ঢাকা ০৪:১৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম

এবার ৩টি পর্বতারোহণে রেকর্ড গড়লেন পাবনার তৌকির

পাবনায় প্রতিনিধিঃ

প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে মাত্র ২৭ দিনে নেপালে ৩টি ৬ হাজার মিটার পর্বত চূড়া স্পর্শ করলেন পাবনার সন্তান আহ্সানুজ্জামান তৌকির (২৭)। আবার সেটি কোন শেরপা সাপোর্ট ছাড়াই ক্লাইম্বিং করেছেন তিনি। তার এই অভিযানের নাম ছিলো “TREE PEAK IN A ROW”। এই অভিযানের পৃষ্ঠপোষকতায় ছিলো রোপ ফোর আউটডোর অ্যাডুকেশন।

চলনবিলের কোল ঘেঁষা পাবনার চাটমোহর পৌরসদরে বেড়ে উঠা এই তরুণ আহ্সানুজ্জামান তৌকির পেশায় একজন প্রকৌশলী হলেও পর্বতারোহণে তার রয়েছে বেশ কিছু সফলতা। তরুণ এই পর্বতারোহী গত ৩ বছরে হিমালয়ের ৫টি ৬ হাজার মিটারের চূড়ায় শুধু লাল-সবুজের মাতৃভূমিকে তুলে ধরেছেন অনন্য উচ্চতায়। শুধু মাতৃভূমিকে নয়, সেখানে নিয়ে গেছেন নিজ জন্মস্থানকেও।

অনলাইনে আলাপকালে তৌকির জানান, বাংলাদেশ থেকে গত ৪ অক্টোবর নেপালের উদ্দেশ্য যাত্রা শুরু করেন তিনি। কাঠমান্ডুতে ২ দিনের অভিযান প্রস্তুতি শেষে চলে যান এভারেস্ট রিজিওনের খুম্বু ভ্যালীতে। সেখানে টানা পাঁচ দিন ট্রেকিং শেষে ১১ অক্টোবর পৌঁছান ডিংবোচে গ্রামে। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রথমে তার আইল্যান্ড পিক (৬১৬৫ মিটার) অভিযানের কথা থাকলেও টীম লিডার মহিউদ্দিন মাহির তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্তে ১২ অক্টোবর লবুচে পিক অভিযানে যান তৌকির। সিদ্ধান্ত নেন কোন শেরপা সাপোর্ট ছাড়াই একা ক্লাইম্ব করবেন ৬১১৯ মিটারের লবুচে পিক।

১২ অক্টোবর সকালে প্রয়োজনীয় ক্লাইম্বিং ইকুইপমেন্ট নিতে চলে যান ডিংবোচে থেকে ৪ দশমিক ৫ কিলোমিটার দূরের চোখুং গ্রামে। সেখান থেকে শুরু করেন ১৩ কিলোমিটার দূরের লবুচে হাই ক্যাম্পের উদ্দেশ্যে যাত্রা। বিকালে লবুচে হাই ক্যাম্প পৌঁছে কিছুটা বিশ্রাম নিয়ে স্থানীয় সময় রাত ২টা ২০ মিনিটে সামিট পুশ করেন এবং সকাল ৭টা ৩৬ মিনিটে পা রাখেন লবুচে ইস্ট পর্বত চূড়ায়, তুলে ধরনের বাংলাদেশের পতাকা। প্রথম বাংলাদেশী হিসাবে কোন শেরপা সাপোর্ট ছাড়াই তিনি এই পর্বত অভিযান শেষ করেন।

তৌকির জানান, এরপর তিনি দলের সাথে চলে যান এভারেস্ট বেস ক্যাম্প, সেখান থেকে আবার ফিরে আসেন আইল্যান্ড পিক ভিলেজ ক্যাম্প ক্ষ্যাত চোখুং এ। প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি শেষে ১৭ অক্টোবর যাত্রা শুরু করেন আইল্যান্ড পিক বেস ক্যাম্পের উদ্দেশ্যে। দুপুরে বেস ক্যাম্পে পৌঁছে দুপুরের খাবার খেয়ে টীমমেটদের প্রশিক্ষণ দেন অ্যাসেন্ডিং এবং ডিসেন্ডিং কৌশলের। এরপর রাত ০১টা ০৪ মিনিটে সামিট পুশ করেন। প্রচন্ড ঝড়ো হাওয়া, একটু পর পর তুষারপাত এবং ফিক্সড রোপে প্রচুর ট্রাফিক পেরিয়ে ১৮ অক্টোবর সকাল ০৯টা ৫৪ মিনিটে আইল্যান্ড পিক (৬১৬৫ মিটার) চূড়ায় লাল-সবুজের পতাকা উড়ান।

