ঢাকা ১১:৩৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

যশোরে ৩০ কোটি টাকার কপির চারা বিক্রির আশা

যশোর প্রতিনিধি

যশোর সদর উপজেলার চুড়ামনকাটি ইউনিয়নের আব্দুলপুরে কপির চারা উৎপাদন ক্রমশ বাড়ছে। অন্যদের সফলতা দেখে ভাগ্য বদলের আশায় নতুন নতুন চাষীরা কপির চারা উৎপাদনে ঝুঁকছেন। ফলে গত মৌসুমে ৭শ’ বিঘা জমির চারার উৎপাদন এবার বেড়ে ১ হাজার ২৫ বিঘায় দাঁড়িয়েছে। ভরা মৌসুমে আর্থিকভাবে লাভবান হতে চাষীরা ক্ষেতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। চলতি মৌসুমে ৩০ কোটি টাকার চারা বিক্রির আশা করছেন তারা।

আব্দুলপুর গ্রামের একটি মেঠো পথের চারিপাশে সবুজ রঙয়ের দৃশ্য। যে কোনো পথচারীর নজর ছুঁয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা। চারা উৎপাদন করে আব্দুলপুর গ্রামের সুনাম দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে। এখন কপির চারার গ্রাম হিসেবে পরিচিত আব্দুলপুর। বাণিজ্যিকভাবে কপি চারার আবাদ করছেন কৃষকরা। বীজ অঙ্কুরোদগমের মাধ্যমে চারা উৎপাদন প্রতি মৌসুমে তারা আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। ১ যুগ আগে নিজেদের প্রয়োজনে চারা উৎপাদন শুরু করেন এখানকার চাষীরা। এখন ১ হাজারের বেশি বিঘা জমিতে কপির চারা উৎপাদন করা হয়। এখানকার উৎপাদিত কপির চারা প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন এলাকায় পাঠানো হচ্ছে। চারা উৎপাদনে অনেকই নিজেদের ভাগ্য ঘুরিয়েছেন। অনেক কৃষক হয়েছেন লাখপতি।

স্থানীয় উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বীজতলার আকার ১ মিটার পাশে ও লম্বায় ৩ মিটার লম্বা হয়। সমপরিমাণ বালি, মাটি ও জৈবসার মিশিয়ে ঝুরাঝুরা করে বীজতলা তৈরি করতে হয়। দ্বিতীয় বীজতলায় চারা রোপণের আগে ৭/৮ দিন পূর্বে প্রতি বীজতলায় ১০০ গ্রাম ইউরিয়া, ১৫০ গ্রাম টিএসপি ও ১০০ গ্রাম এমওপি সার ভালভাবে মিশিয়ে দিতে হবে। পরে চারা ঠিকমত না বাড়লে প্রতি বীজতলায় প্রায় ১০০ গ্রাম পরিমাণ ইউরিয়া সার ছিটিয়ে দেয়া ভাল।

আব্দুলপুর গ্রামের চাষী আজিজুর রহমান জানান, আষাঢ়ের শুরুতে জমিতে বেড দিয়ে বীজতলা প্রস্তুত করা হয়। তারপর বপন করা হয় বাঁধাকপি ও ফুলকপির বীজ। বীজ থেকে চারা গজাতে এক মাস সময় লাগে। এই চারা চাষীদের কাছে বিক্রি করা হয়। তিনি ৬ বছর ধরে কপির চারা উৎপাদন করছেন।

আজিজর রহমান জানান, এবারও তিনি ১২ কাটা জমিতে মোট ৮০টি তৈরি করে বাঁধা কপির বীজ বপন করে। প্রতি বেডে চারা উৎপাদনে তার খরচ হয়েছে আনুমানিক খরচ ১ হাজার টাকা। কিন্তু বেড প্রতি আড়াই হাজার টাকার বেশি চারা বিক্রি করেছেন। ৩বার চারা উৎপাদনে লক্ষাধিক টাকা লাভের সম্ভাবনার কথা জানান। বর্তমানে বাজারে ফুলকপির ভালো মানের চারা (সনোবক্স) ১ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ১ টাকা ৬০ পয়সা বিক্রি হচ্ছে। একটু দুর্বল চারা বিক্রি হচ্ছে ১ টাকা পিস। আর বাঁধাকপির প্রতিটি চারা (গ্রিন-৬০) ৫০ পয়সা থেকে ৬৫ পয়সা বিক্রি হচ্ছে বলে জানান, চাষী আজিজুর রহমান।

