পর্যটকদের নতুন আকর্ষণ দেউন্দি শাপলা বিল, কুয়াশার চাঁদরে মোড়া লাল শাপলা দেখে মুগ্ধ পর্যটক
চারদিকে চা বাগান আর মধ্যখানে লাল শাপলার বিল। প্রাকৃতিক অপরূপ সৌন্দর্য্য প্রতিদিন মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে পর্যটকদের। ভোর সকাল থেকে ১১ টা ও বিকেল ৪ টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত শাপলা বিলের সৌন্দর্য্য উপভোগ করেন বিভিন্ন জেলার পর্যটকরা। এখানে শিশু-কিশোর, নারী-পুরুষ শুরু করে তরুণ-তরুণীরা শাপলা বিলে প্রতিদিন ভীড় করছেন। আগামী ফেব্রুয়ারী মাস পর্যন্ত ভোরের আলোতে ফুটবে লাল শাপলা।
স্থানীয়দের মতে, চুনারুঘাট উপজেলার দেউন্দি চা বাগানের ‘শাপলা বিল’ এখন পর্যটকদের নতুন আকর্ষণ। চা বাগান ঘেরা প্রাকৃতিক পরিবেশ, সবুজ অরণ্য আর লাল শাপলার মনোমুগ্ধকর দৃশ্য মিলিয়ে বিলটি স্থানীয়দের কাছে ‘শাপলার রাজ্য’ নামে পরিচিত। শরতের আগমণ থেকে শীতের শুরু পর্যন্ত ভোরের আলোয় লাল শাপলায় রঙিন হয়ে ওঠে পুরো বিল।
কুয়াশার চাঁদরে মোড়া সকাল আর পাখির কলতান মিলিয়ে এখানকার পরিবেশ অতুলনীয়। পাহাড়, আকাশ আর শাপলার সৌন্দর্য মিলিয়ে এটি যেন অন্য এক অনুভূতি। তাই পর্যটকরা মনভরে উপভোগ করেন শাপলার সৌন্দর্য্য। বিলপাড়ে এসেই ফটোসেশন ও ভিডিও চিত্র ধারনে ব্যস্ত হয়ে পড়েন পর্যটকরা।
ইতিহাস, ঐতিহ্য আর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরা পাহার টিলা হাওর বন, চুনারুঘাটের পর্যটন। সম্ভাবনাময় পর্যটন এলাকা হিসেবে খ্যাত চুনারুঘাটকে কেন্দ্র করেই ভ্রমণপিপাসুদের কাছে এখন ‘শাপলার রাজ্য’ নামে পরিচিত দেওন্দি শাপলার বিল। দেখা যায় শরতের আগমণে শীতের শুরু পর্যন্ত লাল শাপলা তার মনোমুগ্ধকর সৌন্দর্য ছড়িয়ে সবাইকে আকর্ষন করে। শাপলার বিল ঘোরার পাশাপাশি চারিদিকে ঘেরা পাহাড়ের অপরূপ সৌন্দর্য সহজে কেড়ে নেয় পর্যটকদের মন।
এতে করে শীতের সিজনে শাপলার বিল ভ্রমণ পিপাসুদের জন্য অন্যতম একটি স্পট হয়ে উঠেছে শাপলার বিল। কারন শীতের সকালে ফুলে ফুলে লাল হয়ে যায় শাপলার বিল আর কুয়াশার চাদরে মোড়া লাল শাপলার সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসা পর্যটকদের জন্য উপযুক্ত সময়। তবে পর্যটকদের দাবী, শাপলার বিলে নেই শৌচাগার পাশাপাশি পার্কিং ব্যবস্থাসহ নিরাপত্তার অভাব রয়েছে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমন্ডিত শাপলার বিল রক্ষা ও নিরাপত্তা জোরদার করতে প্রশাসনের প্রতি দাবী জানিয়েছেন অনেকেই ।
এই শাপলার বিলকে কেন্দ্র করে এখানে গড়ে উঠেছে ভ্রাম্যমান দোকান পাট। বিলের এক কোণে বসে প্রতিদিন ভোর সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চা, পান, বিস্কুট, চিপস ও পানিসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র বিক্রি করেন বৃৃদ্ধ শফিক মিয়া। তিনি জানান, ৪/৬ মাস পর্যন্ত এখানে শাপলা ফুটবে। ততদিন তার ব্যবসা চলমান থাকবে। প্রতিদিন গড় ১ থেকে দেড় হাজার টাকা পর্যন্ত বিভিন্ন পণ্য বিক্রি করেন তিনি। এছাড়া স্থানীয় অনেক শিশুরা বিলের পাড়ে ফুল বিক্রি করেন। তাদের দাবী, পাশর্^বর্তী এলাকা থেকে শাপলা সংগ্রহ করে এখানে পর্র্যটকদের কাছে তারা হাটি প্রতি ১০ থেকে ২০ টাকা বিক্রি করেন।
পর্যটকরা বলেন, শাপলার অপরূপ সৌন্দর্য্য উপভোগ করার মত, তবে অনেকেই এ সৌন্দর্য কে টেনেটুনে শাপলা সংগ্রহ করতে গিয়ে নষ্ট করে ফেলছে। কারও দ্বারা যেনও এ সৌন্দর্য্য নষ্ট না হয় আপনাদের লক্ষ রাখতে হবে। সৌন্দর্য রক্ষায় স্থানীয় প্রশাসনকে উদ্যোগ নিতে হবে’।
শাপলার বিলে মুগ্ধ হয়ে ঘুরতে আসা বাহুবলের রাব্বি বলেন, ‘এখানে বিভিন্ন জেলা থেকে পর্যটকরা আসেন শাপলা দেখতে। আমিও বন্ধুদের নিয়ে এসেছি। খুবই ভাল লেগেছে ছবি তুলেছি আর শাপলার সৌন্দর্য্য উপভোগ করেছি’।
চুনারুঘাটের আরাফাত হোসেন বলেন, যেকোন পর্যটকদের জন্য শাপলা বিল আকর্ষণীয় একটি স্থান। এখানে ঘুরতে না আসলে বুঝতেই পারতাম না যে অত্যন্ত সুন্দর একটি স্থান দেউন্দি শাপলার বিল। সোনালি আকাশ আর পাখির কিচির মিচির ডাক আর লাল শাপলার সৌন্দর্য্য মিলিয়ে এ যেন অপূর্ব এক টুকরো সৌন্দর্য রাজ্য’।
ব্রাহ্মনবাড়িয়ার পিপাসা দাস বলেন, ‘শাপলা বিল দেখতে ভোর সকালে ঘুম থেকে উঠেছি। স্বামী ও ননদকে সাথে নিয়ে এখানে ঘুরতে এসেছি। অনেকের মুখে শুনেছিলাম জায়গাটা অনেক সুন্দর, বাস্তবে দেখে বিশ^াস হল। চা বাগান আর শাপলার বিল একসাথ দেখে ভাল লেগেছে।
ধরমন্ডল এলাকার কলেজ শিক্ষার্থী তনুশ্রী দাস বলেন, ‘বন্ধুদের কাছ থেকে শুনেছি, শাপলার বিলটি অনেক সুন্দর। তারা এসে ঘুরে গেছে। তাই আমিও আসলাম। শাপলা হাতে নিয়ে ছবি তুলেছি। ভিডিও করেছি। এগুলো ফেসবুকে আপলোড দিয়ে এর সৌন্দর্য্য ছড়িয়ে দিব।’

























