ঢাকা ০৯:৪৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম

বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক মানুষ মৌলভীবাজারের রামসিং গোঁড়

অলি আহমদ মাহিন, মৌলভীবাজার প্রতিনিধি:

বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক মানুষের সন্ধান মিলেছে মৌলভীবাজারে। এই মানুষটির নাম রামসিং গোঁড়। জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য অনুযায়ী এই ব্যক্তির বয়স এখন ১১৯ বছর। তার বাড়ি জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলার রাজঘাট ইউনিয়নে। সেখানকার একটি চা বাগানে বসবাস করছেন তিনি। গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড অনুযায়ী বর্তমানে পৃথিবীর প্রবীণ পুরুষ যুক্তরাজ্যের লিভারপুল শহরের বাসিন্দা জন আলফ্রেড টিনিসউড। তার বয়স ১১১ বছর।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রায় ২০০ বছর আগে রামসিং গোঁড়ের দাদা ও বাবা বুগুরাম গড় ভারতের মধ্যপ্রদেশের জবলপুর থেকে চা শ্রমিক হিসেবে বাংলাদেশে আসেন। শ্রীমঙ্গল পৌর শহর থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে ভারতের ত্রিপুরা সীমান্তের গ্রাম মেকানী ছড়ায় তারা বসবাস শুরু করেন। এখনো তারা সেই গ্রামেই বসবাস করছেন।

ভোটার আইডি কার্ডে দেখা যায়, রামসিং গোঁড়ের বয়স ১১৯ বছর। সেখানে তার জন্ম তারিখ লেখা রয়েছে ৬ আগস্ট ১৯০৫। বাবার নাম বুগুরাম গোঁড় ও মায়ের নাম কুন্তী গোঁড়। ভোটার আইডি নম্বর- ১০২৪৯১৩৩৮৪।

রামসিং গোঁড় জানান, তার বাবার আদি ভূমি ছিল ভারতে। চা চাষের জন্য তার বাবা এবং দাদা এই এলাকায় প্রথম আসেন। তার দাদা ও বাবার হাতে প্রথম পুটিয়াছড়া চা বাগান সৃজন হয়। তার হাতে সৃজন হয় হরিণছড়া চা বাগান। যখন প্রথম বিশ্বযুদ্ধ হয় ১৯১৪-১৫ খ্রিষ্টাব্দে তখন তিনি বাগানের চৌকিদার ছিলেন। ইংরেজ সাহেবদের কাছে এই যুদ্ধের কথা শোনেন। ১৯৩৯ সালে যখন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ হয় ইংরেজদের কাছ থেকে সেই খবরও শোনেন তিনি।

তিনি আরও জানান, তিনি শ্রীমঙ্গলের প্রাচীন বিদ্যাপিঠ ভিক্টোরিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছেন। তখন ভিক্টোরিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের এক পাশে পাকা ঘর, লোহার পিলার ছিল, অন্য পাশে ছিল ছনের ঘর। তখন তিনি মৌলভীবাজার সড়কের কোনো এক আচার্য্য বাড়িতে থেকে পড়তেন। সেসময় শ্রীমঙ্গলে পাকা সড়ক হয়নি।

রামসিং গোঁড়ের ভাষ্যমতে, পাকা ঘর বলতে শ্রীমঙ্গল পুরাতন বাজারে ত্রিপুরা রাজ্য ব্যাংক, রামরতন বানিয়ার বাসা ও জগন্নাথ জিউর আখড়ার পশ্চিমে ত্রিপুরা রাজার বাংলো (রাজ কাচারি) ছিল। মাঝেমধ্যে ত্রিপুরা রাজা হাতির পিঠে চড়ে ওই বাংলোয় এসে থাকতেন। সেখানে থেকে খাজনা আদায় করতেন। চা বাগানে নিজস্ব ট্রলি দিয়ে পাতা আনা-নেওয়া করা হতো। সেই ট্রলির লাইন স্থাপনও তিনি দেখেছেন।

শ্রীমঙ্গলের প্রবীণ শিক্ষক দ্বীপেন্দ্র ভট্টাচার্য বলেন, রামসিং গোঁড় যে সব বর্ণনা দিয়েছেন তাতে নিঃসন্দেহে অনুমান করা যায়, তিনি একজন অতি প্রবীণ মানুষ। আমার বয়স এখন ৮০ বছর। ছোট বেলায় আমি পুরানবাজারে ত্রিপুরা রাজ্য ব্যাংকের ভগ্নাংশ দেখেছি। শ্রীমঙ্গল ভিক্টোরিয়া উচ্চ বিদ্যালয় ১৯২৪ খ্রিস্টাব্দে স্থাপিত হলেও প্রাথমিক শাখা স্থাপিত হয়েছে তারও অনেক আগে। যেহেতু ভোটার আইডি কার্ডে তার জন্ম লেখা রয়েছে ১৯০৫, সে হিসেবে তার ১১৯ বছর।

তিনি আরও বলেন, গিনেস বুকে তার নাম (রামসিং গোঁড়) পাঠানো উচিত। এ জন্য সরকারের পাশাপাশি চা বাগান কর্তৃপক্ষকেও এগিয়ে আসতে পারেন।

হরিণছড়া চা বাগানের ৮০ বছর বয়সী নিরেণ হাদিমা জানান, তিনি ১৯৬১ সালে হরিণছড়া চা বাগানের স্টাফ হিসেবে যোগ দেন। তখনই তিনি রামসিং গোঁড়কে দেখেছেন বৃদ্ধ।

একই এলাকার মণিকা ঋতিল বলেন, আমার জন্ম ১৯১৭ সালে। আমি ছোট থেকে রামসিং গোঁড়কে দেখছি। তার শারিরিক গঠন ভালো। জীবনি শক্তিও অটুট রয়েছে। তার অনেক নাতিপুতি আছে।

রাজঘাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বিজয় বুনার্জী বলেন, লোকটাকে দেখতে মনে হয় অনেক প্রবীণ। এলাকার সবাই তাকে অতি বয়স্ক মনে করেন।

শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আবু তালেব বলেন, আমরা এ বিষয়ে তদন্ত করেছি। তার কাছে এনআইডি র্কাড ছাড়া আর কোনো ডকুমেন্ট (নথি) নেই। কোনো শিক্ষাগত যোগ্যতা সনদ ও জন্ম সনদও নেই। তারপরেও আমরা যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিকট এ বিষয়টি জানাবো।

মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মো. ইসরাইল হোসেন বলেন, বিষয়টি নিয়ে তদন্ত সাপেক্ষে বিধি মোতাবেক রেজুলেশন করে প্রস্থাবনা পাঠানোর জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে।

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

আপডেট সময় ০৩:২৫:১৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪
১৫ বার পড়া হয়েছে

বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক মানুষ মৌলভীবাজারের রামসিং গোঁড়

আপডেট সময় ০৩:২৫:১৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪

বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক মানুষের সন্ধান মিলেছে মৌলভীবাজারে। এই মানুষটির নাম রামসিং গোঁড়। জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য অনুযায়ী এই ব্যক্তির বয়স এখন ১১৯ বছর। তার বাড়ি জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলার রাজঘাট ইউনিয়নে। সেখানকার একটি চা বাগানে বসবাস করছেন তিনি। গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড অনুযায়ী বর্তমানে পৃথিবীর প্রবীণ পুরুষ যুক্তরাজ্যের লিভারপুল শহরের বাসিন্দা জন আলফ্রেড টিনিসউড। তার বয়স ১১১ বছর।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রায় ২০০ বছর আগে রামসিং গোঁড়ের দাদা ও বাবা বুগুরাম গড় ভারতের মধ্যপ্রদেশের জবলপুর থেকে চা শ্রমিক হিসেবে বাংলাদেশে আসেন। শ্রীমঙ্গল পৌর শহর থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে ভারতের ত্রিপুরা সীমান্তের গ্রাম মেকানী ছড়ায় তারা বসবাস শুরু করেন। এখনো তারা সেই গ্রামেই বসবাস করছেন।

ভোটার আইডি কার্ডে দেখা যায়, রামসিং গোঁড়ের বয়স ১১৯ বছর। সেখানে তার জন্ম তারিখ লেখা রয়েছে ৬ আগস্ট ১৯০৫। বাবার নাম বুগুরাম গোঁড় ও মায়ের নাম কুন্তী গোঁড়। ভোটার আইডি নম্বর- ১০২৪৯১৩৩৮৪।

রামসিং গোঁড় জানান, তার বাবার আদি ভূমি ছিল ভারতে। চা চাষের জন্য তার বাবা এবং দাদা এই এলাকায় প্রথম আসেন। তার দাদা ও বাবার হাতে প্রথম পুটিয়াছড়া চা বাগান সৃজন হয়। তার হাতে সৃজন হয় হরিণছড়া চা বাগান। যখন প্রথম বিশ্বযুদ্ধ হয় ১৯১৪-১৫ খ্রিষ্টাব্দে তখন তিনি বাগানের চৌকিদার ছিলেন। ইংরেজ সাহেবদের কাছে এই যুদ্ধের কথা শোনেন। ১৯৩৯ সালে যখন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ হয় ইংরেজদের কাছ থেকে সেই খবরও শোনেন তিনি।

তিনি আরও জানান, তিনি শ্রীমঙ্গলের প্রাচীন বিদ্যাপিঠ ভিক্টোরিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছেন। তখন ভিক্টোরিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের এক পাশে পাকা ঘর, লোহার পিলার ছিল, অন্য পাশে ছিল ছনের ঘর। তখন তিনি মৌলভীবাজার সড়কের কোনো এক আচার্য্য বাড়িতে থেকে পড়তেন। সেসময় শ্রীমঙ্গলে পাকা সড়ক হয়নি।

রামসিং গোঁড়ের ভাষ্যমতে, পাকা ঘর বলতে শ্রীমঙ্গল পুরাতন বাজারে ত্রিপুরা রাজ্য ব্যাংক, রামরতন বানিয়ার বাসা ও জগন্নাথ জিউর আখড়ার পশ্চিমে ত্রিপুরা রাজার বাংলো (রাজ কাচারি) ছিল। মাঝেমধ্যে ত্রিপুরা রাজা হাতির পিঠে চড়ে ওই বাংলোয় এসে থাকতেন। সেখানে থেকে খাজনা আদায় করতেন। চা বাগানে নিজস্ব ট্রলি দিয়ে পাতা আনা-নেওয়া করা হতো। সেই ট্রলির লাইন স্থাপনও তিনি দেখেছেন।

শ্রীমঙ্গলের প্রবীণ শিক্ষক দ্বীপেন্দ্র ভট্টাচার্য বলেন, রামসিং গোঁড় যে সব বর্ণনা দিয়েছেন তাতে নিঃসন্দেহে অনুমান করা যায়, তিনি একজন অতি প্রবীণ মানুষ। আমার বয়স এখন ৮০ বছর। ছোট বেলায় আমি পুরানবাজারে ত্রিপুরা রাজ্য ব্যাংকের ভগ্নাংশ দেখেছি। শ্রীমঙ্গল ভিক্টোরিয়া উচ্চ বিদ্যালয় ১৯২৪ খ্রিস্টাব্দে স্থাপিত হলেও প্রাথমিক শাখা স্থাপিত হয়েছে তারও অনেক আগে। যেহেতু ভোটার আইডি কার্ডে তার জন্ম লেখা রয়েছে ১৯০৫, সে হিসেবে তার ১১৯ বছর।

তিনি আরও বলেন, গিনেস বুকে তার নাম (রামসিং গোঁড়) পাঠানো উচিত। এ জন্য সরকারের পাশাপাশি চা বাগান কর্তৃপক্ষকেও এগিয়ে আসতে পারেন।

হরিণছড়া চা বাগানের ৮০ বছর বয়সী নিরেণ হাদিমা জানান, তিনি ১৯৬১ সালে হরিণছড়া চা বাগানের স্টাফ হিসেবে যোগ দেন। তখনই তিনি রামসিং গোঁড়কে দেখেছেন বৃদ্ধ।

একই এলাকার মণিকা ঋতিল বলেন, আমার জন্ম ১৯১৭ সালে। আমি ছোট থেকে রামসিং গোঁড়কে দেখছি। তার শারিরিক গঠন ভালো। জীবনি শক্তিও অটুট রয়েছে। তার অনেক নাতিপুতি আছে।

রাজঘাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বিজয় বুনার্জী বলেন, লোকটাকে দেখতে মনে হয় অনেক প্রবীণ। এলাকার সবাই তাকে অতি বয়স্ক মনে করেন।

শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আবু তালেব বলেন, আমরা এ বিষয়ে তদন্ত করেছি। তার কাছে এনআইডি র্কাড ছাড়া আর কোনো ডকুমেন্ট (নথি) নেই। কোনো শিক্ষাগত যোগ্যতা সনদ ও জন্ম সনদও নেই। তারপরেও আমরা যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিকট এ বিষয়টি জানাবো।

মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মো. ইসরাইল হোসেন বলেন, বিষয়টি নিয়ে তদন্ত সাপেক্ষে বিধি মোতাবেক রেজুলেশন করে প্রস্থাবনা পাঠানোর জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে।