ঢাকা ০১:১৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ০২ জুলাই ২০২৫, ১৭ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
Logo মাধবপুর বাস ও পিকআপের মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত ১, আহত ২০ Logo হবিগঞ্জে ভুয়া চিকিৎসকের একমাসের কারাদণ্ড Logo স্বৈরাচার পতনে ১৬ বছর অপেক্ষা নয়, তাৎক্ষণিক প্রতিরোধ গড়ার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার Logo বাংলাদেশের মানুষ কল্পনাও করেনি যে কেবল চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে গড়ে ওঠা আন্দোলনই শেষ পর্যন্ত ‘জুলাই বিদ্রোহে’ রূপ নেবে। গত বছরের ১ জুলাই বাংলাদেশ এক অবিশ্বাস্য ঘটনার সাক্ষী হয়। এদিন শিক্ষার্থীদের ‘কোটা সংস্কার আন্দোলন’ ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে’ রূপ নেয়। এটি ছিল প্রায় ১৬ বছরের স্বৈরতান্ত্রিক আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের সূচনাবিন্দু। মানুষ কল্পনাও করেনি যে শুরুতে কেবল চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে গড়ে ওঠা আন্দোলনই শেষ পর্যন্ত ‘জুলাই বিদ্রোহে’ রূপ নেবে, শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ একত্রিত হয়ে সরকারের বিরুদ্ধে বৃহত্তর গণআন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়বে। ছাত্রদের এই অসন্তোষের সূচনা ঘটে ২০১৮ সালের কোটা বাতিলের সরকারি প্রজ্ঞাপনকে হাইকোর্ট কর্তৃক অবৈধ ঘোষণা করার রায়ের পর। সরকার ২০১৮ সালে তীব্র ছাত্র আন্দোলনের চাপে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিল করেছিল। কিন্তু হাইকোর্টের রায়ে ৫৬ শতাংশ কোটা পুনঃপ্রবর্তিত হয়, যাতে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য ৩০ শতাংশ, নারীদের জন্য ১০ শতাংশ, পশ্চাৎপদ জেলার জন্য ১০ শতাংশ, সংখ্যালঘুদের জন্য ৫ শতাংশ এবং প্রতিবন্ধীদের জন্য ১ শতাংশ বরাদ্দ করা হয়। ছাত্ররা এই ব্যবস্থাকে মেধাবীদের প্রতি বৈষম্য হিসেবে মনে করে প্রতিবাদে রাস্তায় নামে। সরকার প্রতিবাদকারীদের কঠোরভাবে দমন করতে চাইলে পরিস্থিতি বিদ্রোহে রূপ নেয়। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সরকারপন্থী সন্ত্রাসীরা একযোগে আক্রমণ চালালে অন্তত ১ হাজার ৪০০ জন নিহত এবং প্রায় ২০ হাজার জন আহত হয়। স্বাধীনতা পরবর্তী ইতিহাসে এটা ছিল সবচেয়ে নিষ্ঠুর দমনপীড়ন। অনেকে বিশ্বাস করেন, এই জুলাই বিদ্রোহের মধ্য দিয়েই ২০০৮ সাল থেকে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ সরকারের পতন অনিবার্য হয়ে ওঠে। ২০২৪ সালের ১ জুলাই এই আন্দোলন পুরো মাত্রায় শুরু হলেও এর গোড়াপত্তন ঘটে ৫ জুন। ওইদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থীরা হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় রাস্তায় নামে। আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক এবং বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া তার ‘জুলাই : মাতৃভূমি অথবা মৃত্যু’ বইতে লিখেছেন, ‘৫ জুন বিকেলে আমি ঢাকা মেডিকেল কলেজের পাশে চানখারপুলে স্কুটি মেরামত করাচ্ছিলাম। তখন ফেসবুকে দেখি- হাইকোর্ট কোটা পুনর্বহাল করেছে। মনে হলো ২০১৮ সালের অর্জনগুলো ধূলিসাৎ হয়ে যাচ্ছে।’ এরপর কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিয়ে এক বৈঠকের মাধ্যমে প্রতিবাদ কর্মসূচির সূচনা হয়। রাত সাড়ে ৭টায় ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী’ ব্যানারে একটি মিছিল বের হয় এবং সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মধ্যদিয়ে তা শেষ হয়। এই সমাবেশে তারা হাইকোর্টের রায়কে ‘মেধাবীদের সাথে তামাশা’ বলে প্রত্যাখ্যান করে। সমাবেশে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র, বর্তমানে জাতীয় নাগরিক পার্টি- এনসিপির প্রধান নাহিদ ইসলাম পরদিন ৬ জুন বিকেল ৫টায় রাজু ভাস্কর্যে সমাবেশের ঘোষণা দেন। প্রায় পাঁচ থেকে ছয় শ’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ওই মিছিলে অংশ নেয় এবং স্লোগান দেয়- ‘কোটা পদ্ধতি মানি না’, ‘হাইকোর্টের রায় মানি না’, ‘কোটা বাতিল করতেই হবে’। আসিফের বক্তব্যের সাথে একমত প্রকাশ করে নাহিদও ৫ জুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে তাদের প্রথম বৈঠকের কথা এবং কিভাবে সাধারণ শিক্ষার্থীদের আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আন্দোলনে সম্পৃক্ত করতে পেরেছিলেন তা স্মরণ করেন। নাহিদ পরে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বলেন, ‘আমরা ঈদুল আজহার ছুটির আগে মাত্র তিন দিন আন্দোলনের সুযোগ পেয়েছিলাম।’ ৬ জুন ঢাবি, জাহাঙ্গীরনগর, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, জগন্নাথসহ দেশের বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীরা কোটা বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ করে। ৯ জুন শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মিছিল করে অ্যাটর্নি জেনারেল বরাবর একটি স্মারকলিপি জমা দেয়। এর প্রেক্ষিতে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল বিভাগে রায় স্থগিত চেয়ে আবেদন করে। শুনানির দিন ধার্য হয় ৪ জুলাই। ১০ জুন আবারো মিছিল হয় এবং শিক্ষার্থীরা সরকারকে ৩০ জুনের মধ্যে ২০১৮ সালের প্রজ্ঞাপন পুনর্বহাল করতে আল্টিমেটাম দেয়, না হলে সর্বাত্মক আন্দোলন শুরু করার ঘোষণা দেয়। আসিফ স্মরণ করেন, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় ৩০ জুন পর্যন্ত ঈদের ছুটি ঘোষণা করেছিল, তাই আমরা সেই দিনটিকে আল্টিমেটামের সময়সীমা হিসেবে নির্ধারণ করি। আমরা সরকারকে সতর্কও করেছিলাম- যদি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আমাদের দাবি পূরণ না হয়, তাহলে আমরা আবার আন্দোলন শুরু করব।’ ৩০ জুন সরকারের পক্ষ থেকে কোনো ঘোষণা না আসায় ১ জুলাই ঢাবি, জগন্নাথ, জাবি, রাবি, চবি, বরিশাল ও কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারাদেশের শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নেমে পড়ে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কিছু সময়ের জন্য ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর ব্যানারে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার প্রাঙ্গণ থেকে একটি মিছিল বের করে, যা রাজু ভাস্কর্যে শেষ হয়। সমাবেশ থেকে নাহিদ ইসলাম ঘোষণা দেন, আগামী ৪ জুলাই পর্যন্ত দেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে শ্রেণিকক্ষে পাঠদান ও পরীক্ষার বর্জন চলবে। তিনি তিন দিনের কর্মসূচিও ঘোষণা করেন- ২ জুলাই দেশব্যাপী মহাসড়কে মিছিল, ৩ ও ৪ জুলাই রাজধানীর রাজু ভাস্কর্যে, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সাত সরকারি কলেজ এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতাধীন অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের সমাবেশ। সমাবেশে নাহিদ ইসলাম ঘোষণা দেন- ৪ জুলাই পর্যন্ত দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন চলবে। সেই সাথে তিনি চারটি দাবি উত্থাপন করেন- ১. দ্রুত কোটা সংস্কারে কমিশন গঠন, যেন পশ্চাৎপদ জনগোষ্ঠী উপকৃত হয়। ২. কোটা পূরণ না হলে মেধাভিত্তিক নিয়োগ নিশ্চিত করা। ৩. নিয়োগে একাধিকবার কোটা সুবিধা ব্যবহার বন্ধ করা। ৪. প্রশাসনে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা। Logo হবিগঞ্জে শুঁটকি উৎপাদনে ভাটা Logo নবীগঞ্জ মসজিদে মাইকিং করে পুলিশের ওপর হামলা, আসামি ছিনতাই আটক ১৩ Logo চুনারুঘাটে হত্যা মামলার আসমী আ. মান্নান আটক-তাবলীগ জামাতে গিয়ে অপহরণ মামলা সাজিয়েছেন Logo আজমিরীগঞ্জ কালনী নদীর ভাঙনে নদীতে বিলীন হয়ে গেছে পাড়ে বসে চোখ মুছছেন সুনিতী Logo কুলাউড়ায় হত্যাকান্ডের শিকার আনজুমের বাড়িতে আমিরে জামায়াত Logo মাধবপুর উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে ফার্মাসিস্ট নেই ৩০ বছর ধরে

