ঢাকা ০৯:৩৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৪ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
Logo তারেক রহমানের অপেক্ষায় দেশবাসী Logo হবিগঞ্জ থেকে ঢাকায় যাচ্ছেন বিএনপির অর্ধলক্ষাধিক নেতাকর্মী Logo শায়েস্তাগঞ্জে কৃষি জমির টপসয়েল বিক্রির হিড়িক, জড়িত প্রভাবশালী সিন্ডিকেট চক্র Logo হবিগঞ্জ বালিভর্তি ট্রাক থেকে বিপুল পরিমাণ ভারতীয় জিরা জব্দ Logo হাদিকে গুলি: হবিগঞ্জ সীমান্তে বিজিবির সতর্কতা জারি Logo শায়েস্তাগঞ্জ খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায় উপজেলা যুবদলের দোয়া মাহফিল Logo চুনারুঘাট উপজেলায় বিএনপির স্থানীয় নেতাদের বিরুদ্ধে বন কর্মকর্তাকে মারধরের অভিযোগ Logo হবিগঞ্জের বাহুবলে ট্রাক-চাপায় স্কুলশিক্ষক নিহত Logo হবিগঞ্জ বেপরোয়া ট্রাক চাপায় নারী নিহত Logo বেইলিব্রিজ ভেঙে হবিগঞ্জ-বানিয়াচং সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন

হবিগঞ্জে অনাবৃষ্টিতে চা পাতা পুড়ে যাচ্ছে

হবিগঞ্জ প্রতিনিধি:-

হবিগঞ্জের তীব্র খরা আর অনাবৃষ্টির কারণে চা বাগানে চা পাতা পুড়ে যাচ্ছে। দীর্ঘ দিন বৃষ্টি না হওয়ায় চা গাছে মশা ও পোকা-মাকড় বাসা বাধছে। গাছগুলো রোদে পুড়ে মরে যাচ্ছে। এতে করে লোকসানের শঙ্কায় পড়েছেন চা বাগানের মালিকপক্ষ। বাগানের এমন করুণ দশায় শ্রমিকরাও হতাশ হয়ে পড়েছেন।

জেলার নবীগঞ্জ, বাহুবল, মাধবপুর ও চুনারুঘাট উপজেলার পাহাড়ি এলাকায় ফাঁড়িসহ ৪১টি চা বাগান রয়েছে। এ সব বাগানের বাসিন্দা প্রায় দুই লাখ। এরমধ্যে স্থায়ী ও অস্থায়ী মিলে প্রায় ৩২ হাজার শ্রমিক চা পাতা উত্তোলনে জড়িত। বাগানে কাজ না পেয়ে বাকিদের জীবিকার জন্য বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে কাজ করে অর্থ উপার্জন করতে হচ্ছে। বছরের মার্চ থেকে চা পাতার উৎপাদন শুরু হয়। চলে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত। এখানে নতুন কুঁড়ি না আসায় গত বছরের এই সময়ের তুলনায় চলতি বছর চায়ের উৎপাদন কমেছে।

ভরা মৌসুমে গাছে নতুন কুঁড়ি না থাকায় কমে গেছে শ্রমিকের কাজ। শ্রমিকরা পাহাড়ের নিচু এলাকা থেকে কলসি দিয়ে পানি এনে গাছে নতুন কুঁড়ি গজানোর চেষ্টা করছেন। চোখে-মুখে স্বপ্ন নিয়ে অধীর আগ্রহে বসে আছে বৃষ্টির আর নতুন কুঁড়ির আশায়। চলতি বছরে বৃষ্টিপাত না হওয়ায় এখনো চা বাগানে চা-পাতার কুঁড়ি বের হচ্ছে না। তীব্র রোদের কারণে চা বাগানে আশঙ্কাজনক হারে চা পাতার উৎপাদন কমেছে। প্রতিটি চা বাগানের ভেতরে থাকা ছোট-বড় লেক ও ছড়াগুলো শুকিয়ে গেছে। যে কারণে চা বাগানে পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে।

