অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা হলেন হবিগঞ্জের কৃতি সন্তান রিজওয়ানা হাসান
অন্তর্বর্তী কালীন সরকারের উপদেষ্টা সদস্য মনোনীত হয়েছেন হবিগঞ্জের চুনারুঘাটের কৃতি সন্তান, বিশিষ্ট আইনজীবী ও বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) রাত ৯টায় ১৬ উপদেষ্টা সদস্যদের মধ্যে তার নাম ঘোষণা করা হয়। একই সাথে তিনিসহ ১৬ সদস্য শপথ গ্রহণ করেছেন।
তার এমন খুশির খবরে এলাকায় আনন্দ উল্লাস করছে নিজ পৈত্রিক ভ‚মি চুনারুঘাট এলাকার সাধারন লোকজন। রিজওয়ানা হাসান রাজধানী ঢাকার ধানমন্ডিতে ১৯৬৮ সালে জন্মগ্রহণ করলেও পৈতৃক নিবাস চুনারুঘাট উপজেলার সদর ইউনিয়নের নরপতি (হাবিলী) গ্রামে।
তার পিতা সাবেক মন্ত্রী সৈয়দ মহিবুল হাসা ও মা সুরাইয়া হাসান। বাবা-মায়ের একমাত্র কন্যা তিনি এবং পরিবারে সবার ছোট।
পরবর্তীতে সহপাঠী আইনবিদ ব্যবসায়ী আবু বকর সিদ্দিক-এর সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তিনি তিন সন্তানের জননী। মেয়ে নেহলা, দুই ছেলে যাবির ও জিদান। রিজওয়ানা হাসান ভিকারুননিসা নূন স্কুল এ্যান্ড কলেজ থেকে এসএসসি পাস করেন।
এরপর হলিক্রস কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। বিশ্ববিদ্যালয়ে শুরুতে লোক প্রশাসন বিভাগে ভর্তি হলেও আইনের প্রতি আগ্রহ থাকায় পরে বিভাগ পরিবর্তন করে আইন বিভাগে ভর্তি হন এবং সেখান থেকে ব্যাচেলর ও মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি।
১৯৯৩ খ্রিষ্টাব্দে এলএলএম সম্পন্ন করার পর বাংলাদেশের বাইরে বেশ কয়েকটি ফেলোশিপ কোর্স সম্পন্ন করেছেন। ২০০৭ খ্রিষ্টাব্দে তিনি যুক্তরাষ্ট্র থেকে আইজেনহাওয়ার ফেলোশিপ করেন।
উল্লেখ্য, চুনারুঘাট উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব সৈয়দ লিয়াকত হাসানের আপন চাচাতো বোন।
স্থানীয়রা বলেন, ‘খবরটা শুনে আমার খুবই ভালো লাগছে। আমরা নরপতি গ্রামের মানুষ গর্বিত। তিনি ঢাকায় বসবাস করলে ও যখনই হবিগঞ্জে কোন অনুষ্ঠান হতো তখনই তিনি পিতার পৈতৃক ভিটা নরপতি চলে আসতেন।
যখনই এলাকায় আসতেন তখনই আতœীয় স্বজনসহ এলাকার গরীব দুঃখী মানুষের সাহায্য সহযোগীতা ও তাদের খোঁজ খবর নিতেন। তিনি অত্যন্ত আন্তরিক এবং ভাল মনের মানুষ। রিজওয়ানা হাসান দীর্ঘদিন যাবত পরিবেশ ধ্বংসকারীদের বিরুদ্ধে লড়াই করে যাচ্ছেন। এই লড়াইয়ে তার এবং তার পরিবারের সদস্যদের জীবনযাপনও বেশ কয়েকবার হুমকির সম্মুখীন হয়েছেন। তিনি একজন দুঃসাহসী নারী, অন্যায়ের বিরুদ্ধে একটি বলিষ্ঠ কণ্ঠ।
এই সময়ে বাংলাদেশকে পূর্ণগঠনে নিঃসন্দেহে তিনি উত্তম ভূমিকা রাখতে পারবেন।
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান পরিবেশ বিষয়ক সচেতনতা তৈরির কারণে ২০০৭ খ্রিষ্টাব্দে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয় কর্তৃক পরিবেশ পুরস্কার”-এ ভূষিত হোন। তার পরিচালিত সংগঠন বেলা ২০০৩ খ্রিষ্টাব্দে জাতিসংঘের এনভায়রনমেন্ট প্রোগ্রাম ঘোষিত গেøাবাল ৫০০ রোল অফ অনার্স পুরস্কারে ভূষিত হয়।
এছাড়া প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে ২০০৯ খ্রিষ্টাব্দে তিনি পেয়েছেন ‘পরিবেশের নোবেল’ খ্যাত “গোল্ডম্যান এনভায়রনমেন্টাল প্রাইজ। তার এসব নানামুখি কর্মকান্ডের কারণেই ২০০৯ খ্রিষ্টাব্দে বিশ্বখ্যাত টাইম সাময়িকী তাকে “হিরোজ অফ এনভায়রনমেন্ট” খেতাবে ভূষিত করে। এছাড়া তিনি ২০০৮ খ্রিষ্টাব্দে নেপালভিত্তিক ক্রিয়েটিভ স্টেটমেন্টস এ্যান্ড সাউথ এশিয়া পার্টনারশিপ প্রদত্ত “সিলেব্রেটিং ওমেনহুড এওয়ার্ড”প্রাপ্ত দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম পাঁচজন নারীর একজন।
এছাড়াও তিনি ২০১২ সালে এশিয়ার নোবেল পুরস্কার হিসেবে বিবেচ্য ফিলিপাইনভিত্তিক রামোন ম্যাগসেসে পুরস্কার লাভ করেন। ২০২২ সালে তিনি আন্তর্জাতিক সাহসী নারী পুরস্কার পান। গত ২০ বছর ধরে যুগান্তকারী আইনি মামলার মাধ্যমে তিনি বাংলাদেশের উন্নয়নের গতিশীলতা পরিবর্তন করে পরিবেশগত ন্যায়বিচারের ওপর জনকেন্দ্রিক দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছেন।
জনস্বার্থ আইন সংস্থা বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী হিসেবে বন উজাড়, দূষণ, অনিয়ন্ত্রিত জাহাজ ভাঙা এবং অবৈধ ভূমি উন্নয়নের বিরুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ মামলা লড়েছেন এবং জিতেছেন।
২০০৯ সালে তিনি টাইম ম্যাগাজিনের বিশ্বের ৪০ জন এনভায়রমেন্টার হিরোর একজন হিসেবে মনোনীত হন এবং ২০১২ সালে র্যামন ম্যাগসেসে পুরস্কারে ভূষিত হন। শক্তিশালী মহলের প্রতিরোধ ও নিজের এবং পরিবারের প্রতি সহিংসতার হুমকি সত্তে¡ও বাংলাদেশের পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তনের স্থানীয় প্রভাবগুলোর বিরুদ্ধে লড়াই করতে আদালতে গুরুত্বপূর্ণ কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
এ বিষয়ে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা, বৈষম্য দূর করা ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা করাই হবে উপদেষ্টা সরকারের মূল উদ্দেশ্য’। তিনি আরও বলেন, ‘আমার উপর অর্পিত দায়িত্ব সততা ও নিষ্ঠার সাথে যাহাতে পালন করতে পারি সেজন্য সকলের নিকট দোয়া ও সহযোগীতা কামনা করছি’।