আবারও প্রকৃতিপ্রেমীদের হাতছানি দিচ্ছে চুনারুঘাটের শাপলা বিল
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক অপার সম্ভার চুনারুঘাট উপজেলা। এখানকার দেউন্দি চা-বাগানের বিস্তীর্ণ বিলজুড়ে এখন লাল শাপলার অপরূপ সমারোহ। চারপাশে চায়ের সতেজ গন্ধ, টলটলে পানিতে লাল শাপলার ছড়ানো হাসি—সব মিলিয়ে যেন প্রকৃতির ক্যানভাসে আঁকা এক জীবন্ত ছবি।
শীতের শিশিরভেজা সকালে, প্রভাতের প্রথম সূর্যালোকে যখন বিলজুড়ে শাপলা ফুটে ওঠে, তখন মনে হয় প্রকৃতি নিজেই রঙিন গালিচা। প্রায় পাঁচ একর জায়গাজুড়ে হাঁটু পানিতে ভাসমান এই শাপলাগুলো মনভরে উপভোগ করতে ছুটে আসছেন প্রকৃতিপ্রেমীরা।
চুনারুঘাটে একাধিক শাপলা বিল থাকলেও, দেউন্দি চা-বাগানের বিল ইতোমধ্যেই নেটদুনিয়ায় ভাইরাল। প্রতিদিন সকাল থেকেই এখানে ভিড় জমে নানা বয়সী মানুষের। কেউ ছবি তুলছেন, কেউ রিলস বা টিকটক বানাচ্ছেন, আবার কেউ নাটক ও গানের শুটিং করছেন। তরুণ-তরুণীরা বিলের পাড়ে সবুজ ঘাসে বসে গিটার হাতে গান গেয়ে মাতিয়ে তুলছেন। পাশের গাছের মগডালে পাখিরা কিচিরমিচির করছে, যেন তারাও আনন্দে সুর মিলিয়েছে।
শব্দকথা ট্যাুরিজমের ভ্রমণগাইড তাইজুল ইসলাম বলেন, “চুনারুঘাট প্রকৃতিগতভাবেই অত্যন্ত মনোরম। এখানে রয়েছে সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান, রেমা-কালেঙ্গা, সতেরোটি চা-বাগান, পাহাড়ি টিলা ও উঁচু-নিচু দৃষ্টিনন্দন ভূপ্রকৃতি। প্রতিদিনই পর্যটকদের আগমন ঘটে এসব স্থানে। অনেকেই আবার আধ্যাত্মিক পুরুষ সিপাহসালার নাসির উদ্দীন (রঃ)-এর মাজার জিয়ারত করতেও আসেন। প্রশাসনিকভাবে চুনারুঘাটকে আরও যত্ন নিলে এই অঞ্চলের পর্যটন শিল্প থেকে বিপুল রাজস্ব অর্জনের পাশাপাশি বেকার তরুণদের কর্মসংস্থানও সম্ভব।”
শাপলা বিলে ঘুরতে আসা বৃন্দাবন সরকারি কলেজের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. সুভাষ চন্দ্র দেব বলেন, “চুনারুঘাটের সবুজ চা-বাগানের মাঝখানে টলটলে পানির বিলে ফুটে থাকা হাজারো লাল শাপলা যেন প্রকৃতির বুকে বিছানো লাল মখমলের চাদর। সূর্যের প্রথম কিরণ যখন পানিতে পড়ে, তখন একসাথে ফুটে ওঠা শাপলাগুলোর দৃশ্য অপার্থিব সৌন্দর্যের সৃষ্টি করে।”
শাপলার রূপে মুগ্ধ হয়ে ঘুরতে আসা আল আমিন বলেন, যেকোন পর্যটকদের জন্য শাপলা বিল আকর্ষণীয় একটি স্থান।এখানে ঘুরতে না আসলে বুঝতেই পারতাম না যে অত্যন্ত সুন্দর একটি স্থান চুনারুঘাট উপজেলা তথা শাপলার বিল। যে কোন পর্যটকমহল এখানে আসলে প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবে।পারে দূরের পাহাড়, সোনালি আকাশ আর পাখির কিচির মিচির ডাক, এ যেন পৃথিবীর অপূর্ব এক টুকরো সৌন্দর্য রাজ্য।
তিনি আরও বলেন, “লাল শাপলার বিল কেবল প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের উৎস নয়, এটি বাংলাদেশের জীববৈচিত্র্যের গুরুত্বপূর্ণ অংশও বটে। তাই এর সংরক্ষণ এখন সময়ের দাবি। যদি আমরা এখনই পদক্ষেপ না নিই, তবে অদূর ভবিষ্যতে এই বিলগুলো বিলীন হয়ে যেতে পারে। দেউন্দি শাপলা বিলকে ‘পরিবেশ সংরক্ষিত এলাকা’ ঘোষণা করে পরিবেশবান্ধব পর্যটন পরিচালনা করা উচিত। একই সঙ্গে স্থানীয়ভাবে বিল পরিষ্কার, সংরক্ষণ ও স্কুল পর্যায়ে প্রকৃতি-পাঠের উদ্যোগ নিলে এই সৌন্দর্য ভবিষ্যৎ প্রজন্মও উপভোগ করতে পারবে।”
প্রতিবছরের মতো এবারও প্রকৃতি উদার হাতে রাঙিয়েছে দেউন্দি চা-বাগানের এই শাপলা বিল। প্রকৃতিপ্রেমীরা তাই আবারও ফিরে যাচ্ছেন মুগ্ধতায় ভরা এই লাল স্বপ্নলোকের আহ্বানে।
এছাড়াও একাধিক পর্যটক বলেন, শাপলার অপরূপ সৌন্দর্য্য উপভোগ করার মত,তবে অনেকেই এ সৌন্দর্য কে টেনেটুনে শাপলা সংগ্রহ করতে গিয়ে নষ্ট করে ফেলছে।কারও দ্বারা যেনও এ সৌন্দর্য্য নষ্ট না হয় আপনাদের লক্ষ রাখতে হবে।
এ বিলসহ গভীর অরণ্যেে নতুন ব্রিজ থেকে চুনারুঘাট বাজার হয়ে, আবার বিশ্বরোড ধরে শানখলা দেওন্দি,লালচাঁন পানছড়ি রিসোর্ট হযে সিএনজি অথবা লেগুনা,অটোরিকশা করে যেতে পারেন শাপলার বিল।সেক্ষেত্রে ভাড়া পরবে মাত্র ৬০-১০০ টাকা টাকা এবং রিজার্ভে সিএনজি ভাড়া ১৫০-২০০ টাকা এর মধ্যে সেরে ফেলতে পারবেন।
নিরাপত্তা ও সংরক্ষণ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নীলিমা রায়হানা জানান, আপনার মাধ্যমে শাপলার বিষয়টি অবগত হলাম। অবশ্যই নিরাপত্তা ও সংরক্ষণ করার চেষ্টা করবো।

























