ঢাকা ১২:৫২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৭ জুলাই ২০২৫, ২ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
Logo শায়েস্তাগঞ্জে উচ্ছেদ শতাধিক অবৈধ স্থাপনা, উদ্বোধন হলো পুলিশ বক্স Logo বিচার ও সাজা ছাড়াই ৩০ ধরে কারাগারে কনু মিয়া Logo মৌলভীবাজারের বাড়ির আঙ্গিনায় সবজি চাষের সময় দেখা মিললো গ্ৰেনেড Logo নবীগঞ্জে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে নির্মাণ শ্রমিকের মৃত্যু Logo নবীগঞ্জে সংঘর্ষের পাঁচ দিন পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় রিমনের মৃত্যু Logo শায়েস্তাগঞ্জে সেপটিক ট্যাংকে পড়ে দুইজনের মৃত্যু Logo নবীগঞ্জে গলায় ফাঁস দিয়ে যুবকের আত্মহত্যা Logo নবীগঞ্জে নিহতের ঘটনায় সাংবাদিক সহ ১৩৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা। Logo শায়েস্তাগঞ্জ স্টেশনে কিশোরী ধর্ষণ, ৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা Logo হবিগঞ্জে জেলায় এসএসসি পরীক্ষায় পাশের হার ৬৫.১৪ শতাংশ, ১০ বছরে চরম বিপর্যয়

হবিগঞ্জের সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে পাহাড়ে ৩ বাচ্চাসহ ঘুরছে ভালুক, পর্যটকদের সতর্কতা জারি

মাধবপুর(হবিগঞ্জ) প্রতিনিধি।

হবিগঞ্জের সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে এশিয়াটিক কালো প্রজাতির ভালুকের ছবি স্থানীয় এক ফটোগ্রাফারের ক্যামেরায় ধরা পড়ার পর এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। এ ঘটনায় স্থানীয় বন বিভাগ পার্শ্ববর্তী তেলমাছড়া ও সালটিলা পাহাড়ে সাধারণ মানুষকে নির্বিঘ্নে প্রবেশে সতর্কতা জারি করেছে।

জানা গেছে, মাধবপুরে তেলমাছড়া বনটি প্রায় ১৭০০ একরের একটি বন্যপ্রাণীর অভয়াশ্রম। স্থানীয় ওই বনের পাহাড়িরা লাকড়ি বা কাঠ সংগ্রহ করতে গিয়ে অনেকে ভালুকের চলাফেরা প্রত্যক্ষ করেছেন। ভালুকের সঙ্গে বাচ্চা থাকলে এরা আক্রমণাত্মক প্রবণ হয়ে ওঠে। এজন্য স্থানীয় বন বিভাগ ওইসব পাহাড়ে সাধারণ মানুষকে নির্বিঘ্নে প্রবেশে সতর্কতা জারি করেছে। এছাড়া জোরদার করেছেন বনে তাদের টহল কার্যক্রম।

সম্প্রতি ওই পাহাড়ে একটি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলে ভালুকটি ভয়ে একটি ইউক্লিপটাস গাছে আশ্রয় দিলে সেই গাছে ভালুকের পায়ের আঁচড়ের চিহ্ন দৃষ্টিগোচর হয়েছে। কালবেলার প্রতিবেদকের কাছে গাছে ভালুকের পায়ের আঁচড়ের চিহ্নের কয়েকটি ছবিও রয়েছে।

তেলমাছড়া বনের বনরক্ষক সাদেকুর রহমান জানান, বাচ্চাসহ ভালুক তেলমাছড়া ও সালটিলায় বিচরণ করছে। আমরা খুব সতর্কতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছি। কখনো কখনো এসব সাতছড়িতেও ফেরত যাচ্ছে।

এ বিষয়ে তেলমাছড়ার বিট কর্মকর্তা মেহেদী হাসান জানান, অনেক পাহাড়ি লোক লাকড়ি সংগ্রহ করতে গিয়ে বাচ্চাসহ ভালুকটিকে দেখেছে। সম্প্রতি আমরা টুরিস্টদের পাহাড়ে প্রবেশ করতে সাবধানতা অবলম্বন করতে পরামর্শ দিচ্ছি। এছাড়া আমাদের টহল কার্যক্রমকেও জোরদার করেছি।

হবিগঞ্জের স্বেচ্ছাসেবী বন্যপ্রাণী সংগঠন পাখি প্রেমিক সোসাইটির যুগ্ম আহ্বায়ক বিশ্বজিৎ পাল বলেন, ইদানীং ওইসব এলাকায় ভালুকসহ বন্যপ্রাণীদের পানি সংকট দেখা দিয়েছে। ভালুকের নিরাপত্তা ও বন-জঙ্গলের পরিবেশ সুনিশ্চিত করতে আমাদের এলাকার বন ও পরিবেশ উপদেষ্টা রেজওয়ানা হাসানসহ বন বিভাগের জোরালো পদক্ষেপ কামনা করছি।

বাংলাদেশ বন অধিদপ্তরের বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা এবং তরুণ বন্যপ্রাণী গবেষক জোহরা মিলা জানান, উপমহাদেশে ভালুকের ৪ প্রজাতি ছিল। এর মধ্যে ৩টি প্রজাতি বাংলাদেশে পাওয়া যেত। তবে একটি প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ায় বর্তমানে ভালুকের যে দুটি প্রজাতির দেখা মেলে, সে দুটিই মহাবিপন্ন। এশিয়ান কালো ভালুক (Asian black bear) এর মধ্যে একটি।

তিনি বলেন, এই ভালুকের বুকে ইংরেজি ‘ভি (V)’ বর্ণের মতো সাদা দাগ থাকে যা দেখতে অনেকটা অর্ধেক চাঁদের আকৃতির মতো লাগে। এ কারণে ভালুকটি চাঁদ ভালুক নামেও পরিচিত। ভালুকের এই প্রজাতিটি মাংসভুক গোত্রের হলেও কীটপতঙ্গ, ফলমূল ও মধু খায়। মা ও শাবক ছাড়া বাকি সব ভালুকই একা চলাফেরা করে, খাবারের খোঁজে দিন-রাত সমানভাবে বনময় ঘুরে বেড়ায়। গাছে চড়ার ব্যাপারেও এরা ওস্তাদ। এই ভালুক সাধারণত মানুষকে আক্রমণ করে না। তবে দুই পায়ে দাঁড়িয়ে শিকারি বা শত্রুকে অনেক সময় ভয় দেখায়।

মাধবপুরের তেলমাছড়ার বনে এশীয় ভালুকের উপস্থিতিকে সুখবর বলে বর্ণনা করেন জোহরা মিলা। তিনি বলেন, এক সময় দেশের পার্বত্য অঞ্চল বিশেষ করে সিলেট-চট্টগ্রামের মিশ্র চিরসবুজ পাহাড়ি বনের গহিন অরণ্যে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ভালুকের বাস ছিল। কিন্তু বাসস্থান ধ্বংস, খাদ্যের অভাব, বনে অনুপ্রবেশ ও শিকার এবং পাচারের কারণে প্রাণীটি বিলুপ্ত হতে বসেছে। যদিও গহিন বনে কিছু ভালুক এখনো টিকে আছে। তবে সেটিও অস্তিত্বের সঙ্গে লড়াই করছে। বাংলাদেশের ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনের তফসিল-১ অনুযায়ী এ প্রজাতিটি সংরক্ষিত। তাই এটি শিকার, হত্যা বা এর কোনো ক্ষতি করা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ।

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

আপডেট সময় ০৯:২৯:৩৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫
৪২ বার পড়া হয়েছে

হবিগঞ্জের সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে পাহাড়ে ৩ বাচ্চাসহ ঘুরছে ভালুক, পর্যটকদের সতর্কতা জারি

আপডেট সময় ০৯:২৯:৩৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫

হবিগঞ্জের সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে এশিয়াটিক কালো প্রজাতির ভালুকের ছবি স্থানীয় এক ফটোগ্রাফারের ক্যামেরায় ধরা পড়ার পর এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। এ ঘটনায় স্থানীয় বন বিভাগ পার্শ্ববর্তী তেলমাছড়া ও সালটিলা পাহাড়ে সাধারণ মানুষকে নির্বিঘ্নে প্রবেশে সতর্কতা জারি করেছে।

জানা গেছে, মাধবপুরে তেলমাছড়া বনটি প্রায় ১৭০০ একরের একটি বন্যপ্রাণীর অভয়াশ্রম। স্থানীয় ওই বনের পাহাড়িরা লাকড়ি বা কাঠ সংগ্রহ করতে গিয়ে অনেকে ভালুকের চলাফেরা প্রত্যক্ষ করেছেন। ভালুকের সঙ্গে বাচ্চা থাকলে এরা আক্রমণাত্মক প্রবণ হয়ে ওঠে। এজন্য স্থানীয় বন বিভাগ ওইসব পাহাড়ে সাধারণ মানুষকে নির্বিঘ্নে প্রবেশে সতর্কতা জারি করেছে। এছাড়া জোরদার করেছেন বনে তাদের টহল কার্যক্রম।

সম্প্রতি ওই পাহাড়ে একটি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলে ভালুকটি ভয়ে একটি ইউক্লিপটাস গাছে আশ্রয় দিলে সেই গাছে ভালুকের পায়ের আঁচড়ের চিহ্ন দৃষ্টিগোচর হয়েছে। কালবেলার প্রতিবেদকের কাছে গাছে ভালুকের পায়ের আঁচড়ের চিহ্নের কয়েকটি ছবিও রয়েছে।

তেলমাছড়া বনের বনরক্ষক সাদেকুর রহমান জানান, বাচ্চাসহ ভালুক তেলমাছড়া ও সালটিলায় বিচরণ করছে। আমরা খুব সতর্কতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছি। কখনো কখনো এসব সাতছড়িতেও ফেরত যাচ্ছে।

এ বিষয়ে তেলমাছড়ার বিট কর্মকর্তা মেহেদী হাসান জানান, অনেক পাহাড়ি লোক লাকড়ি সংগ্রহ করতে গিয়ে বাচ্চাসহ ভালুকটিকে দেখেছে। সম্প্রতি আমরা টুরিস্টদের পাহাড়ে প্রবেশ করতে সাবধানতা অবলম্বন করতে পরামর্শ দিচ্ছি। এছাড়া আমাদের টহল কার্যক্রমকেও জোরদার করেছি।

হবিগঞ্জের স্বেচ্ছাসেবী বন্যপ্রাণী সংগঠন পাখি প্রেমিক সোসাইটির যুগ্ম আহ্বায়ক বিশ্বজিৎ পাল বলেন, ইদানীং ওইসব এলাকায় ভালুকসহ বন্যপ্রাণীদের পানি সংকট দেখা দিয়েছে। ভালুকের নিরাপত্তা ও বন-জঙ্গলের পরিবেশ সুনিশ্চিত করতে আমাদের এলাকার বন ও পরিবেশ উপদেষ্টা রেজওয়ানা হাসানসহ বন বিভাগের জোরালো পদক্ষেপ কামনা করছি।

বাংলাদেশ বন অধিদপ্তরের বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা এবং তরুণ বন্যপ্রাণী গবেষক জোহরা মিলা জানান, উপমহাদেশে ভালুকের ৪ প্রজাতি ছিল। এর মধ্যে ৩টি প্রজাতি বাংলাদেশে পাওয়া যেত। তবে একটি প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ায় বর্তমানে ভালুকের যে দুটি প্রজাতির দেখা মেলে, সে দুটিই মহাবিপন্ন। এশিয়ান কালো ভালুক (Asian black bear) এর মধ্যে একটি।

তিনি বলেন, এই ভালুকের বুকে ইংরেজি ‘ভি (V)’ বর্ণের মতো সাদা দাগ থাকে যা দেখতে অনেকটা অর্ধেক চাঁদের আকৃতির মতো লাগে। এ কারণে ভালুকটি চাঁদ ভালুক নামেও পরিচিত। ভালুকের এই প্রজাতিটি মাংসভুক গোত্রের হলেও কীটপতঙ্গ, ফলমূল ও মধু খায়। মা ও শাবক ছাড়া বাকি সব ভালুকই একা চলাফেরা করে, খাবারের খোঁজে দিন-রাত সমানভাবে বনময় ঘুরে বেড়ায়। গাছে চড়ার ব্যাপারেও এরা ওস্তাদ। এই ভালুক সাধারণত মানুষকে আক্রমণ করে না। তবে দুই পায়ে দাঁড়িয়ে শিকারি বা শত্রুকে অনেক সময় ভয় দেখায়।

মাধবপুরের তেলমাছড়ার বনে এশীয় ভালুকের উপস্থিতিকে সুখবর বলে বর্ণনা করেন জোহরা মিলা। তিনি বলেন, এক সময় দেশের পার্বত্য অঞ্চল বিশেষ করে সিলেট-চট্টগ্রামের মিশ্র চিরসবুজ পাহাড়ি বনের গহিন অরণ্যে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ভালুকের বাস ছিল। কিন্তু বাসস্থান ধ্বংস, খাদ্যের অভাব, বনে অনুপ্রবেশ ও শিকার এবং পাচারের কারণে প্রাণীটি বিলুপ্ত হতে বসেছে। যদিও গহিন বনে কিছু ভালুক এখনো টিকে আছে। তবে সেটিও অস্তিত্বের সঙ্গে লড়াই করছে। বাংলাদেশের ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনের তফসিল-১ অনুযায়ী এ প্রজাতিটি সংরক্ষিত। তাই এটি শিকার, হত্যা বা এর কোনো ক্ষতি করা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ।