যুক্তরাষ্ট্র সফরে হতাশায় ডুবলেন মোদি, কোনো ছাড় দেননি ট্রাম্প
স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) ওয়াশিংটন ডিসিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের সাথে বৈঠক করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
দ্বিতীয় মেয়াদে ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর মোদির এটা প্রথম বৈঠক।
বৈঠকের পর ভারতীয় সাংবাদিকদের বাংলাদেশ বিষয়ে প্রশ্নগুলো বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে। তাতে স্পষ্ট হয়েছে বাংলাদেশ থেকে ৫ আগস্ট স্বৈরাচার েহাসিনার পালিয়ে যাওয়াটা হজম করতে পারছেন না মোদি আর তার গদি মিডিয়া।
ভারতীয় এক সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প বলেন, বাংলাদেশের পরিবর্তনে মার্কিন ডিপস্টেটের কোন ভূমিকা নেই। দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশ নিয়ে কয়েকটি অর্থহীন বা খামোখা মন্তব্য করেন (শত বছর প্রভৃতি) বা আংশিক মন্তব্য করেন এবং বাকীটা বলার জন্য মোদির দিকে বল ঠেলে দেন (“I will leave [the rest of] Bangladesh [conversation] to the Prime Minister”)।
বৈঠক নিয়ে গবেষক সুলতান মোহাম্মদ জাকারিয়া বলেন, ট্রাম্পের এই রেজিমে ভারত আমেরিকায় গিয়ে বাংলাদেশ নিয়ে দরকষাকষি করার কোন অবস্থাতেই নেই। ডোনাল্ড ট্রাম্প এই মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে ভারসাম্যহীনতা, অবৈধ অভিবাসী, নিজদেশের ডিপস্টেটের ক্ষমতাকে খর্ব করা (”ড্রেইনিং দ্যা সোয়াম্প”) – এই তিন অগ্রাধিকার নিয়ে তার শত্রুমিত্র সবার ওপরই চড়া।
ট্রাম্প ডেনমার্ক ও কানাডার মতো প্রতিষ্ঠিত মিত্রকেও যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থের প্রশ্নে এবার ছাড় দেয়নি।
এখন, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও অবৈধ অভিবাসন এই দুটি ক্ষেত্রেই আমেরিকার বর্তমান প্রশাসনের কাছে ভারতের অবস্থান খুবই নাজুক।
আমেরিকা-ভারতের মধ্যে সম্পাদিত প্রায় ১৩০ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্যে ভারতের বাণিজ্য সারপ্লাস প্রায় ৪৬ বিলিয়ন ডলার! ডোনাল্ড ট্রাম্প এই সারপ্লাস কমানোর জন্য দফারফা করে ছাড়বেন।
এছাড়া আমেরিকায় প্রায় ১০ লক্ষেরও বেশি অবৈধ ভারতীয় বসবাস করে। এবং অবৈধ ভারতীয়দের দেশে ফিরিয়ে নিতে বলবেন ট্রাম্প।
ট্রাম্প এই দুইয়ের সমাধানে জয়শংকরকে বলেছেন এবং মোদী এগুলো সামাধানের জন্যই আমেরিকা গেছেন। তিনি ভারত থেকে আমদানিকৃত পণ্যে নিশ্চিত ট্যারিফ বসাবেন এবং ভারতের বাজার আমেরিকার কোম্পানীগুলোর জন্য আরও বেশি খুলে দিতে চাপ দিবেন।
এই দুই চাপের মাঝখানে হিলারী-ওবামা জমানার “এশিয়া-পিভট” এবং চায়না-কন্টেইনমেন্ট-এর ট্রাডিশনাল বিদেশ নীতি কিছুটা ব্যাকসিটে চলে যাবে।
এই নীতিটি পুরোপুরি না বদলালেও ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে আমেরিকার বাণিজ্য, অভিবাসন ও ঘরের ডিপস্টেটই এই মুহূর্তে প্রধান অগ্রাধিকার। বাইরের ডিপস্টেট, যেটি মূলত সিআইএ, যেটি যেকোনো আমেরিকান প্রেসিডেন্টদের মূলত বিশ্বে যা ইচ্ছা করার যথেচ্ছ ক্ষমতার উৎস, সে অসীম ক্ষমতা ট্রাম্প অন্যান্য প্রেসিডেন্টের মতোই এনজয় করবেন।
সুতরাং ভারতের বাণিজ্য ও অভিবাসন স্বার্থ নিয়ে ট্রাম্পের সাথে দরকষাকষি করতেই মোদির ঘাম ঝরে যাওয়ার কথা এবং ঝরেছেও।
ট্রাম্পের এসব আগ্রাসী নীতি সামলে আবার বাংলাদেশ নিয়ে কথা বলা মোদির জন্য এক ধরনের বিলাসিতা।
সে সুযোগও তার এখন নেই।
যার ফলে যেসব আওয়ামী লীগের মনে করছেন, মোদী তাদের ত্রাতা হয়ে ট্রাম্পের সাথে দরকষাকষি করে ইউনুস সরকারকে বেকায়দায় ফেলবেন, তাদের জন্য সমবেদনা ছাড়া কিছু নেই।