ঢাকা ০১:৫৭ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
Logo জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ও পাঁচ সদস্যের পদত্যাগ Logo ট্রাম্পের জয়ে সম্পর্কে বড় পরিবর্তন দেখছি না: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা Logo নবীগঞ্জে গাঁজা পাচারকালে ৫ কেজি গাঁজাসহ দুই যুবক গ্রেফতার Logo আজ শহীদ সাংবাদিক কামরুল হাসান চৌধুরী আলীমের ১৮তম মৃত্যুবার্ষিকী Logo মাধবপুরে জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস পালিত Logo নতুন ইসি গঠনে সার্চ কমিটিতে বিএনপির পাঁচ নাম Logo আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে জবানবন্দি দিলেন সাবেক আইজিপি মামুন Logo এবার ৩টি পর্বতারোহণে রেকর্ড গড়লেন পাবনার তৌকির Logo ‘উপযুক্ত সময়ে নির্বাচন হলে যে কোনো চ্যালেঞ্জ পূরণে সক্ষম জাতি’ : মির্জা ফখরুল Logo জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে হত্যার হুমকির প্রতিবাদে শায়েস্তাগঞ্জে মানববন্ধন

সিনেমার কৌশলে ফাঁদ পাতেন ব্যারিস্টার সুমনকে হত্যার হুমকিদাতা

হবিগঞ্জ প্রতিনিধি

হবিগঞ্জ-৪ (চুনারুঘাট-মাধবপুর) আসনের সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমনকে হত্যার হুমকিদাতা প্রতারক সোহাগ মিয়াকে (২৭) গ্রেফতার করেছে হবিগঞ্জ জেলা ও সিটিটিসি’র সমন্বয়ে গঠিত একদল পুলিশ।

মঙ্গলবার (৯ জুলই) দিবাগত রাতে সিলেট মেট্রোপলিটন এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃত সোহাগ মৌলভীবাজারের কুলাউড়া থানার মোবারকপুর গ্রামের মন্তাজ মিয়ার ছেলে।

বুধবার বিকেল সাড়ে ৪টায় হবিগঞ্জ পুলিশ সুপার কার্যালয়ে বিস্তারিত বিষয় তুলে ধরে প্রেস ব্রিফিং করেন পুলিশ সুপার মো. আক্তার হোসেন।

প্রেস বিফ্রিংয়ে তিনি জানান, গত ২৮ জুন সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমনকে মোবাইল ফোনে অজ্ঞাত স্থান থেকে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি জানায়, তার জীবনের ঝুঁকি আছে এবং এ সংক্রান্ত তার কাছে তথ্য আছে। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে চুনারুঘাট থানার একটি সাধারণ ডায়েরি হয়।

একই ঘটনায় সংসদ সদস্য নিজেই ঢাকার শেরে বাংলা নগর থানায় একটি জিডি করেন এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বক্তব্য দিয়ে তার প্রতিকার চান, যা ব্যাপক আকারে ভাইরাল হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে হবিগঞ্জ জেলা পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট ও সিটিটিসি ঢাকার সমন্বয়ে ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেটে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে মঙ্গলবার দিবাগত রাতে সিলেট মেট্রোপলিটন এলাকা থেকে সোহাগকে গ্রেফতার করা হয়।

পুলিশ সুপার জানান, জিজ্ঞাসাবাদে সোহাগ জানায়, সে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছে। পরবর্তীতে ২০১১ সালে কাজের জন্য বিদেশ যায় এবং ৬-৭ বছর অবস্থান করে ২০১৮ সালে দেশে আসে। দেশে আসার পর কতিপয় দালালের সঙ্গে যোগাযোগ করে তার এলাকার ১২ জন লোককে পর্তুগাল পাঠাবে বলে প্রতিজনের কাছ থেকে ৮-১০ লাখ করে টাকা নিয়ে দালালকে প্রদান করেও তাদের বিদেশ পাঠাতে ব্যর্থ হয় সোহেল।

পরবর্তীতে বিদেশ গমনেচ্ছুকের চাপে সোহাগ তাদের টাকা দিতে না পেরে পালিয়ে ভারতে চলে যায় এবং সেখানে এক বছর অবস্থান করে দেশে ফেরত আসে। তারপর সে আর্থিক অভাব-অনটনের দূর করতে হ্যাকার হওয়ার চেষ্টা করে এবং ইন্টারনেট হতে হ্যাকিংয়ের বিষয়ে ধারণা নিতে গিয়ে ডার্ক ওয়েব’র সঙ্গে পরিচিত হয়।

এরই ধারাবাহিকতায় সে ইউএসএ এর ভিপিএন অ্যাপস ডাউনলোড করে এবং এর মাধ্যমে ডার্ক ওয়েব সাইট ব্যবহার করে হিটম্যান নেটওয়ার্ক লিংকসহ বিভিন্ন সাইটে প্রবেশ করে। হিটম্যান নেটওয়ার্ক সাইটে প্রবেশ করার পর সে ভারতীয় একটি গল্প পড়ে। যাতে একজন প্রভাবশালী ব্যক্তিকে তার জীবনের হুমকি আছে মর্মে তথ্য দিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ করার বিষয়টি তার নজরে আসে।

কিছুদিন যাবৎ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার সুমন তার জীবনের ওপর হুমকি আছে মর্মে বিভিন্ন ভিডিওতে প্রকাশ করে। যা সোহাগ মিয়া দেখতে পেয়ে সে নিজে নিজে একটি পরিকল্পনা করে যে, হিটম্যান নেটওয়ার্ক সাইটে উল্লেখিত গল্পের আঙ্গিকে ব্যারিস্টার সুমনের কাছ থেকে মোটা অংকের অর্থ আত্মসাৎ করবে।

কিন্তু ব্যারিস্টার সুমন কিংবা তার ব্যক্তিগত সহকারীর মোবাইল নম্বর তার কাছে না থাকায় সে স্থানীয় চুনারুঘাট থানার অফিসার ইনচার্জের সরকারি মোবাইল নম্বরে হোয়াটস অ্যাপে যোগাযোগ করে এবং সে ব্যারিস্টার সুমনের সঙ্গে কথা বলিয়ে দেওয়ার জন্য অফিসার ইনচার্জকে অনুরোধ করে, যোগ করেন পুলিশ সুপার মো. আক্তার হোসেন।

তিনি আরো জানান, তারই ধারাবাহিকতায় অফিসার ইনচার্জের মাধ্যমে ব্যারিস্টার সুমনের সঙ্গে সে কথা বলে এবং ব্যারিস্টার সুমনকে সে জানায়, ৪-৫ জনের একটি দল তাকে হত্যা করার জন্য কিলিং মিশনে নেমেছে। তার উদ্দেশ্য ছিল ব্যারিস্টার সুমন নিজে কিংবা তার ব্যক্তিগত সহকারীর মাধ্যমে কিলিং মিশনের সদস্যদের সম্পর্কে তার কাছে তথ্য চাইবে। তখন সে তথ্য প্রদানের বাহানা করে ব্যারিস্টার সুমনের কাছে মোটা অংকের অর্থ দাবি করবে।

পুলিশ সুপার জানান, কিন্তু ব্যারিস্টার সুমন বিষয়টি জানানোর পরদিন তিনি এই বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লাইভে এসে এর প্রতিকার চান ও থানায় জিডি করেন এবং ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বলেন মর্মে সে জানতে পারে। তখন সে ভয় পেয়ে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম চলে যায়। যখন সে বুঝতে পারে তাকে কেউ ট্র্যাক করছে তখন সে চট্টগ্রাম থেকে সিলেটে চলে আসে।

সোহেলের বিরুদ্ধে কয়েকটি প্রতারণার মামলাও রয়েছে। সোহাগ অনলাইন জুয়ায় আসক্ত বলে জানিয়েছেন পুলিশ সুপার মো. আক্তার হোসেন।

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

আপডেট সময় ০৬:৫৭:০২ অপরাহ্ন, বুধবার, ১০ জুলাই ২০২৪
৫০ বার পড়া হয়েছে

সিনেমার কৌশলে ফাঁদ পাতেন ব্যারিস্টার সুমনকে হত্যার হুমকিদাতা

আপডেট সময় ০৬:৫৭:০২ অপরাহ্ন, বুধবার, ১০ জুলাই ২০২৪

হবিগঞ্জ-৪ (চুনারুঘাট-মাধবপুর) আসনের সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমনকে হত্যার হুমকিদাতা প্রতারক সোহাগ মিয়াকে (২৭) গ্রেফতার করেছে হবিগঞ্জ জেলা ও সিটিটিসি’র সমন্বয়ে গঠিত একদল পুলিশ।

মঙ্গলবার (৯ জুলই) দিবাগত রাতে সিলেট মেট্রোপলিটন এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃত সোহাগ মৌলভীবাজারের কুলাউড়া থানার মোবারকপুর গ্রামের মন্তাজ মিয়ার ছেলে।

বুধবার বিকেল সাড়ে ৪টায় হবিগঞ্জ পুলিশ সুপার কার্যালয়ে বিস্তারিত বিষয় তুলে ধরে প্রেস ব্রিফিং করেন পুলিশ সুপার মো. আক্তার হোসেন।

প্রেস বিফ্রিংয়ে তিনি জানান, গত ২৮ জুন সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমনকে মোবাইল ফোনে অজ্ঞাত স্থান থেকে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি জানায়, তার জীবনের ঝুঁকি আছে এবং এ সংক্রান্ত তার কাছে তথ্য আছে। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে চুনারুঘাট থানার একটি সাধারণ ডায়েরি হয়।

একই ঘটনায় সংসদ সদস্য নিজেই ঢাকার শেরে বাংলা নগর থানায় একটি জিডি করেন এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বক্তব্য দিয়ে তার প্রতিকার চান, যা ব্যাপক আকারে ভাইরাল হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে হবিগঞ্জ জেলা পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট ও সিটিটিসি ঢাকার সমন্বয়ে ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেটে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে মঙ্গলবার দিবাগত রাতে সিলেট মেট্রোপলিটন এলাকা থেকে সোহাগকে গ্রেফতার করা হয়।

পুলিশ সুপার জানান, জিজ্ঞাসাবাদে সোহাগ জানায়, সে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছে। পরবর্তীতে ২০১১ সালে কাজের জন্য বিদেশ যায় এবং ৬-৭ বছর অবস্থান করে ২০১৮ সালে দেশে আসে। দেশে আসার পর কতিপয় দালালের সঙ্গে যোগাযোগ করে তার এলাকার ১২ জন লোককে পর্তুগাল পাঠাবে বলে প্রতিজনের কাছ থেকে ৮-১০ লাখ করে টাকা নিয়ে দালালকে প্রদান করেও তাদের বিদেশ পাঠাতে ব্যর্থ হয় সোহেল।

পরবর্তীতে বিদেশ গমনেচ্ছুকের চাপে সোহাগ তাদের টাকা দিতে না পেরে পালিয়ে ভারতে চলে যায় এবং সেখানে এক বছর অবস্থান করে দেশে ফেরত আসে। তারপর সে আর্থিক অভাব-অনটনের দূর করতে হ্যাকার হওয়ার চেষ্টা করে এবং ইন্টারনেট হতে হ্যাকিংয়ের বিষয়ে ধারণা নিতে গিয়ে ডার্ক ওয়েব’র সঙ্গে পরিচিত হয়।

এরই ধারাবাহিকতায় সে ইউএসএ এর ভিপিএন অ্যাপস ডাউনলোড করে এবং এর মাধ্যমে ডার্ক ওয়েব সাইট ব্যবহার করে হিটম্যান নেটওয়ার্ক লিংকসহ বিভিন্ন সাইটে প্রবেশ করে। হিটম্যান নেটওয়ার্ক সাইটে প্রবেশ করার পর সে ভারতীয় একটি গল্প পড়ে। যাতে একজন প্রভাবশালী ব্যক্তিকে তার জীবনের হুমকি আছে মর্মে তথ্য দিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ করার বিষয়টি তার নজরে আসে।

কিছুদিন যাবৎ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার সুমন তার জীবনের ওপর হুমকি আছে মর্মে বিভিন্ন ভিডিওতে প্রকাশ করে। যা সোহাগ মিয়া দেখতে পেয়ে সে নিজে নিজে একটি পরিকল্পনা করে যে, হিটম্যান নেটওয়ার্ক সাইটে উল্লেখিত গল্পের আঙ্গিকে ব্যারিস্টার সুমনের কাছ থেকে মোটা অংকের অর্থ আত্মসাৎ করবে।

কিন্তু ব্যারিস্টার সুমন কিংবা তার ব্যক্তিগত সহকারীর মোবাইল নম্বর তার কাছে না থাকায় সে স্থানীয় চুনারুঘাট থানার অফিসার ইনচার্জের সরকারি মোবাইল নম্বরে হোয়াটস অ্যাপে যোগাযোগ করে এবং সে ব্যারিস্টার সুমনের সঙ্গে কথা বলিয়ে দেওয়ার জন্য অফিসার ইনচার্জকে অনুরোধ করে, যোগ করেন পুলিশ সুপার মো. আক্তার হোসেন।

তিনি আরো জানান, তারই ধারাবাহিকতায় অফিসার ইনচার্জের মাধ্যমে ব্যারিস্টার সুমনের সঙ্গে সে কথা বলে এবং ব্যারিস্টার সুমনকে সে জানায়, ৪-৫ জনের একটি দল তাকে হত্যা করার জন্য কিলিং মিশনে নেমেছে। তার উদ্দেশ্য ছিল ব্যারিস্টার সুমন নিজে কিংবা তার ব্যক্তিগত সহকারীর মাধ্যমে কিলিং মিশনের সদস্যদের সম্পর্কে তার কাছে তথ্য চাইবে। তখন সে তথ্য প্রদানের বাহানা করে ব্যারিস্টার সুমনের কাছে মোটা অংকের অর্থ দাবি করবে।

পুলিশ সুপার জানান, কিন্তু ব্যারিস্টার সুমন বিষয়টি জানানোর পরদিন তিনি এই বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লাইভে এসে এর প্রতিকার চান ও থানায় জিডি করেন এবং ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বলেন মর্মে সে জানতে পারে। তখন সে ভয় পেয়ে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম চলে যায়। যখন সে বুঝতে পারে তাকে কেউ ট্র্যাক করছে তখন সে চট্টগ্রাম থেকে সিলেটে চলে আসে।

সোহেলের বিরুদ্ধে কয়েকটি প্রতারণার মামলাও রয়েছে। সোহাগ অনলাইন জুয়ায় আসক্ত বলে জানিয়েছেন পুলিশ সুপার মো. আক্তার হোসেন।