স্বৈরাচারের দোসরদের যড়যন্ত্রের বিষয়ে সতর্ক থাকুন : তারেক রহমান

শায়েস্তাগঞ্জের বাণী ডেস্ক ,

স্বৈরাচার পালিয়ে গেলেও তাদের দোসরদের নানামুখী যড়যন্ত্র থেকে জনগণকে সতর্ক থাকার আহবান জানিয়েছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। টাঙ্গাইলের গোপালপুরে স্থানীয় বিএনপি আয়োজিত জনসভায় লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এই আহবান জানান তিনি। এসময় তিনি আরও বলেন, চক্রান্ত হলে দাঁতভাঙা জবাব দিতে হবে। আগামীতে বিএনপি দেশে উৎপাদন ও উন্নয়নের রাজনীতি চালু করতে চায় বলেও জানান তারেক রহমান।

তিনি বলেন, “একমাত্র রাজনৈতিক সরকারের পক্ষেই জনগণের সব সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। সেজন্য প্রয়োজন জনগণের সমর্থন। দেশের জনগণের সমর্থনে আমরা সে দায়িত্ব পালনের সুযোগ পেলে সেদিনও আপনাদের সমস্যার কথা আমার মনে থাকবে।”

টাঙ্গাইলের গোপালপুরে সাবেক মন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুর মুক্তির দাবিতে আজ বুধবার বিকেলে এই জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সভাপতিত্ব করেন গোপালপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি খন্দকার জাহাঙ্গীর আলম। এছাড়া বিশেষ অতিথি ছিলেন দলের কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আহমেদ আজম খান ও প্রধান বক্তা ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু।

