ঢাকা ০২:৩৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই ২০২৫, ১৮ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
Logo শেখ হাসিনাকে ৬ মাসের কারাদণ্ড Logo নবীগঞ্জে দুর্ঘটনা, নারীসহ নিহত ২ Logo মাধবপুর বাস ও পিকআপের মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত ১, আহত ২০ Logo হবিগঞ্জে ভুয়া চিকিৎসকের একমাসের কারাদণ্ড Logo স্বৈরাচার পতনে ১৬ বছর অপেক্ষা নয়, তাৎক্ষণিক প্রতিরোধ গড়ার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার Logo বাংলাদেশের মানুষ কল্পনাও করেনি যে কেবল চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে গড়ে ওঠা আন্দোলনই শেষ পর্যন্ত ‘জুলাই বিদ্রোহে’ রূপ নেবে। গত বছরের ১ জুলাই বাংলাদেশ এক অবিশ্বাস্য ঘটনার সাক্ষী হয়। এদিন শিক্ষার্থীদের ‘কোটা সংস্কার আন্দোলন’ ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে’ রূপ নেয়। এটি ছিল প্রায় ১৬ বছরের স্বৈরতান্ত্রিক আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের সূচনাবিন্দু। মানুষ কল্পনাও করেনি যে শুরুতে কেবল চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে গড়ে ওঠা আন্দোলনই শেষ পর্যন্ত ‘জুলাই বিদ্রোহে’ রূপ নেবে, শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ একত্রিত হয়ে সরকারের বিরুদ্ধে বৃহত্তর গণআন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়বে। ছাত্রদের এই অসন্তোষের সূচনা ঘটে ২০১৮ সালের কোটা বাতিলের সরকারি প্রজ্ঞাপনকে হাইকোর্ট কর্তৃক অবৈধ ঘোষণা করার রায়ের পর। সরকার ২০১৮ সালে তীব্র ছাত্র আন্দোলনের চাপে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিল করেছিল। কিন্তু হাইকোর্টের রায়ে ৫৬ শতাংশ কোটা পুনঃপ্রবর্তিত হয়, যাতে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য ৩০ শতাংশ, নারীদের জন্য ১০ শতাংশ, পশ্চাৎপদ জেলার জন্য ১০ শতাংশ, সংখ্যালঘুদের জন্য ৫ শতাংশ এবং প্রতিবন্ধীদের জন্য ১ শতাংশ বরাদ্দ করা হয়। ছাত্ররা এই ব্যবস্থাকে মেধাবীদের প্রতি বৈষম্য হিসেবে মনে করে প্রতিবাদে রাস্তায় নামে। সরকার প্রতিবাদকারীদের কঠোরভাবে দমন করতে চাইলে পরিস্থিতি বিদ্রোহে রূপ নেয়। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সরকারপন্থী সন্ত্রাসীরা একযোগে আক্রমণ চালালে অন্তত ১ হাজার ৪০০ জন নিহত এবং প্রায় ২০ হাজার জন আহত হয়। স্বাধীনতা পরবর্তী ইতিহাসে এটা ছিল সবচেয়ে নিষ্ঠুর দমনপীড়ন। অনেকে বিশ্বাস করেন, এই জুলাই বিদ্রোহের মধ্য দিয়েই ২০০৮ সাল থেকে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ সরকারের পতন অনিবার্য হয়ে ওঠে। ২০২৪ সালের ১ জুলাই এই আন্দোলন পুরো মাত্রায় শুরু হলেও এর গোড়াপত্তন ঘটে ৫ জুন। ওইদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থীরা হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় রাস্তায় নামে। আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক এবং বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া তার ‘জুলাই : মাতৃভূমি অথবা মৃত্যু’ বইতে লিখেছেন, ‘৫ জুন বিকেলে আমি ঢাকা মেডিকেল কলেজের পাশে চানখারপুলে স্কুটি মেরামত করাচ্ছিলাম। তখন ফেসবুকে দেখি- হাইকোর্ট কোটা পুনর্বহাল করেছে। মনে হলো ২০১৮ সালের অর্জনগুলো ধূলিসাৎ হয়ে যাচ্ছে।’ এরপর কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিয়ে এক বৈঠকের মাধ্যমে প্রতিবাদ কর্মসূচির সূচনা হয়। রাত সাড়ে ৭টায় ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী’ ব্যানারে একটি মিছিল বের হয় এবং সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মধ্যদিয়ে তা শেষ হয়। এই সমাবেশে তারা হাইকোর্টের রায়কে ‘মেধাবীদের সাথে তামাশা’ বলে প্রত্যাখ্যান করে। সমাবেশে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র, বর্তমানে জাতীয় নাগরিক পার্টি- এনসিপির প্রধান নাহিদ ইসলাম পরদিন ৬ জুন বিকেল ৫টায় রাজু ভাস্কর্যে সমাবেশের ঘোষণা দেন। প্রায় পাঁচ থেকে ছয় শ’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ওই মিছিলে অংশ নেয় এবং স্লোগান দেয়- ‘কোটা পদ্ধতি মানি না’, ‘হাইকোর্টের রায় মানি না’, ‘কোটা বাতিল করতেই হবে’। আসিফের বক্তব্যের সাথে একমত প্রকাশ করে নাহিদও ৫ জুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে তাদের প্রথম বৈঠকের কথা এবং কিভাবে সাধারণ শিক্ষার্থীদের আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আন্দোলনে সম্পৃক্ত করতে পেরেছিলেন তা স্মরণ করেন। নাহিদ পরে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বলেন, ‘আমরা ঈদুল আজহার ছুটির আগে মাত্র তিন দিন আন্দোলনের সুযোগ পেয়েছিলাম।’ ৬ জুন ঢাবি, জাহাঙ্গীরনগর, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, জগন্নাথসহ দেশের বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীরা কোটা বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ করে। ৯ জুন শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মিছিল করে অ্যাটর্নি জেনারেল বরাবর একটি স্মারকলিপি জমা দেয়। এর প্রেক্ষিতে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল বিভাগে রায় স্থগিত চেয়ে আবেদন করে। শুনানির দিন ধার্য হয় ৪ জুলাই। ১০ জুন আবারো মিছিল হয় এবং শিক্ষার্থীরা সরকারকে ৩০ জুনের মধ্যে ২০১৮ সালের প্রজ্ঞাপন পুনর্বহাল করতে আল্টিমেটাম দেয়, না হলে সর্বাত্মক আন্দোলন শুরু করার ঘোষণা দেয়। আসিফ স্মরণ করেন, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় ৩০ জুন পর্যন্ত ঈদের ছুটি ঘোষণা করেছিল, তাই আমরা সেই দিনটিকে আল্টিমেটামের সময়সীমা হিসেবে নির্ধারণ করি। আমরা সরকারকে সতর্কও করেছিলাম- যদি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আমাদের দাবি পূরণ না হয়, তাহলে আমরা আবার আন্দোলন শুরু করব।’ ৩০ জুন সরকারের পক্ষ থেকে কোনো ঘোষণা না আসায় ১ জুলাই ঢাবি, জগন্নাথ, জাবি, রাবি, চবি, বরিশাল ও কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারাদেশের শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নেমে পড়ে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কিছু সময়ের জন্য ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর ব্যানারে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার প্রাঙ্গণ থেকে একটি মিছিল বের করে, যা রাজু ভাস্কর্যে শেষ হয়। সমাবেশ থেকে নাহিদ ইসলাম ঘোষণা দেন, আগামী ৪ জুলাই পর্যন্ত দেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে শ্রেণিকক্ষে পাঠদান ও পরীক্ষার বর্জন চলবে। তিনি তিন দিনের কর্মসূচিও ঘোষণা করেন- ২ জুলাই দেশব্যাপী মহাসড়কে মিছিল, ৩ ও ৪ জুলাই রাজধানীর রাজু ভাস্কর্যে, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সাত সরকারি কলেজ এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতাধীন অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের সমাবেশ। সমাবেশে নাহিদ ইসলাম ঘোষণা দেন- ৪ জুলাই পর্যন্ত দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন চলবে। সেই সাথে তিনি চারটি দাবি উত্থাপন করেন- ১. দ্রুত কোটা সংস্কারে কমিশন গঠন, যেন পশ্চাৎপদ জনগোষ্ঠী উপকৃত হয়। ২. কোটা পূরণ না হলে মেধাভিত্তিক নিয়োগ নিশ্চিত করা। ৩. নিয়োগে একাধিকবার কোটা সুবিধা ব্যবহার বন্ধ করা। ৪. প্রশাসনে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা। Logo হবিগঞ্জে শুঁটকি উৎপাদনে ভাটা Logo নবীগঞ্জ মসজিদে মাইকিং করে পুলিশের ওপর হামলা, আসামি ছিনতাই আটক ১৩ Logo চুনারুঘাটে হত্যা মামলার আসমী আ. মান্নান আটক-তাবলীগ জামাতে গিয়ে অপহরণ মামলা সাজিয়েছেন Logo আজমিরীগঞ্জ কালনী নদীর ভাঙনে নদীতে বিলীন হয়ে গেছে পাড়ে বসে চোখ মুছছেন সুনিতী

বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটে বছরে লোকসান ৬৬ কোটি টাকা

তথ্য-প্রযুক্তি ডেস্ক

আওয়ামী লীগ সরকারের সবচেয়ে ব্যয়বহুল প্রকল্পের একটি বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট। ওই স্যাটেলাইট পরিচালনার জন্য গঠিত রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোম্পানি বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেড (বিএসসিএল) রাষ্ট্রীয় কোষাগারে এক পয়সাও জমা দিতে পারেনি। উল্টো বিএসসিএলের বছরে লোকসান হচ্ছে ৬৬ কোটি টাকা। তবে সবমিলিয়ে সরকারের ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়াতে পারে দেড় হাজার কোটি টাকারও বেশি।

বিএসসিএলের অডিট রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০১৮ ও ২০১৯ সালে ১৯ কোটি টাকা লোকসান দিয়েছে বিএসসিএল। এরপর ২০২০, ২০২১ ও ২০২২ সালে ১৮৭ কোটি টাকা মুনাফা করেছে। ২০২৩ ও ২০২৪ সালের অডিট রিপোর্ট এখনও প্রকাশ করা হয়নি এবং বিএসসিএল দুই বছর কোনো আর্থিক বিবরণীও প্রকাশ করেনি।

জানা গেছে, ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে পরিকল্পনা কমিশনের কিছু আপত্তি সত্ত্বেও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২ হাজার ৯৬৮ কোটি টাকার এই প্রকল্প অনুমোদন করেন, যার ব্যয় পরে কমে ২ হাজার ৭৬৫ কোটি টাকায় এসে দাঁড়ায়। এর মধ্যে এই প্রকল্পে সরকার দিয়েছে ১ হাজার ৪০৬ কোটি টাকা এবং এইচএসবিসি ব্যাংকের কাছ থেকে ১২ বছর মেয়াদে প্রায় ১৫৫ মিলিয়ন ইউরো ঋণ নিয়েছে। ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে যখন এই চুক্তি স্বাক্ষর হয়, তখন ১৫৫ মিলিয়ন ইউরোর পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকা।

এর মধ্যে প্রকল্পটি সম্পন্ন করার পর ২০১৮ সালে নবগঠিত বিএসসিএলের কাছে স্যাটেলাইটটি হস্তান্তর করে বিটিআরসি। তবে বিটিআরসির ২০২১ সালের নিরীক্ষা প্রতিবেদন অনুযায়ী, যেহেতু এইচএসবিসির সঙ্গে বিটিআরসির মধ্যে ঋণচুক্তি সই হয়েছিল, সেহেতু এই সম্পদের হিসেবও বিটিআরসির কাছেই রাখতে হচ্ছে, যদিও ভবিষ্যতে এ প্রকল্প থেকে কোনো সুফল আসবে না।

এর ফলে ২০১৮ সালের মে মাসে স্পেসএক্সের ফ্যালকন ৯ রকেটের মাধ্যমে উৎক্ষেপণ করা স্যাটেলাইটের জন্য প্রতি ছয় মাসে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) এইচএসবিসিকে প্রায় ৮৫ লাখ ডলার পরিশোধ করতে হয়। এপ্রিল পর্যন্ত সুদসহ ১২টি কিস্তিতে এইচএসবিসিকে ১০১ দশমিক ৭০ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। ২০২৮ সালের এপ্রিলের মধ্যে প্রায় ৬৪ মিলিয়ন ডলারের আরও আটটি কিস্তি পরিশোধ করতে হবে। কিন্তু গত কয়েক বছরে ডলারের বিপরীতে টাকার ৪০ শতাংশ অবমূল্যায়নের কারণে বিটিআরসির ওপর ঋণ পরিশোধের বোঝা আরও জেঁকে বসেছে। এখন বিটিআরসিকে প্রতি বছর দুই কিস্তিতে ১৯০ কোটি টাকা থেকে ২০০ কোটি টাকা পরিশোধ করতে হয়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিটিআরসির একজন শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, আমরা জানি না কেন আমরা কোনো আর্থিক সামর্থ্য ছাড়াই জনগণের এই বিপুল পরিমাণ টাকা দিতে রাজি হয়েছিলাম- ব্যাপারটা অনেকটা এমন যেন টাকার মূল্য কাঁঠাল পাতার সমান হয়ে গেছে এবং আমরা এমন এক ছাগলকে সেটা খাওয়াচ্ছি যা আমাদের কোনো উপকারেই আসবে না।

এদিকে, স্যাটেলাইটের আয়ুষ্কাল ১৫ বছর- অর্থাৎ ২০৩৩ সালের পর এর অস্তিত্বই থাকবে না তাই প্রকল্পের খরচ পুনরুদ্ধারের সময়ও শেষ হয়ে যাচ্ছে। এ খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটের কারণে সরকারের দেড় হাজার কোটি টাকারও বেশি ক্ষতি হতে চলেছে। এই স্যাটেলাইটের বেশিরভাগ গ্রাহক স্থানীয় টিভি স্টেশন যাদের থেকে এই বিশাল প্রকল্পের ব্যয় তোলা সম্ভব নয়।

বিটিআরসির আরেকজন কর্মকর্তা বলেন, আপনি যখন ক কোম্পানির সম্পদ খ কোম্পানির কাছে হস্তান্তর করবেন, তখন অ্যাকাউন্টিং নীতি অনুসারে খ কোম্পানি সমস্ত খরচ বহন করার কথা। কিন্তু এখানে, বিটিআরসি স্যাটেলাইটটি বিএসসিএলের কাছে হস্তান্তর করলেও এখনো তার ঋণ পরিশোধ করে যাচ্ছে।

বিএসসিএলের সদ্য বিদায়ী চেয়ারম্যান শাহজাহান মাহমুদ এই বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। অন্যদিকে বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মো. জহিরুল ইসলামের ফোনে টেক্সট মেসেজ করা হলে তিনি তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য করেননি।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত স্যাটেলাইট প্রকল্পটি পর্যালোচনা করা। আর্থিক কার্যকারিতা এবং লাভজনক কিনা সেটা যথাযথভাবে মূল্যায়ন করার পরে প্রকল্পটি নেওয়া হয়েছিল নাকি শুধুমাত্র মর্যাদা বাড়ানোর জন্যই এটি করা হয়েছিল তা পুনর্মূল্যায়ন করা উচিত।

তিনি আরও বলেন, আমাদের নিজস্ব স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের চেয়ে বাইরের উৎস থেকে স্যাটেলাইট পরিষেবা নেয়া বেশি লাভজনক ছিল কিনা এবং তা নির্ধারণের জন্য ব্যয় অনুপাতে প্রাপ্য সুবিধা বিশ্লেষণ করা হয়েছিল কিনা? যে সময়ে প্রকল্পটি ভাবা হয়েছিল, তখন কি এর আর্থিক সম্ভাব্যতা এবং ব্যয় অনুপাতে সুবিধার পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে মূল্যায়ন করা হয়েছিল?

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন বিশেষজ্ঞ বলেন, সম্ভাব্যতা যাচাই ত্রুটিপূর্ণ ছিল এবং এতে বাজারের চাহিদা, প্রতিযোগিতা এবং রাজস্ব সম্ভাবনাকে অতি মূল্যায়নসহ বেশ কয়েকটি বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে করা হয়েছিল। যা পুরো প্রকল্প পরিকল্পনায় প্রভাব ফেলে। এতে বলা হয় স্যাটেলাইটের সক্ষমতা ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন, সার্কভুক্ত দেশসমূহ, কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান, তাজিকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান ও উজবেকিস্তানের কাছে বিক্রি করা যাবে। তবে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের সাত বছরেও বাংলাদেশ এসব দেশে বাজার তৈরি করতে পারেনি।

বিএসসিএল সম্প্রতি মন্ত্রণালয়ে উপস্থাপিত একটি নথি অনুসারে, স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের আগে এই দেশগুলির সাথে ফ্রিকোয়েন্সি সমন্বয় করা উচিত ছিল বলে বলা হয়েছে। ফলে এসব দেশে ল্যান্ডিং রাইটস পাচ্ছে না বাংলাদেশ। ফ্রান্সভিত্তিক থ্যালেস অ্যালেনিয়া স্পেসের তৈরি স্যাটেলাইটটি সক্ষমতার চেয়ে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কম ব্যবহার করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত সি-ব্যান্ড ফ্রিকোয়েন্সির মাত্র ৫৯ শতাংশ বিক্রি হয়েছে এবং কেইউ-ব্যান্ডের ২৫ শতাংশ বিক্রি করা সম্ভব হয়েছে। সি-ব্যান্ড বৃষ্টিতে ভালো করলেও এর জন্য বড় অ্যান্টেনার প্রয়োজন হয়, অন্যদিকে কেইউ-ব্যান্ড বেশি ব্যান্ডউইডথ দিতে পারলেও আবহাওয়া খারাপ থাকলে এর কাজ ব্যাহত হয়।

তিনি আরও বলেন, অরবিটাল স্লটের জন্য রাশিয়াকে ৩৬ মিলিয়ন ডলার দিয়েছে বাংলাদেশ। শিল্প বিশেষজ্ঞদের মতে, এই পেমেন্ট অনেক বেশি ছিল। এই ধরনের স্লটের জন্য সাধারণত ৮ থেকে ১০ মিলিয়ন ডলার দেয়া হয়। ফ্রিকোয়েন্সি সমন্বয় এবং পরিকল্পনার ব্যর্থতা ফলে এই প্রকল্প ব্যয়বহুল হয়েছিল। আরও ভালো ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে যা এড়ানো যেত। স্যাটেলাইটটি ২০১৭ সালে উড্ডয়নের জন্য নির্ধারিত থাকলেও এক বছর দেরি হয়। এতে প্রায় ২০০ কোটি টাকার অপ্রয়োজনীয় খরচ হয়েছে।

দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কারে গঠিত কমিটির প্রধান ইফতেখারুজ্জামান বলেন, অডিটের তথ্য অনুযায়ী, স্যাটেলাইটটি এখন নিঃসন্দেহে বিপুল ব্যয়ের যেসব প্রকল্প রয়েছে সেই তালিকার একটিতে পরিণত হয়েছে। এই প্রকল্পের বোঝা এখন জনগণের উপর চাপানো হচ্ছে, এবং সেই বোঝা দিন দিন বাড়ছে। যেহেতু এই প্রকল্পটি একটি কর্তৃত্ববাদী সরকারের আমলে অনুমোদিত হয়েছিল যার কোনো জবাবদিহিতা ছিল না, তাই এখন সময় এসেছে শীর্ষ কর্মকর্তারা যারা এই প্রক্রিয়ায় জড়িত ছিলেন তাদেরকে জবাবদিহিতার আওতায় আনা।

তবে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত শীর্ষ কর্মকর্তাদের বিগত সরকার পুরস্কৃত করেছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, শ্যাম সুন্দর সিকদার, যিনি প্রকল্পটি চালু করার সময় টেলিযোগাযোগ সচিব ছিলেন, তাকে পরে বিটিআরসির চেয়ারম্যান করা হয় এবং শাহজাহান মাহমুদকে পরে স্যাটেলাইট প্রকল্প বাস্তবায়নকারী কর্তৃপক্ষ বিটিআরসির চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা করা হয়।

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

আপডেট সময় ০৮:২৫:১৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪
৮৮ বার পড়া হয়েছে

বাংলাদেশের মানুষ কল্পনাও করেনি যে কেবল চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে গড়ে ওঠা আন্দোলনই শেষ পর্যন্ত ‘জুলাই বিদ্রোহে’ রূপ নেবে। গত বছরের ১ জুলাই বাংলাদেশ এক অবিশ্বাস্য ঘটনার সাক্ষী হয়। এদিন শিক্ষার্থীদের ‘কোটা সংস্কার আন্দোলন’ ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে’ রূপ নেয়। এটি ছিল প্রায় ১৬ বছরের স্বৈরতান্ত্রিক আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের সূচনাবিন্দু। মানুষ কল্পনাও করেনি যে শুরুতে কেবল চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে গড়ে ওঠা আন্দোলনই শেষ পর্যন্ত ‘জুলাই বিদ্রোহে’ রূপ নেবে, শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ একত্রিত হয়ে সরকারের বিরুদ্ধে বৃহত্তর গণআন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়বে। ছাত্রদের এই অসন্তোষের সূচনা ঘটে ২০১৮ সালের কোটা বাতিলের সরকারি প্রজ্ঞাপনকে হাইকোর্ট কর্তৃক অবৈধ ঘোষণা করার রায়ের পর। সরকার ২০১৮ সালে তীব্র ছাত্র আন্দোলনের চাপে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিল করেছিল। কিন্তু হাইকোর্টের রায়ে ৫৬ শতাংশ কোটা পুনঃপ্রবর্তিত হয়, যাতে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য ৩০ শতাংশ, নারীদের জন্য ১০ শতাংশ, পশ্চাৎপদ জেলার জন্য ১০ শতাংশ, সংখ্যালঘুদের জন্য ৫ শতাংশ এবং প্রতিবন্ধীদের জন্য ১ শতাংশ বরাদ্দ করা হয়। ছাত্ররা এই ব্যবস্থাকে মেধাবীদের প্রতি বৈষম্য হিসেবে মনে করে প্রতিবাদে রাস্তায় নামে। সরকার প্রতিবাদকারীদের কঠোরভাবে দমন করতে চাইলে পরিস্থিতি বিদ্রোহে রূপ নেয়। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সরকারপন্থী সন্ত্রাসীরা একযোগে আক্রমণ চালালে অন্তত ১ হাজার ৪০০ জন নিহত এবং প্রায় ২০ হাজার জন আহত হয়। স্বাধীনতা পরবর্তী ইতিহাসে এটা ছিল সবচেয়ে নিষ্ঠুর দমনপীড়ন। অনেকে বিশ্বাস করেন, এই জুলাই বিদ্রোহের মধ্য দিয়েই ২০০৮ সাল থেকে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ সরকারের পতন অনিবার্য হয়ে ওঠে। ২০২৪ সালের ১ জুলাই এই আন্দোলন পুরো মাত্রায় শুরু হলেও এর গোড়াপত্তন ঘটে ৫ জুন। ওইদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থীরা হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় রাস্তায় নামে। আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক এবং বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া তার ‘জুলাই : মাতৃভূমি অথবা মৃত্যু’ বইতে লিখেছেন, ‘৫ জুন বিকেলে আমি ঢাকা মেডিকেল কলেজের পাশে চানখারপুলে স্কুটি মেরামত করাচ্ছিলাম। তখন ফেসবুকে দেখি- হাইকোর্ট কোটা পুনর্বহাল করেছে। মনে হলো ২০১৮ সালের অর্জনগুলো ধূলিসাৎ হয়ে যাচ্ছে।’ এরপর কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিয়ে এক বৈঠকের মাধ্যমে প্রতিবাদ কর্মসূচির সূচনা হয়। রাত সাড়ে ৭টায় ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী’ ব্যানারে একটি মিছিল বের হয় এবং সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মধ্যদিয়ে তা শেষ হয়। এই সমাবেশে তারা হাইকোর্টের রায়কে ‘মেধাবীদের সাথে তামাশা’ বলে প্রত্যাখ্যান করে। সমাবেশে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র, বর্তমানে জাতীয় নাগরিক পার্টি- এনসিপির প্রধান নাহিদ ইসলাম পরদিন ৬ জুন বিকেল ৫টায় রাজু ভাস্কর্যে সমাবেশের ঘোষণা দেন। প্রায় পাঁচ থেকে ছয় শ’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ওই মিছিলে অংশ নেয় এবং স্লোগান দেয়- ‘কোটা পদ্ধতি মানি না’, ‘হাইকোর্টের রায় মানি না’, ‘কোটা বাতিল করতেই হবে’। আসিফের বক্তব্যের সাথে একমত প্রকাশ করে নাহিদও ৫ জুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে তাদের প্রথম বৈঠকের কথা এবং কিভাবে সাধারণ শিক্ষার্থীদের আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আন্দোলনে সম্পৃক্ত করতে পেরেছিলেন তা স্মরণ করেন। নাহিদ পরে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বলেন, ‘আমরা ঈদুল আজহার ছুটির আগে মাত্র তিন দিন আন্দোলনের সুযোগ পেয়েছিলাম।’ ৬ জুন ঢাবি, জাহাঙ্গীরনগর, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, জগন্নাথসহ দেশের বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীরা কোটা বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ করে। ৯ জুন শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মিছিল করে অ্যাটর্নি জেনারেল বরাবর একটি স্মারকলিপি জমা দেয়। এর প্রেক্ষিতে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল বিভাগে রায় স্থগিত চেয়ে আবেদন করে। শুনানির দিন ধার্য হয় ৪ জুলাই। ১০ জুন আবারো মিছিল হয় এবং শিক্ষার্থীরা সরকারকে ৩০ জুনের মধ্যে ২০১৮ সালের প্রজ্ঞাপন পুনর্বহাল করতে আল্টিমেটাম দেয়, না হলে সর্বাত্মক আন্দোলন শুরু করার ঘোষণা দেয়। আসিফ স্মরণ করেন, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় ৩০ জুন পর্যন্ত ঈদের ছুটি ঘোষণা করেছিল, তাই আমরা সেই দিনটিকে আল্টিমেটামের সময়সীমা হিসেবে নির্ধারণ করি। আমরা সরকারকে সতর্কও করেছিলাম- যদি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আমাদের দাবি পূরণ না হয়, তাহলে আমরা আবার আন্দোলন শুরু করব।’ ৩০ জুন সরকারের পক্ষ থেকে কোনো ঘোষণা না আসায় ১ জুলাই ঢাবি, জগন্নাথ, জাবি, রাবি, চবি, বরিশাল ও কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারাদেশের শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নেমে পড়ে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কিছু সময়ের জন্য ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর ব্যানারে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার প্রাঙ্গণ থেকে একটি মিছিল বের করে, যা রাজু ভাস্কর্যে শেষ হয়। সমাবেশ থেকে নাহিদ ইসলাম ঘোষণা দেন, আগামী ৪ জুলাই পর্যন্ত দেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে শ্রেণিকক্ষে পাঠদান ও পরীক্ষার বর্জন চলবে। তিনি তিন দিনের কর্মসূচিও ঘোষণা করেন- ২ জুলাই দেশব্যাপী মহাসড়কে মিছিল, ৩ ও ৪ জুলাই রাজধানীর রাজু ভাস্কর্যে, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সাত সরকারি কলেজ এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতাধীন অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের সমাবেশ। সমাবেশে নাহিদ ইসলাম ঘোষণা দেন- ৪ জুলাই পর্যন্ত দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন চলবে। সেই সাথে তিনি চারটি দাবি উত্থাপন করেন- ১. দ্রুত কোটা সংস্কারে কমিশন গঠন, যেন পশ্চাৎপদ জনগোষ্ঠী উপকৃত হয়। ২. কোটা পূরণ না হলে মেধাভিত্তিক নিয়োগ নিশ্চিত করা। ৩. নিয়োগে একাধিকবার কোটা সুবিধা ব্যবহার বন্ধ করা। ৪. প্রশাসনে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা।

বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটে বছরে লোকসান ৬৬ কোটি টাকা

আপডেট সময় ০৮:২৫:১৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪

আওয়ামী লীগ সরকারের সবচেয়ে ব্যয়বহুল প্রকল্পের একটি বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট। ওই স্যাটেলাইট পরিচালনার জন্য গঠিত রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোম্পানি বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেড (বিএসসিএল) রাষ্ট্রীয় কোষাগারে এক পয়সাও জমা দিতে পারেনি। উল্টো বিএসসিএলের বছরে লোকসান হচ্ছে ৬৬ কোটি টাকা। তবে সবমিলিয়ে সরকারের ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়াতে পারে দেড় হাজার কোটি টাকারও বেশি।

বিএসসিএলের অডিট রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০১৮ ও ২০১৯ সালে ১৯ কোটি টাকা লোকসান দিয়েছে বিএসসিএল। এরপর ২০২০, ২০২১ ও ২০২২ সালে ১৮৭ কোটি টাকা মুনাফা করেছে। ২০২৩ ও ২০২৪ সালের অডিট রিপোর্ট এখনও প্রকাশ করা হয়নি এবং বিএসসিএল দুই বছর কোনো আর্থিক বিবরণীও প্রকাশ করেনি।

জানা গেছে, ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে পরিকল্পনা কমিশনের কিছু আপত্তি সত্ত্বেও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২ হাজার ৯৬৮ কোটি টাকার এই প্রকল্প অনুমোদন করেন, যার ব্যয় পরে কমে ২ হাজার ৭৬৫ কোটি টাকায় এসে দাঁড়ায়। এর মধ্যে এই প্রকল্পে সরকার দিয়েছে ১ হাজার ৪০৬ কোটি টাকা এবং এইচএসবিসি ব্যাংকের কাছ থেকে ১২ বছর মেয়াদে প্রায় ১৫৫ মিলিয়ন ইউরো ঋণ নিয়েছে। ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে যখন এই চুক্তি স্বাক্ষর হয়, তখন ১৫৫ মিলিয়ন ইউরোর পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকা।

এর মধ্যে প্রকল্পটি সম্পন্ন করার পর ২০১৮ সালে নবগঠিত বিএসসিএলের কাছে স্যাটেলাইটটি হস্তান্তর করে বিটিআরসি। তবে বিটিআরসির ২০২১ সালের নিরীক্ষা প্রতিবেদন অনুযায়ী, যেহেতু এইচএসবিসির সঙ্গে বিটিআরসির মধ্যে ঋণচুক্তি সই হয়েছিল, সেহেতু এই সম্পদের হিসেবও বিটিআরসির কাছেই রাখতে হচ্ছে, যদিও ভবিষ্যতে এ প্রকল্প থেকে কোনো সুফল আসবে না।

এর ফলে ২০১৮ সালের মে মাসে স্পেসএক্সের ফ্যালকন ৯ রকেটের মাধ্যমে উৎক্ষেপণ করা স্যাটেলাইটের জন্য প্রতি ছয় মাসে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) এইচএসবিসিকে প্রায় ৮৫ লাখ ডলার পরিশোধ করতে হয়। এপ্রিল পর্যন্ত সুদসহ ১২টি কিস্তিতে এইচএসবিসিকে ১০১ দশমিক ৭০ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। ২০২৮ সালের এপ্রিলের মধ্যে প্রায় ৬৪ মিলিয়ন ডলারের আরও আটটি কিস্তি পরিশোধ করতে হবে। কিন্তু গত কয়েক বছরে ডলারের বিপরীতে টাকার ৪০ শতাংশ অবমূল্যায়নের কারণে বিটিআরসির ওপর ঋণ পরিশোধের বোঝা আরও জেঁকে বসেছে। এখন বিটিআরসিকে প্রতি বছর দুই কিস্তিতে ১৯০ কোটি টাকা থেকে ২০০ কোটি টাকা পরিশোধ করতে হয়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিটিআরসির একজন শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, আমরা জানি না কেন আমরা কোনো আর্থিক সামর্থ্য ছাড়াই জনগণের এই বিপুল পরিমাণ টাকা দিতে রাজি হয়েছিলাম- ব্যাপারটা অনেকটা এমন যেন টাকার মূল্য কাঁঠাল পাতার সমান হয়ে গেছে এবং আমরা এমন এক ছাগলকে সেটা খাওয়াচ্ছি যা আমাদের কোনো উপকারেই আসবে না।

এদিকে, স্যাটেলাইটের আয়ুষ্কাল ১৫ বছর- অর্থাৎ ২০৩৩ সালের পর এর অস্তিত্বই থাকবে না তাই প্রকল্পের খরচ পুনরুদ্ধারের সময়ও শেষ হয়ে যাচ্ছে। এ খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটের কারণে সরকারের দেড় হাজার কোটি টাকারও বেশি ক্ষতি হতে চলেছে। এই স্যাটেলাইটের বেশিরভাগ গ্রাহক স্থানীয় টিভি স্টেশন যাদের থেকে এই বিশাল প্রকল্পের ব্যয় তোলা সম্ভব নয়।

বিটিআরসির আরেকজন কর্মকর্তা বলেন, আপনি যখন ক কোম্পানির সম্পদ খ কোম্পানির কাছে হস্তান্তর করবেন, তখন অ্যাকাউন্টিং নীতি অনুসারে খ কোম্পানি সমস্ত খরচ বহন করার কথা। কিন্তু এখানে, বিটিআরসি স্যাটেলাইটটি বিএসসিএলের কাছে হস্তান্তর করলেও এখনো তার ঋণ পরিশোধ করে যাচ্ছে।

বিএসসিএলের সদ্য বিদায়ী চেয়ারম্যান শাহজাহান মাহমুদ এই বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। অন্যদিকে বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মো. জহিরুল ইসলামের ফোনে টেক্সট মেসেজ করা হলে তিনি তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য করেননি।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত স্যাটেলাইট প্রকল্পটি পর্যালোচনা করা। আর্থিক কার্যকারিতা এবং লাভজনক কিনা সেটা যথাযথভাবে মূল্যায়ন করার পরে প্রকল্পটি নেওয়া হয়েছিল নাকি শুধুমাত্র মর্যাদা বাড়ানোর জন্যই এটি করা হয়েছিল তা পুনর্মূল্যায়ন করা উচিত।

তিনি আরও বলেন, আমাদের নিজস্ব স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের চেয়ে বাইরের উৎস থেকে স্যাটেলাইট পরিষেবা নেয়া বেশি লাভজনক ছিল কিনা এবং তা নির্ধারণের জন্য ব্যয় অনুপাতে প্রাপ্য সুবিধা বিশ্লেষণ করা হয়েছিল কিনা? যে সময়ে প্রকল্পটি ভাবা হয়েছিল, তখন কি এর আর্থিক সম্ভাব্যতা এবং ব্যয় অনুপাতে সুবিধার পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে মূল্যায়ন করা হয়েছিল?

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন বিশেষজ্ঞ বলেন, সম্ভাব্যতা যাচাই ত্রুটিপূর্ণ ছিল এবং এতে বাজারের চাহিদা, প্রতিযোগিতা এবং রাজস্ব সম্ভাবনাকে অতি মূল্যায়নসহ বেশ কয়েকটি বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে করা হয়েছিল। যা পুরো প্রকল্প পরিকল্পনায় প্রভাব ফেলে। এতে বলা হয় স্যাটেলাইটের সক্ষমতা ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন, সার্কভুক্ত দেশসমূহ, কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান, তাজিকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান ও উজবেকিস্তানের কাছে বিক্রি করা যাবে। তবে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের সাত বছরেও বাংলাদেশ এসব দেশে বাজার তৈরি করতে পারেনি।

বিএসসিএল সম্প্রতি মন্ত্রণালয়ে উপস্থাপিত একটি নথি অনুসারে, স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের আগে এই দেশগুলির সাথে ফ্রিকোয়েন্সি সমন্বয় করা উচিত ছিল বলে বলা হয়েছে। ফলে এসব দেশে ল্যান্ডিং রাইটস পাচ্ছে না বাংলাদেশ। ফ্রান্সভিত্তিক থ্যালেস অ্যালেনিয়া স্পেসের তৈরি স্যাটেলাইটটি সক্ষমতার চেয়ে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কম ব্যবহার করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত সি-ব্যান্ড ফ্রিকোয়েন্সির মাত্র ৫৯ শতাংশ বিক্রি হয়েছে এবং কেইউ-ব্যান্ডের ২৫ শতাংশ বিক্রি করা সম্ভব হয়েছে। সি-ব্যান্ড বৃষ্টিতে ভালো করলেও এর জন্য বড় অ্যান্টেনার প্রয়োজন হয়, অন্যদিকে কেইউ-ব্যান্ড বেশি ব্যান্ডউইডথ দিতে পারলেও আবহাওয়া খারাপ থাকলে এর কাজ ব্যাহত হয়।

তিনি আরও বলেন, অরবিটাল স্লটের জন্য রাশিয়াকে ৩৬ মিলিয়ন ডলার দিয়েছে বাংলাদেশ। শিল্প বিশেষজ্ঞদের মতে, এই পেমেন্ট অনেক বেশি ছিল। এই ধরনের স্লটের জন্য সাধারণত ৮ থেকে ১০ মিলিয়ন ডলার দেয়া হয়। ফ্রিকোয়েন্সি সমন্বয় এবং পরিকল্পনার ব্যর্থতা ফলে এই প্রকল্প ব্যয়বহুল হয়েছিল। আরও ভালো ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে যা এড়ানো যেত। স্যাটেলাইটটি ২০১৭ সালে উড্ডয়নের জন্য নির্ধারিত থাকলেও এক বছর দেরি হয়। এতে প্রায় ২০০ কোটি টাকার অপ্রয়োজনীয় খরচ হয়েছে।

দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কারে গঠিত কমিটির প্রধান ইফতেখারুজ্জামান বলেন, অডিটের তথ্য অনুযায়ী, স্যাটেলাইটটি এখন নিঃসন্দেহে বিপুল ব্যয়ের যেসব প্রকল্প রয়েছে সেই তালিকার একটিতে পরিণত হয়েছে। এই প্রকল্পের বোঝা এখন জনগণের উপর চাপানো হচ্ছে, এবং সেই বোঝা দিন দিন বাড়ছে। যেহেতু এই প্রকল্পটি একটি কর্তৃত্ববাদী সরকারের আমলে অনুমোদিত হয়েছিল যার কোনো জবাবদিহিতা ছিল না, তাই এখন সময় এসেছে শীর্ষ কর্মকর্তারা যারা এই প্রক্রিয়ায় জড়িত ছিলেন তাদেরকে জবাবদিহিতার আওতায় আনা।

তবে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত শীর্ষ কর্মকর্তাদের বিগত সরকার পুরস্কৃত করেছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, শ্যাম সুন্দর সিকদার, যিনি প্রকল্পটি চালু করার সময় টেলিযোগাযোগ সচিব ছিলেন, তাকে পরে বিটিআরসির চেয়ারম্যান করা হয় এবং শাহজাহান মাহমুদকে পরে স্যাটেলাইট প্রকল্প বাস্তবায়নকারী কর্তৃপক্ষ বিটিআরসির চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা করা হয়।