আরেক চাষী ওসমান গনি জানান, তিনি এক জমিতে চারা উৎপাদন করছেন। এখানকার কপির চারার মান ভালো হওয়ায় দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে সুনাম রয়েছে। ফলে চারা বেশি দামেও বিকিৎ করতে পারেন তারা। তিনি আরো জানান, যশোর ছাড়াও খুলনা, সাতক্ষীরা, নড়াইল, মাগুরা, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গার জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে চাষীরা এসে কপির চারা কিনে নিয়ে যান। কপির চারা উৎপাদন করে তিনি লাখ লাখ টাকা লাভবান হয়েছেন।

আইয়ুব আলী জানান, গতবারের মতো এবারো ১ বিঘা জমিতে বীজ বোপনের পর চারা উৎপাদন করেছেন। এখানো তার চারা বিক্রি চলছে। ইতোমধ্যে তিনি দুই লাখ টাকার চারা বিক্রি করেছেন। আরো দেড় লাখ টাকার চারা বিক্রি করতে পারবেন। সব মিলিয়ে তিনি মোটা অংকের টাকা লাভ করতে পারবেন বলে আশাবাদী। এক প্রশ্নের উত্তরে জানান, এক বিঘা জমিতে বীজ রোপন করে চারা উৎপাদন করতে ১ লাখ টাকার সামান্য বেশি টাকা খরচ হয়।

চাষীরা জানিয়েছেন, গত মৌসুমে ২০ কোটি টাকার বেশি কপি চারা বিক্রি করেছিলেন। চলতি মৌসুমে ৩০ কোটির টাকার চারা বিক্রির আশা করছেন চাষীরা।

চুড়ামনকাটি ইউনিয়নের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা জানান, আব্দুলপুরে বীজ থেকে কপির চারা উৎপাদন অন্য এলাকার চাষীদের জন্য আদর্শ দৃষ্টান্ত হতে পারে। এখানকার চারার যথেষ্ট সুনাম রয়েছে। যে কারণে চাষীদের যে কোন সমস্যার সমাধানে নিয়মিত পরামর্শ প্রদান করা হয়। কপির চারা উৎপাদন করে অনেক চাষী নিজেদের ভাগ্যের পরিবর্তন করতে পেরেছেন। ভরা মৌসুমে নারী পুরুষ মিলে জমিতে ব্যস্ত সময় পার করেন।

কৃষি কর্মকর্তারা আরও জানান, আষাঢ় মাস থেকে পুরো কার্তিক মাস অবধি বাঁধাকপি ও ফুলকপির চারা উৎপাদন চলে। এরই মধ্যেই চারা বিক্রি করা হয়। অগ্রায়নের মাঝামাঝি সব চারা বিক্রি শেষ হয়। একই পলিথিনে মোড়ানো বেড তৈরি করে জমিতে তিন বার চারা উৎপাদন করতে পারে কৃষকরা

যশোর কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক সুশান্ত কুমার তরফদার জানান, চুড়ামনকাটি ইউনিয়নের আব্দুলপুরে বাণিজ্যিকভাবে ফুল কপি ও বাঁধা কপির চারা উৎপাদন হয়। এখানকার উৎপাদিন চারা কিনে সবজির চাষ করে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের চাষীরা। তিনি আরও জানান, উৎপাদন খরচের বেশি লাভ বেশি হওয়ায় নতুন নতুন কৃষক আগ্রহী হচ্ছেন। ফলে চারা উৎপাদনের পরিমাণ বেড়েছে।

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

আপডেট সময় ০৬:৪৭:৪৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৪ জুলাই ২০২৪
২৩ বার পড়া হয়েছে

