ঢাকা ০৩:৫২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

জাতীয় কবির ৪৮তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ

ডেস্ক রিপোর্ট

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ৪৮তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ১৯৭৬ সালের এদিনে তৎকালীন পিজি হাসপাতালে (বর্তমানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়) ৭৭ বছর বয়সে শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। কাজী নজরুল ইসলাম বাংলা সাহিত্যে বিদ্রোহী কবি হিসেবে সমধিক পরিচিত হলেও তিনি ছিলেন একাধারে কবি, সংগীতজ্ঞ, ঔপন্যাসিক, গল্পকার, নাট্যকার, প্রাবন্ধিক, সাংবাদিক, চলচ্চিত্রকার, গায়ক ও অভিনেতা। তিনি বৈচিত্র্যময় অসংখ্য রাগ-রাগিনী সৃষ্টি করে বাংলা সঙ্গীত জগতকে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করেছেন।

কবির মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও পেশাজীবী সংগঠন বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদ সংলগ্ন কবির সমাধিতে পুস্পস্তবক অর্পণ, ফাতেহা পাঠ, দোয়া মাহফিল এবং আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। বাংলাদেশ বেতার, টেলিভিশন ও বিভিন্ন বেসরকারী টেলিভিশন চ্যানেল কবির মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচারের উদ্যোগ নিয়েছে।

১৩০৬ বঙ্গাব্দের ১১ জ্যৈষ্ঠ পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রামে কাজী নজরুল ইসলামের জন্ম। শৈশব থেকেই কঠিন দারিদ্র্য মোকাবিলা করে বড় হয়েছেন তিনি। তার ডাক নাম ছিল ‘দুখু মিয়া’। পিতার নাম কাজী ফকির আহমেদ ও মাতা জাহেদা খাতুন। কবি কাজী নজরুল ইসলাম সৃষ্টিশীল ছিলেন মাত্র ২৩ বছর। নজরুলের এই ২৩ বছরের সাহিত্যজীবনের সৃষ্টিকর্ম বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের অমূল্য সম্পদ। কবি নজরুলের কবিতা, গান ও সাহিত্যকর্ম বাংলা সাহিত্যে নবজাগরণ সৃষ্টি করেছিল। তাঁর কবিতা ও গান মানুষকে যুগে যুগে শোষণ–বঞ্চনা থেকে মুক্তির পথ দেখিয়ে চলেছে। অপর দিকে তিনি ছিলেন চিরপ্রেমের কবি। তিনি নিজেই বলেছেন ‘মম এক হাতে বাঁকা বাঁশের বাঁশরী আর হাতে রণ–তূর্য’।

তার কবিতা ও গান মানুষকে যুগে যুগে শোষণ ও বঞ্চনা থেকে মুক্তির পথ দেখিয়ে চলেছে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে তার গান ও কবিতা ছিল প্রেরণার উৎস। কাজী নজরুল ইসলাম নিজ গ্রামে মসজিদ ও স্কুলে অধ্যয়ন করেন। ছোটবেলায়ই কবিতা ও গান লেখা শুরু করেন। নিজে বিভিন্ন আসরে গান পরিবেশন করেন। দারিদ্র্যের কশাঘাতে জর্জরিত হয়েও কবি কখনো আপস করেননি। আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন শোষিত-বঞ্চিত মানুষের মুক্তির জন্য। মানবতার মুক্তির পাশাপাশি সাম্প্রদায়িকতা, ধর্মান্ধতা, কুসংস্কারের বিরুদ্ধে ছিলেন সোচ্চার। মুক্তবুদ্ধি ও চিন্তার পক্ষে কলম ধরেছেন নির্ভীক চিত্তে। ছোটগল্প, উপন্যাস, গান, নাটক লিখলেও মূলত কবি হিসেবেই তিনি বেশি পরিচিত। আজীবন বিদ্রোহী দৃষ্টিভঙ্গি আর অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার উচ্চকণ্ঠের কারণে তিনি ভূষিত হন ‘বিদ্রোহী কবি’ হিসেবে। তার উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে অগ্নিবীণা, সঞ্চিতা, চক্রবাক, প্রলয় শিখা, মরু ভাস্কর, দোলনচাঁপা, বিষের বাঁশি, ভাঙ্গার গান, সাম্যবাদী, পুবের হাওয়া, ব্যথার দান, রিক্তের বেদন, বাঁধনহারা, মৃত্যুক্ষুধা, কুহেলিকা ইত্যাদি। এ ছাড়া প্রায় ৩ হাজার গান রচনা করেন কাজী নজরুল। তার গানের বাণী হয়ে ওঠে মানবতাবাদ ও সাম্যবাদের পক্ষে শক্তিশালী হাতিয়ার।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর পরই বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম সপরিবারে বাংলাদেশে আসেন। জাতীয় কবিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা হয়। এখানেই তিনি চিরনিদ্রায় শায়িত রয়েছেন।

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

আপডেট সময় ১১:৫৪:৫৩ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৭ অগাস্ট ২০২৪
১২ বার পড়া হয়েছে

জাতীয় কবির ৪৮তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ

আপডেট সময় ১১:৫৪:৫৩ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৭ অগাস্ট ২০২৪

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ৪৮তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ১৯৭৬ সালের এদিনে তৎকালীন পিজি হাসপাতালে (বর্তমানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়) ৭৭ বছর বয়সে শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। কাজী নজরুল ইসলাম বাংলা সাহিত্যে বিদ্রোহী কবি হিসেবে সমধিক পরিচিত হলেও তিনি ছিলেন একাধারে কবি, সংগীতজ্ঞ, ঔপন্যাসিক, গল্পকার, নাট্যকার, প্রাবন্ধিক, সাংবাদিক, চলচ্চিত্রকার, গায়ক ও অভিনেতা। তিনি বৈচিত্র্যময় অসংখ্য রাগ-রাগিনী সৃষ্টি করে বাংলা সঙ্গীত জগতকে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করেছেন।

কবির মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও পেশাজীবী সংগঠন বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদ সংলগ্ন কবির সমাধিতে পুস্পস্তবক অর্পণ, ফাতেহা পাঠ, দোয়া মাহফিল এবং আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। বাংলাদেশ বেতার, টেলিভিশন ও বিভিন্ন বেসরকারী টেলিভিশন চ্যানেল কবির মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচারের উদ্যোগ নিয়েছে।

১৩০৬ বঙ্গাব্দের ১১ জ্যৈষ্ঠ পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রামে কাজী নজরুল ইসলামের জন্ম। শৈশব থেকেই কঠিন দারিদ্র্য মোকাবিলা করে বড় হয়েছেন তিনি। তার ডাক নাম ছিল ‘দুখু মিয়া’। পিতার নাম কাজী ফকির আহমেদ ও মাতা জাহেদা খাতুন। কবি কাজী নজরুল ইসলাম সৃষ্টিশীল ছিলেন মাত্র ২৩ বছর। নজরুলের এই ২৩ বছরের সাহিত্যজীবনের সৃষ্টিকর্ম বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের অমূল্য সম্পদ। কবি নজরুলের কবিতা, গান ও সাহিত্যকর্ম বাংলা সাহিত্যে নবজাগরণ সৃষ্টি করেছিল। তাঁর কবিতা ও গান মানুষকে যুগে যুগে শোষণ–বঞ্চনা থেকে মুক্তির পথ দেখিয়ে চলেছে। অপর দিকে তিনি ছিলেন চিরপ্রেমের কবি। তিনি নিজেই বলেছেন ‘মম এক হাতে বাঁকা বাঁশের বাঁশরী আর হাতে রণ–তূর্য’।

তার কবিতা ও গান মানুষকে যুগে যুগে শোষণ ও বঞ্চনা থেকে মুক্তির পথ দেখিয়ে চলেছে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে তার গান ও কবিতা ছিল প্রেরণার উৎস। কাজী নজরুল ইসলাম নিজ গ্রামে মসজিদ ও স্কুলে অধ্যয়ন করেন। ছোটবেলায়ই কবিতা ও গান লেখা শুরু করেন। নিজে বিভিন্ন আসরে গান পরিবেশন করেন। দারিদ্র্যের কশাঘাতে জর্জরিত হয়েও কবি কখনো আপস করেননি। আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন শোষিত-বঞ্চিত মানুষের মুক্তির জন্য। মানবতার মুক্তির পাশাপাশি সাম্প্রদায়িকতা, ধর্মান্ধতা, কুসংস্কারের বিরুদ্ধে ছিলেন সোচ্চার। মুক্তবুদ্ধি ও চিন্তার পক্ষে কলম ধরেছেন নির্ভীক চিত্তে। ছোটগল্প, উপন্যাস, গান, নাটক লিখলেও মূলত কবি হিসেবেই তিনি বেশি পরিচিত। আজীবন বিদ্রোহী দৃষ্টিভঙ্গি আর অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার উচ্চকণ্ঠের কারণে তিনি ভূষিত হন ‘বিদ্রোহী কবি’ হিসেবে। তার উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে অগ্নিবীণা, সঞ্চিতা, চক্রবাক, প্রলয় শিখা, মরু ভাস্কর, দোলনচাঁপা, বিষের বাঁশি, ভাঙ্গার গান, সাম্যবাদী, পুবের হাওয়া, ব্যথার দান, রিক্তের বেদন, বাঁধনহারা, মৃত্যুক্ষুধা, কুহেলিকা ইত্যাদি। এ ছাড়া প্রায় ৩ হাজার গান রচনা করেন কাজী নজরুল। তার গানের বাণী হয়ে ওঠে মানবতাবাদ ও সাম্যবাদের পক্ষে শক্তিশালী হাতিয়ার।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর পরই বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম সপরিবারে বাংলাদেশে আসেন। জাতীয় কবিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা হয়। এখানেই তিনি চিরনিদ্রায় শায়িত রয়েছেন।