শায়েস্তাগঞ্জে শুভ্রতা ছড়াচ্ছে সাদা বক, অভয়ারণ্য ঘোষণার দাবি
আমাদের বাংলা সাহিত্যের বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশাল জায়গা দখল করে আছে বিভিন্ন রকমের বক। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সাদা বক আজকাল দেখাই যায় না। জলবায়ু পরিবর্তন, গাছপালা নিধন, জমিতে অতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহার ও শিকারীদের অত্যাচারের কারণে বিলুপ্তির পথে বাংলার অতি পরিচিত এই পাখিটি। কিন্তু এর ব্যতিক্রম শায়েস্তাগঞ্জ পৌরসভার পশ্চিম বিরামচর (খলাপাড়া) গ্রামের শিক্ষক শফিকুর রহমানের বাড়ি এবং একই গ্রামের আব্দুল কাইয়ূমের বাড়িটি। শহুরে জীবনের যান্ত্রিকতা থেকে একটু দূরে হলেও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের সন্নিকটে শত সহ¯্র গাড়ির কোলাহলের মধ্যেও এখানে রয়েছে সাদা বকের নিরাপদ অভয়াশ্রম। বছরের পর বছর ধরে সাদা বকসহ বিদেশী ও দেশীয় রং বেরং-এর মৌসুমী পাখি এখানে ভীড় করে বলে স্থানীয়রা জানান। প্রতিদিন বিকালে শত শত সাদা বক ঝাঁকে ঝাঁকে ছুটে আসে বাঁশ ঝাড়, আম ও জাম গাছে। বকেরা দল বেঁধে সকালে বেরিয়ে যায় খাবারের সন্ধানে বিকালে ফিরে আসে আপন ঠিকানায়।
বনভূমি উজাড় আর কিছু অসাধু পাখি শিকারীদের দৌরাতেœ্য হারিয়ে যেতে বসেছে এই বক। কখনও মেঘাচ্ছন্ন আকাশে ঝাঁক বেঁধে উড়ে চলা, কখনও দিগন্ত বিস্তৃত মাঠের সবুজ গালিচার সৌন্দর্য্য বাড়িয়ে দিতো ঝাঁকে ঝাঁকে এই সাদা বক। আবার কখনও দলবদ্ধ হয়ে উড়তে উড়তে এক সময় মিশে যেত দূর আকাশ নিলীমায়। এক বিল থেকে আর এক বিলে অথবা দিন শেষে কোন বন কিংবা বাঁশঝাড়ে নিজ নীড়ে ফিরে যেত এই বকগুলো। প্রাকৃতিক নান্দনিক পাখি বক, বকের কলরব এখন শুধুই স্মৃতি। তবে সন্ধ্যা হলেই সাদা বকের কলকাকলিতে মুখরিত হয়ে উঠে শায়েস্তাগঞ্জের শিক্ষক শফিকের বাড়ির আশপাশ। এই মনোমুগ্ধকর দৃশ্য দেখে চোখ জুড়ান আগুন্তুকরা। ঘন বাঁশ বনে দল বেঁধে বসে থাকে। বেলা বাড়ার সাথে সাথে বেরিয়ে পড়ে খাবারের সন্ধানে। কখনও মেঘাচ্ছন্ন আকাশে ঝাঁক বেঁধে উড়ে চলে বকেরা।
প্রকৃতির সন্তান পাখি সৌন্দর্যের প্রতীক, পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষক এবং পরিবেশের বন্ধু। গ্রামাঞ্চলে পাখির আধিক্য থাকলেও শহরে পাখি দেখা যায় কদাচিৎ। বক, চড়–ই, শালিক, বুনো হাঁস, ঘুঘু, পানকৌড়ি, দোয়েল, কুকিলসহ নাম অজানা অসংখ্য পাখির কলকাকলী আর কিচিরমিচিরে মুখরিত হয় গোটা এলাকা। বিশেষ করে সাদা বক সবুজ শ্যামল গ্রামীণ গাছ-গাছালিকে নান্দনিক করে তুলে। শত শত পাখির অবাধ যাতায়াত বর্ণিল সুরের অপূর্ব ব্যঞ্জনা দূরন্ত পাখির উড়ন্ত মনোরম দৃশ্য বিমোহিত করে দর্শনার্থীদের। সন্ধ্যায় ঐ এলাকায় বেড়াতে আসা লোকজন পাখির এই নয়নাভিরাম দৃশ্য ও শ্রুতিমধুর পরিবেশে বিমুগ্ধ হন। পাখির এই আস্তানায় সারা বছরই পাখি থাকে। তবে শীত মৌসুমে এর সংখ্যা বাড়তে থাকে।
নানা কারণে সংকুচিত হয়েছে পাকপাখালির আবাসস্থল। দেশী পাখির সংখ্যা ক্রমেই কমে আসছে। কেবল কবিতা ও গানে নানান পাখি বন্দি হয়েছে আজ। তবে শায়েস্তাগঞ্জের বিরামচর এলাকায় পাখির এই অভয়ারণ্য দেখে যে কেউ ভুলে যাবেন এই হিসেব। সারিবদ্ধ সাদা বক, দোয়েলের শিস, টুনটুনির টুইট, কুকিলের কুহু কুহু, চড়–ই পাখির কিচিরমিচির ও বাহারি পাখির শব্দে ঘুম ভাঙ্গে স্থানীয়দের। সমাজকর্মী রফিকুল ইসলাম বলেন কোন লোভাতুরের দৃষ্টি এ পাখিদের দিকে গেলে স্থানীয়রা এর জোরালো প্রতিবাদ করেন। তবুও ফাঁক পেলেই পাকির বাচ্চা ধরে নিয়ে যায়। বক শিকার করে খেয়ে ফেলে। বকের বিষাক্ত বিষ্ঠায় নষ্ট হচ্ছে খলাপাড়া জামে মসজিদ সংলগ্ন পুকুরের পানি। মাঝে-মধ্যে মনোসংযোগে ছন্দ পতন ঘটে স্থানীয়দেরও। তবুও এতটুকু দুঃখ নেই তাদের। পাখি দিয়ে আগন্তুকের মনোরঞ্জনের ব্যবস্থা করতে পারার আনন্দই যেন আলাদা।
শায়েস্তাগঞ্জের উপজেলা নির্বাহী অফিসার পল্লব হোম দাস বলেন, আমরা ঐ বাড়ি দুটিকে পাখির অভয়ারণ্য ঘোষণা করবো। স্থানীয়দের সহযোগিতায় পাখির যাতায়াত ও বসবাসকে নিরাপদ করতে সচেষ্ট থাকবো।