হবিগঞ্জ জেলায় শুটকি উৎপাদনে জীবিকা সংকটের শঙ্কা ৫ শতাধিক পরিবারে
জেলার হাওরাঞ্চলে পানি নামার সাথে সাথে পুরোদমে শুরু হয় শুটকি উৎপাদন। এক সময় এ অঞ্চলের শুটকি দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি হতো। কিন্তু বিভিন্ন কারণে গেল কয়েক বছর ধরে জেলায় কমেছে শুটকির উৎপাদন। এতে কর্মসংস্থানও হারিয়েছে শুটকি উৎপাদানের সাথে জড়িত কয়েক হাজার মানুষ। ফলে তারা এখন অন্য পেশার দিকে ঝুঁকছেন। শুটকি উৎপাদনের সাথে জড়িতরা বলছেন- একদিকে হাওরে পর্যাপ্ত পরিমান মাছ পাওয়া যাচ্ছে না যে কারণে শুটকি উৎপাদন করা সম্ভব হচ্ছে অন্যদিকে এ পেশায় জড়িতদের কোন সহযোগীতা করছে না সরকার। তাই বাধ্য হয়েই অনেক জেলেরা পেশা ছাড়তে বাধ্য বাধ্য হচ্ছে। জানা গেছে- জেলার আজমিরীগঞ্জ, বানিয়াচং, নবীগঞ্জ, বাহুবল ও লাখাই উপজেলার অন্তত ৫ শতাধিক পরিবার শুটকি উৎপাদনের সাথে জড়িত। এখানকার উৎপাদিত শুটকিতে কোন ধরণের কেমিক্যাল ব্যবহার না করায় এর স্বাদ ও কদর আলাদা। কিন্তু এ বছর শুটকি উৎপাদনকারীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে হতাশা। নদ-নদী ও হাওরের পানি শুকিয়ে যাওয়া, দেশীয় বিভিন্ন প্রজাতির মাছ কমে যাওয়া, কাঁচা মাছের চেয়ে শুটকির দাম কম পাওয়াসহ বিভিন্ন কারণে শুটকি তৈরী থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন জেলেরা। যদিও একটা সময় ছিল যখন জেলাজুড়ে সহ¯্রাধিকেরও অধিক পরিবার এই পেশার সাথে জড়িত ছিল। কিন্তু তা এখন ধীরে ধীরে কমে আসছে। জেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে- বিগত অর্থবছরে জেলায় শুঁটকি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্র ছিল ১ হাজার ৬শত ২০ মেট্রিক টন। এবার সেই লক্ষ্যমাত্রার বেশি উৎপাদন হবে বলে আশা প্রকাশ করেন জেলা মৎস্য কর্মকর্তা। তবে তারা বলছেন- শুটকি তৈরীর পেশার সাথে জড়িতদের সহায়তার পাশাপাশি তাদেরকে সহায়তা করা হচ্ছে।
রহিমা খাতুন নামে এক নারী জানান- জীবের বেশিরভাগ সময় শুটকি উৎপাদন করে কাটিয়েছি। কিন্তু এখন শেষে বয়সে এসে তা করতে পারছি না। তিনি বলেন- পুরুষরা হাওর থেকে মাছ ধরে এনে দিলেও মাছ কাটা, ধোয়াসহ শুটকি উৎপাদনের প্রক্রিয়াজত করণের বেশির ভাগ কাজই করে থাকে নারীরা। তবে এখন পর্যাপ্ত পরিমান মাছ না পাওয়ায় শুকটি উৎপাদন কমে গেছে অর্ধেকে। মিজানুর রহমান নামে এক জেলে বলেন- হাওরে পর্যাপ্ত পরিমান মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। আবার যে মাছ পাওয়া যাচ্ছে তা’র দামও বেশি। যে কারণে মাছের দামের সাথে শুটকির দামের প্রার্থক্য অনেক। তিনি বলেন- লাভ কম হওয়ায় শুটকি উৎপাদনে আগ্রহ হারাচ্ছেন তারা। অধির দাস বলেন- একটা সময় আমাদের তৈরী শুটকি দেশ ছাড়িয়ে বিদেশ যেত। কিš‘ এখন তা কমে এসেছে। তিনি বলেন- শুটকি উৎপাদনে সকল প্রতিক‚লতা কাটাতে হাওরে মাছ বৃদ্ধি ও সরকারি ভাবে আমাদেরকে সহায়তা করতে হবে।
হবিগঞ্জ জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ ওয়াহিদুর রহমান মজুমদার জানান- হবিগঞ্জের শুটকির চাহিদা রয়েছে দেশ ছাড়িয়ে বিদেশে। তাই শুটকির উৎপাদন বাড়াতে কাজ করছে মৎস্য বিভাগ। তিনি বলেন- ইতিমধ্যে শুটকি উৎপাদকারীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করাসহ নানা পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। সকল প্রতিক‚লতা কাটিয়ে উঠতে পারলে আবারও শুটকি উৎপাদনে সুদিন ফিরে আসবে বলে মনে করেন এই কর্মকর্তা।