ঢাকা ০২:৪৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৩ অগাস্ট ২০২৫, ২৯ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
Logo হবিগঞ্জের বাল্লা স্থলবন্দরের কার্যক্রম স্থগিতের সিদ্ধান্ত সরকারের Logo সরিনা খাতুন যেন ‘আসমানী’রই প্রতিচ্ছবি Logo বানিয়াচংয়ে সড়ক বেহাল জনদুর্ভোগে নিত্যদিনের যাত্রী ও শিক্ষার্থীরা Logo মৌলভীবাজারে হার্ডওয়্যার ব্যাবসায়ীকে কুপিয়ে হত্যা Logo হবিগঞ্জে বিজিবির অভিযানে মাদকসহ ১০ লাখ টাকা মূল্যের চোরাচালান জব্দ Logo হবিগঞ্জে আদালতের হাজতে শিশুসন্তান কোলে ছাত্রলীগ নেতা ২ পুলিশ সদস্য ক্লোজড Logo নবীগঞ্জে বিয়ে বাড়িতে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে কনের মায়ের মর্মান্তিক মৃত্যু কালিমন্দিরে মালা বদল Logo জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ৪ আগস্ট শায়েস্তাগঞ্জে আওয়ামী ফ্যাসিস্টরা পরাজয় মেনে আত্মগোপন ও পালাতে শুরু করে Logo বিগত সরকার লুটপাট করে বিদেশে বাড়ি করেছে – এর পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে হবে” নবীগঞ্জে ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন Logo ২০ ঘন্টা পর বিদ্যুৎ পেলো হবিগঞ্জবাসী এলাকাভিত্তিক ভাগে চলছে সরবরাহ

সরিনা খাতুন যেন ‘আসমানী’রই প্রতিচ্ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক

কবিতার সেই আসমানীদের হয়তো রসুলপুরে গিয়ে বাস্তবে দেখা সম্ভব হবে না। তবে ছেঁড়া পলিথিনে মোড়ানো ঝুপড়ি ঘরে বসবাস করা সরিনা খাতুনকে (৫০) দেখলে মনে হবে যেন আসমানীরই আরেক প্রতিচ্ছবি।

হবিগঞ্জ জেলার শায়েস্তাগঞ্জ রেলওয়ে জংশনের গুদাম মাঠে পরিত্যক্ত রেলের জমিতে বসবাস করেন সরিনা খাতুন। তার ঘরের সামনে স্তুপ করে রাখা লাকড়ি (জ্বালানি কাঠ)। এই লাকড়ি বিক্রির টাকাতেই জীবন চলে তার।

রাস্তার পাশে খাল লাগোয়া একটি স্থানে কয়েকটি বাঁশের খুঁটির সঙ্গে পুরনো টিন ও পলিথিন দিয়ে তৈরি করা হয়েছে থাকার ঘর। পলিথিনের নিচে মাটিতে প্লাস্টিকের বস্তা বিছিয়ে তৈরি হয়েছে ঘুমানোর জায়গা। তারই অদূরে রান্নার চুলা। একেবারে বসবাসের অযোগ্য। তারপরও এরই মধ্যে কোনোমতে টেনেটুনে জীবন পার করছেন তিনি।

সরিনা খাতুন জানান, তার বাবা শেখ আব্দুল হালিম শায়েস্তাগঞ্জ রেলওয়ে জংশনে চাকরি করতেন। সেই সুবাদে এখানে তাদের বসাবস। বাবা হারান ছোট বেলায়, মাও নেই। স্বামী নোয়াজ আলী মেকারও প্রায় ১২ বছর আগে মারা গেছেন। সেই সময় থেকে একেবারে অসহায় হয়ে পড়েছেন তিনি। মানুষের বাড়িতে কাজ করে দুই সন্তানকে বড় করেছেন। এক ছেলে-এক মেয়ে, দুজনেরই সংসার হয়েছে। এখন আর মানুষের বাড়িতে কাজ করতে পারেন না। তাই জীবিকা নির্বাহে বেছে নিয়েছেন লাকড়ি বিক্রির পেশা।

রঘুনন্দন পাহাড়ি এলাকা থেকে পরিত্যক্ত লাকড়ি সংগ্রহ করেন সরিনা। নিজ ঝুপড়ি ঘরের সামনে বসে সামান্য লাভে সেই লাকড়ি বিক্রি করে দৈনিক একশ’ থেকে দুইশ’ টাকা আয় হয়। তাতেই চলে সংসার। লাকড়ি বিক্রি না হলে বাজার হয় না, চুলায় জ্বলে না আগুন। অনাহারেই থাকতে হয়। কোনো সরকারি সহায়তাও পান না তিনি। পুরনো টিনের জোড়াতালি আর পলিথিনে তৈরি ঝুপড়ি ঘরে রোদ-বৃষ্টির সঙ্গে লড়াই করে বসবাস করতে হয় প্রতিনিয়তছেলের কথা জিজ্ঞেস করলে সে ব্যাপারে কথা বলতে চাননি তিনি। বিয়ের পর নিজের সংসার নিয়েই চলা কঠিন হয়ে পড়েছে ছেলের। তাকে কীভাবে দেখবে? এটুকু বলেই থেমে যান তিনি। শায়েস্তাগঞ্জ পৌর এলাকার ভোটার হলেও বিধবা ভাতার কার্ড তার ভাগ্যে জোটেনি।

বর্তমান সরকারের কাছে তার চাওয়া- বসবাসের জন্য একটি ছোট ঘর আর ব্যবসার জন্য কিছু পুঁজি। এছাড়া বিধবা ভাতার একটি কার্ডও চান তিনি। এসব পেলে বাকি জীবনটা হয়তো কিছুটা ভালোভাবে কাটাতে পারবেন এই সংগ্রামী নারী।

শায়েস্তাগঞ্জ পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর মো. মাসুক মিয়া বলেন, “আবেদন করলে তাকে একটি বিধবা ভাতার কার্ড সংগ্রহ করে দেওয়ার চেষ্টা করব।”
উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান আ স ম আফজল আলী বলেন, “আমি নিঃস্বার্থভাবে তৃণমূল মানুষের কল্যাণে কাজ করে আসছি। এজন্য লোকজন ভোট দিয়ে আমাকে ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত করেছিল। বর্তমানে দায়িত্বে না থাকলেও ঘরে বসে নেই। তৃণমূল মানুষের পাশে আছি। এখানে অসহায় সরিনা খাতুনের কষ্টের কথা জেনেছি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মহোদয়ের সঙ্গে কথা বলে দ্রুত তার জন্য কিছু একটা করতে চাই।”

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

আপডেট সময় ০২:২২:৪১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১২ অগাস্ট ২০২৫
৪ বার পড়া হয়েছে

সরিনা খাতুন যেন ‘আসমানী’রই প্রতিচ্ছবি

আপডেট সময় ০২:২২:৪১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১২ অগাস্ট ২০২৫

কবিতার সেই আসমানীদের হয়তো রসুলপুরে গিয়ে বাস্তবে দেখা সম্ভব হবে না। তবে ছেঁড়া পলিথিনে মোড়ানো ঝুপড়ি ঘরে বসবাস করা সরিনা খাতুনকে (৫০) দেখলে মনে হবে যেন আসমানীরই আরেক প্রতিচ্ছবি।

হবিগঞ্জ জেলার শায়েস্তাগঞ্জ রেলওয়ে জংশনের গুদাম মাঠে পরিত্যক্ত রেলের জমিতে বসবাস করেন সরিনা খাতুন। তার ঘরের সামনে স্তুপ করে রাখা লাকড়ি (জ্বালানি কাঠ)। এই লাকড়ি বিক্রির টাকাতেই জীবন চলে তার।

রাস্তার পাশে খাল লাগোয়া একটি স্থানে কয়েকটি বাঁশের খুঁটির সঙ্গে পুরনো টিন ও পলিথিন দিয়ে তৈরি করা হয়েছে থাকার ঘর। পলিথিনের নিচে মাটিতে প্লাস্টিকের বস্তা বিছিয়ে তৈরি হয়েছে ঘুমানোর জায়গা। তারই অদূরে রান্নার চুলা। একেবারে বসবাসের অযোগ্য। তারপরও এরই মধ্যে কোনোমতে টেনেটুনে জীবন পার করছেন তিনি।

সরিনা খাতুন জানান, তার বাবা শেখ আব্দুল হালিম শায়েস্তাগঞ্জ রেলওয়ে জংশনে চাকরি করতেন। সেই সুবাদে এখানে তাদের বসাবস। বাবা হারান ছোট বেলায়, মাও নেই। স্বামী নোয়াজ আলী মেকারও প্রায় ১২ বছর আগে মারা গেছেন। সেই সময় থেকে একেবারে অসহায় হয়ে পড়েছেন তিনি। মানুষের বাড়িতে কাজ করে দুই সন্তানকে বড় করেছেন। এক ছেলে-এক মেয়ে, দুজনেরই সংসার হয়েছে। এখন আর মানুষের বাড়িতে কাজ করতে পারেন না। তাই জীবিকা নির্বাহে বেছে নিয়েছেন লাকড়ি বিক্রির পেশা।

রঘুনন্দন পাহাড়ি এলাকা থেকে পরিত্যক্ত লাকড়ি সংগ্রহ করেন সরিনা। নিজ ঝুপড়ি ঘরের সামনে বসে সামান্য লাভে সেই লাকড়ি বিক্রি করে দৈনিক একশ’ থেকে দুইশ’ টাকা আয় হয়। তাতেই চলে সংসার। লাকড়ি বিক্রি না হলে বাজার হয় না, চুলায় জ্বলে না আগুন। অনাহারেই থাকতে হয়। কোনো সরকারি সহায়তাও পান না তিনি। পুরনো টিনের জোড়াতালি আর পলিথিনে তৈরি ঝুপড়ি ঘরে রোদ-বৃষ্টির সঙ্গে লড়াই করে বসবাস করতে হয় প্রতিনিয়তছেলের কথা জিজ্ঞেস করলে সে ব্যাপারে কথা বলতে চাননি তিনি। বিয়ের পর নিজের সংসার নিয়েই চলা কঠিন হয়ে পড়েছে ছেলের। তাকে কীভাবে দেখবে? এটুকু বলেই থেমে যান তিনি। শায়েস্তাগঞ্জ পৌর এলাকার ভোটার হলেও বিধবা ভাতার কার্ড তার ভাগ্যে জোটেনি।

বর্তমান সরকারের কাছে তার চাওয়া- বসবাসের জন্য একটি ছোট ঘর আর ব্যবসার জন্য কিছু পুঁজি। এছাড়া বিধবা ভাতার একটি কার্ডও চান তিনি। এসব পেলে বাকি জীবনটা হয়তো কিছুটা ভালোভাবে কাটাতে পারবেন এই সংগ্রামী নারী।

শায়েস্তাগঞ্জ পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর মো. মাসুক মিয়া বলেন, “আবেদন করলে তাকে একটি বিধবা ভাতার কার্ড সংগ্রহ করে দেওয়ার চেষ্টা করব।”
উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান আ স ম আফজল আলী বলেন, “আমি নিঃস্বার্থভাবে তৃণমূল মানুষের কল্যাণে কাজ করে আসছি। এজন্য লোকজন ভোট দিয়ে আমাকে ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত করেছিল। বর্তমানে দায়িত্বে না থাকলেও ঘরে বসে নেই। তৃণমূল মানুষের পাশে আছি। এখানে অসহায় সরিনা খাতুনের কষ্টের কথা জেনেছি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মহোদয়ের সঙ্গে কথা বলে দ্রুত তার জন্য কিছু একটা করতে চাই।”