জেলায় মোট ৪১টি চা বাগানের আয়তন ১৫ লাখ ৭০ হাজার ৩২৪ হেক্টর। প্রতি হেক্টর জমিতে ২০০ থেকে ২৫০ কেজি চা-পাতা উৎপাদন হয়। প্রতি বছর মার্চ মাস থেকে শুরু হয় চা-পাতা উত্তোলন।
সরেজমিনে দেখা যায়, বাগানে পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় পানি উঠছে না। পানির জন্য অনেক শ্রমিক দূর-দূরান্ত থেকে পানি এনে খাচ্ছেন। এমনকি গোসল করতে তাদের যেতে হচ্ছে দূরের বস্তিতে। বাংলো ও স্টাফ কোয়ার্টারেও নেই পানি।

চুনারুঘাটে দেউন্দি চা বাগানের নারী চা শ্রমিক রঞ্জনা মাল বলেন, ‘‘প্রতি বছরে মার্চ মাস আসলে আমরা দিনভর চা-পাতার কুঁড়ি উত্তোলন করি কিন্তু এ বছর বৃষ্টি না হওয়াতে চা-পাতার কুঁড়ি বের হচ্ছে না। যার কারণে আমাদের কাজ ও মজুরি কমে গেছে। আমরা গোসল ও খাওয়ার পানি পাচ্ছি না। চা-পাতা না তুললে বাগান কর্তৃপক্ষও মজুরি দিবে না।’’

মাধবপুর উপজেলার সুরমা চা বাগানের পার্বতী বাউরী বলেন, ‘‘বাগানে কাজ করেই আমাদের সংসার চলে। এখন কেউ বাগানে কাজ না করে বাইরে বস্তি ও শহরে কাজ করে সংসার চালাচ্ছেন। কিন্তু চা গাছে পাতা না আসলে আমাদের কপালে দুঃখ আছে।’’

চুনারুঘাট উপজেলার দেউন্দি চা বাগানের ডেপুটি সহকারী ম্যানেজার দেবাশীষ রায় জানান, দেউন্দি টি কোম্পানিসহ জেলার প্রতিটি চা বাগানে অনাবৃষ্টির কারণে চা উৎপাদন মারাত্মকভাবে ক্ষতি হচ্ছে। এমন অবস্থা চলতে থাকলে দিন দিন লোকসানের পাল্লা ভারী হবে।

মাধবপুর উপজেলার নোয়াপাড়া চা বাগানের সহকারী ব্যবস্থাপক সোহাগ আহমেদ জানান, গত ২০২৪ সালে তীব্র খরা ও শ্রমিক অসন্তোষসহ নানা কারণে বাগানগুলোতে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে চা-পাতা উৎপাদন কম হয়। চলতি বছর বৃষ্টি না হলে ক্ষতির পরিমাণ আরো বাড়তে পারে। বিশাল বাগান কৃত্রিম পানি দিয়ে পোষানো সম্ভব নয়।

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

আপডেট সময় ০৬:০৬:০০ অপরাহ্ন, সোমবার, ৭ এপ্রিল ২০২৫
১৮০ বার পড়া হয়েছে

হবিগঞ্জে অনাবৃষ্টিতে চা পাতা পুড়ে যাচ্ছে

আপডেট সময় ০৬:০৬:০০ অপরাহ্ন, সোমবার, ৭ এপ্রিল ২০২৫

হবিগঞ্জের তীব্র খরা আর অনাবৃষ্টির কারণে চা বাগানে চা পাতা পুড়ে যাচ্ছে। দীর্ঘ দিন বৃষ্টি না হওয়ায় চা গাছে মশা ও পোকা-মাকড় বাসা বাধছে। গাছগুলো রোদে পুড়ে মরে যাচ্ছে। এতে করে লোকসানের শঙ্কায় পড়েছেন চা বাগানের মালিকপক্ষ। বাগানের এমন করুণ দশায় শ্রমিকরাও হতাশ হয়ে পড়েছেন।

জেলার নবীগঞ্জ, বাহুবল, মাধবপুর ও চুনারুঘাট উপজেলার পাহাড়ি এলাকায় ফাঁড়িসহ ৪১টি চা বাগান রয়েছে। এ সব বাগানের বাসিন্দা প্রায় দুই লাখ। এরমধ্যে স্থায়ী ও অস্থায়ী মিলে প্রায় ৩২ হাজার শ্রমিক চা পাতা উত্তোলনে জড়িত। বাগানে কাজ না পেয়ে বাকিদের জীবিকার জন্য বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে কাজ করে অর্থ উপার্জন করতে হচ্ছে। বছরের মার্চ থেকে চা পাতার উৎপাদন শুরু হয়। চলে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত। এখানে নতুন কুঁড়ি না আসায় গত বছরের এই সময়ের তুলনায় চলতি বছর চায়ের উৎপাদন কমেছে।

