আজমিরীগঞ্জে সরকারি মূল্যে ধান সংগ্রহে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা
আজমিরীগঞ্জে চলতি বোরো মৌসুমে সরকারি মূল্যে ধান সংগ্রহে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। নিয়মানুযায়ী কৃষকদের কাছ থেকে ধান সংগ্রহের কথা থাকলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের যোগসাজশে গোদামে ধান সরবরাহ করছে অন্তত ১২টি সিন্ডিকেট চক্র। উপজেলার অনন্ত ১০-১২টি সিন্ডিকেট চক্র তালিকায় প্রকাশিত কৃষক-কৃষাণীদের কাছ থেকে এক হাজার থেকে দেড় হাজার টাকার বিনিময়ে তাদের কৃষি কার্ড সংগ্রহ করে গুদাম কর্মকর্তার যোগসাজশে সরকারি গোদামে ধান সরবরাহ করছেন।
উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি বোরো মৌসুমে উপজেলার কৃষকদের কাছ থেকে সরকারি মুল্যে (৩২ টাকা কেজি ধরে) ১ হাজার ৮৯৩ মেট্রিকটন ধান সংগ্রহের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এরই প্রেক্ষিতে উপজেলার ১ টি পৌরসভা ও ৫ টি ইউনিয়নের প্রায় দেড় হাজার কৃষকের মধ্য থেকে ৬১৩ জন কৃষক-কৃষাণীকে লটারীর মাধ্যমে নির্বাচিত করা হয়েছে।
১৮ মে সন্ধ্যায় নির্বাচিত কৃষকের তালিকাটি উপজেলা খাদ্যশস্য সংগ্রহ কমিটির সভাপতি ও নির্বাহী কর্মকর্তার অফিসিয়াল ফেসবুক আইডি থেকে প্রকাশ করা হয়। কিন্তু কৃষকদের নামে সিন্ডিকেট চক্রের মাধ্যমে ধান সংগ্রহের ফলে প্রকৃত কৃষকরা পড়েছেন চরম বিপাকে।
উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ইতোমধ্যে সরকারি মূল্যে ৮৫৮ মেট্রিকটন ধান সংগ্রহ করা হয়েছে। তবে সিন্ডিকেটের ধান সংগ্রহের বিষয়টি অস্বীকার করছেন তারা।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, প্রকাশিত তালিকায় যেসব কৃষক-কৃষাণীর নাম রয়েছে তাদের এক তৃতীয়াংশই সরকারি গোদামে ধান বিক্রি করেননি। এমনকি বিগত বছর তিন বছর যাবত ধান উৎপাদনই করেননি এমন কৃষক-কৃষাণীও রয়েছেন অন্তত দুই শতাধিক।
অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, গোদামে ধান সরবরাহের পর ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলনের সময় সেই কৃষক-কৃষাণীকে ব্যাংকে এনে টাকা উত্তোলন করছে সিন্ডিকেট চক্রগুলো। বিনিময়ে টাকা উত্তোলন করে দেয়া কৃষকদের দেয়া হয় ব্যাংকে আসা যাওয়ার খরছের টাকা।
অভিযোগ রয়েছে, প্রতি কার্ড (তিন মেট্টিক টন ধান) সরকারি মুল্যে গোদামে সরবরাহ করতে গুদাম কর্মকর্তাকে উৎকোচ দিতে হয় তিন হাজার টাকা।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকার একাধিক কৃষকের সাথে কথা বলে জানা গেছে, খাদ্য গোদামে কৃষকের তালিকায় রয়েছে কার্ডধারী কৃষক, রাজনৈতিক নেতা-কর্মী ও মৌসুমী সিন্ডিকেট ব্যবসায়ী।
তালিকায় প্রকৃত কৃষকদের নাম থাকলেও সেই কৃষকদের ধান বিক্রি করতে গিয়ে পদে পদে হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। আবার অনেক কৃষক জানেনই না তাদের নাম তালিকায় রয়েছে কিনা। যার ফলে অনেক কৃষক বাধ্য হয়েই এসব সিন্ডিকেটের কাছে সামান্য অর্থের বিনিময়ে কৃষি কার্ড তুলে দিতে বাধ্য হচ্ছেন।
বাচাই তালিকায় নাম থাকা সদর ইউনিয়নের বিরাট গ্রামের কৃষক শুতলাল দাস বলেন, দুই বছর ধরে ধান ফলাই না। আমার কার্ড এক মেম্বার নিসে। তিনিই ধান দিসে ব্যাংক থেকে টাকা উঠিয়ে দেয়ার পর ১ হাজার টাকা আমাকে দিসে।
একই গ্রামের সেকুল ইসলাম বলেন, কিছুদিন পূর্বে আমি ৩ টন ধান দিয়ে আসছি। এখন অফিসাররা খরচপাতি চাইতেছে। খরচপাতি না দিলে ভাল ধান খারাপ বলে ধান আটকিয়ে রাখে নিতে চায় না। তাই বাধ্য হয়ে দিতে হয়।
সদর ইউনিয়নের আরেক কৃষক বাদল মিয়া বলেন, আমার কার্ড আরেক জনকে দিসি, আমি গোদামে ধান দিসিনা।
কাকাইলছেও ইউনিয়নের কৃষাণী দেবী রানী চৌধুরী জানান, তিনি কৃষি কাজ করেন না। কার্ড উনার এক আত্মীয় নিয়েছেন।
একই ইউনিয়নের কৃষক শহিদুল ইসলাম বলেন আমার কার্ডে কত টন ধান দিসি বলতে পারিনা, কার্ড আমার মামাতো ভাই নিয়া ধান দিসে।
পৌর এলাকার কৃষক আরফান মিয়া জানান, নাম ও ফোন নাম্বার ঠিক থাকলেও আমার ঠিকানা দেয়া হয়েছে সদর ইউনিয়নে যার ফলে ঝামেলায় পড়তে হয়। তাই গোদামে আর ধান নিয়ে যাইনি।
উপজেলা খাদ্য পরিদর্শক সামছুল হুদার মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি। এমনকি এই বিষয়ে এসএমএস পাঠালেও তিনি কোন উত্তর দেননি।
উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) সাইফুল আলম সিদ্দিকী বলেন, তালিকা অনলাইনে হয়েছে। এখানে অনিয়মের সুযোগ নেই। কৃষকদের কাছ থেকে উৎকোচ আদায়ের বিষয়ে তিনি বলেন, এমন হবার কথা নয়।