শিল্প কারখানার বিষাক্ত বর্জ্যে অস্তিত্ব সংকটে সুতাং নদী, হুমকিতে পরিবেশ
লাখাই উপজেলাটি কৃষি ও মৎস ভান্ডারে খ্যাত একটি উপজেলা নামে পরিচিত। এ উপজেলার অর্থনীতি মুলত কৃষি ও মৎস নির্ভর। মোট জনসংখ্যার প্রায় ৮০ শতাংশ লোক গ্রামাঞ্চলে বাস করে এবং প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে মৎস ও কৃষিকাজের সংঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। শুধু মানুষ নয়,সমস্ত গবাদি পশুর খাদ্য আসে কৃষি থেকে। ধান ও মাছ উৎপাদনে এ উপজেলার চাহিদা মিটিয়ে অন্যান্য জেলার চাহিদা মিটাতে সক্ষমতা রয়েছে এ উপজেলার কৃষক ও জেলেদের। এ সব অবদান রেখে আসছে উপজেলার আপামর জনগণ কিন্ত মাধবপুর উপজেলার অলিপুরে বিশাল এলাকাজুড়ে গড়ে উঠেছে অনেক বৃহৎ ও মাঝারি শিল্প কলকারখানা। আর এই সব শিল্প-কারখানা থেকে নির্গত অপরিশোধিত বিষাক্ত শিল্প বর্জ্যে মারাত্মক দূষণের শিকার হচ্ছে সুতাং নদীটি। শুধু নদীই নয় নদীর সাথে যুক্ত সকল খাল বিল এবং জলাশয়। নদী ও জলাশয়গুলো স্থানীয় মানুষ ও পরিবেশের জন্য আশীর্বাদ হওয়ার কথা থাকলেও উল্টো অভিশাপে পরিণত হয়েছে। বিপুল পরিমাণ বর্জ্য, বিশেষ করে শিল্প কারখানার ক্ষতিকর শিল্প বর্জ্য একসময়ের স্রোতস্বিনী নদীটিকে গত এক দশকে পরিণত করেছে বিষের নহরে। ধ্বংস হয়ে গেছে এর প্রাকৃতিক পরিবেশ, উজাড় হয়ে গেছে জলজ জীববৈচিত্য। এ ব্যাপারে লাখাই উপজেলাবাসী কী করি নাই? প্রতিবাদ, সমাবেশ, মানববন্ধন, প্রতিকার চেয়ে স্থানীয় এমপি, জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের কাছে মৌখিক ও লিখিত অভিযোগ দায়ের। আর কত? কিন্তু কিছুই হয়নি।
স্থানীয় লোকজন সুতাংয়ের দুর্গন্ধময় ও দূষিত পানির সঙ্গে বসবাস করছেন। এর প্রতিক্রিয়ায় অসংখ্য মানুষ মারাত্মক চর্মরোগ, শ্বাসকষ্টসহ জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। গবাদি পশুও এই পানি পান করলে ডায়রীয়া রোগে আক্রান্ত হয়। আশঙ্কাজনক হারে কমে গেছে ধানসহ অন্যান্য ফসল উৎপাদন। দেশীয় প্রজাতির মাছ হারিয়ে নদী, খাল-বিলগুলো প্রায় মৎস্যশূন্য হয়ে পড়েছে। জানা যায়, ২০১৪ সালে কৃষি কাজে সেচ ব্যবস্থার নামে শৈলজুরা নামের খালটি পুনর্খনন করে কয়েকটি কারখানার সঙ্গে যুক্ত করে দেয়া হয়। ফলে এসব কারখানার বর্জ্য সহজেই খালের মাধ্যমে সুতাং নদীতে গড়াচ্ছে। ফলে ক্রমেই শিল্পবর্জ্য দূষণে সুতাং নদীর পানি অসহনীয় দুর্গন্ধ ও কালো কুচকুচে হয়ে পড়েছে। বর্ষাকালে দূষিত পানি প্রবাহিত হয়ে চলে গেলেও শুষ্ক মৌসুমে পানি এলাকাতেই আটকে থাকে। তাই নদীর পাড়ের বাসিন্দাররা পড়েছেন চরম বিপাকে।
এ বিষয়ে উপজেলার করাব গ্রামের ভিংরাজ মিয়ার বলেন, এক সময় আমরা ও আমাদের বাপ চাচারা সুতাং নদী থেকে পাওয়ার পাম্প মেশিন দিয়ে আমাদের বোরোধান চাষাবাদের জন্য সুতাং নদী থেকে পানি সেচ দিয়ে চাষাবাদ করে বোরোধান উৎপাদন করা হতো কিন্তু বর্তমানে সুতাং নদীর দূষিত বর্জ্যের পানির কারনে করতে পারছি না চাষাবাদ। বেকিটেকা গ্রামের জেলেরা জানিয়েছেন এই সুতাং নদী থেকে মাছ আহরণ করে আমরা জীবিকা নির্বাহ করতাম কিন্তু বর্তমানে দূষিত পানির কারনে নেই কোন প্রকার মাছ। আমরা অভাব অনটনের মাঝে খুবই কষ্টে দিন কাটাচ্ছি। এই ভয়াবহ নদী দূষণ ও এর ক্ষতিকর প্রভাব থেকে দীর্ঘদিনেও মুক্তি না পেয়ে নদী তীরের বাসিন্দারা এখন হতাশ।
এ ব্যাপারে পরিবেশ অধিদফতর সিলেট বিভাগীয় অফিসের পরিচালক ফেদৌস আনোয়ার বলেন, ওখানে ইটিপি স্থাপন করা আছে, পুর্বে শিল্প মালিকরা আংশিক ছাড়ছে এখন আর ছাড়েনা যদি ছাড়ে তাহলে ওখানে আমাদের লোক আছে। এখন আমরা তাদের মনিটরিং এর আওতায় এনেছি। আর আমরা নদী দুষণরোধে একটা পরিকল্পনা গ্রহণ করছি।