যশোরে ৩০ কোটি টাকার কপির চারা বিক্রির আশা

আপডেট সময় ০৬:৪৭:৪৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৪ জুলাই ২০২৪

যশোর সদর উপজেলার চুড়ামনকাটি ইউনিয়নের আব্দুলপুরে কপির চারা উৎপাদন ক্রমশ বাড়ছে। অন্যদের সফলতা দেখে ভাগ্য বদলের আশায় নতুন নতুন চাষীরা কপির চারা উৎপাদনে ঝুঁকছেন। ফলে গত মৌসুমে ৭শ’ বিঘা জমির চারার উৎপাদন এবার বেড়ে ১ হাজার ২৫ বিঘায় দাঁড়িয়েছে। ভরা মৌসুমে আর্থিকভাবে লাভবান হতে চাষীরা ক্ষেতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। চলতি মৌসুমে ৩০ কোটি টাকার চারা বিক্রির আশা করছেন তারা।

আব্দুলপুর গ্রামের একটি মেঠো পথের চারিপাশে সবুজ রঙয়ের দৃশ্য। যে কোনো পথচারীর নজর ছুঁয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা। চারা উৎপাদন করে আব্দুলপুর গ্রামের সুনাম দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে। এখন কপির চারার গ্রাম হিসেবে পরিচিত আব্দুলপুর। বাণিজ্যিকভাবে কপি চারার আবাদ করছেন কৃষকরা। বীজ অঙ্কুরোদগমের মাধ্যমে চারা উৎপাদন প্রতি মৌসুমে তারা আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। ১ যুগ আগে নিজেদের প্রয়োজনে চারা উৎপাদন শুরু করেন এখানকার চাষীরা। এখন ১ হাজারের বেশি বিঘা জমিতে কপির চারা উৎপাদন করা হয়। এখানকার উৎপাদিত কপির চারা প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন এলাকায় পাঠানো হচ্ছে। চারা উৎপাদনে অনেকই নিজেদের ভাগ্য ঘুরিয়েছেন। অনেক কৃষক হয়েছেন লাখপতি।

স্থানীয় উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বীজতলার আকার ১ মিটার পাশে ও লম্বায় ৩ মিটার লম্বা হয়। সমপরিমাণ বালি, মাটি ও জৈবসার মিশিয়ে ঝুরাঝুরা করে বীজতলা তৈরি করতে হয়। দ্বিতীয় বীজতলায় চারা রোপণের আগে ৭/৮ দিন পূর্বে প্রতি বীজতলায় ১০০ গ্রাম ইউরিয়া, ১৫০ গ্রাম টিএসপি ও ১০০ গ্রাম এমওপি সার ভালভাবে মিশিয়ে দিতে হবে। পরে চারা ঠিকমত না বাড়লে প্রতি বীজতলায় প্রায় ১০০ গ্রাম পরিমাণ ইউরিয়া সার ছিটিয়ে দেয়া ভাল।

আব্দুলপুর গ্রামের চাষী আজিজুর রহমান জানান, আষাঢ়ের শুরুতে জমিতে বেড দিয়ে বীজতলা প্রস্তুত করা হয়। তারপর বপন করা হয় বাঁধাকপি ও ফুলকপির বীজ। বীজ থেকে চারা গজাতে এক মাস সময় লাগে। এই চারা চাষীদের কাছে বিক্রি করা হয়। তিনি ৬ বছর ধরে কপির চারা উৎপাদন করছেন।

আজিজর রহমান জানান, এবারও তিনি ১২ কাটা জমিতে মোট ৮০টি তৈরি করে বাঁধা কপির বীজ বপন করে। প্রতি বেডে চারা উৎপাদনে তার খরচ হয়েছে আনুমানিক খরচ ১ হাজার টাকা। কিন্তু বেড প্রতি আড়াই হাজার টাকার বেশি চারা বিক্রি করেছেন। ৩বার চারা উৎপাদনে লক্ষাধিক টাকা লাভের সম্ভাবনার কথা জানান। বর্তমানে বাজারে ফুলকপির ভালো মানের চারা (সনোবক্স) ১ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ১ টাকা ৬০ পয়সা বিক্রি হচ্ছে। একটু দুর্বল চারা বিক্রি হচ্ছে ১ টাকা পিস। আর বাঁধাকপির প্রতিটি চারা (গ্রিন-৬০) ৫০ পয়সা থেকে ৬৫ পয়সা বিক্রি হচ্ছে বলে জানান, চাষী আজিজুর রহমান।

আরেক চাষী ওসমান গনি জানান, তিনি এক জমিতে চারা উৎপাদন করছেন। এখানকার কপির চারার মান ভালো হওয়ায় দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে সুনাম রয়েছে। ফলে চারা বেশি দামেও বিকিৎ করতে পারেন তারা। তিনি আরো জানান, যশোর ছাড়াও খুলনা, সাতক্ষীরা, নড়াইল, মাগুরা, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গার জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে চাষীরা এসে কপির চারা কিনে নিয়ে যান। কপির চারা উৎপাদন করে তিনি লাখ লাখ টাকা লাভবান হয়েছেন।

আইয়ুব আলী জানান, গতবারের মতো এবারো ১ বিঘা জমিতে বীজ বোপনের পর চারা উৎপাদন করেছেন। এখানো তার চারা বিক্রি চলছে। ইতোমধ্যে তিনি দুই লাখ টাকার চারা বিক্রি করেছেন। আরো দেড় লাখ টাকার চারা বিক্রি করতে পারবেন। সব মিলিয়ে তিনি মোটা অংকের টাকা লাভ করতে পারবেন বলে আশাবাদী। এক প্রশ্নের উত্তরে জানান, এক বিঘা জমিতে বীজ রোপন করে চারা উৎপাদন করতে ১ লাখ টাকার সামান্য বেশি টাকা খরচ হয়।

চাষীরা জানিয়েছেন, গত মৌসুমে ২০ কোটি টাকার বেশি কপি চারা বিক্রি করেছিলেন। চলতি মৌসুমে ৩০ কোটির টাকার চারা বিক্রির আশা করছেন চাষীরা।

চুড়ামনকাটি ইউনিয়নের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা জানান, আব্দুলপুরে বীজ থেকে কপির চারা উৎপাদন অন্য এলাকার চাষীদের জন্য আদর্শ দৃষ্টান্ত হতে পারে। এখানকার চারার যথেষ্ট সুনাম রয়েছে। যে কারণে চাষীদের যে কোন সমস্যার সমাধানে নিয়মিত পরামর্শ প্রদান করা হয়। কপির চারা উৎপাদন করে অনেক চাষী নিজেদের ভাগ্যের পরিবর্তন করতে পেরেছেন। ভরা মৌসুমে নারী পুরুষ মিলে জমিতে ব্যস্ত সময় পার করেন।

কৃষি কর্মকর্তারা আরও জানান, আষাঢ় মাস থেকে পুরো কার্তিক মাস অবধি বাঁধাকপি ও ফুলকপির চারা উৎপাদন চলে। এরই মধ্যেই চারা বিক্রি করা হয়। অগ্রায়নের মাঝামাঝি সব চারা বিক্রি শেষ হয়। একই পলিথিনে মোড়ানো বেড তৈরি করে জমিতে তিন বার চারা উৎপাদন করতে পারে কৃষকরা

যশোর কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক সুশান্ত কুমার তরফদার জানান, চুড়ামনকাটি ইউনিয়নের আব্দুলপুরে বাণিজ্যিকভাবে ফুল কপি ও বাঁধা কপির চারা উৎপাদন হয়। এখানকার উৎপাদিন চারা কিনে সবজির চাষ করে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের চাষীরা। তিনি আরও জানান, উৎপাদন খরচের বেশি লাভ বেশি হওয়ায় নতুন নতুন কৃষক আগ্রহী হচ্ছেন। ফলে চারা উৎপাদনের পরিমাণ বেড়েছে।