নবীগঞ্জে রমজানকে সামনে রেখে সয়াবিন তেল নিয়ে তেলেসমাতি
রমজান মাসকে সামনে রেখে নবীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে সয়াবিন তেল নিয়ে ফের তেলেসমাতি শুরু হয়েছে। গত এক মাস ধরে নবীগঞ্জের বিভিন্ন হাট-বাজারে বোতলজাত সয়াবিন তেলের কৃত্রিম সংকট তৈরী করা হয়েছে। দোকানে দোকানে ঘুরে সহজে মিলছে না সয়াবিন তেল। মিললেও অনেক ব্যবসায়ী সয়াবিন তেলের সংকট দাবী করে হাতিয়ে নিচ্ছেন বাড়তি দাম। ক্রেতা-বিক্রেতাদের মধ্যে প্রতিদিনই ঘটছে বাদানুবাদ। অভিযোগ রয়েছে- অনেকেই তেল বিক্রি না করে মজুদ করছেন রমজান মাসে বেশি দামে বিক্রির জন্য। ক্রেতাদের অভিযোগ, সয়াবিন তেলের সাথে চিনিগুড়া চাল, ময়দা, লবন, ডালসহ অনান্য পণ্য কিনতে বাধ্য করছে ব্যবসায়ীরা। অন্য পণ্য না নিলে বিক্রেতারা শুধু সয়াবিন তেল বিক্রি করছেন না। এরফলে বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি হয়েছে। নবীগঞ্জ পৌর শহরসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, মুদি দোকানের মধ্যে মাত্র হাতে গোনা কয়েকটি দোকানে বোতলজাত সয়াবিন তেল পাওয়া যাচ্ছে। এর মধ্যে কিছু কিছু দোকানে নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে তেল বিক্রি করা হচ্ছে। যেসব দোকানে তেল পাওয়া যায় তারা ১ লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৯০-২১০ টাকায় বিক্রি করেন। কোন কোন দোকানে ১ লিটার তেলের বোতল নেই। শুধু ৫ লিটার, তাও ১১ শত থেকে ১২ শত টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অথচ সরকারের বেঁধে দেওয়া দাম অনুযায়ী, প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৭৫ টাকা এবং প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল ১৫৭ টাকায় বিক্রি করার কথা।
পৌর এলাকার আব্দুল করিম নামে এক ক্রেতা জানান- প্রায় দেড় মাস ধরে ডিলাররা তেলের সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে। তেলের সংকট ও দাম বেড়েছে। এছাড়া চাল-ডাল-ময়দাসহ অন্যান্য পণ্য অবিক্রিত থাকায় তেলের সাথে সেইসব পণ্য নিতে বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। অন্যান্য পণ্য না কিনতে তেল দিচ্ছেনা।
আব্দুল মন্নান নামে এক ব্যক্তি জানান- আসন্ন রমজানের আগে কৌশলে তেলের সংকট তৈরি করে আবারও দাম বৃদ্ধির পায়তারা চলছে, বোতলের গায়ে নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি টাকা দিয়েও অনেক জাগায় তেল মিলছেনা, সিন্ডিকেটের কারণে বাজারে তেলের সংকট দেখা দেয়ায় আমরা খুব কষ্টে আছি।
এদিকে রমজানের আগেই বাজারে এই সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন সচেতন মহল।
এ ব্যাপারে নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রুহুল আমিনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান বিষয়টি সর্ম্পকে অবগত রয়েছেন এবং দ্রুত এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন।
উল্লেখ্য- বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের গবেষণা তথ্য অনুযায়ী, দেশে বছরে ভোজ্যতেলের চাহিদা ২৩ থেকে ২৪ লাখ টন। এর মধ্যে রমজান মাসে চাহিদা ৩ লাখ টন। দেশে ২০২৪ সালের ১ জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত আমদানি হয়েছে ১৮ লাখ ৫৭ হাজার ৫৪৮ টন। এছাড়া দেশে উৎপাদিত হয়েছে ২ লাখ ৫০ হাজার টন। এছাড়া আমদানি পর্যায়ে পাইপলাইনে রয়েছে ৮ লাখ ১২ হাজার ৫৬৫ টন। বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেলের মূল্য নিম্নমুখী। এ অবস্থায় দেশে ভোজ্যতেলের সংকটের কোনো কারণ নেই। তেলের কৃত্রিম সংকট তৈরীকারীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার আহবান সচেতন মহলের।