পর্যটন শিল্পে সম্ভবনাময় উপজেলা চুনারুঘাট
চুনারুঘাটের সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান ও রেমা কালেঙ্গা অভয়ারণ্য কাগজে কলমেই রয়ে গেছে। এই দুই বন থেকে জ্বালানী কাঠ, বেত, বাঁশ, মধুসহ নানান জাতের বনজ সম্পদ আহরণ বন্ধ হয়নি। বনের মুল্যবান গাছ গাছালিও চুরি হয় নানান ফাঁক ফোঁকরে। বিগত ৫ বছর চুনারুঘাট মাধবপুরে পর্যটনমন্ত্রী থাকার পরও হয়নি ছিটেফুটো কোনো উন্নয়ন। গত সংসদ নির্বাচনের পর হবিগঞ্জ-৪ সংসদীয় আসনে নতুন সাংসদ ব্যরিস্টার সুমন চুনারুঘাট ও মাধবপুরে কয়েটি যাত্রী ছাউনিকে রাঙিয়ে তুলা ছাড়া আর কোন কাজই করতে পারেন নি। বিল-হাওড়, পাহাড়-বন চা বাগান ও অরণ্যে ঘেরা এই দুই উপজেলাকে প্রকৃতি সাজিয়েছিলো অকৃপণভাবে কিন্তু বনদস্যু ও বালু-মাটি খেকোরা ক্ষত বিক্ষত করে দিয়েছে প্রকৃতিকে। চুনারুঘাটে রয়েছে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বনাঞ্চল রেমা-কালেঙ্গা, সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান, সবুজ চা বাগানে গালিছা বিছানো উঁচু-নিচু টিলা আর মনোরম রাবার বাগান। রয়েছে খাসিয়া, টিপরা, সাওতাল, গারো এবং মণিপুরী আদিবাসী সম্প্রদায়ের বৈচিত্রময় জীবন। পর্যটকদের আকৃষ্ট করার মত এত সব দর্শনীয় স্থান থাকার পরেও উপজেলার পর্যটনের উন্নয়নে নেওয়া হয়নি কোনো উদ্যোগ। বিগত ৫ বছর চুনারুঘাট মাধবপুরে পর্যটনমন্ত্রী থাকার পরও হয়নি ছিটেফুটো কোনো উন্নয়ন। চুনারুঘাটবাসী আশায় বুক বেধেছিল পর্যটনমন্ত্রীর মাধ্যমে রেমা কালেঙ্গা অভয়ারণ্য ও সাতছড়ির উন্নয়নের দুয়াল খুলবে। ব্যারিস্টার সুমনের প্রতিও অনুরূপ আশা করে আসছিলেন সাধারণ মানুষ কিন্তু সাতছড়ির একটি গেইট নির্মান ছাড়া আর কোনো কিছুই করা যায়নি। বর্তমান সরকারের পর্যটন উপদেষ্টা চুনারুঘাটের। তিনি গত এক বছরে পর্যটনে কোন পদক্ষেপ নিতে পারেন নি। জেলার সবচেয়ে জনপ্রিয় পর্যটন স্পট সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান। ঢাকা সিলেট মহাসড়ক (পুরাতন) এ বনের মধ্য দিযেই চলে গেছে। চুনারুঘাট উপজেলার রঘুনন্দন পাহাড়ে অবস্থিত এই উদ্যানে রয়েছে প্রায় ১৯৭ প্রজাতির জীবজন্তু। রয়েছে ২০০ প্রজাতির পাখি এবং গাছপালা। বিলুপ্তপ্রায় বহু পাখি, জীবজন্তুর দেখা মিলে এই উদ্যানে। উদ্যানের অভ্যন্তরে টিপরাপাড়ায় পাহাড়ি আদিবাসীর ২৪টি পরিবার বসবাস করে। উদ্যানের কাছাকাছি আছে ৯টি চা বাগান। এই সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে প্রতি বছর সমাগম ঘটে কয়েক লাখ দর্শনার্থীর। কিন্তু উদ্যানের কাছাকাছি রাত কাটানোর মত কোনো হোটেল, মোটেল, রিসোর্ট না থাকায় দূর-দুরান্তের পর্যটকদের পড়তে হয় বিপাকে। ফলে এই উদ্যানটি কাঙ্ক্ষিত পর্যটক টানতে পারছে না। চলছে নামকা ওয়াস্তে। অতি সম্প্রতি সাতছড়ির আশা পাশে রোড ডাকাতি সংঘটিত হবার কারনে পর্যটকদের নিরাপত্তা নিয়ে উৎকন্ঠা রয়েছে। শুধু তাই নয় চুনারুঘাটে রয়েছে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম রেমা-কালেঙ্গা বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য। আয়তনের দিক থেকে সুন্দরবনের পর দেশের সবচেয়ে বড় প্রাকৃতিক বনভূমি এটি। এর আয়তন ১৭৯৫ দশমিক ৫৪ হেক্টর। এ বনে প্রায় ১৬৭ প্রজাতির পাখি, ৩৭ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ১৮ প্রজাতির সরীসৃপ এবং সাত প্রজাতির উভচর রয়েছে। সেইসঙ্গে রয়েছে ৬৩৮ প্রজাতির গাছপালা। ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য সীমান্তঘেঁষা এই বনে যাতায়াত করতে হলে কেবল মোটরবাইক নিয়ে কাঁচা রাস্তা মাড়িয়ে যেতে হয়। বৃষ্টি হলে মোটরসাইকেল দিয়েও যাওয়া অসম্ভব হয়ে পড়ে। পরিবেশ সচেতন ব্যক্তিবর্গ বলেন, ‘সাতছড়ি এবং রেমা কালেঙ্গাকে ঘিরে বড় ধরনের পর্যটনের সম্ভাবনা ছিলো কিন্তু শুধু উদ্যোগ এবং প্রচারের অভাবে সেটিকে আমরা তুলে ধরতে পারছি না। গড়ে উঠেনি কোনো হোটেল-মোটেল-রিসোর্ট। স্থাপনা নির্মাণের ক্ষেত্রে যে আইনি জটিলতা রয়েছে তা সরকারি উদ্যোগ ছাড়া সম্ভব নয়। সরকার উদ্যোগ নিলে বেসরকারি পর্যায়েও অনেক উদ্যোক্তা এগিয়ে আসবেন।’ সাংবাদিক ও পরিবেশকর্মী আবুল কালাম আজাদ বলেন,আমরা বিগত ২০১৮ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত পর্যটন মন্ত্রী পেয়েছিলাম। কিন্তু পর্যটনের ছিটাফুটা কাজও তিনি করেননি। অথচ চুনারুঘাটে রয়েছে রেমা কালেঙ্গা অভয়ারণ্য ও সাতছড়ির মতো জাতীয় উদ্যান। তিনি বলেন, ‘এসব দর্শনীয় স্থানে থাকা খাওয়ার কোনো ব্যবস্থা না থাকায় পর্যটকরা এখানে আসতে চান না। সাংবাদিক মোহাম্মদ সুমন বলেন, চুনারুঘাটে খাসিয়া, টিপরা এবং মণিপুরী আদিবাসী সম্প্রদায়ের গ্রাম রয়েছে। এই আদিবাসীদের গ্রামগুলোকে ঘিরে কমিউনিটি বেইজড ট্যুরিজমেরও সম্ভাবনা রয়েছে। ব্যবসায়ী নেতা সাজিদ আহমেদ মনে করেন, প্রাকৃতিকভাবে গড়ে ওঠা দর্শনীয় স্থানগুলোকে ঢেলে সাজালে শুধু দেশি নয়, বিদেশি পর্যটকের চোখ আটকাবে এ জেলায়। এই পর্যটনকে ঘিরে প্রতি বছর অন্তত কোটি টাকার ব্যবসা সম্ভব। এতে কর্মসংস্থান হবে কয়েক হাজার মানুষের। ‘অনেকেই উপজেলায় পর্যটন খাতে বিনিয়োগ করতে চান। কিন্তু পর্যটনের অব্যবস্থাপনার কারণে অনেকে বিনিয়োগ করতে ভয় পান। সাধারন মানুষদের ভাষ্য মতে, পুরো চুনারুঘাট উপজেলা পর্যটন এড়িয়া। বালু-মাটি উত্তোলন বন্ধ,বনমজুরদের নিয়ন্ত্রন, রাস্তাঘাটের উন্নয়ন,রাজনৈতিক নেতাদের সক্রিয় অংশগ্রহনের মাধ্যমে চুনারুঘাটকে সাঁজানো যাবে পর্যটন শিল্পে।