শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ০৭:৫৮ অপরাহ্ন

বনের গাছ কাটছেন কর্মকর্তারা, বাধা দিলেই মামলার হুমকি

অলি আহমদ মাহিন, মৌলভীবাজার প্রতিনিধি: মৌলভীবাজারের সাতগাঁও বন বিটের কোটি টাকা মূল্যের গাছ কাটার অভিযোগ উঠেছে বন বিভাগের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে। কয়েক বছর ধরে এ রকম গাছ চুরির ঘটনা ঘটছে সংরক্ষিত এই বনাঞ্চলে। কেউ বাধা দিলে তাদেরকে মামলার হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলার তীর ঘেষে অবস্থিত সাতগাঁও সংরক্ষিত বনাঞ্চল। প্রায় চল্লিশ হেক্টর উঁচু-নিচু টিলা আর পাহাড়ে ঘেরা এই বনাঞ্চলে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির বনজ ও ঔষধী গাছ। সামাজিক বনায়ন কর্মসূচির আওতায় এসব গাছ রোপণ করা হয়েছে। সব গাছেই বিভিন্ন সংখ্যা দিয়ে নম্বর দেওয়া রয়েছে।

কিন্তু বিগত কয়েকবছর ধরে এই বনের গাছ কেটে সাবাড় করে ফেলেছে একটি সংঘবদ্ধ চক্র। যার কারণে পড়ে আছে শত শত কাটা গাছে গুঁড়ি ও ডালপালা। এসব গাছের মূল্য প্রায় কোটি টাকা।

জানা যায়, ২০০৫-২০০৬ অর্থবছরে সামাজিক বনায়নের জন্য স্থানীয় উপকারভোগীদের নিয়ে এই বাগান গড়ে তোলা হয়। সাতগাঁও বন বিটের আওতায় এই বাগানে দ্রুত বর্ধনশীল আকাশমনি, বেলজিয়াম ও ক্রস গাছ রোপণ করা হয়। কিন্তু এসব গাছ বড় হতে না হতেই নজর পড়ে বন কর্তাদের। দিনে দুপুরে এসব গাছ কেটে নিয়ে যান বন বিভাগের বিট কর্মকর্তারাই, এমন অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের।

সাতগাওঁ বনবিটের এলাকায় বসবাস করা বাগানের উপকারভোগী শাহজাহান মিয়া বলেন, ২০০৭ সালে শ্রীমঙ্গল রেঞ্জ অফিসের মাধ্যমে আমরা এই বাগানের উপকারভোগী হই। এই গাছগুলো রোপণ করার পর এখন বড় হয়েছে। বিগত কিছুদিন আগে নিলাম হয়। নিলামের পর সাতগাঁও বিট অফিসার ও শ্রীমঙ্গলের রেঞ্জার অবাধে গাছগুলো কেটে বিক্রি করছে। গাছ কেটে নিয়ে যাওয়ার সময় আমরা বাধা দিলে তারা গাছ চুরির মামলা দেয়।

বনের পার্শ্ববর্তী গুচ্ছগ্রামের রুবেল মিয়া বলেন, আমি এখানে গরু রাখতে আসি। প্রায় সময়ই দেখি বনের কর্মকর্তারা গাছ কাটে। বড় বড় গাড়ি দিয়ে গাছ নিয়ে যায়। বাধা দিলে মামলা দিয়ে দেয়।

বন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, সাতগাঁও বন বিটের এই সামজিক বনায়নটি ১২ ফেব্রুয়ারি নিলামের টেন্ডার হয়। এখনো টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হয়নি। এই বাগানে মোট গাছের সংখ্যা ৫ হাজার ৯৪৪টি। এসব গাছের মধ্যে রয়েছে আকাশমনি, বেলজিয়াম ও ক্রস গাছ। ৪০ হেক্টর এলাকাজুড়ে ২০০৫-৬ সালে এই বনায়ন করা হয়। স্থানীয় উপকারভোগী ৪০ জনকে নিয়ে এই বনায়ন গড়ে তোলা হয়।

এ বিষয়ে বন বিভাগের মৌলভীবাজার রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. মজনু প্রাং. বলেন, বনের গাছ কাটা হলে এই দায় শুধু বিট অফিসারের নয়। এই দায় উপকারভোগীরাও এড়াতে পারেন না। চুক্তি অনুযায়ী তাদেরও কিছু দায়বদ্ধতা আছে। আর মামলা দেওয়ার অভিযোগটি মিথ্যা। বরং তাদের হাতেনাতে ধরেই মামলা দেওয়া হয়।

এই নিউজটি আপনার ফেসবুকে শেয়ার করুন

© shaistaganjerbani.com | All rights reserved.