ঢাকা ১০:১৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আজমিরীগঞ্জে মাঠে নেমেছে পুলিশ গ্রেফতার আতঙ্কে গ্রাম ছেড়েছে আসামীরা

আজমিরীগঞ্জ প্রতিনিধিঃ

আজমিরীগঞ্জে পাহাড়পুর গ্রামে পানিতে ডুবে মারা যাওয়া দুই শিশুর লাশ শ্মশানে সমাধি দিতে বাধা এবং নদীতে ভাসিয়ে দিতে বাধ্য করার ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার পর গ্রাম জুড়ে দেখা দিয়েছে গ্রেফতার আতঙ্ক।

পঞ্চায়েত নেতারা এলাকা ছেড়ে আশ্রয় নিয়েছেন বিভিন্ন এলাকায়। ইতিমধ্যে গ্রাম ছেড়েছেন পঞ্চায়েত কমিটির সাধারণ সম্পাদক দীপেশ চন্দ্র সরকার ও কোষাধ্যক্ষ অসিত দাসসহ মামলার ৭ আসামী।

এদিকে, আসামীদের গ্রেফতার করতে মাঠে নেমেছে পুলিশ। পুলিশ জানায়, সোর্সের মাধ্যমে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। দু’ একদিনের মধ্যেই আসামীরা গ্রেফতারের আওতায় আসতে পারে বলে ধারণা পুলিশের।

জানা যায়, ভাটি এলাকা হিসেবে অধ্যুষিত পাহাড়পুর গ্রাম। ১১ সদস্য বিশিষ্ট পঞ্চায়েত কমিটির মাধ্যমে পরিচালনা করা হয় গ্রামের আচার-বিচার। ভাল-মন্দের বিষয়ে দিক নির্দেশনা দিয়ে থাকেন কমিটির এসব পঞ্চায়েত নেতারা। সম্প্রতি পানিতে ডুবে মারা যাওয়া দুই শিশুর লাশ শ্মশানে সমাধি দিতে বাধা ও নদীতে ভাসিয়ে দিতে বাধ্য করার ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় আসামী হয়েছেন পঞ্চায়েত কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও কোষাধ্যক্ষসহ ৭ জন।

এর পর থেকে আসামীদের গ্রেফতার করতে মাঠে নেমেছে আজমিরীগঞ্জ থানা পুলিশ। এতে করে পঞ্চায়েত নেতাদের মধ্যে দেখা দিয়েছে গ্রেফতার আতঙ্ক। আসামীরা গ্রাম ছেড়ে পালিয়েছেন। আশ্রয় নিয়েছেন ঢাকা-সিলেটসহ বিভিন্ন এলাকায় আত্মীয়-স্বজনের বাসা-বাড়িতে।

এর আগে গত ২৯ জুলাই দুপুরে বাড়ির পাশ^বর্তী মাঠে ফুটবল খেলা শেষে মাঠ সংলগ্ন পুকুরে গোসল করতে নেমে পানিতে ডুবে মারা যায় ওই গ্রামের গোবিন্দ চন্দ্র দাসের ছেলে প্রলয় দাস (৭) ও একই গ্রামের রুবেল দাসের ছেলে সুর্য দাস (৬)। বিকালে শিশু প্রলয় দাসের মরদেহ পাহাড়পুর মহাশ্মশানে সমাধি করতে গেলে গ্রাম পঞ্চায়েত কমিটির নেতাদের তোপের মুখে পড়েন গোবিন্দ দাস।

পঞ্চায়েত কমিটির নেতারা শ্মশানের পরিবেশ রক্ষা ও পরিছন্নতার দোহাই দিয়ে প্রলয় দাসের লাশ সমাধি করতে বাধা দেন। তখন গোবিন্দ দাস গ্রাম প্রধানদের দ্বারস্ত হয়ে পায়ে ধরে কান্নাকাটি করলেও মন গলেই তাদের। এক পর্যায়ে বাধ্য হয়ে অবশেষে নিজের সাত বছরের শিশুর সমাধিত মরদেহ প্রায় ঘন্টা ছয়েক পর উত্তোলন করে বস্তাবন্দী করে কালনী-কুশিয়ারা নদীতে ফেলতে বাধ্য হন গোবিন্দ দাস।

এছাড়া অপর শিশু সূর্য দাসের মরদেহ সমাধি করতে বাধা দেন অসামীরা। যে কারণে পরিবারের লোকজন সূর্য দাসকেও বস্তাবন্দী করে নদীতে ফেলতে বাধ্য হন। এরপর থেকেই এলাকায় শুরু হয় তোলপাড়। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনে বিভিন্ন এলাকায় করা হয় মানববন্ধন।

পরে ৫ জুলাই বিকেলে নিহত শিশু প্রলয় দাসের পিতা গোবিন্দ দাস বাদী হয়ে গ্রাম পঞ্চায়েত কমিটির সাধারণ সম্পাদক দীপেশ চন্দ্র সরকার ও কোষাধ্যক্ষ অসিত দাসসহ ৭ জনের নাম উল্লেখ করে আজমিরীগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করেন।

আজমিরীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্ত (ওসি) মোহাম্মদ ডালিম আহমেদ বলেন, ‘আসামীদের গ্রেফতার করতে পুলিশের অভিযান চলছে। আসামীরা এলাকা ছেড়েছেন। যে কারনে তাদের গ্রেফতার করতে সময় লাগছে। তবে পুলিশের সোর্স মাঠে রয়েছে দু’ একদিনের মধ্যে আসামীরা গ্রেফতার হতে পারে’।

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

আপডেট সময় ০৩:৩৫:০৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৩ জুলাই ২০২৪
২৯ বার পড়া হয়েছে

আজমিরীগঞ্জে মাঠে নেমেছে পুলিশ গ্রেফতার আতঙ্কে গ্রাম ছেড়েছে আসামীরা

আপডেট সময় ০৩:৩৫:০৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৩ জুলাই ২০২৪

আজমিরীগঞ্জে পাহাড়পুর গ্রামে পানিতে ডুবে মারা যাওয়া দুই শিশুর লাশ শ্মশানে সমাধি দিতে বাধা এবং নদীতে ভাসিয়ে দিতে বাধ্য করার ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার পর গ্রাম জুড়ে দেখা দিয়েছে গ্রেফতার আতঙ্ক।

পঞ্চায়েত নেতারা এলাকা ছেড়ে আশ্রয় নিয়েছেন বিভিন্ন এলাকায়। ইতিমধ্যে গ্রাম ছেড়েছেন পঞ্চায়েত কমিটির সাধারণ সম্পাদক দীপেশ চন্দ্র সরকার ও কোষাধ্যক্ষ অসিত দাসসহ মামলার ৭ আসামী।

এদিকে, আসামীদের গ্রেফতার করতে মাঠে নেমেছে পুলিশ। পুলিশ জানায়, সোর্সের মাধ্যমে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। দু’ একদিনের মধ্যেই আসামীরা গ্রেফতারের আওতায় আসতে পারে বলে ধারণা পুলিশের।

জানা যায়, ভাটি এলাকা হিসেবে অধ্যুষিত পাহাড়পুর গ্রাম। ১১ সদস্য বিশিষ্ট পঞ্চায়েত কমিটির মাধ্যমে পরিচালনা করা হয় গ্রামের আচার-বিচার। ভাল-মন্দের বিষয়ে দিক নির্দেশনা দিয়ে থাকেন কমিটির এসব পঞ্চায়েত নেতারা। সম্প্রতি পানিতে ডুবে মারা যাওয়া দুই শিশুর লাশ শ্মশানে সমাধি দিতে বাধা ও নদীতে ভাসিয়ে দিতে বাধ্য করার ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় আসামী হয়েছেন পঞ্চায়েত কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও কোষাধ্যক্ষসহ ৭ জন।

এর পর থেকে আসামীদের গ্রেফতার করতে মাঠে নেমেছে আজমিরীগঞ্জ থানা পুলিশ। এতে করে পঞ্চায়েত নেতাদের মধ্যে দেখা দিয়েছে গ্রেফতার আতঙ্ক। আসামীরা গ্রাম ছেড়ে পালিয়েছেন। আশ্রয় নিয়েছেন ঢাকা-সিলেটসহ বিভিন্ন এলাকায় আত্মীয়-স্বজনের বাসা-বাড়িতে।

এর আগে গত ২৯ জুলাই দুপুরে বাড়ির পাশ^বর্তী মাঠে ফুটবল খেলা শেষে মাঠ সংলগ্ন পুকুরে গোসল করতে নেমে পানিতে ডুবে মারা যায় ওই গ্রামের গোবিন্দ চন্দ্র দাসের ছেলে প্রলয় দাস (৭) ও একই গ্রামের রুবেল দাসের ছেলে সুর্য দাস (৬)। বিকালে শিশু প্রলয় দাসের মরদেহ পাহাড়পুর মহাশ্মশানে সমাধি করতে গেলে গ্রাম পঞ্চায়েত কমিটির নেতাদের তোপের মুখে পড়েন গোবিন্দ দাস।

পঞ্চায়েত কমিটির নেতারা শ্মশানের পরিবেশ রক্ষা ও পরিছন্নতার দোহাই দিয়ে প্রলয় দাসের লাশ সমাধি করতে বাধা দেন। তখন গোবিন্দ দাস গ্রাম প্রধানদের দ্বারস্ত হয়ে পায়ে ধরে কান্নাকাটি করলেও মন গলেই তাদের। এক পর্যায়ে বাধ্য হয়ে অবশেষে নিজের সাত বছরের শিশুর সমাধিত মরদেহ প্রায় ঘন্টা ছয়েক পর উত্তোলন করে বস্তাবন্দী করে কালনী-কুশিয়ারা নদীতে ফেলতে বাধ্য হন গোবিন্দ দাস।

এছাড়া অপর শিশু সূর্য দাসের মরদেহ সমাধি করতে বাধা দেন অসামীরা। যে কারণে পরিবারের লোকজন সূর্য দাসকেও বস্তাবন্দী করে নদীতে ফেলতে বাধ্য হন। এরপর থেকেই এলাকায় শুরু হয় তোলপাড়। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনে বিভিন্ন এলাকায় করা হয় মানববন্ধন।

পরে ৫ জুলাই বিকেলে নিহত শিশু প্রলয় দাসের পিতা গোবিন্দ দাস বাদী হয়ে গ্রাম পঞ্চায়েত কমিটির সাধারণ সম্পাদক দীপেশ চন্দ্র সরকার ও কোষাধ্যক্ষ অসিত দাসসহ ৭ জনের নাম উল্লেখ করে আজমিরীগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করেন।

আজমিরীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্ত (ওসি) মোহাম্মদ ডালিম আহমেদ বলেন, ‘আসামীদের গ্রেফতার করতে পুলিশের অভিযান চলছে। আসামীরা এলাকা ছেড়েছেন। যে কারনে তাদের গ্রেফতার করতে সময় লাগছে। তবে পুলিশের সোর্স মাঠে রয়েছে দু’ একদিনের মধ্যে আসামীরা গ্রেফতার হতে পারে’।