হবিগঞ্জে বন্যার পানিতে ভাসছে অর্ধশতাধিক গ্রাম
উজানের পাহাড়ি ঢল ও টানাবৃষ্টিতে হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। কুশিয়ারা নদীর পানি বৃদ্ধি হওয়ায় নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে।
এতে সুনামগঞ্জ-জগন্নাথপুর-আউশকান্দি আঞ্চলিক মহাসড়কসহ ১০টি পাকা সড়ক বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। নতুন করে দক্ষিণ কসবা গ্রামের পাকা সড়ক ভেঙে দ্রুত গতিতে বিভিন্ন গ্রামে পানি প্রবেশ করছে। এতে পানিবন্ধী হয়ে পড়েছেন অর্ধলক্ষাধিক মানুষ। নিরুপায় হয়ে অনেকেই ছুটছেন আশ্রয় কেন্দ্রে।
এদিকে, গত বৃহস্পতিবার বিকেলে ইনাতগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় আশ্রয় কেন্দ্র, ইনাতগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আশ্রয় কেন্দ্র ও দীঘলবাক ইউনিয়নের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ পরিদর্শন করেছেন হবিগঞ্জ-১ আসনের সংসদ এডভোকেট আমাতুল কিবরিয়া চৌধুরী কেয়া ও জেলা প্রশাসক জিলুফা সুলতানা। এ সময় তারা বন্যা কবলিতদের মধ্যে ১০ কেজি করে চাল বিতরণ করেন।
পানি উন্নয়ন বোর্ড ও স্থানীয় সূত্র জানায়, কুশিয়ারা নদীর পানি গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকে দ্রুত বৃদ্ধি পায়। বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টার দিকে কুশিয়ারা নদীর পানি শেরপুর পয়েন্টে বিপদসীমার ১৮, মার্কুলি পয়েন্টে ৩৩ এবং আজমিরীগঞ্জে ৬৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।
বরিশালে ট্রাকচাপায় নিহত দুই
গত কয়েকদিন ধরে উজানের পাহাড়ি ঢল ও টানাবৃষ্টিতে কুশিয়ারা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে কুশিয়ারা নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ উপচে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করতে থাকে।
এতে ইনাতগঞ্জ ইউনিয়নের রাজনগর, উমরপুর, মোস্তফাপুর, দক্ষিণগ্রাম, পাঠানহাটি, মনসুরপুর, দরবেশপুর, দিঘীরপাড়, নোয়াগাঁও, চন্ডিপুর, প্রজাতপুর, লামলীপাড়, দীঘলবাক ইউনিয়নের রাধাপুর, ফাদুল্লাহ, দুর্গাপুর, মথুরাপুর, হোসেনপুর, মাধবপুর, পশ্চিম মাধবপুর, গালিমপুর, আউশকান্দি ইউনিয়নের পাহাড়পুর,পারকুল, উমরপুর, দীঘর ব্রাহ্মণগ্রাম, বড় ভাকৈর (পশ্চিম) ইউনিয়নের সোনাপুর, চরগাঁও, বড় ভাকৈর (পূর্ব), করগাঁও, কালিয়াভাঙ্গা, দেবপাড়া ও কুর্শি ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে।
সুনামগঞ্জ-জগন্নাথপুর-আউশকান্দি আঞ্চলিক মহাসড়কসহ ১০টি পাকা সড়ক বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে বন্ধ রয়েছে যানচলাচল। কুশিয়ারা নদী ঘেঁষা ইনাতগঞ্জ ও দীঘলবাক ইউনিয়নের অধিকাংশ এলাকা বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। অনেকের ঘরবাড়িতে প্রবেশ করেছে। ফলে মানবেতর অবস্থায় জীবনযাপন করছে সাধারণ মানুষ। সময়ের সাথে সাথে বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ ধারণ করছে।
এমন অবস্থায় বন্যা কবলিতরা আশ্রয় কেন্দ্র ছুটছে। ১৪টি আশ্রয় কেন্দ্রের মধ্যে ৮টি আশ্রয় কেন্দ্রে প্রায় ৩শ পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। এ পর্যন্ত দেড় শতাধিক পরিবারের মধ্যে ১০ কেজি করে চাল বিতরন করেছে প্রশাসন। এদিকে, দীঘলবাক ইউনিয়নের দক্ষিণ কসবা গ্রামের পাকা সড়ক ভেঙে দ্রæত গতিতে বিভিন্ন গ্রামে পানি প্রবেশ করছে।
এতে মানুষ আতঙ্কে উৎকণ্ঠায় জীবনযাপন করছে। বন্যার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে ইনাতগঞ্জ অবস্থিত শেভরন পরিচালিত এশিয়া মহাদেশের অন্যতম গ্যাসক্ষেত্র বিবিয়ানা ও পারকুলে অবস্থিত কুশিয়ারা নদী ঘেঁষা বিবিয়ানা ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রে। বিবিয়ানা গ্যাস ও বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র হতে ৪-৫ ফুট নিচে বর্তমান পানি রয়েছে।
তবে দ্রুতহারে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় গ্যাসক্ষেত্রে পানি প্রবেশের আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অনুপম দাশ অনুপ জানান, বন্যা কবলিত এলাকার লোকজনকে আশ্রয় কেন্দ্রে এসে আশ্রয় নেওয়ার জন্য আহবান করা হয়েছে। ১৪টি সরকারী বন্যা আশ্রয় কেন্দ্র খোলা রয়েছে, এরমধ্যে ৮টি আশ্রয় কেন্দ্রে ৩ শতাধিক পরিবার আশ্রয় নিয়েছেন।
ইতিমধ্যে দেড় শতাধিক পরিবারকে ১০ কেজি করে চাল বিতরণ করা হয়েছে।
এছাড়া জেলা প্রশাসন থেকে ৫শ প্যাকেটের শুকনো খাবার বরাদ্দ হয়েছে। শিগগিরিই এসব খাবার বন্যা কবলিতদের মধ্যে বিতরণ করা হবে।
জেলা প্রশাসক জিলুফা সুলতানা বলেন, ‘বন্যা কবলিত মানুষদের আশ্রয় কেন্দ্রে নেয়া হচ্ছে, যারা আশ্রয় কেন্দ্রে আছেন, তাদের সবাইকে পর্যায়ক্রমে খাদ্য সহায়তা প্রদান করা হবে, আমরা সবসময় বন্যার্ত মানুষের পাশে আছি’।