ঢাকা ১১:৩৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই ২০২৫, ১৯ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
Logo শেখ হাসিনাকে ৬ মাসের কারাদণ্ড Logo নবীগঞ্জে দুর্ঘটনা, নারীসহ নিহত ২ Logo মাধবপুর বাস ও পিকআপের মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত ১, আহত ২০ Logo হবিগঞ্জে ভুয়া চিকিৎসকের একমাসের কারাদণ্ড Logo স্বৈরাচার পতনে ১৬ বছর অপেক্ষা নয়, তাৎক্ষণিক প্রতিরোধ গড়ার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার Logo বাংলাদেশের মানুষ কল্পনাও করেনি যে কেবল চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে গড়ে ওঠা আন্দোলনই শেষ পর্যন্ত ‘জুলাই বিদ্রোহে’ রূপ নেবে। গত বছরের ১ জুলাই বাংলাদেশ এক অবিশ্বাস্য ঘটনার সাক্ষী হয়। এদিন শিক্ষার্থীদের ‘কোটা সংস্কার আন্দোলন’ ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে’ রূপ নেয়। এটি ছিল প্রায় ১৬ বছরের স্বৈরতান্ত্রিক আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের সূচনাবিন্দু। মানুষ কল্পনাও করেনি যে শুরুতে কেবল চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে গড়ে ওঠা আন্দোলনই শেষ পর্যন্ত ‘জুলাই বিদ্রোহে’ রূপ নেবে, শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ একত্রিত হয়ে সরকারের বিরুদ্ধে বৃহত্তর গণআন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়বে। ছাত্রদের এই অসন্তোষের সূচনা ঘটে ২০১৮ সালের কোটা বাতিলের সরকারি প্রজ্ঞাপনকে হাইকোর্ট কর্তৃক অবৈধ ঘোষণা করার রায়ের পর। সরকার ২০১৮ সালে তীব্র ছাত্র আন্দোলনের চাপে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিল করেছিল। কিন্তু হাইকোর্টের রায়ে ৫৬ শতাংশ কোটা পুনঃপ্রবর্তিত হয়, যাতে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য ৩০ শতাংশ, নারীদের জন্য ১০ শতাংশ, পশ্চাৎপদ জেলার জন্য ১০ শতাংশ, সংখ্যালঘুদের জন্য ৫ শতাংশ এবং প্রতিবন্ধীদের জন্য ১ শতাংশ বরাদ্দ করা হয়। ছাত্ররা এই ব্যবস্থাকে মেধাবীদের প্রতি বৈষম্য হিসেবে মনে করে প্রতিবাদে রাস্তায় নামে। সরকার প্রতিবাদকারীদের কঠোরভাবে দমন করতে চাইলে পরিস্থিতি বিদ্রোহে রূপ নেয়। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সরকারপন্থী সন্ত্রাসীরা একযোগে আক্রমণ চালালে অন্তত ১ হাজার ৪০০ জন নিহত এবং প্রায় ২০ হাজার জন আহত হয়। স্বাধীনতা পরবর্তী ইতিহাসে এটা ছিল সবচেয়ে নিষ্ঠুর দমনপীড়ন। অনেকে বিশ্বাস করেন, এই জুলাই বিদ্রোহের মধ্য দিয়েই ২০০৮ সাল থেকে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ সরকারের পতন অনিবার্য হয়ে ওঠে। ২০২৪ সালের ১ জুলাই এই আন্দোলন পুরো মাত্রায় শুরু হলেও এর গোড়াপত্তন ঘটে ৫ জুন। ওইদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থীরা হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় রাস্তায় নামে। আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক এবং বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া তার ‘জুলাই : মাতৃভূমি অথবা মৃত্যু’ বইতে লিখেছেন, ‘৫ জুন বিকেলে আমি ঢাকা মেডিকেল কলেজের পাশে চানখারপুলে স্কুটি মেরামত করাচ্ছিলাম। তখন ফেসবুকে দেখি- হাইকোর্ট কোটা পুনর্বহাল করেছে। মনে হলো ২০১৮ সালের অর্জনগুলো ধূলিসাৎ হয়ে যাচ্ছে।’ এরপর কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিয়ে এক বৈঠকের মাধ্যমে প্রতিবাদ কর্মসূচির সূচনা হয়। রাত সাড়ে ৭টায় ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী’ ব্যানারে একটি মিছিল বের হয় এবং সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মধ্যদিয়ে তা শেষ হয়। এই সমাবেশে তারা হাইকোর্টের রায়কে ‘মেধাবীদের সাথে তামাশা’ বলে প্রত্যাখ্যান করে। সমাবেশে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র, বর্তমানে জাতীয় নাগরিক পার্টি- এনসিপির প্রধান নাহিদ ইসলাম পরদিন ৬ জুন বিকেল ৫টায় রাজু ভাস্কর্যে সমাবেশের ঘোষণা দেন। প্রায় পাঁচ থেকে ছয় শ’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ওই মিছিলে অংশ নেয় এবং স্লোগান দেয়- ‘কোটা পদ্ধতি মানি না’, ‘হাইকোর্টের রায় মানি না’, ‘কোটা বাতিল করতেই হবে’। আসিফের বক্তব্যের সাথে একমত প্রকাশ করে নাহিদও ৫ জুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে তাদের প্রথম বৈঠকের কথা এবং কিভাবে সাধারণ শিক্ষার্থীদের আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আন্দোলনে সম্পৃক্ত করতে পেরেছিলেন তা স্মরণ করেন। নাহিদ পরে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বলেন, ‘আমরা ঈদুল আজহার ছুটির আগে মাত্র তিন দিন আন্দোলনের সুযোগ পেয়েছিলাম।’ ৬ জুন ঢাবি, জাহাঙ্গীরনগর, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, জগন্নাথসহ দেশের বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীরা কোটা বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ করে। ৯ জুন শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মিছিল করে অ্যাটর্নি জেনারেল বরাবর একটি স্মারকলিপি জমা দেয়। এর প্রেক্ষিতে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল বিভাগে রায় স্থগিত চেয়ে আবেদন করে। শুনানির দিন ধার্য হয় ৪ জুলাই। ১০ জুন আবারো মিছিল হয় এবং শিক্ষার্থীরা সরকারকে ৩০ জুনের মধ্যে ২০১৮ সালের প্রজ্ঞাপন পুনর্বহাল করতে আল্টিমেটাম দেয়, না হলে সর্বাত্মক আন্দোলন শুরু করার ঘোষণা দেয়। আসিফ স্মরণ করেন, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় ৩০ জুন পর্যন্ত ঈদের ছুটি ঘোষণা করেছিল, তাই আমরা সেই দিনটিকে আল্টিমেটামের সময়সীমা হিসেবে নির্ধারণ করি। আমরা সরকারকে সতর্কও করেছিলাম- যদি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আমাদের দাবি পূরণ না হয়, তাহলে আমরা আবার আন্দোলন শুরু করব।’ ৩০ জুন সরকারের পক্ষ থেকে কোনো ঘোষণা না আসায় ১ জুলাই ঢাবি, জগন্নাথ, জাবি, রাবি, চবি, বরিশাল ও কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারাদেশের শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নেমে পড়ে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কিছু সময়ের জন্য ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর ব্যানারে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার প্রাঙ্গণ থেকে একটি মিছিল বের করে, যা রাজু ভাস্কর্যে শেষ হয়। সমাবেশ থেকে নাহিদ ইসলাম ঘোষণা দেন, আগামী ৪ জুলাই পর্যন্ত দেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে শ্রেণিকক্ষে পাঠদান ও পরীক্ষার বর্জন চলবে। তিনি তিন দিনের কর্মসূচিও ঘোষণা করেন- ২ জুলাই দেশব্যাপী মহাসড়কে মিছিল, ৩ ও ৪ জুলাই রাজধানীর রাজু ভাস্কর্যে, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সাত সরকারি কলেজ এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতাধীন অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের সমাবেশ। সমাবেশে নাহিদ ইসলাম ঘোষণা দেন- ৪ জুলাই পর্যন্ত দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন চলবে। সেই সাথে তিনি চারটি দাবি উত্থাপন করেন- ১. দ্রুত কোটা সংস্কারে কমিশন গঠন, যেন পশ্চাৎপদ জনগোষ্ঠী উপকৃত হয়। ২. কোটা পূরণ না হলে মেধাভিত্তিক নিয়োগ নিশ্চিত করা। ৩. নিয়োগে একাধিকবার কোটা সুবিধা ব্যবহার বন্ধ করা। ৪. প্রশাসনে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা। Logo হবিগঞ্জে শুঁটকি উৎপাদনে ভাটা Logo নবীগঞ্জ মসজিদে মাইকিং করে পুলিশের ওপর হামলা, আসামি ছিনতাই আটক ১৩ Logo চুনারুঘাটে হত্যা মামলার আসমী আ. মান্নান আটক-তাবলীগ জামাতে গিয়ে অপহরণ মামলা সাজিয়েছেন Logo আজমিরীগঞ্জ কালনী নদীর ভাঙনে নদীতে বিলীন হয়ে গেছে পাড়ে বসে চোখ মুছছেন সুনিতী

শায়েস্তাগঞ্জে মাজারের দর্শনার্থীদের উত্ত্যক্ত না করতে অনুরোধ করায় নিরীহ লোকদের ওপর হামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক

শায়েস্তাগঞ্জে মাজারের দর্শনার্থীদের উত্ত্যক্ত না করতে অনুরোধ করায় নিরীহ লোকদের ওপর অতর্কিত হামলা চালানো হয়েছে। এ হামলায় ৫ জন আহত হয়েছেন। আহতরা হলেন- শায়েস্তাগঞ্জ পৌরসভার চরনুরআহমদ দাউদনগর গ্রামের মোঃ শাহীন মিয়া (৩৮), মোঃ মাজত আলী (৬৫), মোঃ আলকায় মিয়া (৪৫), মোছাঃ তাছমিনা আক্তার (২৪) ও রাজু মিয়া (২৪)।
রবিবার (৩০ মার্চ) সন্ধ্যা ও রাতে এ হামলার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় সুবিচারের আশায় আহত মোঃ শাহীন মিয়ার ভাই মোঃ শামীম মিয়া বাদী হয়ে শায়েস্তাগঞ্জ থানায় মামলা করেছেন।
মোঃ শামীম মিয়া বলেন- এ মামলায় চরনুরআহমদ দাউদনগর গ্রামের সৈয়দ শামীম মিয়া (৩৪), শেখ মোঃ সমিজ আলী (৫২), সৈয়দ শাহিদ মিয়া (৩৮), সৈয়দ রুকেল মিয়া (৪০), সৈয়দ নাসিম (২৮), রোমান মিয়াসহ (২৭) আরও ৫ থেকে ৭ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামী করা হয়েছে।
তিনি বলেন- শাহীন মিয়া ছাড়া বাকী আহতরা হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। গুরুত্বর আহত শাহিন মিয়াকে হবিগঞ্জ থেকে সিলেট পাঠানো হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকায় প্রেরণ করা হয়েছে। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক।
