ঢাকা ১০:২৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ষড়যন্ত্রে বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য জি কে গউছের আহ্বান

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিএনপির রাজনীতিতে আলহাজ্ব জি কে গউছের ৪০ বছর। ১৯৮৪ সালে ছাত্রদলের মাধ্যমে রাজনীতি শুরু করেন। সভাপতি নির্বাচিত হন বৃন্দাবন সরকারী কলেজ ছাত্রদলের। তিনি ১৯৮৭ সালে হবিগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের সভাপতি, ১৯৯৪ সালে হবিগঞ্জ পৌর যুবদলের সভাপতি, ১৯৯৫ সালে হবিগঞ্জ জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক, ১৯৯৬ সালে যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য, ১৯৯৮ হবিগঞ্জ জেলা যুবদলের সভাপতি, ২০০৪ সালে হবিগঞ্জ জেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক, ২০১১ সালে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য, ২০১৬ সালে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সমবায় বিষয়ক সম্পাদক এবং ২০২৪ সালে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক (সিলেট বিভাগ) এর দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। এই দীর্ঘ পথচলা মুটেও তার জন্য মসৃণ ছিল না। অনেক প্রতিকুল পরিস্থিতি ও ঘাত-প্রতিঘাত অতিক্রম করতে হয়েছে। ৪২টি রাজনৈতিক মামলায় আসামী হয়ে ১ হাজার ৫১৭ দিন কারাভোগ করেছেন। কারাগারেও তাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। থামিয়ে দিতে দলের ভিতরে বাহিরে অনেক ষড়যন্ত্র হয়েছে, ষড়যন্ত্র হচ্ছে। তবুও রাজপথে জি কে গউছকে থামানো যায়নি, থেমে থাকেননি। জনগণের জি কে গউছ জনগণের মধ্যেই তার সুন্দর্য। গত ৫ আগষ্ট বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যূত্থানে আওয়ামীলীগ সরকারের পতন হয়। উদীত হয় বাংলাদেশে নতুন সূর্য। শুরু হয় নতুন চ্যালেঞ্জ। পরাজিত শক্তি যাতে কোনো অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করতে না পারে সে জন্য আলহাজ্ব জি কে গউছ দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে শক্তভাবে রাজপথে অবস্থান নেন। বানিয়াচং থানায় জনতার অবরোধে আটক ৫৭ জন পুলিশ সদস্যকে উদ্ধার করতে যখন ব্যর্থ হয় আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসন, তখন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে ছুটে যান জি কে গউছ। জীবনের ঝুকি নিয়ে ৫৭ জন পুলিশ সদস্যকে উদ্ধার করে তিনি এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন।

তিনি পাড়া-মহল্লায় ছুটে যান মানুষের জানমালের নিরাপত্তা দিতে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি যাতে বিনষ্ট না হয় এবং কোনো অন্যায়, অপকর্ম, চাঁদাবাজী, দখলবাজি এবং বল প্রয়োগ যাতে কেউ না করতে পারে সে জন্য দলীয় নেতাকর্মীদের সর্তক করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশনা জানিয়ে দেন। প্রতিশোধ পরায়ন না হয়ে ধৈর্য ধরার আহ্বান জানান দলীয় নেতাকর্মীদের। দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে হবিগেঞ্জর জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার সহ বিভিন্ন সরকারী প্রতিষ্ঠানে জি কে গউছকে স্ব স্ব দপ্তরে চায়ের আমন্ত্রণ জানানো হয়। কিন্তু তিনি নিরপেতা ধরে রাখতে কোনো সরকারী দপ্তরে প্রবেশ করেননি। জি কে গউছ টানা ৩ বার হবিগঞ্জ পৌরসভার মেরর ছিলেন। শত শত কোটি টাকার উন্নয়ন কাজের চেকে স্বার করেছেন। ১/১১ এর সময় তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন মিথ্যা অভিযোগে মামলা হয়েছে। আওয়ামীলীগ সরকারের আমলেও অসংখ্য মামলা হয়েছে। কিন্তু এক টাকা দুর্নীতি করেছেন, অনিয়ম করেছেন, এমন অভিযোগে জি কে গউছের বিরুদ্ধে ১/১১ সরকার এবং আওয়ামীলীগ সরকার কোনো মামলা দিতে পারেনি। যে মামলা দেয়া হয়েছিল সেগুলোও ম্যিথ্যা প্রমাণিত হওয়ায় জি কে গউছ বেকসুর খালাস পেয়েছেন। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পর হবিগঞ্জে যে কয়েকটি মামলা দায়ের করা হয়েছে তার সাথে আলহাজ্ব জি কে গউছের কোনো সম্পর্ক নেই। মামলাগুলো নিহত ও আহতদের পরিবারের পক্ষ থেকে বাদী হয়ে দায়ের করা হয়েছে। এসব মামলা বিএনপি বা জি কে গউছের দিকনির্দেশনায় দায়ের করা হয়নি। তাই টাকার বিনিময়ে আওয়ামীলীগ নেতা সহ অন্যান্যদের আসামী না করার প্রশ্নই আসে না। আওয়ামীলীগ নেতা ড. শাহ নেওয়াজকে অর্থের বিনিয়মে মামলায় আসামী করা হয়নি যে আজগুবি অভিযোগ আনা হয়েছে তা সম্পূর্র্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। বরং বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঘটনায় হবিগঞ্জের ৩টি মামলায় আসামী হয়েছেন লন্ডন প্রবাসী আওয়ামীলীগ নেতা ড. শাহ নেওয়াজ। তিনি শহরের মোস্তাক হত্যা মামলার ৫নং আসামী, বানিয়াচঙ্গে নাইন মার্ডার মামলার ১৫নং আসামী এবং শহরে আরও একটি মামলার ১নং আসামী। শহরের বিশিষ্ট ঔষুধ ব্যবসায়ী এডভোকেট প্রবাল কুমার মোদক (ঝন্টু মোদক) বলেন- আমাকে জড়িয়ে হবিগঞ্জের সাবেক জনপ্রিয় মেয়র আলহাজ্ব জি কে গউছের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও কাল্পনিক। আমরা ভিন্ন ধর্মের হলেও তার আব্বা-আম্মার সাথে আমাদের পারিবারিক একটি বন্ধন রয়েছে। সম্পূর্ণ উদ্দেশ্য প্রনোদিত হয়ে জি কে গউছের বিরুদ্ধে এই অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। আমি এর তীব্র নিন্দা জানাই। বিএনপি একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দল। এই দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা রয়েছে। স্থানীয় নেতাকর্মীদের পছন্দের নেতাও রয়েছে। বানিয়াচং উপজেলা হচ্ছে বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ড. সাখাওয়াত হাসান জীবনের নির্বাচনী এলাকা। বানিয়াচং উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নকীব ফজলে রকীব মাখন বলেন- আমাদের নেতা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। আলহাজ্ব জি কে গউছ হবিগঞ্জ তথা বৃহত্তর সিলেট বিভাগের নেতা। আমরা বিএনপির আদর্শে রাজনীতি করি। আমরা জি কে গউছের মদদপুষ্ট কথাটি সঠিক নয়। একটি স্বার্থন্নেষী মহল আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা, বানোয়াট ও কাল্পনিক অভিযোগ তুলে অপপ্রচার করছে। শহরের জালালাবাদ অংশে খোয়াই নদীর বাঁধ মেরামতের জন্য টেন্ডার ছাড়াই জি কে গউছের ছোট ভাই জি কে গাফাফারকে নির্মাণ কাজ দেয়া হয়েছে বলে যে তথ্যা দেয়া হয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও হাস্যকর। কারণ এই বাঁধ মেরামতের জন্য এখনও কোনো টেন্ডারই হয়নি। এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারি প্রকৌশলী (সদর) সামিউল আজম বলেন- গত বন্যায় খোয়াই নদীর জালালাবাদ অংশে ভাঙ্গণে বাঁধটি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। বাঁধটি মেরামত করতে ডিজাইন ডাটা ঢাকায় প্রেরণ করা হয়েছে। ডিজাইন ডাটা অনুমোদন হয়ে আসলে আমরা টেন্ডার প্রক্রিয়ায় যাবো। হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালের আইসিইউ বেড স্থাপন প্রজক্টের টেন্ডার হয়েছে আওয়ামীলীগ আমলে ২০২৩ সালের ৬ নভেম্বর। কার্যাদেশ দেয়া হয়েছে একই বছরের ৩০ নভেম্বর। প্রাক্কলন ব্যায় ১ কোটি ৮২ লাখ ১৫ হাজার ৫৬৪ টাকা। কাজটি পেয়েছেন ঢাকা ওয়ারী এলাকার মেসার্স এস এ এন্টারপ্রাইজ। বিষয়টি নিশ্চিত করেন হবিগঞ্জ গণপূর্ত বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী এ কে এম আরিফুল ইসলাম। অথচ ওই মিথ্যা সংবাদে আইসিইউ বেড ¯’াপন প্রজক্টের প্রাক্কলন ব্যয় ২০ কেটি টাকা উল্লেখ করা হয়েছে। যে সময়ে হবিগঞ্জ-৩ আসনের তৎকালিন এমপি আবু জাহিরের নির্দেশের বাহিরে কোনো সরকারি দপ্তরে একটি পেনসিল কেনার সাহস ছিল না। সেখানে জি কে গউছের পছন্দের লোককে আইসিইউ বেড স্থাপন প্রজক্টের কাজ দেয়া হয়েছে তা হাস্যকর, কাল্পনিক ও মিথ্যা প্রোপাগান্ডা ছাড়া আর কিছুই নয়।

হবিগঞ্জ শহরের উমেদনগর এলাকায় টমটম স্ট্যান্ড ও নবীগঞ্জ সিএনজি স্ট্যান্ড দখল এবং বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক এনামুল হাসান সাকিবের সাথে ছাত্রদলের কোনো সম্পর্ক নেই। সাকিব ছাত্রদলের রাজনীতির সাথে জড়িত নয়। বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে ছাত্রদল এবং ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা ভিন্ন ভিন্নভাবে অবস্থান করে আন্দোলন করেছে। টমটম ও সিএনজি স্ট্যান্ড দখলের সাথে ছাত্রদল, বা যুবদল জড়িত নয়। গত ১২ সেপ্টেম্বর বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কয়েক সমন্বয়ক হবিগঞ্জ সফরকালে ছাত্রদলের কোনো নেতাকর্মী বাঁধা সৃষ্টি করেনি। বরং ছাত্র আন্দোলনের স্থানীয় সমন্বয়কদের বিরোধের কারণেই সেই দিন তাদের সমাবেশ পন্ড হয়েছে। এছাড়াও থানায় জি কে গউছের আত্মীয় স্বজন পরিচয়ে যাতে কেউ তদবির করতে না পারে সে জন্য তিনি পুলিশ প্রশাসনকে ফোন করে নিশ্চিত করেছেন। এমন অপকর্ম কেউ করলে তাকে আটক করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার জন্যও তিনি পুলিশ প্রশাসনকে অনুরোধ করেন। এ ব্যাপারে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ও টানা ৩ বারের নির্বাচিত হবিগঞ্জ পৌরসভার পদত্যাগকারী মেয়র আলহাজ্ব জি কে গউছ বলেছেন- আমার ৪০ বছরের রাজনীতিতে আমার বিরুদ্ধে অনেক ষড়যন্ত্র হয়েছে, চক্রান্ত হয়েছে। যারাই আমার বিরুদ্ধে এই ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত করেছে তারাই ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। মহান আল্লাহ ইজ্জতের মালিক। মিথ্যা ও আজগুবি অভিযোগ তুলে আমাকে মানুষের কাছ থেকে আলাদা করা যায়নি, যাবেও না। আমি দেশের ভিন্ন ভিন্ন পরিস্থিতে হবিগঞ্জ পৌরসভায় ৩ বার মেয়রের দায়িত্ব পালন করেছি। একবার ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছি। মেয়র থাকাকালিন শত শত কোটি টাকার উন্নয়ন কাজের চেকে স্বাক্ষর করেছি। কিন্তু কোনো অনিয়ম দুর্নীতি আমাকে স্পর্শ করতে পারেনি। ১/১১ সরকার এবং আওয়ামীলীগ সরকার আমার বিরুদ্ধে অনেক মিথ্যা মামলা দিয়েছে। আমি বাংলাদেশের বিভিন্ন কারাগারে ১ হাজার ৫১৭ দিন কারাভোগ করেছি। কিন্তু পৌরসভায় একটি টাকা আত্মসাত করেছি, দুর্নীতি করেছি এমন অভিযোগে আমার বিরুদ্ধে কোনো মামলা হয়নি।

তিনি বলেন- জুলকার নাইন একজন আন্তর্জাতিক মানের সাংবাদিক। তার প্রতি আমার কোনো ক্ষোভ নেই। তিনি সম্পূর্ণ ভুল তথ্যের ভিত্তিতে আমার বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ করেছেন। এ ধরনের ভুল তথ্যের কারণে মানুষের মধ্যে ভুল বার্তা যায়, মানুষ বিভ্রান্ত হয়। আমার বিরুদ্ধে যে সব অভিযোগ আনা হয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে একটি কচক্রি মহল আমার বিরুদ্ধে নতুন ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। এ ধরনের চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্রে বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য আমি সকলের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি এবং মহান আল্লাহ সাহায্য কামনা করছি।

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

আপডেট সময় ০৫:২৮:২৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
০ বার পড়া হয়েছে

ষড়যন্ত্রে বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য জি কে গউছের আহ্বান

আপডেট সময় ০৫:২৮:২৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

বিএনপির রাজনীতিতে আলহাজ্ব জি কে গউছের ৪০ বছর। ১৯৮৪ সালে ছাত্রদলের মাধ্যমে রাজনীতি শুরু করেন। সভাপতি নির্বাচিত হন বৃন্দাবন সরকারী কলেজ ছাত্রদলের। তিনি ১৯৮৭ সালে হবিগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের সভাপতি, ১৯৯৪ সালে হবিগঞ্জ পৌর যুবদলের সভাপতি, ১৯৯৫ সালে হবিগঞ্জ জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক, ১৯৯৬ সালে যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য, ১৯৯৮ হবিগঞ্জ জেলা যুবদলের সভাপতি, ২০০৪ সালে হবিগঞ্জ জেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক, ২০১১ সালে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য, ২০১৬ সালে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সমবায় বিষয়ক সম্পাদক এবং ২০২৪ সালে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক (সিলেট বিভাগ) এর দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। এই দীর্ঘ পথচলা মুটেও তার জন্য মসৃণ ছিল না। অনেক প্রতিকুল পরিস্থিতি ও ঘাত-প্রতিঘাত অতিক্রম করতে হয়েছে। ৪২টি রাজনৈতিক মামলায় আসামী হয়ে ১ হাজার ৫১৭ দিন কারাভোগ করেছেন। কারাগারেও তাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। থামিয়ে দিতে দলের ভিতরে বাহিরে অনেক ষড়যন্ত্র হয়েছে, ষড়যন্ত্র হচ্ছে। তবুও রাজপথে জি কে গউছকে থামানো যায়নি, থেমে থাকেননি। জনগণের জি কে গউছ জনগণের মধ্যেই তার সুন্দর্য। গত ৫ আগষ্ট বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যূত্থানে আওয়ামীলীগ সরকারের পতন হয়। উদীত হয় বাংলাদেশে নতুন সূর্য। শুরু হয় নতুন চ্যালেঞ্জ। পরাজিত শক্তি যাতে কোনো অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করতে না পারে সে জন্য আলহাজ্ব জি কে গউছ দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে শক্তভাবে রাজপথে অবস্থান নেন। বানিয়াচং থানায় জনতার অবরোধে আটক ৫৭ জন পুলিশ সদস্যকে উদ্ধার করতে যখন ব্যর্থ হয় আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসন, তখন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে ছুটে যান জি কে গউছ। জীবনের ঝুকি নিয়ে ৫৭ জন পুলিশ সদস্যকে উদ্ধার করে তিনি এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন।

তিনি পাড়া-মহল্লায় ছুটে যান মানুষের জানমালের নিরাপত্তা দিতে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি যাতে বিনষ্ট না হয় এবং কোনো অন্যায়, অপকর্ম, চাঁদাবাজী, দখলবাজি এবং বল প্রয়োগ যাতে কেউ না করতে পারে সে জন্য দলীয় নেতাকর্মীদের সর্তক করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশনা জানিয়ে দেন। প্রতিশোধ পরায়ন না হয়ে ধৈর্য ধরার আহ্বান জানান দলীয় নেতাকর্মীদের। দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে হবিগেঞ্জর জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার সহ বিভিন্ন সরকারী প্রতিষ্ঠানে জি কে গউছকে স্ব স্ব দপ্তরে চায়ের আমন্ত্রণ জানানো হয়। কিন্তু তিনি নিরপেতা ধরে রাখতে কোনো সরকারী দপ্তরে প্রবেশ করেননি। জি কে গউছ টানা ৩ বার হবিগঞ্জ পৌরসভার মেরর ছিলেন। শত শত কোটি টাকার উন্নয়ন কাজের চেকে স্বার করেছেন। ১/১১ এর সময় তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন মিথ্যা অভিযোগে মামলা হয়েছে। আওয়ামীলীগ সরকারের আমলেও অসংখ্য মামলা হয়েছে। কিন্তু এক টাকা দুর্নীতি করেছেন, অনিয়ম করেছেন, এমন অভিযোগে জি কে গউছের বিরুদ্ধে ১/১১ সরকার এবং আওয়ামীলীগ সরকার কোনো মামলা দিতে পারেনি। যে মামলা দেয়া হয়েছিল সেগুলোও ম্যিথ্যা প্রমাণিত হওয়ায় জি কে গউছ বেকসুর খালাস পেয়েছেন। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পর হবিগঞ্জে যে কয়েকটি মামলা দায়ের করা হয়েছে তার সাথে আলহাজ্ব জি কে গউছের কোনো সম্পর্ক নেই। মামলাগুলো নিহত ও আহতদের পরিবারের পক্ষ থেকে বাদী হয়ে দায়ের করা হয়েছে। এসব মামলা বিএনপি বা জি কে গউছের দিকনির্দেশনায় দায়ের করা হয়নি। তাই টাকার বিনিময়ে আওয়ামীলীগ নেতা সহ অন্যান্যদের আসামী না করার প্রশ্নই আসে না। আওয়ামীলীগ নেতা ড. শাহ নেওয়াজকে অর্থের বিনিয়মে মামলায় আসামী করা হয়নি যে আজগুবি অভিযোগ আনা হয়েছে তা সম্পূর্র্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। বরং বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঘটনায় হবিগঞ্জের ৩টি মামলায় আসামী হয়েছেন লন্ডন প্রবাসী আওয়ামীলীগ নেতা ড. শাহ নেওয়াজ। তিনি শহরের মোস্তাক হত্যা মামলার ৫নং আসামী, বানিয়াচঙ্গে নাইন মার্ডার মামলার ১৫নং আসামী এবং শহরে আরও একটি মামলার ১নং আসামী। শহরের বিশিষ্ট ঔষুধ ব্যবসায়ী এডভোকেট প্রবাল কুমার মোদক (ঝন্টু মোদক) বলেন- আমাকে জড়িয়ে হবিগঞ্জের সাবেক জনপ্রিয় মেয়র আলহাজ্ব জি কে গউছের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও কাল্পনিক। আমরা ভিন্ন ধর্মের হলেও তার আব্বা-আম্মার সাথে আমাদের পারিবারিক একটি বন্ধন রয়েছে। সম্পূর্ণ উদ্দেশ্য প্রনোদিত হয়ে জি কে গউছের বিরুদ্ধে এই অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। আমি এর তীব্র নিন্দা জানাই। বিএনপি একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দল। এই দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা রয়েছে। স্থানীয় নেতাকর্মীদের পছন্দের নেতাও রয়েছে। বানিয়াচং উপজেলা হচ্ছে বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ড. সাখাওয়াত হাসান জীবনের নির্বাচনী এলাকা। বানিয়াচং উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নকীব ফজলে রকীব মাখন বলেন- আমাদের নেতা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। আলহাজ্ব জি কে গউছ হবিগঞ্জ তথা বৃহত্তর সিলেট বিভাগের নেতা। আমরা বিএনপির আদর্শে রাজনীতি করি। আমরা জি কে গউছের মদদপুষ্ট কথাটি সঠিক নয়। একটি স্বার্থন্নেষী মহল আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা, বানোয়াট ও কাল্পনিক অভিযোগ তুলে অপপ্রচার করছে। শহরের জালালাবাদ অংশে খোয়াই নদীর বাঁধ মেরামতের জন্য টেন্ডার ছাড়াই জি কে গউছের ছোট ভাই জি কে গাফাফারকে নির্মাণ কাজ দেয়া হয়েছে বলে যে তথ্যা দেয়া হয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও হাস্যকর। কারণ এই বাঁধ মেরামতের জন্য এখনও কোনো টেন্ডারই হয়নি। এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারি প্রকৌশলী (সদর) সামিউল আজম বলেন- গত বন্যায় খোয়াই নদীর জালালাবাদ অংশে ভাঙ্গণে বাঁধটি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। বাঁধটি মেরামত করতে ডিজাইন ডাটা ঢাকায় প্রেরণ করা হয়েছে। ডিজাইন ডাটা অনুমোদন হয়ে আসলে আমরা টেন্ডার প্রক্রিয়ায় যাবো। হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালের আইসিইউ বেড স্থাপন প্রজক্টের টেন্ডার হয়েছে আওয়ামীলীগ আমলে ২০২৩ সালের ৬ নভেম্বর। কার্যাদেশ দেয়া হয়েছে একই বছরের ৩০ নভেম্বর। প্রাক্কলন ব্যায় ১ কোটি ৮২ লাখ ১৫ হাজার ৫৬৪ টাকা। কাজটি পেয়েছেন ঢাকা ওয়ারী এলাকার মেসার্স এস এ এন্টারপ্রাইজ। বিষয়টি নিশ্চিত করেন হবিগঞ্জ গণপূর্ত বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী এ কে এম আরিফুল ইসলাম। অথচ ওই মিথ্যা সংবাদে আইসিইউ বেড ¯’াপন প্রজক্টের প্রাক্কলন ব্যয় ২০ কেটি টাকা উল্লেখ করা হয়েছে। যে সময়ে হবিগঞ্জ-৩ আসনের তৎকালিন এমপি আবু জাহিরের নির্দেশের বাহিরে কোনো সরকারি দপ্তরে একটি পেনসিল কেনার সাহস ছিল না। সেখানে জি কে গউছের পছন্দের লোককে আইসিইউ বেড স্থাপন প্রজক্টের কাজ দেয়া হয়েছে তা হাস্যকর, কাল্পনিক ও মিথ্যা প্রোপাগান্ডা ছাড়া আর কিছুই নয়।

হবিগঞ্জ শহরের উমেদনগর এলাকায় টমটম স্ট্যান্ড ও নবীগঞ্জ সিএনজি স্ট্যান্ড দখল এবং বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক এনামুল হাসান সাকিবের সাথে ছাত্রদলের কোনো সম্পর্ক নেই। সাকিব ছাত্রদলের রাজনীতির সাথে জড়িত নয়। বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে ছাত্রদল এবং ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা ভিন্ন ভিন্নভাবে অবস্থান করে আন্দোলন করেছে। টমটম ও সিএনজি স্ট্যান্ড দখলের সাথে ছাত্রদল, বা যুবদল জড়িত নয়। গত ১২ সেপ্টেম্বর বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কয়েক সমন্বয়ক হবিগঞ্জ সফরকালে ছাত্রদলের কোনো নেতাকর্মী বাঁধা সৃষ্টি করেনি। বরং ছাত্র আন্দোলনের স্থানীয় সমন্বয়কদের বিরোধের কারণেই সেই দিন তাদের সমাবেশ পন্ড হয়েছে। এছাড়াও থানায় জি কে গউছের আত্মীয় স্বজন পরিচয়ে যাতে কেউ তদবির করতে না পারে সে জন্য তিনি পুলিশ প্রশাসনকে ফোন করে নিশ্চিত করেছেন। এমন অপকর্ম কেউ করলে তাকে আটক করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার জন্যও তিনি পুলিশ প্রশাসনকে অনুরোধ করেন। এ ব্যাপারে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ও টানা ৩ বারের নির্বাচিত হবিগঞ্জ পৌরসভার পদত্যাগকারী মেয়র আলহাজ্ব জি কে গউছ বলেছেন- আমার ৪০ বছরের রাজনীতিতে আমার বিরুদ্ধে অনেক ষড়যন্ত্র হয়েছে, চক্রান্ত হয়েছে। যারাই আমার বিরুদ্ধে এই ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত করেছে তারাই ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। মহান আল্লাহ ইজ্জতের মালিক। মিথ্যা ও আজগুবি অভিযোগ তুলে আমাকে মানুষের কাছ থেকে আলাদা করা যায়নি, যাবেও না। আমি দেশের ভিন্ন ভিন্ন পরিস্থিতে হবিগঞ্জ পৌরসভায় ৩ বার মেয়রের দায়িত্ব পালন করেছি। একবার ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছি। মেয়র থাকাকালিন শত শত কোটি টাকার উন্নয়ন কাজের চেকে স্বাক্ষর করেছি। কিন্তু কোনো অনিয়ম দুর্নীতি আমাকে স্পর্শ করতে পারেনি। ১/১১ সরকার এবং আওয়ামীলীগ সরকার আমার বিরুদ্ধে অনেক মিথ্যা মামলা দিয়েছে। আমি বাংলাদেশের বিভিন্ন কারাগারে ১ হাজার ৫১৭ দিন কারাভোগ করেছি। কিন্তু পৌরসভায় একটি টাকা আত্মসাত করেছি, দুর্নীতি করেছি এমন অভিযোগে আমার বিরুদ্ধে কোনো মামলা হয়নি।

তিনি বলেন- জুলকার নাইন একজন আন্তর্জাতিক মানের সাংবাদিক। তার প্রতি আমার কোনো ক্ষোভ নেই। তিনি সম্পূর্ণ ভুল তথ্যের ভিত্তিতে আমার বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ করেছেন। এ ধরনের ভুল তথ্যের কারণে মানুষের মধ্যে ভুল বার্তা যায়, মানুষ বিভ্রান্ত হয়। আমার বিরুদ্ধে যে সব অভিযোগ আনা হয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে একটি কচক্রি মহল আমার বিরুদ্ধে নতুন ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। এ ধরনের চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্রে বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য আমি সকলের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি এবং মহান আল্লাহ সাহায্য কামনা করছি।