প্রায় ১৭ বছর পর গোপালপুরের এই জনসভায় উপস্থিত মানুষের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু ছিল- শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার পুত্র তারেক রহমানের বক্তব্য। লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি বিকাল পৌনে ৫টার দিকে হাজির হলে হাজার হাজার জনতা তাঁকে অভিবাদন জানান। প্রায় ৩৫ মিনিটের বক্তব্যে বেশিরভাগজুড়ে তারেক রহমান টাঙ্গাইল জেলার বিখ্যাত নানা পণ্যের সম্ভাবনা নিয়ে নিজের পরিকল্পনার কথা জানান। তিনি বলেন, “অর্থনৈতিক মুক্তি হলে দেশ এগিয়ে যাবে।”

জনসভায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেন, “গোপালপুরের আমার ভাইবোন, সন্তানতুল্য আমাদের পরের প্রজন্ম আর আমার শ্রদ্ধেয় মুরুব্বিরা আসসালামু আলাইকুম। প্রায় সতেরো বছর পর আপনারদের সামনে কথা বলছি। কেমন আছেন আপনারা সবাই। আলহামদুলিল্লাহ।” তিনি বলেন, ‘‘প্রায় ৮০০০ কিলোমিটার দূরে থেকে আপনাদের সাথে কথা বললেও সব সময়ই আমার মন পড়ে আছে আপনাদের মাঝেই। দেশে থাকতে আপনাদের ভ‚য়াপুর, গোপালপুরের ওপর দিয়ে আমাকে প্রায়ই যেতে হতো দেশের উত্তরাঞ্চলে। সুতরাং আপনারা আমার মনের একটা বিরাট জায়গা দখল করে আছেন।”

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘‘আমি জানি আজ এখানে শুধু গোপালপুর আর ভূয়াপুরের জনগণই নন। পাশের মধুপুর, ধনবাড়ি, ঘাটাইল, টাঙ্গাইল সদর ছাড়াও জামালপুর জেলারও অনেকেই উপস্থিত আছেন।” তিনি বলেন, ‘‘রাজনৈতিক বক্তব্য তো আপনারা প্রায়ই শোনেন। আমি রাজনৈতিক বক্তব্য দিতে চাইও না। আমার পিতা আপনাদের সবার প্রাণের মানুষ; তিনি আমাকে ছোটবেলা থেকেই শিখিয়েছেন- কিভাবে দেশের খেটে খাওয়া কৃষক মজুর আর সাধারণ মানুষের কাছাকাছি যেতে হয়, আর আমার মা আপনাদের সবার প্রিয় দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া আমাকে শিখিয়েছেন মানুষের ভালোবাসা অর্জনের গুরুত্ব, শিখিয়েছেন দেশের মা-বোনের সমস্যা সমাধানে কিভাবে কাজ করতে হয়।

তারেক রহমান বলেন, “ আমি জানি টাঙ্গাইলের শাড়ি আর চমচমের কথা। যদিও টাঙ্গাইলের শাড়ির সাথে আপনাদের পাশের উপজেলা দেলদুয়ারের নাম সবাই বলে, কিন্তু আমি জানি- এই গোপালপুরেও টাঙ্গাইলের বিখ্যাত শাড়ি তৈরি হয়। এখানকার মা-বোনেরা সুতা রং করেন, সেগুলো শুকান আর মাকুতে ভরেন এবং ভাইয়ারা সেটা তাতে লাগিয়ে অসাধারণ সুন্দর শাড়ি তৈরি করেন।”

তিনি বলেন, “আপনারা তাঁতের কারখানা আরো বাড়ান, দেলদুয়ারের সাথে প্রতিযোগিতা করতে। প্রতিযোগিতা করলে সবারই মান উন্নত হবে। আমি জানি সুতার দাম, রঙের দামের সাথে আপনারা কুলিয়ে উঠতে পারেন না। আবার ঠিকমতো বাজারজাতও করতে পারেন না। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন যদি কখনো আপনাদের দোয়ায় আপনাদের সমস্যা সমাধানের দায়িত্ব দেন, তাহলে আপনাদের সমস্যা আজ যেমন মনে করলাম ভবিষ্যতেও ভুলবো না।”

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘‘পৃথিবীর মানুষ জানে টাঙ্গাইল পৃথিবীর কোথায় অবস্থিত। তবে আমাদের গুণগতমান বাড়াতে হবে, ডিজাইনে আনতে হবে বৈচিত্র্য আর সুতি, সিল্ক এবং সুতি সিল্কের সংমিশ্রণেও নতুন নতুন ডিজাইনের শাড়ি তৈরি করতে হবে। শাড়ি আমাদের মা-বোনের হাজার হাজার বছরের ঐতিহ্যবাহী পোশাক। একদিন আসবে আমরা বিদেশ থেকে শাড়ি আনবো না বরং পৃথিবীর যে সব দেশে মহিলারা শাড়ি পরেন, আর যেখানে বাংলাদেশিরা আছেন সেখানেও অদূর ভবিষ্যতে শাড়ির একটাই নাম থাকবে টাঙ্গাইল শাড়ি।”

তারেক রহমান বলেন, “এই এলাকার আরেকটি উল্লেখযোগ্য পণ্য হলো- চমচম। পৃথিবীর মানুষ জানে চমচম মানেই টাঙ্গাইল আর পোড়াবাড়ি। এখানকার দুধ আর পানি দিয়ে যে চমচম তৈরি হয়, সেটা পৃথিবীর আর কোথাও পাওয়া যাবে না। কিন্তু এখানেও সমস্যা, নদীতে পানি নেই, দুধের দাম চড়া আমার গরিব ভাই-বোনদের জন্য দাম সহনীয় নয়। আমরা যদি সুযোগ পাই দেশে গবাদিপশুর সংখ্যা যেমন বাড়াবো, তেমনি বন্ধ খাল আর নদী আবারও খনন করবো। আর এই চমচম বাংলাদেশের গন্ডি পেরিয়ে টিনজাত হয়ে পৃথিবীর সব কোনায় পৌঁছে যাবে।”

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আরও বলেন, “আমি জানি, বাংলাদেশের যে কয়টি জায়গায় এখনো পাট অন্যতম প্রধান ফসল তার মধ্যে গোপালপুর, ভূয়াপুর উল্লেখযোগ্য। একসময় এখানকার ঝিনাই, ধলেশ্বরী আর বৈরান নদী দিয়ে বড় বড় নৌযান পাট নিয়ে যেত নারায়ণগঞ্জে। আজ বাংলাদেশে পাটের দুর্দশা। এখানেও অনেক কিছু করার সুযোগ আছে। পাট দিয়ে কেন শুধু বস্তা তৈরি হবে। সারাবিশ্ব আজ পরিবেশ নিয়ে চিন্তিত, আমাদেরও পরিবেশ রক্ষা করতে হবে। পলিথিনের ব্যাগ ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। পলিথিন আমাদের নদী খাল পুকুর ফসলের জমি সবকিছু ধ্বংস করে দিচ্ছে। পলিথিন মাটি পানি কিছুতেই মিশে যায় না।”

তিনি বলেন, “পাটের নতুন নতুন ব্যবহার বাড়াতে হবে, আবিষ্কার করতে হবে। ব্যাগ, বোর্ড, জুতা, স্যান্ডেল, আসবাবপত্র তৈরির কাজে পাটের ব্যবহার উদ্ভাবন করতে হবে। আর পাটকাঠি দিয়ে শুধু পার্টিকেল বোর্ড নয়, এটারও নতুন নতুন ব্যবহার আবিষ্কার করতে হবে পরিবেশ বাঁচাতে। পাটের বংশ ইতিহাস বা জেনেটিক ভালো করে রপ্ত করে উন্নত মানের উচ্চ ফলনশীল বীজ আবিষ্কার করতে হবে। কথা দিচ্ছি মহান আল্লাহ আমাদের সুযোগ দিলে আমি এর একটি কথাও ভুলে যাবো না।”

তারেক রহমান বলেন, “আপনাদের পাশেই আছে মধুপুর, আমি জানি এখানে মধুপুরের অনেকেই আছেন। মধুপুরের জলডুবি আনারসের ভক্ত নয় এমন মানুষ বোধহয় খুঁজে পাওয়া যাবে না। কিন্তু এটাও একটা মৌসুমি ফল, ফলে এটা সংরক্ষণ করতে না পারায় আর বহুবিধ ব্যবহার আজো সম্ভব হয়নি। অথচ পৃথিবীর এমন কোনো মানুষ নেই যে আনারসের জুস, জ্যাম, জেলী পছন্দ করে না। আমাদের এসব নিয়ে কাজ করতে হবে।”

তিনি বলেন, “ধান উৎপাদনে আপনারা অপ্রতিদ্ব›দ্বী আমি জানি, আপনাদের হারানো খুবই কঠিন। তারপরও সারাদেশে খাদ্য উৎপাদন আরো বাড়ানোর পরিকল্পনায় আপনাদের সাহায্য আমাদের সবচেয়ে বেশি দরকার, আমরাও আমাদের পক্ষ থেকে সব সহযোগিতা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আরও বলেন, “আমাদের অনেকেই হয়তো জানেন না, গোপালপুর আর টাঙ্গাইলের অনেক জায়গায় খুবই উন্নত মানের টুপি তৈরি হয়। রপ্তানিও হয় পৃথিবীর বহু দেশে। আপনার মক্কা শরীফের ফুটপাতে আর দোকান থেকে যে টুপি কিনে আনেন হজ ওমরার সময় সেগুলোর বেশিরভাগই এই টাঙ্গাইলে তৈরি হয়। এর উন্নতি আর বাজারজাত করতে সাহায্য করা দরকার।”

তিনি বলেন, “এখানে গরু মোটাতাজা করার অনেক ছোট বড় খামার আছে, আপনারা কোরবানির সময় গবাদিপশুর বিরাট একটা অংশ এখান থেকে পূরণ করেন। আমরা আপনাদের বিষয় মনে রাখবো, বিশেষ করে পশুখাদ্যের অস্বাভাবিক দাম নিয়ে আপনাদের অনেক সমস্যা আছে। এছাড়া তারেক রহমান বলেন, “ভূমিহীন মানুষের সংখ্যাও এখানে অনেক বেশি। এসব দিকে নজর দিতে হবে। আর সবার আরেকটি বড় সমস্যা হলো যমুনা নদীর ভাঙন, বিশেষ করে ভ‚য়াপুর উপজেলায়। এ ব্যাপারে অনেক বাস্তবমুখী আর স্থায়ী পরিকল্পনার কথা ভাবতে হবে।

প্রসঙ্গত, ২০০৮ সালের পর এই প্রথম টাঙ্গাইলে বিএনপির এমন জনসভা। এতে খন্ড খন্ড মিছিল নিয়ে গোপালপুরের সুতি ভিএম হাইস্কুল মাঠের সমাবেশে যোগ দেন বিএনপির নেতা-কর্মী-সমর্থকরা। স্লোগানে মুক্তির দাবি জানান তাদের প্রিয় নেতা আবদুস সালাম পিন্টুর।
বিষয়:

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

আপডেট সময় ০৯:১৪:১৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪
৭৪ বার পড়া হয়েছে

বাংলাদেশের মানুষ কল্পনাও করেনি যে কেবল চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে গড়ে ওঠা আন্দোলনই শেষ পর্যন্ত ‘জুলাই বিদ্রোহে’ রূপ নেবে। গত বছরের ১ জুলাই বাংলাদেশ এক অবিশ্বাস্য ঘটনার সাক্ষী হয়। এদিন শিক্ষার্থীদের ‘কোটা সংস্কার আন্দোলন’ ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে’ রূপ নেয়। এটি ছিল প্রায় ১৬ বছরের স্বৈরতান্ত্রিক আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের সূচনাবিন্দু। মানুষ কল্পনাও করেনি যে শুরুতে কেবল চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে গড়ে ওঠা আন্দোলনই শেষ পর্যন্ত ‘জুলাই বিদ্রোহে’ রূপ নেবে, শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ একত্রিত হয়ে সরকারের বিরুদ্ধে বৃহত্তর গণআন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়বে। ছাত্রদের এই অসন্তোষের সূচনা ঘটে ২০১৮ সালের কোটা বাতিলের সরকারি প্রজ্ঞাপনকে হাইকোর্ট কর্তৃক অবৈধ ঘোষণা করার রায়ের পর। সরকার ২০১৮ সালে তীব্র ছাত্র আন্দোলনের চাপে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিল করেছিল। কিন্তু হাইকোর্টের রায়ে ৫৬ শতাংশ কোটা পুনঃপ্রবর্তিত হয়, যাতে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য ৩০ শতাংশ, নারীদের জন্য ১০ শতাংশ, পশ্চাৎপদ জেলার জন্য ১০ শতাংশ, সংখ্যালঘুদের জন্য ৫ শতাংশ এবং প্রতিবন্ধীদের জন্য ১ শতাংশ বরাদ্দ করা হয়। ছাত্ররা এই ব্যবস্থাকে মেধাবীদের প্রতি বৈষম্য হিসেবে মনে করে প্রতিবাদে রাস্তায় নামে। সরকার প্রতিবাদকারীদের কঠোরভাবে দমন করতে চাইলে পরিস্থিতি বিদ্রোহে রূপ নেয়। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সরকারপন্থী সন্ত্রাসীরা একযোগে আক্রমণ চালালে অন্তত ১ হাজার ৪০০ জন নিহত এবং প্রায় ২০ হাজার জন আহত হয়। স্বাধীনতা পরবর্তী ইতিহাসে এটা ছিল সবচেয়ে নিষ্ঠুর দমনপীড়ন। অনেকে বিশ্বাস করেন, এই জুলাই বিদ্রোহের মধ্য দিয়েই ২০০৮ সাল থেকে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ সরকারের পতন অনিবার্য হয়ে ওঠে। ২০২৪ সালের ১ জুলাই এই আন্দোলন পুরো মাত্রায় শুরু হলেও এর গোড়াপত্তন ঘটে ৫ জুন। ওইদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থীরা হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় রাস্তায় নামে। আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক এবং বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া তার ‘জুলাই : মাতৃভূমি অথবা মৃত্যু’ বইতে লিখেছেন, ‘৫ জুন বিকেলে আমি ঢাকা মেডিকেল কলেজের পাশে চানখারপুলে স্কুটি মেরামত করাচ্ছিলাম। তখন ফেসবুকে দেখি- হাইকোর্ট কোটা পুনর্বহাল করেছে। মনে হলো ২০১৮ সালের অর্জনগুলো ধূলিসাৎ হয়ে যাচ্ছে।’ এরপর কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিয়ে এক বৈঠকের মাধ্যমে প্রতিবাদ কর্মসূচির সূচনা হয়। রাত সাড়ে ৭টায় ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী’ ব্যানারে একটি মিছিল বের হয় এবং সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মধ্যদিয়ে তা শেষ হয়। এই সমাবেশে তারা হাইকোর্টের রায়কে ‘মেধাবীদের সাথে তামাশা’ বলে প্রত্যাখ্যান করে। সমাবেশে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র, বর্তমানে জাতীয় নাগরিক পার্টি- এনসিপির প্রধান নাহিদ ইসলাম পরদিন ৬ জুন বিকেল ৫টায় রাজু ভাস্কর্যে সমাবেশের ঘোষণা দেন। প্রায় পাঁচ থেকে ছয় শ’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ওই মিছিলে অংশ নেয় এবং স্লোগান দেয়- ‘কোটা পদ্ধতি মানি না’, ‘হাইকোর্টের রায় মানি না’, ‘কোটা বাতিল করতেই হবে’। আসিফের বক্তব্যের সাথে একমত প্রকাশ করে নাহিদও ৫ জুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে তাদের প্রথম বৈঠকের কথা এবং কিভাবে সাধারণ শিক্ষার্থীদের আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আন্দোলনে সম্পৃক্ত করতে পেরেছিলেন তা স্মরণ করেন। নাহিদ পরে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বলেন, ‘আমরা ঈদুল আজহার ছুটির আগে মাত্র তিন দিন আন্দোলনের সুযোগ পেয়েছিলাম।’ ৬ জুন ঢাবি, জাহাঙ্গীরনগর, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, জগন্নাথসহ দেশের বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীরা কোটা বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ করে। ৯ জুন শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মিছিল করে অ্যাটর্নি জেনারেল বরাবর একটি স্মারকলিপি জমা দেয়। এর প্রেক্ষিতে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল বিভাগে রায় স্থগিত চেয়ে আবেদন করে। শুনানির দিন ধার্য হয় ৪ জুলাই। ১০ জুন আবারো মিছিল হয় এবং শিক্ষার্থীরা সরকারকে ৩০ জুনের মধ্যে ২০১৮ সালের প্রজ্ঞাপন পুনর্বহাল করতে আল্টিমেটাম দেয়, না হলে সর্বাত্মক আন্দোলন শুরু করার ঘোষণা দেয়। আসিফ স্মরণ করেন, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় ৩০ জুন পর্যন্ত ঈদের ছুটি ঘোষণা করেছিল, তাই আমরা সেই দিনটিকে আল্টিমেটামের সময়সীমা হিসেবে নির্ধারণ করি। আমরা সরকারকে সতর্কও করেছিলাম- যদি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আমাদের দাবি পূরণ না হয়, তাহলে আমরা আবার আন্দোলন শুরু করব।’ ৩০ জুন সরকারের পক্ষ থেকে কোনো ঘোষণা না আসায় ১ জুলাই ঢাবি, জগন্নাথ, জাবি, রাবি, চবি, বরিশাল ও কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারাদেশের শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নেমে পড়ে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কিছু সময়ের জন্য ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর ব্যানারে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার প্রাঙ্গণ থেকে একটি মিছিল বের করে, যা রাজু ভাস্কর্যে শেষ হয়। সমাবেশ থেকে নাহিদ ইসলাম ঘোষণা দেন, আগামী ৪ জুলাই পর্যন্ত দেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে শ্রেণিকক্ষে পাঠদান ও পরীক্ষার বর্জন চলবে। তিনি তিন দিনের কর্মসূচিও ঘোষণা করেন- ২ জুলাই দেশব্যাপী মহাসড়কে মিছিল, ৩ ও ৪ জুলাই রাজধানীর রাজু ভাস্কর্যে, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সাত সরকারি কলেজ এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতাধীন অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের সমাবেশ। সমাবেশে নাহিদ ইসলাম ঘোষণা দেন- ৪ জুলাই পর্যন্ত দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন চলবে। সেই সাথে তিনি চারটি দাবি উত্থাপন করেন- ১. দ্রুত কোটা সংস্কারে কমিশন গঠন, যেন পশ্চাৎপদ জনগোষ্ঠী উপকৃত হয়। ২. কোটা পূরণ না হলে মেধাভিত্তিক নিয়োগ নিশ্চিত করা। ৩. নিয়োগে একাধিকবার কোটা সুবিধা ব্যবহার বন্ধ করা। ৪. প্রশাসনে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা।

স্বৈরাচারের দোসরদের যড়যন্ত্রের বিষয়ে সতর্ক থাকুন : তারেক রহমান

আপডেট সময় ০৯:১৪:১৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪

স্বৈরাচার পালিয়ে গেলেও তাদের দোসরদের নানামুখী যড়যন্ত্র থেকে জনগণকে সতর্ক থাকার আহবান জানিয়েছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। টাঙ্গাইলের গোপালপুরে স্থানীয় বিএনপি আয়োজিত জনসভায় লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এই আহবান জানান তিনি। এসময় তিনি আরও বলেন, চক্রান্ত হলে দাঁতভাঙা জবাব দিতে হবে। আগামীতে বিএনপি দেশে উৎপাদন ও উন্নয়নের রাজনীতি চালু করতে চায় বলেও জানান তারেক রহমান।

তিনি বলেন, “একমাত্র রাজনৈতিক সরকারের পক্ষেই জনগণের সব সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। সেজন্য প্রয়োজন জনগণের সমর্থন। দেশের জনগণের সমর্থনে আমরা সে দায়িত্ব পালনের সুযোগ পেলে সেদিনও আপনাদের সমস্যার কথা আমার মনে থাকবে।”

টাঙ্গাইলের গোপালপুরে সাবেক মন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুর মুক্তির দাবিতে আজ বুধবার বিকেলে এই জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সভাপতিত্ব করেন গোপালপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি খন্দকার জাহাঙ্গীর আলম। এছাড়া বিশেষ অতিথি ছিলেন দলের কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আহমেদ আজম খান ও প্রধান বক্তা ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু।

প্রায় ১৭ বছর পর গোপালপুরের এই জনসভায় উপস্থিত মানুষের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু ছিল- শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার পুত্র তারেক রহমানের বক্তব্য। লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি বিকাল পৌনে ৫টার দিকে হাজির হলে হাজার হাজার জনতা তাঁকে অভিবাদন জানান। প্রায় ৩৫ মিনিটের বক্তব্যে বেশিরভাগজুড়ে তারেক রহমান টাঙ্গাইল জেলার বিখ্যাত নানা পণ্যের সম্ভাবনা নিয়ে নিজের পরিকল্পনার কথা জানান। তিনি বলেন, “অর্থনৈতিক মুক্তি হলে দেশ এগিয়ে যাবে।”

জনসভায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেন, “গোপালপুরের আমার ভাইবোন, সন্তানতুল্য আমাদের পরের প্রজন্ম আর আমার শ্রদ্ধেয় মুরুব্বিরা আসসালামু আলাইকুম। প্রায় সতেরো বছর পর আপনারদের সামনে কথা বলছি। কেমন আছেন আপনারা সবাই। আলহামদুলিল্লাহ।” তিনি বলেন, ‘‘প্রায় ৮০০০ কিলোমিটার দূরে থেকে আপনাদের সাথে কথা বললেও সব সময়ই আমার মন পড়ে আছে আপনাদের মাঝেই। দেশে থাকতে আপনাদের ভ‚য়াপুর, গোপালপুরের ওপর দিয়ে আমাকে প্রায়ই যেতে হতো দেশের উত্তরাঞ্চলে। সুতরাং আপনারা আমার মনের একটা বিরাট জায়গা দখল করে আছেন।”

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘‘আমি জানি আজ এখানে শুধু গোপালপুর আর ভূয়াপুরের জনগণই নন। পাশের মধুপুর, ধনবাড়ি, ঘাটাইল, টাঙ্গাইল সদর ছাড়াও জামালপুর জেলারও অনেকেই উপস্থিত আছেন।” তিনি বলেন, ‘‘রাজনৈতিক বক্তব্য তো আপনারা প্রায়ই শোনেন। আমি রাজনৈতিক বক্তব্য দিতে চাইও না। আমার পিতা আপনাদের সবার প্রাণের মানুষ; তিনি আমাকে ছোটবেলা থেকেই শিখিয়েছেন- কিভাবে দেশের খেটে খাওয়া কৃষক মজুর আর সাধারণ মানুষের কাছাকাছি যেতে হয়, আর আমার মা আপনাদের সবার প্রিয় দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া আমাকে শিখিয়েছেন মানুষের ভালোবাসা অর্জনের গুরুত্ব, শিখিয়েছেন দেশের মা-বোনের সমস্যা সমাধানে কিভাবে কাজ করতে হয়।

তারেক রহমান বলেন, “ আমি জানি টাঙ্গাইলের শাড়ি আর চমচমের কথা। যদিও টাঙ্গাইলের শাড়ির সাথে আপনাদের পাশের উপজেলা দেলদুয়ারের নাম সবাই বলে, কিন্তু আমি জানি- এই গোপালপুরেও টাঙ্গাইলের বিখ্যাত শাড়ি তৈরি হয়। এখানকার মা-বোনেরা সুতা রং করেন, সেগুলো শুকান আর মাকুতে ভরেন এবং ভাইয়ারা সেটা তাতে লাগিয়ে অসাধারণ সুন্দর শাড়ি তৈরি করেন।”

তিনি বলেন, “আপনারা তাঁতের কারখানা আরো বাড়ান, দেলদুয়ারের সাথে প্রতিযোগিতা করতে। প্রতিযোগিতা করলে সবারই মান উন্নত হবে। আমি জানি সুতার দাম, রঙের দামের সাথে আপনারা কুলিয়ে উঠতে পারেন না। আবার ঠিকমতো বাজারজাতও করতে পারেন না। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন যদি কখনো আপনাদের দোয়ায় আপনাদের সমস্যা সমাধানের দায়িত্ব দেন, তাহলে আপনাদের সমস্যা আজ যেমন মনে করলাম ভবিষ্যতেও ভুলবো না।”

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘‘পৃথিবীর মানুষ জানে টাঙ্গাইল পৃথিবীর কোথায় অবস্থিত। তবে আমাদের গুণগতমান বাড়াতে হবে, ডিজাইনে আনতে হবে বৈচিত্র্য আর সুতি, সিল্ক এবং সুতি সিল্কের সংমিশ্রণেও নতুন নতুন ডিজাইনের শাড়ি তৈরি করতে হবে। শাড়ি আমাদের মা-বোনের হাজার হাজার বছরের ঐতিহ্যবাহী পোশাক। একদিন আসবে আমরা বিদেশ থেকে শাড়ি আনবো না বরং পৃথিবীর যে সব দেশে মহিলারা শাড়ি পরেন, আর যেখানে বাংলাদেশিরা আছেন সেখানেও অদূর ভবিষ্যতে শাড়ির একটাই নাম থাকবে টাঙ্গাইল শাড়ি।”

তারেক রহমান বলেন, “এই এলাকার আরেকটি উল্লেখযোগ্য পণ্য হলো- চমচম। পৃথিবীর মানুষ জানে চমচম মানেই টাঙ্গাইল আর পোড়াবাড়ি। এখানকার দুধ আর পানি দিয়ে যে চমচম তৈরি হয়, সেটা পৃথিবীর আর কোথাও পাওয়া যাবে না। কিন্তু এখানেও সমস্যা, নদীতে পানি নেই, দুধের দাম চড়া আমার গরিব ভাই-বোনদের জন্য দাম সহনীয় নয়। আমরা যদি সুযোগ পাই দেশে গবাদিপশুর সংখ্যা যেমন বাড়াবো, তেমনি বন্ধ খাল আর নদী আবারও খনন করবো। আর এই চমচম বাংলাদেশের গন্ডি পেরিয়ে টিনজাত হয়ে পৃথিবীর সব কোনায় পৌঁছে যাবে।”

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আরও বলেন, “আমি জানি, বাংলাদেশের যে কয়টি জায়গায় এখনো পাট অন্যতম প্রধান ফসল তার মধ্যে গোপালপুর, ভূয়াপুর উল্লেখযোগ্য। একসময় এখানকার ঝিনাই, ধলেশ্বরী আর বৈরান নদী দিয়ে বড় বড় নৌযান পাট নিয়ে যেত নারায়ণগঞ্জে। আজ বাংলাদেশে পাটের দুর্দশা। এখানেও অনেক কিছু করার সুযোগ আছে। পাট দিয়ে কেন শুধু বস্তা তৈরি হবে। সারাবিশ্ব আজ পরিবেশ নিয়ে চিন্তিত, আমাদেরও পরিবেশ রক্ষা করতে হবে। পলিথিনের ব্যাগ ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। পলিথিন আমাদের নদী খাল পুকুর ফসলের জমি সবকিছু ধ্বংস করে দিচ্ছে। পলিথিন মাটি পানি কিছুতেই মিশে যায় না।”

তিনি বলেন, “পাটের নতুন নতুন ব্যবহার বাড়াতে হবে, আবিষ্কার করতে হবে। ব্যাগ, বোর্ড, জুতা, স্যান্ডেল, আসবাবপত্র তৈরির কাজে পাটের ব্যবহার উদ্ভাবন করতে হবে। আর পাটকাঠি দিয়ে শুধু পার্টিকেল বোর্ড নয়, এটারও নতুন নতুন ব্যবহার আবিষ্কার করতে হবে পরিবেশ বাঁচাতে। পাটের বংশ ইতিহাস বা জেনেটিক ভালো করে রপ্ত করে উন্নত মানের উচ্চ ফলনশীল বীজ আবিষ্কার করতে হবে। কথা দিচ্ছি মহান আল্লাহ আমাদের সুযোগ দিলে আমি এর একটি কথাও ভুলে যাবো না।”

তারেক রহমান বলেন, “আপনাদের পাশেই আছে মধুপুর, আমি জানি এখানে মধুপুরের অনেকেই আছেন। মধুপুরের জলডুবি আনারসের ভক্ত নয় এমন মানুষ বোধহয় খুঁজে পাওয়া যাবে না। কিন্তু এটাও একটা মৌসুমি ফল, ফলে এটা সংরক্ষণ করতে না পারায় আর বহুবিধ ব্যবহার আজো সম্ভব হয়নি। অথচ পৃথিবীর এমন কোনো মানুষ নেই যে আনারসের জুস, জ্যাম, জেলী পছন্দ করে না। আমাদের এসব নিয়ে কাজ করতে হবে।”

তিনি বলেন, “ধান উৎপাদনে আপনারা অপ্রতিদ্ব›দ্বী আমি জানি, আপনাদের হারানো খুবই কঠিন। তারপরও সারাদেশে খাদ্য উৎপাদন আরো বাড়ানোর পরিকল্পনায় আপনাদের সাহায্য আমাদের সবচেয়ে বেশি দরকার, আমরাও আমাদের পক্ষ থেকে সব সহযোগিতা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আরও বলেন, “আমাদের অনেকেই হয়তো জানেন না, গোপালপুর আর টাঙ্গাইলের অনেক জায়গায় খুবই উন্নত মানের টুপি তৈরি হয়। রপ্তানিও হয় পৃথিবীর বহু দেশে। আপনার মক্কা শরীফের ফুটপাতে আর দোকান থেকে যে টুপি কিনে আনেন হজ ওমরার সময় সেগুলোর বেশিরভাগই এই টাঙ্গাইলে তৈরি হয়। এর উন্নতি আর বাজারজাত করতে সাহায্য করা দরকার।”

তিনি বলেন, “এখানে গরু মোটাতাজা করার অনেক ছোট বড় খামার আছে, আপনারা কোরবানির সময় গবাদিপশুর বিরাট একটা অংশ এখান থেকে পূরণ করেন। আমরা আপনাদের বিষয় মনে রাখবো, বিশেষ করে পশুখাদ্যের অস্বাভাবিক দাম নিয়ে আপনাদের অনেক সমস্যা আছে। এছাড়া তারেক রহমান বলেন, “ভূমিহীন মানুষের সংখ্যাও এখানে অনেক বেশি। এসব দিকে নজর দিতে হবে। আর সবার আরেকটি বড় সমস্যা হলো যমুনা নদীর ভাঙন, বিশেষ করে ভ‚য়াপুর উপজেলায়। এ ব্যাপারে অনেক বাস্তবমুখী আর স্থায়ী পরিকল্পনার কথা ভাবতে হবে।

প্রসঙ্গত, ২০০৮ সালের পর এই প্রথম টাঙ্গাইলে বিএনপির এমন জনসভা। এতে খন্ড খন্ড মিছিল নিয়ে গোপালপুরের সুতি ভিএম হাইস্কুল মাঠের সমাবেশে যোগ দেন বিএনপির নেতা-কর্মী-সমর্থকরা। স্লোগানে মুক্তির দাবি জানান তাদের প্রিয় নেতা আবদুস সালাম পিন্টুর।
বিষয়: