৩৫ দিন ধরে বন্ধ কাজ শ্রমিক পরিবারে মানবেতর জীবন যাপন
জেলায় ন্যাশনাল টি কোম্পানীর ৫টি বাগানে ৩৫ দিন ধরে বন্ধ রয়েছে কাজ। এতে করে তাদের পরিবারে দেখা দিয়েছে অভাব-অনটন। শ্রমিকরা চিকিৎসা ও খাদ্য সংকটে ভুগছেন প্রতিনিয়ত। পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়ায় শ্রমিকদের মধ্যে বিরাজ করছে চরম হতাশা। অনেক পরিবার দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। জেলার চুনারুঘাট উপজেলার চন্ডিছড়া, পারকুল ও সাতছড়ি এবং মাধবপুর উপজেলার জগদিশপুর ও তেলিয়াপাড়া চা বাগানে এমন পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে। ৬ সপ্তাহের মজুরী পরিশোধের দাবীতে শ্রমিকরা মাঝে মধ্যে মহাসড়ক অবরোধ, সভা-সমাবেশ ও মানববন্ধন করলেও সমাধানে সাড়া নেই কর্তৃপক্ষের।
চুনারুঘাট উপজেলার চন্ডিছড়া চা বাগানের শ্রমিক রেনু খা বাউরি। বয়সটা চল্লিশ ছুইছুই। স্বামী স্বপন বাউরিও নেই পৃথিবীতে। ছেলে মেয়েসহ ৬ জনের পরিবার তার। বাগানে কাজ করে যে টাকা বেতনসহ সুযোগ সুবিধা পেতেন সেই টাকা দিয়ে কোন রকম চালাতেন সংসার। কিন্তু গেল ৩৫ দিন বাগানে কাজ বন্ধ রয়েছে তার। ফলে পরিবারের ৬ সদস্য নিয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করতে হচ্ছে তাকে। এক বেলা ছিড়া মুড়ি খেলেও অন্যবেলায় থাকতে হচ্ছে উপোস।
একই অবস্থা নারী শ্রমিক রিতা গঞ্জুরও। মা আরতি রঞ্জু দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ। চিকিৎসার অভাবে মৃত্যু পথযাত্রী তিনি। মুখে নেই খাবার, অসহায় চোখে বিছানার এক কোণে কাতরাচ্ছেন তিনি। মায়ের এই দুরাবস্থা দেখে চোখে পানি ধরে রাখতে পারছেন না রিতা। অভাব-অনটনে পড়ে দিশেহারা তিনি। দুলন রিকি হাসনের পরিবারেও স্ত্রীসহ রয়েছে ৩ সন্তান। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে মানবেতন জীবন যাপন করছেন তিনি।
শুধু রেনু, দুলন ও রীতা গঞ্জু নয়, এমন অবস্থা দেখা দিয়েছে বাগানের দিলীপ ও দুলনসহ আরো শতাধিক পরিবারে। দীর্ঘ ৩৫ দিন ধরে কাজ বন্ধ তাদের। শুরুতে ৬ সপ্তাহ মজুরী, রেশন ও তলব বন্ধ থাকায় আন্দোলনে নেমেছিলেন শ্রমিকরা। এরপর থেকে ৩৫ দিন ধরে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছেন শ্রমিকরা। এমন অবস্থায় নানা দূর্ভোগেরও শিকার হচ্ছেন তারা।
রেনু খা বাউরি বলেন, ‘কাজ করে যে মজুরি পেতাম তাই দিয়ে কোন মতে সংসার চালতো। কিন্তু এখন তাও বন্ধ হয়ে গেলে। বাগানে ৩৫ দিন ধরে কাজ বন্ধ। বাজার থেকে কোন রকম আধা কেজি ছিড়া কিনে এনে পরিবারের সকলে খেয়েছি। একবার খেলেও অন্যবারের কোন ভরসা নেই আমাদের’। তিনি বলেন, ‘বাগান কর্তৃপক্ষ যদি আমাদের পাওনা ৬ সপ্তাহের বেতন দ্রæত পরিশোধ না করে তা হলে আমরা না খেয়ে মারা যাব’। আর দিলীপ নামে এক যুবক বলেন, ‘আমরা চা শ্রমিক বলে আমাদের খরচ কম। খাবার খেতে গেলেই টাকার প্রয়োজন। কাজ নেই বেতন নেই। তাই বাগান থেকে গাছের ডাল সংগ্রহ করে ৫০/১০০ টাকায় বাজারে বিক্রি করে তা দিয়ে পরিবারের জন্য কোন রকম ছিড়া মুড়ি সংগ্রহ করছি। এভাবে আর কত দিন চলব’।
দুলন রিকি হাসন বলেন, ‘টানা ৩৫ দিন ধরে আমাদের কাজ বন্ধ। ৬ সপ্তাহ ধরে মজুরী বন্ধ রাখে বাগান কর্তৃপক্ষ। আমরা তো গরীব মানুষ। দিনে আনি দিনে খাই। এখন আমাদের পেট চলবে কি করে। আমরা নিজেরাই কি খাইমু আর সন্তানদেরই বা কি খাওয়াইমু’।
চন্ডিছড়া চা বাগান পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি রঞ্জিত কর্মকার বলেন, ‘বাগান কর্তৃপক্ষ আমাদের বার বার শুধু আশ্বাস দিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু কোন ভাবেই আমাদের মজুরী ও তলব পরিশোধ করছে না। আমাদের ৬ সপ্তাহের মজুরী পরিশোধের আন্দোলন ৩৫ দিনে পৌছেচে। তবুও মন গলেই কর্তৃপক্ষের। পরিস্থিতি সমাধান না হলে আমাদের আন্দোলন চলবে।
শ্রমিক নেতা সুভাষ দাস বলেন, ‘কাজ বন্ধ থাকায় শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। অভাব-অনটনে চলছে তাদের সংসার। বাগান কর্তৃপক্ষ সমাধানের উদ্যোগ না নেয়ায় শ্রমিকরা দিন দিন অসহায় হয়ে পড়ছেন।
চন্ডিছড়া চা বাগানের ব্যবস্থাপক মো. সেলিমুর রহমান বলেন, ‘বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অবগত। এখন পর্যন্ত তাদের কাছ থেকে সমাধানের কোন উত্তর পাইনি। তবে তাদের বেতন পরিশোধের চেষ্টা চলছে। কর্তৃপক্ষ উদ্যোগ নিলে দ্রæত বিষয়টি সমাধান করে শ্রমিকদের কাজে ফিরে আনা হবে’।