ঢাকা ১১:০৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫, ২০ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
Logo শায়েস্তাগঞ্জ থানার সাবেক ওসি কামালের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা: সাংবাদিকসহ ২ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ Logo হবিগঞ্জে ছুরিকাঘাতে এসএসসি পরীক্ষার্থী নিহত Logo শেখ হাসিনাকে ৬ মাসের কারাদণ্ড Logo নবীগঞ্জে দুর্ঘটনা, নারীসহ নিহত ২ Logo মাধবপুর বাস ও পিকআপের মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত ১, আহত ২০ Logo হবিগঞ্জে ভুয়া চিকিৎসকের একমাসের কারাদণ্ড Logo স্বৈরাচার পতনে ১৬ বছর অপেক্ষা নয়, তাৎক্ষণিক প্রতিরোধ গড়ার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার Logo বাংলাদেশের মানুষ কল্পনাও করেনি যে কেবল চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে গড়ে ওঠা আন্দোলনই শেষ পর্যন্ত ‘জুলাই বিদ্রোহে’ রূপ নেবে। গত বছরের ১ জুলাই বাংলাদেশ এক অবিশ্বাস্য ঘটনার সাক্ষী হয়। এদিন শিক্ষার্থীদের ‘কোটা সংস্কার আন্দোলন’ ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে’ রূপ নেয়। এটি ছিল প্রায় ১৬ বছরের স্বৈরতান্ত্রিক আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের সূচনাবিন্দু। মানুষ কল্পনাও করেনি যে শুরুতে কেবল চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে গড়ে ওঠা আন্দোলনই শেষ পর্যন্ত ‘জুলাই বিদ্রোহে’ রূপ নেবে, শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ একত্রিত হয়ে সরকারের বিরুদ্ধে বৃহত্তর গণআন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়বে। ছাত্রদের এই অসন্তোষের সূচনা ঘটে ২০১৮ সালের কোটা বাতিলের সরকারি প্রজ্ঞাপনকে হাইকোর্ট কর্তৃক অবৈধ ঘোষণা করার রায়ের পর। সরকার ২০১৮ সালে তীব্র ছাত্র আন্দোলনের চাপে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিল করেছিল। কিন্তু হাইকোর্টের রায়ে ৫৬ শতাংশ কোটা পুনঃপ্রবর্তিত হয়, যাতে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য ৩০ শতাংশ, নারীদের জন্য ১০ শতাংশ, পশ্চাৎপদ জেলার জন্য ১০ শতাংশ, সংখ্যালঘুদের জন্য ৫ শতাংশ এবং প্রতিবন্ধীদের জন্য ১ শতাংশ বরাদ্দ করা হয়। ছাত্ররা এই ব্যবস্থাকে মেধাবীদের প্রতি বৈষম্য হিসেবে মনে করে প্রতিবাদে রাস্তায় নামে। সরকার প্রতিবাদকারীদের কঠোরভাবে দমন করতে চাইলে পরিস্থিতি বিদ্রোহে রূপ নেয়। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সরকারপন্থী সন্ত্রাসীরা একযোগে আক্রমণ চালালে অন্তত ১ হাজার ৪০০ জন নিহত এবং প্রায় ২০ হাজার জন আহত হয়। স্বাধীনতা পরবর্তী ইতিহাসে এটা ছিল সবচেয়ে নিষ্ঠুর দমনপীড়ন। অনেকে বিশ্বাস করেন, এই জুলাই বিদ্রোহের মধ্য দিয়েই ২০০৮ সাল থেকে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ সরকারের পতন অনিবার্য হয়ে ওঠে। ২০২৪ সালের ১ জুলাই এই আন্দোলন পুরো মাত্রায় শুরু হলেও এর গোড়াপত্তন ঘটে ৫ জুন। ওইদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থীরা হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় রাস্তায় নামে। আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক এবং বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া তার ‘জুলাই : মাতৃভূমি অথবা মৃত্যু’ বইতে লিখেছেন, ‘৫ জুন বিকেলে আমি ঢাকা মেডিকেল কলেজের পাশে চানখারপুলে স্কুটি মেরামত করাচ্ছিলাম। তখন ফেসবুকে দেখি- হাইকোর্ট কোটা পুনর্বহাল করেছে। মনে হলো ২০১৮ সালের অর্জনগুলো ধূলিসাৎ হয়ে যাচ্ছে।’ এরপর কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিয়ে এক বৈঠকের মাধ্যমে প্রতিবাদ কর্মসূচির সূচনা হয়। রাত সাড়ে ৭টায় ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী’ ব্যানারে একটি মিছিল বের হয় এবং সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মধ্যদিয়ে তা শেষ হয়। এই সমাবেশে তারা হাইকোর্টের রায়কে ‘মেধাবীদের সাথে তামাশা’ বলে প্রত্যাখ্যান করে। সমাবেশে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র, বর্তমানে জাতীয় নাগরিক পার্টি- এনসিপির প্রধান নাহিদ ইসলাম পরদিন ৬ জুন বিকেল ৫টায় রাজু ভাস্কর্যে সমাবেশের ঘোষণা দেন। প্রায় পাঁচ থেকে ছয় শ’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ওই মিছিলে অংশ নেয় এবং স্লোগান দেয়- ‘কোটা পদ্ধতি মানি না’, ‘হাইকোর্টের রায় মানি না’, ‘কোটা বাতিল করতেই হবে’। আসিফের বক্তব্যের সাথে একমত প্রকাশ করে নাহিদও ৫ জুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে তাদের প্রথম বৈঠকের কথা এবং কিভাবে সাধারণ শিক্ষার্থীদের আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আন্দোলনে সম্পৃক্ত করতে পেরেছিলেন তা স্মরণ করেন। নাহিদ পরে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বলেন, ‘আমরা ঈদুল আজহার ছুটির আগে মাত্র তিন দিন আন্দোলনের সুযোগ পেয়েছিলাম।’ ৬ জুন ঢাবি, জাহাঙ্গীরনগর, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, জগন্নাথসহ দেশের বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীরা কোটা বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ করে। ৯ জুন শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মিছিল করে অ্যাটর্নি জেনারেল বরাবর একটি স্মারকলিপি জমা দেয়। এর প্রেক্ষিতে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল বিভাগে রায় স্থগিত চেয়ে আবেদন করে। শুনানির দিন ধার্য হয় ৪ জুলাই। ১০ জুন আবারো মিছিল হয় এবং শিক্ষার্থীরা সরকারকে ৩০ জুনের মধ্যে ২০১৮ সালের প্রজ্ঞাপন পুনর্বহাল করতে আল্টিমেটাম দেয়, না হলে সর্বাত্মক আন্দোলন শুরু করার ঘোষণা দেয়। আসিফ স্মরণ করেন, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় ৩০ জুন পর্যন্ত ঈদের ছুটি ঘোষণা করেছিল, তাই আমরা সেই দিনটিকে আল্টিমেটামের সময়সীমা হিসেবে নির্ধারণ করি। আমরা সরকারকে সতর্কও করেছিলাম- যদি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আমাদের দাবি পূরণ না হয়, তাহলে আমরা আবার আন্দোলন শুরু করব।’ ৩০ জুন সরকারের পক্ষ থেকে কোনো ঘোষণা না আসায় ১ জুলাই ঢাবি, জগন্নাথ, জাবি, রাবি, চবি, বরিশাল ও কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারাদেশের শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নেমে পড়ে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কিছু সময়ের জন্য ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর ব্যানারে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার প্রাঙ্গণ থেকে একটি মিছিল বের করে, যা রাজু ভাস্কর্যে শেষ হয়। সমাবেশ থেকে নাহিদ ইসলাম ঘোষণা দেন, আগামী ৪ জুলাই পর্যন্ত দেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে শ্রেণিকক্ষে পাঠদান ও পরীক্ষার বর্জন চলবে। তিনি তিন দিনের কর্মসূচিও ঘোষণা করেন- ২ জুলাই দেশব্যাপী মহাসড়কে মিছিল, ৩ ও ৪ জুলাই রাজধানীর রাজু ভাস্কর্যে, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সাত সরকারি কলেজ এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতাধীন অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের সমাবেশ। সমাবেশে নাহিদ ইসলাম ঘোষণা দেন- ৪ জুলাই পর্যন্ত দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন চলবে। সেই সাথে তিনি চারটি দাবি উত্থাপন করেন- ১. দ্রুত কোটা সংস্কারে কমিশন গঠন, যেন পশ্চাৎপদ জনগোষ্ঠী উপকৃত হয়। ২. কোটা পূরণ না হলে মেধাভিত্তিক নিয়োগ নিশ্চিত করা। ৩. নিয়োগে একাধিকবার কোটা সুবিধা ব্যবহার বন্ধ করা। ৪. প্রশাসনে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা। Logo হবিগঞ্জে শুঁটকি উৎপাদনে ভাটা Logo নবীগঞ্জ মসজিদে মাইকিং করে পুলিশের ওপর হামলা, আসামি ছিনতাই আটক ১৩

শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা, দেশের বিভিন্ন স্থানে সড়ক অবরোধ

শায়েস্তাগঞ্জের বাণী ডেস্ক ,

কোটা সংস্কারের দাবিতে চলমান আন্দোলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে দেশের বিভিন্ন সড়ক ও মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে।

মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) সকালে বিভিন্ন সড়ক-মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন আন্দোলনকারীরা। সারা দেশে কালবেলা প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যে এসব জানা গেছে।

চট্টগ্রাম:
কোটা সংস্কার ও শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিরা এলাকায় অবরোধ করেছে আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রামের শিক্ষার্থীরা। বেলা ১১টা থেকে অবরোধ শুরু করেন তারা। শিক্ষার্থীদের অবরোধের কারণে ইতোমধ্যে রাস্তার দুপাশে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। এর আগে সকাল সাড়ে ১০টায় রেললাইন অবরোধ করেন আইআইইউসি শিক্ষার্থীরা।

পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের ট্রাফিক কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এতে করে দুটি যাত্রীবাহী ও দুটি মালবাহী ট্রেন লাইনে আটকা পড়েছে।

রাজশাহী:
রাজশাহীর খরখরি বাইপাস এলাকায় অবস্থিত বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে ঢাকা-রাজশাহী বাইপাস মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। সকাল ১০টার পর থেকে তারা এই মহাসড়ক অবরোধ করে রেখেছেন।

জানা গেছে, কোটা সংস্কারের এক দফা দাবি এবং রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে সকাল ১০টা থেকে বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাসের সামনে ঢাকা-রাজশাহী বাইপাস মহাসড়কে অবস্থান নেন বিশ্ববিদ্যালয়টির সহস্রাধিক শিক্ষার্থী। এ সময় তারা কোটা সংস্কারের এক দফা দাবিতে মহাসড়কে বসে পড়েন। এ সময় শিক্ষার্থীদের ‘কোটা না মেধা, মেধা-মেধা’, ‘চেয়েছিলাম অধিকার, হয়ে গেলাম রাজাকার’, ‘তুমি কে, আমি কে-রাজাকার, রাজাকার’, ‘কে বলেছে, কে বলেছে, সরকার সরকার’, ‘লেগেছে রে লেগেছে, রক্তে আগুন লেগেছে’ এমন বিভিন্ন স্লোগান দিতে দেখা গেছে।

বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানান, সাধারণ শিক্ষার্থীরা শান্তিপূর্ণভাবে সারা দেশের বিভিন্ন ক্যাম্পাসে কোটা সংস্কারের আন্দোলন করছিলেন। শিক্ষার্থীদের শান্তিপ্রিয় এই আন্দোলনে ছাত্রলীগ ক্যাডাররা অতর্কিত হামলা চালিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে শত শত শিক্ষার্থীকে গুরুতর আহত করেছে। দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর রাতভর তাণ্ডব চলেছে। আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের পৈশাচিক হামলার তীব্র নিন্দা জানানোর পাশাপাশি আমাদের এক দফা দাবি আদায়ের উদ্দেশ্যে মহাসড়কে অবস্থান নিয়েছে।

ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের এডিসি (বোয়ালিয়া) মো. হাফিজুর ইসলাম। তিনি কালবেলাকে বলেন, শিক্ষার্থীরা মহাসড়কে অবস্থান নিয়েছেন। খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়েছি। যাতে করে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে সেদিকে আমরা কঠোরভাবে নজরদারি করছি।

রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ড. আনন্দ কুমার সাহা বলেন, আমরা শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসের গণ্ডির ভেতরে রাখার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু তারা তা শোনেনি। শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের সামনে ঢাকা-রাজশাহী বাইপাস মহাসড়ক অবরোধ করে রেখেছে। আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করার জন্য ঘটনাস্থলে রয়েছি। শিক্ষার্থীরা বলছে, তারা ৩টা পর্যন্ত ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ করে রাখবে। তারপর তারা মিছিল নিয়ে নগরীর সাহেব বাজারের দিকে রওনা দিবে বলে শিক্ষার্থীরা জানিয়েছে। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের কারণে মহাসড়কের দুই পাশে বেশকিছু যানবাহন আটকা পড়েছিল। পরে সে যানবাহনগুলোকে বিকল্প রাস্তায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

বগুড়া:
কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে ক্লাস বর্জন করে ঢাকা-রংপুর মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজের (শজিমেক) শিক্ষার্থীরা।