মোঃ শামীম মিয়া বলেন- চরনুরআহমদ দাউদনগর গ্রামে ছাওয়াল পীর (রঃ) এর মাজার অবস্থিত। এ মাজারে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে দর্শনার্থীদের আগমন হয়। মাজার দীর্ঘদিন ধরে মোঃ শাকিল ভান্ডারী ও তার পরিবারের লোকজন দেখাশোনা করে আসছেন।
রবিবার সন্ধ্যায় মামলার ১নং বিবাদী সৈয়দ শামীম মিয়া হাফিজ উল্লাহর বাড়ির সামনের রাস্তায় দাঁড়িয়ে মাজারে আগত দর্শনার্থীদের উত্ত্যক্ত করাসহ খারাপ আচরণ করেন। এ ঘটনা দেখে ২নং সাক্ষী মোঃ শাকিল ভান্ডারী ১নং বিবাদীকে দর্শনার্থীদের সঙ্গে খারাপ আচরণ না করার জন্য অনুরোধ করেন। এতে করে তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। এ ঘটনা দেখে ২নং সাক্ষীর পরিবারের লোকজন এগিয়ে আসলে ১নং বিবাদীসহ তার লোকেরা উত্তেজিত হয়ে হামলা চালায়।
এ হামলায় মোঃ মাজত আলী (৬৫), মোঃ আলকায় মিয়া (৪৫), মোছাঃ তাছমিনা আক্তার (২৪) ও রাজু মিয়া (২৪) আহত হন। পরে স্থানীয় লোকজন এগিয়ে এসে উভয় পক্ষকে শান্ত করে বিষয়টি পবিত্র ঈদুল ফিতরের পর সমাধান করে দিবেন বলে আশ্বাস প্রদান করেন। সেই আশ্বাসে আহতরা হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা নেন।
মোঃ শামীম মিয়া বলেন- পরিস্থিতি শান্ত দেখে রাত প্রায় ১১টা ২০ মিনিটে আমার ভাই মোঃ শাহীন মিয়া দাউদনগর বাজারে যাওয়ার পথে মাছেরঘাট পৌঁছা মাত্র পূর্বের ঘটনার জেরে সৈয়দ শামীম মিয়াগংরা মিলে দেশীয় নিয়ে হামলা চালায়।
এতে শাহীন মিয়া গুরুত্বর আহত হয়। আহত অবস্থায় উদ্ধার করে হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় পরে তাকে ঢাকা প্রেরণ করা হয়েছে।
এদিকে বিবাদীগণ আমাদের ওপর হামলা করেই বসে নেই, তারা গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। তারা (বিবাদীগণ) মিথ্যা ঘটনা তৈরী করে আমাদের ঘায়েল করার চেষ্টা করছে।
পরিশেষে মোঃ শামীম মিয়া বলেন- সুবিচারের আশায় মামলা করেছি। আসামীদেরকে যেন দ্রুত গ্রেপ্তার করা হয়। আইনের কাছে সঠিক বিচার চাই।

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

আপডেট সময় ০৮:৫০:৪৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ৬ এপ্রিল ২০২৫
৫৩ বার পড়া হয়েছে

বাংলাদেশের মানুষ কল্পনাও করেনি যে কেবল চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে গড়ে ওঠা আন্দোলনই শেষ পর্যন্ত ‘জুলাই বিদ্রোহে’ রূপ নেবে। গত বছরের ১ জুলাই বাংলাদেশ এক অবিশ্বাস্য ঘটনার সাক্ষী হয়। এদিন শিক্ষার্থীদের ‘কোটা সংস্কার আন্দোলন’ ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে’ রূপ নেয়। এটি ছিল প্রায় ১৬ বছরের স্বৈরতান্ত্রিক আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের সূচনাবিন্দু। মানুষ কল্পনাও করেনি যে শুরুতে কেবল চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে গড়ে ওঠা আন্দোলনই শেষ পর্যন্ত ‘জুলাই বিদ্রোহে’ রূপ নেবে, শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ একত্রিত হয়ে সরকারের বিরুদ্ধে বৃহত্তর গণআন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়বে। ছাত্রদের এই অসন্তোষের সূচনা ঘটে ২০১৮ সালের কোটা বাতিলের সরকারি প্রজ্ঞাপনকে হাইকোর্ট কর্তৃক অবৈধ ঘোষণা করার রায়ের পর। সরকার ২০১৮ সালে তীব্র ছাত্র আন্দোলনের চাপে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিল করেছিল। কিন্তু হাইকোর্টের রায়ে ৫৬ শতাংশ কোটা পুনঃপ্রবর্তিত হয়, যাতে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য ৩০ শতাংশ, নারীদের জন্য ১০ শতাংশ, পশ্চাৎপদ জেলার জন্য ১০ শতাংশ, সংখ্যালঘুদের জন্য ৫ শতাংশ এবং প্রতিবন্ধীদের জন্য ১ শতাংশ বরাদ্দ করা হয়। ছাত্ররা এই ব্যবস্থাকে মেধাবীদের প্রতি বৈষম্য হিসেবে মনে করে প্রতিবাদে রাস্তায় নামে। সরকার প্রতিবাদকারীদের কঠোরভাবে দমন করতে চাইলে পরিস্থিতি বিদ্রোহে রূপ নেয়। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সরকারপন্থী সন্ত্রাসীরা একযোগে আক্রমণ চালালে অন্তত ১ হাজার ৪০০ জন নিহত এবং প্রায় ২০ হাজার জন আহত হয়। স্বাধীনতা পরবর্তী ইতিহাসে এটা ছিল সবচেয়ে নিষ্ঠুর দমনপীড়ন। অনেকে বিশ্বাস করেন, এই জুলাই বিদ্রোহের মধ্য দিয়েই ২০০৮ সাল থেকে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ সরকারের পতন অনিবার্য হয়ে ওঠে। ২০২৪ সালের ১ জুলাই এই আন্দোলন পুরো মাত্রায় শুরু হলেও এর গোড়াপত্তন ঘটে ৫ জুন। ওইদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থীরা হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় রাস্তায় নামে। আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক এবং বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া তার ‘জুলাই : মাতৃভূমি অথবা মৃত্যু’ বইতে লিখেছেন, ‘৫ জুন বিকেলে আমি ঢাকা মেডিকেল কলেজের পাশে চানখারপুলে স্কুটি মেরামত করাচ্ছিলাম। তখন ফেসবুকে দেখি- হাইকোর্ট কোটা পুনর্বহাল করেছে। মনে হলো ২০১৮ সালের অর্জনগুলো ধূলিসাৎ হয়ে যাচ্ছে।’ এরপর কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিয়ে এক বৈঠকের মাধ্যমে প্রতিবাদ কর্মসূচির সূচনা হয়। রাত সাড়ে ৭টায় ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী’ ব্যানারে একটি মিছিল বের হয় এবং সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মধ্যদিয়ে তা শেষ হয়। এই সমাবেশে তারা হাইকোর্টের রায়কে ‘মেধাবীদের সাথে তামাশা’ বলে প্রত্যাখ্যান করে। সমাবেশে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র, বর্তমানে জাতীয় নাগরিক পার্টি- এনসিপির প্রধান নাহিদ ইসলাম পরদিন ৬ জুন বিকেল ৫টায় রাজু ভাস্কর্যে সমাবেশের ঘোষণা দেন। প্রায় পাঁচ থেকে ছয় শ’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ওই মিছিলে অংশ নেয় এবং স্লোগান দেয়- ‘কোটা পদ্ধতি মানি না’, ‘হাইকোর্টের রায় মানি না’, ‘কোটা বাতিল করতেই হবে’। আসিফের বক্তব্যের সাথে একমত প্রকাশ করে নাহিদও ৫ জুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে তাদের প্রথম বৈঠকের কথা এবং কিভাবে সাধারণ শিক্ষার্থীদের আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আন্দোলনে সম্পৃক্ত করতে পেরেছিলেন তা স্মরণ করেন। নাহিদ পরে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বলেন, ‘আমরা ঈদুল আজহার ছুটির আগে মাত্র তিন দিন আন্দোলনের সুযোগ পেয়েছিলাম।’ ৬ জুন ঢাবি, জাহাঙ্গীরনগর, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, জগন্নাথসহ দেশের বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীরা কোটা বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ করে। ৯ জুন শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মিছিল করে অ্যাটর্নি জেনারেল বরাবর একটি স্মারকলিপি জমা দেয়। এর প্রেক্ষিতে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল বিভাগে রায় স্থগিত চেয়ে আবেদন করে। শুনানির দিন ধার্য হয় ৪ জুলাই। ১০ জুন আবারো মিছিল হয় এবং শিক্ষার্থীরা সরকারকে ৩০ জুনের মধ্যে ২০১৮ সালের প্রজ্ঞাপন পুনর্বহাল করতে আল্টিমেটাম দেয়, না হলে সর্বাত্মক আন্দোলন শুরু করার ঘোষণা দেয়। আসিফ স্মরণ করেন, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় ৩০ জুন পর্যন্ত ঈদের ছুটি ঘোষণা করেছিল, তাই আমরা সেই দিনটিকে আল্টিমেটামের সময়সীমা হিসেবে নির্ধারণ করি। আমরা সরকারকে সতর্কও করেছিলাম- যদি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আমাদের দাবি পূরণ না হয়, তাহলে আমরা আবার আন্দোলন শুরু করব।’ ৩০ জুন সরকারের পক্ষ থেকে কোনো ঘোষণা না আসায় ১ জুলাই ঢাবি, জগন্নাথ, জাবি, রাবি, চবি, বরিশাল ও কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারাদেশের শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নেমে পড়ে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কিছু সময়ের জন্য ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর ব্যানারে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার প্রাঙ্গণ থেকে একটি মিছিল বের করে, যা রাজু ভাস্কর্যে শেষ হয়। সমাবেশ থেকে নাহিদ ইসলাম ঘোষণা দেন, আগামী ৪ জুলাই পর্যন্ত দেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে শ্রেণিকক্ষে পাঠদান ও পরীক্ষার বর্জন চলবে। তিনি তিন দিনের কর্মসূচিও ঘোষণা করেন- ২ জুলাই দেশব্যাপী মহাসড়কে মিছিল, ৩ ও ৪ জুলাই রাজধানীর রাজু ভাস্কর্যে, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সাত সরকারি কলেজ এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতাধীন অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের সমাবেশ। সমাবেশে নাহিদ ইসলাম ঘোষণা দেন- ৪ জুলাই পর্যন্ত দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন চলবে। সেই সাথে তিনি চারটি দাবি উত্থাপন করেন- ১. দ্রুত কোটা সংস্কারে কমিশন গঠন, যেন পশ্চাৎপদ জনগোষ্ঠী উপকৃত হয়। ২. কোটা পূরণ না হলে মেধাভিত্তিক নিয়োগ নিশ্চিত করা। ৩. নিয়োগে একাধিকবার কোটা সুবিধা ব্যবহার বন্ধ করা। ৪. প্রশাসনে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা।

শায়েস্তাগঞ্জে মাজারের দর্শনার্থীদের উত্ত্যক্ত না করতে অনুরোধ করায় নিরীহ লোকদের ওপর হামলা

আপডেট সময় ০৮:৫০:৪৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ৬ এপ্রিল ২০২৫

শায়েস্তাগঞ্জে মাজারের দর্শনার্থীদের উত্ত্যক্ত না করতে অনুরোধ করায় নিরীহ লোকদের ওপর অতর্কিত হামলা চালানো হয়েছে। এ হামলায় ৫ জন আহত হয়েছেন। আহতরা হলেন- শায়েস্তাগঞ্জ পৌরসভার চরনুরআহমদ দাউদনগর গ্রামের মোঃ শাহীন মিয়া (৩৮), মোঃ মাজত আলী (৬৫), মোঃ আলকায় মিয়া (৪৫), মোছাঃ তাছমিনা আক্তার (২৪) ও রাজু মিয়া (২৪)।
রবিবার (৩০ মার্চ) সন্ধ্যা ও রাতে এ হামলার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় সুবিচারের আশায় আহত মোঃ শাহীন মিয়ার ভাই মোঃ শামীম মিয়া বাদী হয়ে শায়েস্তাগঞ্জ থানায় মামলা করেছেন।
মোঃ শামীম মিয়া বলেন- এ মামলায় চরনুরআহমদ দাউদনগর গ্রামের সৈয়দ শামীম মিয়া (৩৪), শেখ মোঃ সমিজ আলী (৫২), সৈয়দ শাহিদ মিয়া (৩৮), সৈয়দ রুকেল মিয়া (৪০), সৈয়দ নাসিম (২৮), রোমান মিয়াসহ (২৭) আরও ৫ থেকে ৭ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামী করা হয়েছে।
তিনি বলেন- শাহীন মিয়া ছাড়া বাকী আহতরা হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। গুরুত্বর আহত শাহিন মিয়াকে হবিগঞ্জ থেকে সিলেট পাঠানো হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকায় প্রেরণ করা হয়েছে। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক।
মোঃ শামীম মিয়া বলেন- চরনুরআহমদ দাউদনগর গ্রামে ছাওয়াল পীর (রঃ) এর মাজার অবস্থিত। এ মাজারে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে দর্শনার্থীদের আগমন হয়। মাজার দীর্ঘদিন ধরে মোঃ শাকিল ভান্ডারী ও তার পরিবারের লোকজন দেখাশোনা করে আসছেন।
রবিবার সন্ধ্যায় মামলার ১নং বিবাদী সৈয়দ শামীম মিয়া হাফিজ উল্লাহর বাড়ির সামনের রাস্তায় দাঁড়িয়ে মাজারে আগত দর্শনার্থীদের উত্ত্যক্ত করাসহ খারাপ আচরণ করেন। এ ঘটনা দেখে ২নং সাক্ষী মোঃ শাকিল ভান্ডারী ১নং বিবাদীকে দর্শনার্থীদের সঙ্গে খারাপ আচরণ না করার জন্য অনুরোধ করেন। এতে করে তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। এ ঘটনা দেখে ২নং সাক্ষীর পরিবারের লোকজন এগিয়ে আসলে ১নং বিবাদীসহ তার লোকেরা উত্তেজিত হয়ে হামলা চালায়।
এ হামলায় মোঃ মাজত আলী (৬৫), মোঃ আলকায় মিয়া (৪৫), মোছাঃ তাছমিনা আক্তার (২৪) ও রাজু মিয়া (২৪) আহত হন। পরে স্থানীয় লোকজন এগিয়ে এসে উভয় পক্ষকে শান্ত করে বিষয়টি পবিত্র ঈদুল ফিতরের পর সমাধান করে দিবেন বলে আশ্বাস প্রদান করেন। সেই আশ্বাসে আহতরা হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা নেন।
মোঃ শামীম মিয়া বলেন- পরিস্থিতি শান্ত দেখে রাত প্রায় ১১টা ২০ মিনিটে আমার ভাই মোঃ শাহীন মিয়া দাউদনগর বাজারে যাওয়ার পথে মাছেরঘাট পৌঁছা মাত্র পূর্বের ঘটনার জেরে সৈয়দ শামীম মিয়াগংরা মিলে দেশীয় নিয়ে হামলা চালায়।
এতে শাহীন মিয়া গুরুত্বর আহত হয়। আহত অবস্থায় উদ্ধার করে হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় পরে তাকে ঢাকা প্রেরণ করা হয়েছে।
এদিকে বিবাদীগণ আমাদের ওপর হামলা করেই বসে নেই, তারা গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। তারা (বিবাদীগণ) মিথ্যা ঘটনা তৈরী করে আমাদের ঘায়েল করার চেষ্টা করছে।
পরিশেষে মোঃ শামীম মিয়া বলেন- সুবিচারের আশায় মামলা করেছি। আসামীদেরকে যেন দ্রুত গ্রেপ্তার করা হয়। আইনের কাছে সঠিক বিচার চাই।