ভরা মৌসুমে গাছে নতুন কুঁড়ি না থাকায় কমে গেছে শ্রমিকের কাজ। শ্রমিকরা পাহাড়ের নিচু এলাকা থেকে কলসি দিয়ে পানি এনে গাছে নতুন কুঁড়ি গজানোর চেষ্টা করছেন। চোখে-মুখে স্বপ্ন নিয়ে অধীর আগ্রহে বসে আছে বৃষ্টির আর নতুন কুঁড়ির আশায়। চলতি বছরে বৃষ্টিপাত না হওয়ায় এখনো চা বাগানে চা-পাতার কুঁড়ি বের হচ্ছে না। তীব্র রোদের কারণে চা বাগানে আশঙ্কাজনক হারে চা পাতার উৎপাদন কমেছে। প্রতিটি চা বাগানের ভেতরে থাকা ছোট-বড় লেক ও ছড়াগুলো শুকিয়ে গেছে। যে কারণে চা বাগানে পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে।

জেলায় মোট ৪১টি চা বাগানের আয়তন ১৫ লাখ ৭০ হাজার ৩২৪ হেক্টর। প্রতি হেক্টর জমিতে ২০০ থেকে ২৫০ কেজি চা-পাতা উৎপাদন হয়। প্রতি বছর মার্চ মাস থেকে শুরু হয় চা-পাতা উত্তোলন।
সরেজমিনে দেখা যায়, বাগানে পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় পানি উঠছে না। পানির জন্য অনেক শ্রমিক দূর-দূরান্ত থেকে পানি এনে খাচ্ছেন। এমনকি গোসল করতে তাদের যেতে হচ্ছে দূরের বস্তিতে। বাংলো ও স্টাফ কোয়ার্টারেও নেই পানি।

চুনারুঘাটে দেউন্দি চা বাগানের নারী চা শ্রমিক রঞ্জনা মাল বলেন, ‘‘প্রতি বছরে মার্চ মাস আসলে আমরা দিনভর চা-পাতার কুঁড়ি উত্তোলন করি কিন্তু এ বছর বৃষ্টি না হওয়াতে চা-পাতার কুঁড়ি বের হচ্ছে না। যার কারণে আমাদের কাজ ও মজুরি কমে গেছে। আমরা গোসল ও খাওয়ার পানি পাচ্ছি না। চা-পাতা না তুললে বাগান কর্তৃপক্ষও মজুরি দিবে না।’’

মাধবপুর উপজেলার সুরমা চা বাগানের পার্বতী বাউরী বলেন, ‘‘বাগানে কাজ করেই আমাদের সংসার চলে। এখন কেউ বাগানে কাজ না করে বাইরে বস্তি ও শহরে কাজ করে সংসার চালাচ্ছেন। কিন্তু চা গাছে পাতা না আসলে আমাদের কপালে দুঃখ আছে।’’

চুনারুঘাট উপজেলার দেউন্দি চা বাগানের ডেপুটি সহকারী ম্যানেজার দেবাশীষ রায় জানান, দেউন্দি টি কোম্পানিসহ জেলার প্রতিটি চা বাগানে অনাবৃষ্টির কারণে চা উৎপাদন মারাত্মকভাবে ক্ষতি হচ্ছে। এমন অবস্থা চলতে থাকলে দিন দিন লোকসানের পাল্লা ভারী হবে।

মাধবপুর উপজেলার নোয়াপাড়া চা বাগানের সহকারী ব্যবস্থাপক সোহাগ আহমেদ জানান, গত ২০২৪ সালে তীব্র খরা ও শ্রমিক অসন্তোষসহ নানা কারণে বাগানগুলোতে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে চা-পাতা উৎপাদন কম হয়। চলতি বছর বৃষ্টি না হলে ক্ষতির পরিমাণ আরো বাড়তে পারে। বিশাল বাগান কৃত্রিম পানি দিয়ে পোষানো সম্ভব নয়।