হবিগঞ্জ রঙিন তরমুজের সঙ্গে সাম্মাম চাষে সফলতা
হবিগঞ্জ জেলার বাহুবল উপজেলার হাফিজপুর গ্রাম। এ গ্রামের বাসিন্দা কৃষক মোঃ তৌহিদ মিয়া বাড়ির পাশে প্রায় ৪০ শতক জমিতে মাচা তৈরি করেন। চাষ করেন রঙিন তরমুজের সঙ্গে সাম্মাম। এসব চাষে তিনি সফলতা পেয়েছেন।
বর্তমানে মাচায় মাচায় হলুদ, কালো, সবুজ রঙের তরমুজ ও সাম্মাম ঝুলছে। এরমধ্যে রয়েছে বাইরে হলুদ ভিতরে লাল, বাইরে কালো ভিতরে লাল ও বাইরে সবুজ ভিতরে হলুদ রঙের তরমুজ। এর ফলন এতটাই ভালো হয়েছে যে, দেখে মন জুড়িয়ে যায়। খেতে রসালো ও সুস্বাদু এই তরমুজ এবং সাম্মাম।
এসব তরমুজ ও সাম্মাম বিক্রি করে প্রায় সাড়ে ৩ লাখ থেকে ৪ লাখ টাকা লাভের স্বপ্ন দেখছেন তিনি। এখানে চাষাবাদে তার ব্যয় হয়েছে প্রায় ৪০ হাজার টাকা।
মো. তৌহিদ মিয়া জানান, তিনি এক সময় ব্যবসা করতেন। লাভের আশায় তিনি ব্যবসা ছেড়ে কৃষি কাজে যুক্ত হন। বর্তমানে কৃষি কাজে জড়িত রয়েছেন। চলতি বছরের জুলাই মাসে ইউনাইটেড কোম্পানির মধুমালা, ব্ল্যাক বেবি ও ইয়েলো বার্ড জাতের তরমুজ এবং সাম্মামের চারা রোপণের জন্য কিছুদূর পরপর তৈরি করেন বেড। ওই বেডে পলিথিন দিয়ে ঢেকে দেওয়ার পর ফুটো করে তাতে চারা রোপণ করা হয়। চারা কিছুটা বড় হলে বাঁশ, সুতা দিয়ে মাচা তৈরি করেন। বাঁশের খুঁটি দিয়ে মাচায় চারা তুলে দেওয়া হয়।
তিনি জানান, প্রথম তরমুজের সঙ্গে সাম্মাম চাষ করেছেন। আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে সিলেট অঞ্চলের কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় মাচায় তরমুজ ও সাম্মাম চাষে তাকে পরামর্শ দিয়েছেন উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা শামীমুল হক শামীম। ক্ষেতে প্রায় ১ হাজার ৩০০ গাছে ৩ হাজার তরমুজ ও দেড়শতাধিক গাছে শতাধিক সাম্মাম ফল রয়েছে। বর্তমানে গাছের পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় কাটছে। এসব চাষে সহায়তা করছেন তার ভাই মোঃ সফিক মিয়া ও শওকত মিয়া। তরমুজ বিক্রির উপযোগী হয়েছে। সাম্মাম বিক্রি করতে আরও কিছু সময় লাগবে।
তিনি জানান, বর্তমান বাজারে হলুদ, কালো ও সবুজ রঙের তরমুজের প্রতি কেজির দাম প্রায় ১০০ থেকে ১২০ টাকা এবং সাম্মাম প্রতি কেজির দাম ২০০ থেকে ৩০০ টাকা। সে হিসেবে প্রায় সাড়ে ৩ লাখ থেকে ৪ লাখ টাকার তরমুজ ও সাম্মাম বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা করছেন।
ক্ষেতে গিয়ে দেখা যায়- সবুজ কচি লতাপাতার মাঝে ঝুলছে হলুদ, কালো ও সবুজ রঙের তরমুজ এবং সাম্মাম। ছোট-বড় তরমুজ ও সাম্মামে নুয়ে পড়েছে মাচা। মালচিং পদ্ধতিতে পোকা দমনে ব্যবহার করা হয়েছে হলুদ ও ফেরোমন ফাঁদ। ক্ষেতে জৈব বালাইনাশক ও জৈব সার ব্যবহার করা হয়েছে। তাতে তেমন একটা কীটনাশক ব্যবহার করতে হচ্ছে না।
উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা শামীমুল হক শামীম বলেন, এ অঞ্চলের মাটি তরমুজ ও সাম্মাম চাষের উপযোগী। আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে সিলেট অঞ্চলে কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় মোটিভেশনের মাধ্যমে মাচায় রঙিন তরমুজ ও সাম্মাম চাষ করেন কৃষক মো. তৌহিদ মিয়া। তিনি তরমুজ প্রদর্শনী আবাদ করে সফল। তাকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করেছি। তার ক্ষেতে আড়াই থেকে ৫ কেজি ওজনের তরমুজ ও এক থেকে দেড় কেজি ওজনের সাম্মাম ফল রয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা চিন্ময় কর অপু বলেন, বাহুবলে ছিল না তরমুজ চাষ। আমরা কৃষকদের উৎসাহ দিয়েছি। এতে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে তরমুজ চাষ শুরু হয়েছে। এর মধ্যে উপজেলার হাফিজপুর গ্রামে হলুদ, কালো ও সবুজ রঙের তরমুজের সঙ্গে সাম্মাম চাষ করেন কৃষক মো. তৌহিদ মিয়া। তার জমিতে চাষকৃত রঙিন তরমুজ ও সাম্মামের ভালো ফলন হয়েছে। প্রমাণ হলো তরমুজ ও সাম্মাম চাষে বাহুবলের মাটি বেশ উপযোগী। তরমুজের সঙ্গে চাষকৃত সাম্মাম রসালো ও সুস্বাদু এবং পুষ্টিকর।

















