নির্বাহী পরিচালক মঈন উদ্দিন বেলাল এবং কর্মকর্তা গোবিন্দ কৈরিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) বেলা ৩টার দিকে উপজেলার তেলিয়াপাড়ায় অবস্থিত নিশান সোসাইটির কার্যালয় থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, উপজেলার তেলিয়াপাড়া গ্রামের স্বপ্না রানী রায় কর্তৃক দায়ের করা একটি প্রতারণার মামলায় মইন উদ্দিন বেলাল, গোবিন্দ কৈরিসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়। এর প্রেক্ষিতে মাধবপুর থানার একটি দল সোমবার বিকেলে তেলিয়াপাড়ায় অবস্থিত নিশান’র প্রধান কার্যালয়ে অভিযান চালিয়ে অভিযুক্তদের গ্রেফতার করে।

জানা গেছে, প্রায় ২০ বছর আগে মঈন উদ্দিন বেলাল ব্র্যাক এনজিওর চাকরি ছেড়ে তেলিয়াপাড়ায় তার শ্বশুরের জমিতে ‘নিশান স্বাস্থ্য ও পরিবেশ সোসাইটি’ নামে একটি কার্যালয় স্থাপন করেন। এই এনজিওটি চা বাগানসহ বিভিন্ন এলাকায় প্রচার চালাতো যে, তাদের কাছে টাকা জমা রাখলে প্রতি লাখে মাসে ২ হাজার টাকা মুনাফা দেওয়া হবে। এই উচ্চ মুনাফার প্রলোভনে হবিগঞ্জের চা বাগানের শ্রমিক এবং এলাকার প্রায় ৪ হাজার মানুষ বেলাল, তার ছেলে সায়েম, সালমান, শ্যালক জালাল, মাসুদ এবং স্ত্রী আমেনার কাছে প্রায় দেড়শ কোটি টাকা জমা রাখেন।

শুরুতে কয়েক বছর আমানতকারীদের নিয়মিতভাবে মাসিক মুনাফা পরিশোধ করা হলেও, গত তিন বছর ধরে আসল টাকা এবং মুনাফা ফেরত চাওয়া হলে বিপত্তি দেখা দেয়। নিশান কর্তৃপক্ষ টাকা ফেরত দেওয়া বন্ধ করে দেয়। এতে গত এক বছর ধরে টাকা হারিয়ে অসংখ্য গ্রাহক চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছেন। অনেক নিম্ন আয়ের মানুষ তাদের গরু-ছাগল ও জমি বিক্রি করে নিশানে টাকা জমা করেছিলেন।

গ্রাহকদের চাপের মুখে একপর্যায়ে নিশানের পরিচালক সায়েম ও সালমান গোপনে পালিয়ে যান। পরে গ্রাহকরা নিশানের নির্বাহী পরিচালক বেলাল ও তার স্ত্রী আমেনাকে তেলিয়াপাড়ার কার্যালয়ে নজরবন্দি করে রাখেন। তবে, আমেনা মাস খানেক আগে গোপনে পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। নিশানের এমডি জালাল উদ্দিন একাধিকবার সভা করে টাকা ফেরত দেওয়ার আশ্বাস দিলেও, শেষ পর্যন্ত তিনিও আত্মগোপনে চলে গেছেন।

গোয়াছনগর গ্রামের সাইফুল নামে একজন ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহক জানান, তিনি জমি বিক্রি করে লাভের আশায় নিশানে টাকা জমা করেছিলেন, কিন্তু তাদের টাকা মেরে সবাই পালিয়ে গেছে।

সুরমা গ্রামের মানিক মিয়া জানান, তার বাবা আরজু মিয়া নিশানে টাকা জমা রেখেছিলেন এবং টাকা ফেরত না পেয়ে সেই কষ্টে হঠাৎ মারা গেছেন।

পরমানন্দপুর গ্রামের রফিক বলেন, কৃষিকাজ করে কষ্টার্জিত অর্থ তিনি নিশানে রেখেছিলেন, কিন্তু তারা সেই টাকায় বিলাসবহুল জীবনযাপন করেছে, আর নিরীহ মানুষ বিপদে পড়েছে। তিনি সরকারের কাছে তাদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে সাধারণ মানুষের টাকা ফেরত দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।

মাধবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, নিশানের মঈন উদ্দিন বেলাল ও গোবিন্দের বিরুদ্ধে প্রতারণা ও টাকা আত্মসাতের মামলায় আদালতের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থাকায় তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে।