নারী এশিয়া কাপ ভারতের কাছে হেরে ফাইনালের স্বপ্ন শেষ বাংলাদেশের
নারী এশিয়া কাপের শুরুটা ভালো না হলেও গ্রুপ পর্বের পরের দুই ম্যাচে বড় জয় পায় বাংলাদেশ। সেই সঙ্গে সেমিফাইনালের টিকিট নিশ্চিত করে টাইগ্রেসরা। তবে ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে নিজেদের সেরাটা দিতে পারেনি জ্যোতি-নাহিদারা। ভারতের কাছে বড় ব্যবধানে হেরে এশিয়া কাপের ফাইনাল খেলার স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে লাল-সবুজের প্রতিনিধিদের।
শুক্রবার (২৬ জুলাই) ডাম্বুলা আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে টস জিতে আগে ব্যাট করে ভারতকে মাত্র ৮১ রানের লক্ষ্য দেয় বাংলাদেশ। জবাব দিতে নেমে ৫৪ বলে এবং ১০ উইকেট হাতে থাকতেই জয় তুলে নেয় ভারত। এতে টুর্নামেন্টে অপরাজিত থেকে ফাইনালে উঠল আকাশি-নীলরা। আর বাংলাদেশের প্রাপ্তি দুই জয়। ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের অধিনায়ক সর্বোচ্চ ৩২ রান করলেও টাইগ্রেস বোলাররা কোনো উইকেটই নিতে পারেননি।
ব্যাটিং লাইনটা যেন দাঁড়াতেই পারছে না বাংলাদেশের। আসছে অক্টোবরে দেশের মাটিতে নারী টি২০ বিশ্বকাপের আসর বসার অপেক্ষা। তার আগে নিজেদের যাচাই করে নেওয়ার বড় মঞ্চ ছিল এবারের এশিয়া কাপ। কিন্তু সেখানে বাংলাদেশ হতাশ হলো আরও একবার। আর এবারও সেই হতাশার পেছনে আছে ভারতের নাম। বাংলাদেশ ক্রিকেটে বহুবারই স্বপ্নভঙ্গের কারণ হয়েছে প্রতিবেশী দেশটি। ২০২৪ সালের এশিয়া কাপেও বদলাল না সেই চিত্র।
চলতি বছরেই ভারতের কাছে ৫-০তে সিরিজ হারের ক্ষত ছিল বাংলাদেশের। প্রত্যাশা ছিল এশিয়া কাপের ম্যাচে জয় দিয়ে সেই ক্ষতে প্রলেপ দেবে টাইগ্রেসরা। কিন্তু শুক্রবার শ্রীলংকার ডাম্বুলায় বাংলাদেশের মেয়েরা আগাগোড়া হতাশাই উপহার দিয়েছেন। ব্যাট হাতে মোটে ৮০ রানের পর বল হাতেও নাজুক টাইগ্রেস ব্যাটাররা। হারের ব্যবধান ১০ উইকেটে। গ্রুপ পর্বে তিনটি ম্যাচের সবকটিতে জিতে ‘এ’ গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে সেমিতে পা রাখে ভারত। অন্যদিকে ‘বি’ গ্রুপের রানার্সআপ হিসেবে সেমির টিকিট পেয়েছে বাংলাদেশ। পূর্ব নির্ধারিত নিয়ম অনুযায়ী এক গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন দল খেলবে অপর গ্রুপের রানারআপের বিপক্ষে। তাই প্রতিপক্ষ হিসেবে ভারতকেই পেয়েছে বাংলাদেশ।
টস ভাগ্য পাশে পেয়েছিলেন বাংলাদেশের অধিনায়ক জ্যোতি। পিচ খুব একটা মন্দ নয়। ব্যাট করার সুযোগটা হাতছাড়া করতে চায়নি বাংলাদেশ। শুরুতেই দিলারার ছক্কা আশার পালে দিয়েছিল হাওয়া। কিন্তু ছক্কা হজমের পরেই ফিল্ডিং পরিবর্তন করেন ভারতীয় অধিনায়ক হারমানপ্রীত কৌর। দিলারা পরের বলেও খেলতে চাইলেন একই ভাবে। তবে এবার রেনুকা সিং হাসলেন শেষ হাসি। উমার হাতে জমা পড়ল ক্যাচ।
বাংলাদেশের ধ্বংসযজ্ঞের সূচনা সেখান থেকেই। আর তাতে বড় ভূমিকা রেনুকার। ১০ রানে নিয়েছেন ৩ উইকেট। দুর্দান্ত বোলিংয়ের কারণে হয়েছেন ম্যাচসেরা।
আগের ম্যাচে দুর্দান্ত ফিফটি পাওয়া মুর্শিদাকে বাধ্য করেছেন শেফালি ভার্মার হাতে ক্যাচ দিতে। মাঝে ইশমা তানজিম আউট হয়েছেন শর্ট থার্ডম্যানে সহজ ক্যাচ দিয়ে। রেনুকা ১০ রানে পেলেন ৩ উইকেট। বাংলাদেশ ২১ রানে হারায় টপঅর্ডারের সবাইকে।
এরপর বাংলাদেশ অধিনায়ক জ্যোতির ধীরগতির সংগ্রামী ইনিংসটাই পুরো ইনিংসের প্রতিচ্ছবি। রুমানা ১১ বলে করেছেন ১ রান। রাধা ইয়াদাভের বলে বোল্ড তিনি। পরের ওভারেই নেই রাবেয়া। ৭ বলে ১ রান করে পুজা বস্ত্রকরের বলে শেফালির দুর্দান্ত ক্যাচে পরিণত হন তিনি। ৩৩ রানেই বাংলাদেশের ৫ম উইকেটের পতন।
রিতু মনির ব্যাট থেকে এলো ৫ রান। উইকেটের পেছনে রিচা ঘোষের দ্রæতগতির স্ট্যাম্পিং তাকে ফেরায় সাজঘরে। ৮ নাম্বারে নামা স্বর্ণাই এরপর বাংলাদেশের ইনিংসে কিছুটা গতি এনেছেন। রাধা পেয়েছেন ৩ উইকেট। তাকেই পরপর দুই বলে চার হাঁকিয়েছিলেন। পুজা বস্ত্রকরের ওভারেও এক চার ছিল তার।
কিন্তু টুকরো টুকরো এসব মুহূর্ত বাংলাদেশকে বড় কোনো সংগ্রহ এনে দিতে পারেনি। রেনুকার পর রাধা পেয়েছিলেন ৩ উইকেট। তাতেই টাইগ্রেসদের সংগ্রহ যায় ৮০ রান পর্যন্ত। শেষ ওভারেই রাধা পেয়েছিলেন দুই উইকেট। সঙ্গে ছিল মেইডেন ওভার।
শেফালি ভার্মা আর স্মৃতি মান্ধানা ভারতকে উড়ন্ত সূচনা এনে দিয়েছেন বহুবার। এশিয়া কাপের সেমিফাইনালেও বজায় থাকল সেই ধারা। জ্যোতি বোলিংয়ে এনেছিলেন চার বোলারকে। কেউই এনে দিতে পারেননি ব্রেকথ্রু। দুই ওপেনার সুযোগই দিলেন না টাইগ্রেস বোলারদের।
৬৫ রানে অবশ্য শেফালি ভার্মা বাউন্ডারি লাইনে ক্যাচ দিয়েছিলেন। তবে মুঠোয় থাকা ক্যাচ ফেলে দেন নাহিদা আক্তার। ম্যাচ বেরিয়ে গিয়েছিল অনেক আগেই। ব্যবধান কমানোর সুযোগটাও তখন হাতছাড়া করে বাংলাদেশ। শেষ পর্যন্ত ১১ ওভারেই ১০ উইকেট হাতে রেখে ম্যাচ শেষ করে ভারত। স্মৃতি মান্ধানা পেয়েছেন ফিফটি। শেফালি ভার্মার ব্যাট থেকে আসে ২৭ রান।