বেলা ১১টার দিকে মেডিকেল কলেজ ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে তারা মহাসড়ক অবরোধ করেন। পরে প্রায় ৪৫ মিনিট পর মেডিকেল কলেজের শিক্ষকরা এসে তাদের বুঝিয়ে কলেজ ক্যাম্পাসে ফিরিয়ে নিয়ে যান। ৪৫ মিনিট পর মহাসড়কে যান চলাচল শুরু করে। বগুড়ার মেডিকেল পুলিশ ফাঁড়ির এসআই আনিসুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানান, শিক্ষার্থীরা হল থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে জড়ো হয়ে ঢাকা-রংপুর মহাসড়ক অবরোধ করেন। এরপর ‘কোটা প্রথা নিপাত যাক’, ‘উই ওয়ান্ট জাসটিস’- লেখা সংবলিত প্ল্যাকার্ড নিয়ে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেন। এ সময় তারা বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দেন।

এর আগে সোমবার (১৫ জুলাই) রাত সাড়ে ১০টায় কলেজচত্বরে বিক্ষোভ করেন শজিমেক শিক্ষার্থীরা। এ সময় সমাবেশে শিক্ষার্থীরা সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর চালানো হামলার ঘটনায় নিন্দা জানান।

এ সময় তারা বলেন, কোটা একটি অভিশাপ। স্বাধীনতার ৫৩ বছর পরও ৫৬ শতাংশ কোটা একটি অনার্য ব্যবস্থাপনার ফল। আমরা চাই সরকার কোটা সংস্কার করে একটি যৌক্তিক পর্যায়ে নিয়ে আসুক।

ময়মনসিংহ:
সারা দেশে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা, বক্তব্য প্রত্যাহার ও কোটা প্রথার যৌক্তিক সমাধানের দাবিতে ময়মনসিংহে বিক্ষোভ চলছে। ময়মনসিংহ-টাঙ্গাইল সড়কের প্রবেশ মুখ নগরের টাউনহল মোড় এলাকা অবরোধ করছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। এতে বিভিন্ন স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অন্তত তিন হাজার শিক্ষার্থী অংশ নিয়েছেন। বেলা ১১টায় টাউন হল এলাকায় বিক্ষোভ শুরু হয়। সোমবার দিনভর ও রাতে অনলাইন ক্যাম্পেইন শেষে জড়ো হয় সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

বেলা ১১টায় নির্ধারিত সময় থাকলেও তার আগেই জড়ো হতে থাকেন শিক্ষার্থীরা। স্লোগান দিয়ে শিক্ষার্থীরা এসে টাউন হলের কর্মসূচিতে যোগ দেন। আনন্দমোহন কলেজ, নাসিরাবাদ কলেজ, মুমিনুন্নিসা সরকারি মহিলা কলেজ, কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়সহ শহরের বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরাও এতে অংশ নেন।

ময়মনসিংহ-টাঙ্গাইল সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ সমাবেশে নেতৃত্ব দেন ছাত্র ইউনিয়ন ময়মনসিংহ জেলা শাখার সভাপতি গোকুল সূত্রধর মানিক। এ সময় আশপাশে বিপুল পুলিশ মোতায়েন ছিল। শিক্ষার্থীদের অবরোধের কারণে টাউন হল এলাকা থেকে শহরের অভ্যন্তরীণ সড়কেও যানচলাচল বন্ধ থাকে।

ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আনোয়ার হোসেন কালবেলাকে বলেন, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের অবরোধের কারণে ময়মনসিংহ-টাঙ্গাইল সড়কের প্রবেশ মুখ অবরুদ্ধ রয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।

যশোর:
কোটা সংস্কারের এক দফা দাবি এবং আন্দোলনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে সকাল সাড়ে ১০টা থেকে খুলনা-যশোর মহাসড়কের নতুন রাস্তা মোড় অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় খুলনা-যশোর মহাসড়ক, মুজগুন্নী মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

এ সময় ‘চেয়েছিলাম অধিকার, হয়ে গেলাম রাজাকার’, ‘কোটা না মেধা, মেধা মেধা’, ‘মুক্তিযুদ্ধের বাংলায়, বৈষম্যের ঠাঁই নাই’- ইত্যাদি স্লোগান দিচ্ছেন বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীরা। তাদের এই আন্দোলনে বেশ কয়েকজন সাধারণ মানুষকেও একাত্মতা প্রকাশ করে স্লোগান দিতে দেখা গেছে।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বলছেন, কোটা আন্দোলন নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য চরম অপমানজনক। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই। একইসঙ্গে শান্তিপূর্ণভাবে চলতে থাকা একটি যৌক্তিক আন্দোলনের উপর পুলিশ ও ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা হামলা করে তাদের রক্তাক্ত করেছে, যা গণতান্ত্রিক আন্দোলনের অন্তরায় ও নিন্দনীয় অপরাধ। তারা এর সুষ্ঠু বিচার চান।

উল্লেখ্য, ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদে মঙ্গলবার বিকেল ৩টায় দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিক্ষোভ মিছিল এবং সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। সোমবার (১৫ জুলাই) রাত সাড়ে ৯টার পর দোয়েল চত্বরে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ প্ল্যাটফর্মের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদুল ইসলাম এই কর্মসূচির ঘোষণা দেন। এরপরও কোটা বাতিল না হলে সারা দেশে অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে জানান তিনি। নাহিদ বলেন, পরিকল্পিতভাবে বহিরাগতদের এনে আমাদের ওপর হামলা চালানো হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর থাকার পরও বহিরাগতরা কীভাবে হামলা করে?

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

আপডেট সময় ০২:৩০:০৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৬ জুলাই ২০২৪
৯৯ বার পড়া হয়েছে

বাংলাদেশের মানুষ কল্পনাও করেনি যে কেবল চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে গড়ে ওঠা আন্দোলনই শেষ পর্যন্ত ‘জুলাই বিদ্রোহে’ রূপ নেবে। গত বছরের ১ জুলাই বাংলাদেশ এক অবিশ্বাস্য ঘটনার সাক্ষী হয়। এদিন শিক্ষার্থীদের ‘কোটা সংস্কার আন্দোলন’ ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে’ রূপ নেয়। এটি ছিল প্রায় ১৬ বছরের স্বৈরতান্ত্রিক আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের সূচনাবিন্দু। মানুষ কল্পনাও করেনি যে শুরুতে কেবল চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে গড়ে ওঠা আন্দোলনই শেষ পর্যন্ত ‘জুলাই বিদ্রোহে’ রূপ নেবে, শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ একত্রিত হয়ে সরকারের বিরুদ্ধে বৃহত্তর গণআন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়বে। ছাত্রদের এই অসন্তোষের সূচনা ঘটে ২০১৮ সালের কোটা বাতিলের সরকারি প্রজ্ঞাপনকে হাইকোর্ট কর্তৃক অবৈধ ঘোষণা করার রায়ের পর। সরকার ২০১৮ সালে তীব্র ছাত্র আন্দোলনের চাপে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিল করেছিল। কিন্তু হাইকোর্টের রায়ে ৫৬ শতাংশ কোটা পুনঃপ্রবর্তিত হয়, যাতে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য ৩০ শতাংশ, নারীদের জন্য ১০ শতাংশ, পশ্চাৎপদ জেলার জন্য ১০ শতাংশ, সংখ্যালঘুদের জন্য ৫ শতাংশ এবং প্রতিবন্ধীদের জন্য ১ শতাংশ বরাদ্দ করা হয়। ছাত্ররা এই ব্যবস্থাকে মেধাবীদের প্রতি বৈষম্য হিসেবে মনে করে প্রতিবাদে রাস্তায় নামে। সরকার প্রতিবাদকারীদের কঠোরভাবে দমন করতে চাইলে পরিস্থিতি বিদ্রোহে রূপ নেয়। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সরকারপন্থী সন্ত্রাসীরা একযোগে আক্রমণ চালালে অন্তত ১ হাজার ৪০০ জন নিহত এবং প্রায় ২০ হাজার জন আহত হয়। স্বাধীনতা পরবর্তী ইতিহাসে এটা ছিল সবচেয়ে নিষ্ঠুর দমনপীড়ন। অনেকে বিশ্বাস করেন, এই জুলাই বিদ্রোহের মধ্য দিয়েই ২০০৮ সাল থেকে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ সরকারের পতন অনিবার্য হয়ে ওঠে। ২০২৪ সালের ১ জুলাই এই আন্দোলন পুরো মাত্রায় শুরু হলেও এর গোড়াপত্তন ঘটে ৫ জুন। ওইদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থীরা হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় রাস্তায় নামে। আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক এবং বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া তার ‘জুলাই : মাতৃভূমি অথবা মৃত্যু’ বইতে লিখেছেন, ‘৫ জুন বিকেলে আমি ঢাকা মেডিকেল কলেজের পাশে চানখারপুলে স্কুটি মেরামত করাচ্ছিলাম। তখন ফেসবুকে দেখি- হাইকোর্ট কোটা পুনর্বহাল করেছে। মনে হলো ২০১৮ সালের অর্জনগুলো ধূলিসাৎ হয়ে যাচ্ছে।’ এরপর কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিয়ে এক বৈঠকের মাধ্যমে প্রতিবাদ কর্মসূচির সূচনা হয়। রাত সাড়ে ৭টায় ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী’ ব্যানারে একটি মিছিল বের হয় এবং সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মধ্যদিয়ে তা শেষ হয়। এই সমাবেশে তারা হাইকোর্টের রায়কে ‘মেধাবীদের সাথে তামাশা’ বলে প্রত্যাখ্যান করে। সমাবেশে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র, বর্তমানে জাতীয় নাগরিক পার্টি- এনসিপির প্রধান নাহিদ ইসলাম পরদিন ৬ জুন বিকেল ৫টায় রাজু ভাস্কর্যে সমাবেশের ঘোষণা দেন। প্রায় পাঁচ থেকে ছয় শ’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ওই মিছিলে অংশ নেয় এবং স্লোগান দেয়- ‘কোটা পদ্ধতি মানি না’, ‘হাইকোর্টের রায় মানি না’, ‘কোটা বাতিল করতেই হবে’। আসিফের বক্তব্যের সাথে একমত প্রকাশ করে নাহিদও ৫ জুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে তাদের প্রথম বৈঠকের কথা এবং কিভাবে সাধারণ শিক্ষার্থীদের আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আন্দোলনে সম্পৃক্ত করতে পেরেছিলেন তা স্মরণ করেন। নাহিদ পরে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বলেন, ‘আমরা ঈদুল আজহার ছুটির আগে মাত্র তিন দিন আন্দোলনের সুযোগ পেয়েছিলাম।’ ৬ জুন ঢাবি, জাহাঙ্গীরনগর, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, জগন্নাথসহ দেশের বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীরা কোটা বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ করে। ৯ জুন শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মিছিল করে অ্যাটর্নি জেনারেল বরাবর একটি স্মারকলিপি জমা দেয়। এর প্রেক্ষিতে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল বিভাগে রায় স্থগিত চেয়ে আবেদন করে। শুনানির দিন ধার্য হয় ৪ জুলাই। ১০ জুন আবারো মিছিল হয় এবং শিক্ষার্থীরা সরকারকে ৩০ জুনের মধ্যে ২০১৮ সালের প্রজ্ঞাপন পুনর্বহাল করতে আল্টিমেটাম দেয়, না হলে সর্বাত্মক আন্দোলন শুরু করার ঘোষণা দেয়। আসিফ স্মরণ করেন, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় ৩০ জুন পর্যন্ত ঈদের ছুটি ঘোষণা করেছিল, তাই আমরা সেই দিনটিকে আল্টিমেটামের সময়সীমা হিসেবে নির্ধারণ করি। আমরা সরকারকে সতর্কও করেছিলাম- যদি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আমাদের দাবি পূরণ না হয়, তাহলে আমরা আবার আন্দোলন শুরু করব।’ ৩০ জুন সরকারের পক্ষ থেকে কোনো ঘোষণা না আসায় ১ জুলাই ঢাবি, জগন্নাথ, জাবি, রাবি, চবি, বরিশাল ও কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারাদেশের শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নেমে পড়ে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কিছু সময়ের জন্য ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর ব্যানারে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার প্রাঙ্গণ থেকে একটি মিছিল বের করে, যা রাজু ভাস্কর্যে শেষ হয়। সমাবেশ থেকে নাহিদ ইসলাম ঘোষণা দেন, আগামী ৪ জুলাই পর্যন্ত দেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে শ্রেণিকক্ষে পাঠদান ও পরীক্ষার বর্জন চলবে। তিনি তিন দিনের কর্মসূচিও ঘোষণা করেন- ২ জুলাই দেশব্যাপী মহাসড়কে মিছিল, ৩ ও ৪ জুলাই রাজধানীর রাজু ভাস্কর্যে, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সাত সরকারি কলেজ এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতাধীন অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের সমাবেশ। সমাবেশে নাহিদ ইসলাম ঘোষণা দেন- ৪ জুলাই পর্যন্ত দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন চলবে। সেই সাথে তিনি চারটি দাবি উত্থাপন করেন- ১. দ্রুত কোটা সংস্কারে কমিশন গঠন, যেন পশ্চাৎপদ জনগোষ্ঠী উপকৃত হয়। ২. কোটা পূরণ না হলে মেধাভিত্তিক নিয়োগ নিশ্চিত করা। ৩. নিয়োগে একাধিকবার কোটা সুবিধা ব্যবহার বন্ধ করা। ৪. প্রশাসনে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা।

শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা, দেশের বিভিন্ন স্থানে সড়ক অবরোধ

আপডেট সময় ০২:৩০:০৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৬ জুলাই ২০২৪

কোটা সংস্কারের দাবিতে চলমান আন্দোলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে দেশের বিভিন্ন সড়ক ও মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে।

মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) সকালে বিভিন্ন সড়ক-মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন আন্দোলনকারীরা। সারা দেশে কালবেলা প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যে এসব জানা গেছে।

চট্টগ্রাম:
কোটা সংস্কার ও শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিরা এলাকায় অবরোধ করেছে আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রামের শিক্ষার্থীরা। বেলা ১১টা থেকে অবরোধ শুরু করেন তারা। শিক্ষার্থীদের অবরোধের কারণে ইতোমধ্যে রাস্তার দুপাশে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। এর আগে সকাল সাড়ে ১০টায় রেললাইন অবরোধ করেন আইআইইউসি শিক্ষার্থীরা।

পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের ট্রাফিক কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এতে করে দুটি যাত্রীবাহী ও দুটি মালবাহী ট্রেন লাইনে আটকা পড়েছে।

রাজশাহী:
রাজশাহীর খরখরি বাইপাস এলাকায় অবস্থিত বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে ঢাকা-রাজশাহী বাইপাস মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। সকাল ১০টার পর থেকে তারা এই মহাসড়ক অবরোধ করে রেখেছেন।

জানা গেছে, কোটা সংস্কারের এক দফা দাবি এবং রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে সকাল ১০টা থেকে বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাসের সামনে ঢাকা-রাজশাহী বাইপাস মহাসড়কে অবস্থান নেন বিশ্ববিদ্যালয়টির সহস্রাধিক শিক্ষার্থী। এ সময় তারা কোটা সংস্কারের এক দফা দাবিতে মহাসড়কে বসে পড়েন। এ সময় শিক্ষার্থীদের ‘কোটা না মেধা, মেধা-মেধা’, ‘চেয়েছিলাম অধিকার, হয়ে গেলাম রাজাকার’, ‘তুমি কে, আমি কে-রাজাকার, রাজাকার’, ‘কে বলেছে, কে বলেছে, সরকার সরকার’, ‘লেগেছে রে লেগেছে, রক্তে আগুন লেগেছে’ এমন বিভিন্ন স্লোগান দিতে দেখা গেছে।

বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানান, সাধারণ শিক্ষার্থীরা শান্তিপূর্ণভাবে সারা দেশের বিভিন্ন ক্যাম্পাসে কোটা সংস্কারের আন্দোলন করছিলেন। শিক্ষার্থীদের শান্তিপ্রিয় এই আন্দোলনে ছাত্রলীগ ক্যাডাররা অতর্কিত হামলা চালিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে শত শত শিক্ষার্থীকে গুরুতর আহত করেছে। দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর রাতভর তাণ্ডব চলেছে। আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের পৈশাচিক হামলার তীব্র নিন্দা জানানোর পাশাপাশি আমাদের এক দফা দাবি আদায়ের উদ্দেশ্যে মহাসড়কে অবস্থান নিয়েছে।

ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের এডিসি (বোয়ালিয়া) মো. হাফিজুর ইসলাম। তিনি কালবেলাকে বলেন, শিক্ষার্থীরা মহাসড়কে অবস্থান নিয়েছেন। খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়েছি। যাতে করে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে সেদিকে আমরা কঠোরভাবে নজরদারি করছি।

রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ড. আনন্দ কুমার সাহা বলেন, আমরা শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসের গণ্ডির ভেতরে রাখার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু তারা তা শোনেনি। শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের সামনে ঢাকা-রাজশাহী বাইপাস মহাসড়ক অবরোধ করে রেখেছে। আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করার জন্য ঘটনাস্থলে রয়েছি। শিক্ষার্থীরা বলছে, তারা ৩টা পর্যন্ত ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ করে রাখবে। তারপর তারা মিছিল নিয়ে নগরীর সাহেব বাজারের দিকে রওনা দিবে বলে শিক্ষার্থীরা জানিয়েছে। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের কারণে মহাসড়কের দুই পাশে বেশকিছু যানবাহন আটকা পড়েছিল। পরে সে যানবাহনগুলোকে বিকল্প রাস্তায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

বগুড়া:
কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে ক্লাস বর্জন করে ঢাকা-রংপুর মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজের (শজিমেক) শিক্ষার্থীরা।

বেলা ১১টার দিকে মেডিকেল কলেজ ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে তারা মহাসড়ক অবরোধ করেন। পরে প্রায় ৪৫ মিনিট পর মেডিকেল কলেজের শিক্ষকরা এসে তাদের বুঝিয়ে কলেজ ক্যাম্পাসে ফিরিয়ে নিয়ে যান। ৪৫ মিনিট পর মহাসড়কে যান চলাচল শুরু করে। বগুড়ার মেডিকেল পুলিশ ফাঁড়ির এসআই আনিসুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানান, শিক্ষার্থীরা হল থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে জড়ো হয়ে ঢাকা-রংপুর মহাসড়ক অবরোধ করেন। এরপর ‘কোটা প্রথা নিপাত যাক’, ‘উই ওয়ান্ট জাসটিস’- লেখা সংবলিত প্ল্যাকার্ড নিয়ে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেন। এ সময় তারা বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দেন।

এর আগে সোমবার (১৫ জুলাই) রাত সাড়ে ১০টায় কলেজচত্বরে বিক্ষোভ করেন শজিমেক শিক্ষার্থীরা। এ সময় সমাবেশে শিক্ষার্থীরা সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর চালানো হামলার ঘটনায় নিন্দা জানান।

এ সময় তারা বলেন, কোটা একটি অভিশাপ। স্বাধীনতার ৫৩ বছর পরও ৫৬ শতাংশ কোটা একটি অনার্য ব্যবস্থাপনার ফল। আমরা চাই সরকার কোটা সংস্কার করে একটি যৌক্তিক পর্যায়ে নিয়ে আসুক।

ময়মনসিংহ:
সারা দেশে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা, বক্তব্য প্রত্যাহার ও কোটা প্রথার যৌক্তিক সমাধানের দাবিতে ময়মনসিংহে বিক্ষোভ চলছে। ময়মনসিংহ-টাঙ্গাইল সড়কের প্রবেশ মুখ নগরের টাউনহল মোড় এলাকা অবরোধ করছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। এতে বিভিন্ন স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অন্তত তিন হাজার শিক্ষার্থী অংশ নিয়েছেন। বেলা ১১টায় টাউন হল এলাকায় বিক্ষোভ শুরু হয়। সোমবার দিনভর ও রাতে অনলাইন ক্যাম্পেইন শেষে জড়ো হয় সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

বেলা ১১টায় নির্ধারিত সময় থাকলেও তার আগেই জড়ো হতে থাকেন শিক্ষার্থীরা। স্লোগান দিয়ে শিক্ষার্থীরা এসে টাউন হলের কর্মসূচিতে যোগ দেন। আনন্দমোহন কলেজ, নাসিরাবাদ কলেজ, মুমিনুন্নিসা সরকারি মহিলা কলেজ, কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়সহ শহরের বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরাও এতে অংশ নেন।

ময়মনসিংহ-টাঙ্গাইল সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ সমাবেশে নেতৃত্ব দেন ছাত্র ইউনিয়ন ময়মনসিংহ জেলা শাখার সভাপতি গোকুল সূত্রধর মানিক। এ সময় আশপাশে বিপুল পুলিশ মোতায়েন ছিল। শিক্ষার্থীদের অবরোধের কারণে টাউন হল এলাকা থেকে শহরের অভ্যন্তরীণ সড়কেও যানচলাচল বন্ধ থাকে।

ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আনোয়ার হোসেন কালবেলাকে বলেন, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের অবরোধের কারণে ময়মনসিংহ-টাঙ্গাইল সড়কের প্রবেশ মুখ অবরুদ্ধ রয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।

যশোর:
কোটা সংস্কারের এক দফা দাবি এবং আন্দোলনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে সকাল সাড়ে ১০টা থেকে খুলনা-যশোর মহাসড়কের নতুন রাস্তা মোড় অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় খুলনা-যশোর মহাসড়ক, মুজগুন্নী মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

এ সময় ‘চেয়েছিলাম অধিকার, হয়ে গেলাম রাজাকার’, ‘কোটা না মেধা, মেধা মেধা’, ‘মুক্তিযুদ্ধের বাংলায়, বৈষম্যের ঠাঁই নাই’- ইত্যাদি স্লোগান দিচ্ছেন বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীরা। তাদের এই আন্দোলনে বেশ কয়েকজন সাধারণ মানুষকেও একাত্মতা প্রকাশ করে স্লোগান দিতে দেখা গেছে।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বলছেন, কোটা আন্দোলন নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য চরম অপমানজনক। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই। একইসঙ্গে শান্তিপূর্ণভাবে চলতে থাকা একটি যৌক্তিক আন্দোলনের উপর পুলিশ ও ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা হামলা করে তাদের রক্তাক্ত করেছে, যা গণতান্ত্রিক আন্দোলনের অন্তরায় ও নিন্দনীয় অপরাধ। তারা এর সুষ্ঠু বিচার চান।

উল্লেখ্য, ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদে মঙ্গলবার বিকেল ৩টায় দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিক্ষোভ মিছিল এবং সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। সোমবার (১৫ জুলাই) রাত সাড়ে ৯টার পর দোয়েল চত্বরে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ প্ল্যাটফর্মের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদুল ইসলাম এই কর্মসূচির ঘোষণা দেন। এরপরও কোটা বাতিল না হলে সারা দেশে অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে জানান তিনি। নাহিদ বলেন, পরিকল্পিতভাবে বহিরাগতদের এনে আমাদের ওপর হামলা চালানো হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর থাকার পরও বহিরাগতরা কীভাবে হামলা করে?