সফল সামিট শেষে তৌকির ফিরে আসেন চোখুং এ। এরপর নেমে আসেন শেরপা রাজধানী নামচে বাজার হয়ে লুকলা গ্রামে। সেখান থেকে শুরু হয় তার তৃতীয় অভিযানের প্রস্তুতি। খুম্বু ভ্যালী ছেড়ে এবার তিনি যাত্রা শুরু করেন হিংকু ভ্যালীর দিকে। টানা ৭ দিন মাকালু-বারুনসে ফরেস্ট ট্রেকিং শেষে ২৭ অক্টোবর হিংকু নদীর উৎপত্তি স্থল পেরিয়ে শেষ গ্রাম খারে তে পৌঁছান তৌকির। সকল ইকুইপমেন্ট চেক এবং প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি শেষে ২৯ অক্টোবর মেরা পিক হাই ক্যাম্পের উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে বিকালে হাই ক্যাম্পে পৌঁছান। কিছুটা বিশ্রাম শেষে রাত ০২টা ০৮ মিনিটে সামিট পুশ করেন এবং ৩০ অক্টোবর সকাল ০৭টা ৩৬ মিনিটে তিনি সহ তার পুরো টিম মেরা পিক (৬৪৬১ মিটার) সামিট করেন এবং মেলে ধরেন লাল-সবুজের পতাকা।

এই অর্জন নিয়ে অনুভূতি জানতে চাইলে আহ্সানুজ্জামান তৌকির জানান, ’হিমালয়ের সবগুলো পর্বত অভিযানই কষ্টসাধ্যের এবং ব্যয়বহুল। প্রচন্ড ঠান্ডা এবং ঝুকিপূর্ণ ক্লাইম্বি শেষে যখন নিজ দেশের লাল-সবুজের পতাকা উড়িয়েছি, তখন সব কষ্ট নিমিষেই আনন্দে রুপান্তরিত হয়ে গেছে। ধন্যবাদ দিতে চাই রোপ ফোর আউটডোর এডুকেশন কে। যার পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া এই অভিযান সফল হতো না। বিশেষ করে রোপ ফোরের দুই প্রতিষ্ঠাতা মারুফা হক এবং মহিউদ্দিন মাহি যাদের নিরলস প্রচেষ্টায় সব কিছু আরো সহজ হয়েছে।’

তরুণ এই পর্বতারোহীর এবার সামনের পরিকল্পনা এভারেস্ট নিয়ে। এর জন্য প্রয়োজন পৃষ্ঠপোষকতা। সঠিক পৃষ্ঠপোষকতা পেলে তার এই অভিযানগুলো আরো সহজ হবে।

সপ্নবাজ এই তরুণ এখন নেপালে অবস্থান করছেন আরো একটি প্রশিক্ষণ অভিযানের জন্য। অভিযান শেষে আগামী ১৬ নভেম্বর তার দেশে ফেরার কথা রয়েছে।

উল্লেখ্য, তৌকির গত বছরের (২০২৩) অক্টোবরে খুম্বু রিজিওনের ৫০৭৬ মিটার উচ্চতার নাগা অর্জুন এবং ৬১১৯ মিটার উচ্চতার লবুচে পিক পর্বতের চুড়ায় আরোহণ করে বাংলাদেশের লাল সবুজ পতাকা উড়িয়েছেন তৌকির।

প্রসঙ্গত, আহ্সানুজ্জামান তৌকির পাবনার চাটমোহর পৌর সদরের বালুচর মহল্লার আকরাম হোসেন সাবু-সুলতানা সামিয়া পারভীন দম্পতি ছেলে। দুই ভাইয়ের মধ্যে ছোট তৌকির। তিনি চাটমোহর রাজা চন্দ্রনাথ ও বাবু শম্ভুনাথ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি, রাজশাহী পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট থেকে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এ ডিপ্লোমা এবং অতীশ দীপঙ্কর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ট্রিপল ই তে বিএসসি সম্পন্ন করেছেন।

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

আপডেট সময় ০৬:৩৪:০০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৭ নভেম্বর ২০২৪
৬ বার পড়া হয়েছে

এবার ৩টি পর্বতারোহণে রেকর্ড গড়লেন পাবনার তৌকির

আপডেট সময় ০৬:৩৪:০০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৭ নভেম্বর ২০২৪

প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে মাত্র ২৭ দিনে নেপালে ৩টি ৬ হাজার মিটার পর্বত চূড়া স্পর্শ করলেন পাবনার সন্তান আহ্সানুজ্জামান তৌকির (২৭)। আবার সেটি কোন শেরপা সাপোর্ট ছাড়াই ক্লাইম্বিং করেছেন তিনি। তার এই অভিযানের নাম ছিলো “TREE PEAK IN A ROW”। এই অভিযানের পৃষ্ঠপোষকতায় ছিলো রোপ ফোর আউটডোর অ্যাডুকেশন।

চলনবিলের কোল ঘেঁষা পাবনার চাটমোহর পৌরসদরে বেড়ে উঠা এই তরুণ আহ্সানুজ্জামান তৌকির পেশায় একজন প্রকৌশলী হলেও পর্বতারোহণে তার রয়েছে বেশ কিছু সফলতা। তরুণ এই পর্বতারোহী গত ৩ বছরে হিমালয়ের ৫টি ৬ হাজার মিটারের চূড়ায় শুধু লাল-সবুজের মাতৃভূমিকে তুলে ধরেছেন অনন্য উচ্চতায়। শুধু মাতৃভূমিকে নয়, সেখানে নিয়ে গেছেন নিজ জন্মস্থানকেও।

অনলাইনে আলাপকালে তৌকির জানান, বাংলাদেশ থেকে গত ৪ অক্টোবর নেপালের উদ্দেশ্য যাত্রা শুরু করেন তিনি। কাঠমান্ডুতে ২ দিনের অভিযান প্রস্তুতি শেষে চলে যান এভারেস্ট রিজিওনের খুম্বু ভ্যালীতে। সেখানে টানা পাঁচ দিন ট্রেকিং শেষে ১১ অক্টোবর পৌঁছান ডিংবোচে গ্রামে। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রথমে তার আইল্যান্ড পিক (৬১৬৫ মিটার) অভিযানের কথা থাকলেও টীম লিডার মহিউদ্দিন মাহির তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্তে ১২ অক্টোবর লবুচে পিক অভিযানে যান তৌকির। সিদ্ধান্ত নেন কোন শেরপা সাপোর্ট ছাড়াই একা ক্লাইম্ব করবেন ৬১১৯ মিটারের লবুচে পিক।

১২ অক্টোবর সকালে প্রয়োজনীয় ক্লাইম্বিং ইকুইপমেন্ট নিতে চলে যান ডিংবোচে থেকে ৪ দশমিক ৫ কিলোমিটার দূরের চোখুং গ্রামে। সেখান থেকে শুরু করেন ১৩ কিলোমিটার দূরের লবুচে হাই ক্যাম্পের উদ্দেশ্যে যাত্রা। বিকালে লবুচে হাই ক্যাম্প পৌঁছে কিছুটা বিশ্রাম নিয়ে স্থানীয় সময় রাত ২টা ২০ মিনিটে সামিট পুশ করেন এবং সকাল ৭টা ৩৬ মিনিটে পা রাখেন লবুচে ইস্ট পর্বত চূড়ায়, তুলে ধরনের বাংলাদেশের পতাকা। প্রথম বাংলাদেশী হিসাবে কোন শেরপা সাপোর্ট ছাড়াই তিনি এই পর্বত অভিযান শেষ করেন।

তৌকির জানান, এরপর তিনি দলের সাথে চলে যান এভারেস্ট বেস ক্যাম্প, সেখান থেকে আবার ফিরে আসেন আইল্যান্ড পিক ভিলেজ ক্যাম্প ক্ষ্যাত চোখুং এ। প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি শেষে ১৭ অক্টোবর যাত্রা শুরু করেন আইল্যান্ড পিক বেস ক্যাম্পের উদ্দেশ্যে। দুপুরে বেস ক্যাম্পে পৌঁছে দুপুরের খাবার খেয়ে টীমমেটদের প্রশিক্ষণ দেন অ্যাসেন্ডিং এবং ডিসেন্ডিং কৌশলের। এরপর রাত ০১টা ০৪ মিনিটে সামিট পুশ করেন। প্রচন্ড ঝড়ো হাওয়া, একটু পর পর তুষারপাত এবং ফিক্সড রোপে প্রচুর ট্রাফিক পেরিয়ে ১৮ অক্টোবর সকাল ০৯টা ৫৪ মিনিটে আইল্যান্ড পিক (৬১৬৫ মিটার) চূড়ায় লাল-সবুজের পতাকা উড়ান।

সফল সামিট শেষে তৌকির ফিরে আসেন চোখুং এ। এরপর নেমে আসেন শেরপা রাজধানী নামচে বাজার হয়ে লুকলা গ্রামে। সেখান থেকে শুরু হয় তার তৃতীয় অভিযানের প্রস্তুতি। খুম্বু ভ্যালী ছেড়ে এবার তিনি যাত্রা শুরু করেন হিংকু ভ্যালীর দিকে। টানা ৭ দিন মাকালু-বারুনসে ফরেস্ট ট্রেকিং শেষে ২৭ অক্টোবর হিংকু নদীর উৎপত্তি স্থল পেরিয়ে শেষ গ্রাম খারে তে পৌঁছান তৌকির। সকল ইকুইপমেন্ট চেক এবং প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি শেষে ২৯ অক্টোবর মেরা পিক হাই ক্যাম্পের উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে বিকালে হাই ক্যাম্পে পৌঁছান। কিছুটা বিশ্রাম শেষে রাত ০২টা ০৮ মিনিটে সামিট পুশ করেন এবং ৩০ অক্টোবর সকাল ০৭টা ৩৬ মিনিটে তিনি সহ তার পুরো টিম মেরা পিক (৬৪৬১ মিটার) সামিট করেন এবং মেলে ধরেন লাল-সবুজের পতাকা।

এই অর্জন নিয়ে অনুভূতি জানতে চাইলে আহ্সানুজ্জামান তৌকির জানান, ’হিমালয়ের সবগুলো পর্বত অভিযানই কষ্টসাধ্যের এবং ব্যয়বহুল। প্রচন্ড ঠান্ডা এবং ঝুকিপূর্ণ ক্লাইম্বি শেষে যখন নিজ দেশের লাল-সবুজের পতাকা উড়িয়েছি, তখন সব কষ্ট নিমিষেই আনন্দে রুপান্তরিত হয়ে গেছে। ধন্যবাদ দিতে চাই রোপ ফোর আউটডোর এডুকেশন কে। যার পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া এই অভিযান সফল হতো না। বিশেষ করে রোপ ফোরের দুই প্রতিষ্ঠাতা মারুফা হক এবং মহিউদ্দিন মাহি যাদের নিরলস প্রচেষ্টায় সব কিছু আরো সহজ হয়েছে।’

তরুণ এই পর্বতারোহীর এবার সামনের পরিকল্পনা এভারেস্ট নিয়ে। এর জন্য প্রয়োজন পৃষ্ঠপোষকতা। সঠিক পৃষ্ঠপোষকতা পেলে তার এই অভিযানগুলো আরো সহজ হবে।

সপ্নবাজ এই তরুণ এখন নেপালে অবস্থান করছেন আরো একটি প্রশিক্ষণ অভিযানের জন্য। অভিযান শেষে আগামী ১৬ নভেম্বর তার দেশে ফেরার কথা রয়েছে।

উল্লেখ্য, তৌকির গত বছরের (২০২৩) অক্টোবরে খুম্বু রিজিওনের ৫০৭৬ মিটার উচ্চতার নাগা অর্জুন এবং ৬১১৯ মিটার উচ্চতার লবুচে পিক পর্বতের চুড়ায় আরোহণ করে বাংলাদেশের লাল সবুজ পতাকা উড়িয়েছেন তৌকির।

প্রসঙ্গত, আহ্সানুজ্জামান তৌকির পাবনার চাটমোহর পৌর সদরের বালুচর মহল্লার আকরাম হোসেন সাবু-সুলতানা সামিয়া পারভীন দম্পতি ছেলে। দুই ভাইয়ের মধ্যে ছোট তৌকির। তিনি চাটমোহর রাজা চন্দ্রনাথ ও বাবু শম্ভুনাথ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি, রাজশাহী পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট থেকে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এ ডিপ্লোমা এবং অতীশ দীপঙ্কর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ট্রিপল ই তে বিএসসি সম্পন্ন করেছেন।