ঢাকা ১০:৫২ অপরাহ্ন, শনিবার, ২১ জুন ২০২৫, ৭ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

মৌলভীবাজার জেলা পরিষদ উপ-সহকারী প্রকৌশলীর সহায়তায় কাজ না করে বিল উত্তোলনের পায়তারা

অলি আহমদ মাহিন মৌলভীবাজার প্রতিনিধি,

মৌলভীবাজার জেলা পরিষদের একাধিক প্রকল্পের কাজ না করেও বিল উত্তোলনের পায়তারা করছেন কয়েকজন ঠিকাদার। এ সিন্ডিকেটের সাথে জেলা পরিষদের উপ-সহকারী প্রকৌশলী সিপন কুমার দাস এর সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কোনো কাজ না করলেও চুড়ান্ত বিল দেয়ার জন্য সিপন কুমার দাস সুপারিশ করেছেন। অনুসন্ধানে এমন চিত্র উঠে এসেছে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, জেলা পরিষদ হতে বরাদ্দকৃত একাধিক প্রকল্পে কাজ না করেও চুড়ান্ত বিলের জন্য আবেদন করে কয়েকটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। আবার কোনো কোনো ঠিকাদার ওয়ার্ক অর্ডার অনুসরণ না করে নামকাওয়াস্তে কাজ করে বিল তোলে নিতে চাচ্ছেন। তাদেরকে এ কাজে পরোক্ষ ভাবে সহযোগিতা করছেন উপ-সহকারী প্রকৌশলী সিপন কুমার দাস। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কাজ না করলেও কাজ হয়েছে বলে তিনি সুপারিশ করছেন।

অনুসন্ধান বলছে, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মিতালী এন্টারপ্রাইজের প্রোপ্রাইটর নিত্যলাল দে। মৌলভীবাজার জেলা পরিষদের শ্রীমঙ্গল উপজেলায় ১৩ লক্ষ টাকার ৩টি কাজ পান (দরপত্র নং ০৬/২০২৩-২০২৪) । ঠিকাদার নিত্যলাল দে গেল বছরের ২৮ নভেম্বর জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে চুড়ান্তর বিলের জন্য আবেদন করেন। আবেদনে তিনি উল্লেখ করেন তিনটি প্রকল্পের পুরো কাজ সমাপ্ত করেছেন। উপ-সহকারী প্রকৌশলী সিপন কুমার দাস বিল প্রদানের জন্য আবেদনে সুপারিশর করে প্রধান নির্বাহীর কাছে পাঠিয়েছেন।

সরেজমিন এ দরপত্রের শ্রীমঙ্গল শ্রী শ্রী জগন্নাথ দেবের আখড়ায় গিয়ে দেখা যায়, কয়েকটি গর্ত ছাড়া এখানে কোনো কাজ হয়নি। অথচ আবেদনে বলা হয়েছে পুরো কাজ সম্পন্ন হয়েছে। সেবা পূজার দায়িত্বে থাকা ননী গোপাল দাশ অধিকারী যুগান্তরকে বলেন, “যেখানে ঘর হওয়ার কথা সেই জায়গায় একটি কক্ষে আমি থাকতাম এবং এক পাশের একটি কক্ষ অফিস হিসেবে ব্যবহার করা হতো। সরকারি বরাদ্দের কথা শুনে কাজের জন্য ভাঁঙ্গা হয়। ৩/৪ মাস যাবত এ অবস্থায় ফেলে রেখেছেন। কিসের জন্য এ ঘর ভাঙল এবং কিসের জন্য কাজ বন্ধ হয়েছে এতোটা জানিনা। একই আইডি’র রাধানগর হারিছ মিয়ার বাড়ির সামন হতে সুজন মিয়ার বাড়ির নিকট রাস্তার উভয় পার্শে¦ গাইড ওয়াল নির্মাণ হওয়ার কথা ছিল। সরেজমিন দেখা যায়, গাইড ওয়াল নির্মাণ না করে সেখানে নিম্নমানের কাজে নামকাওয়াস্তে ড্রেন নির্মাণ করা হয়েছে। অথচ এ দুইটি প্রকল্পেই উপ-সহকারী প্রকৌশলী সিপন কুমার দাশ চুড়ান্ত বিল প্রদান করার জন্য সুপারিশ করেছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সদর উপজেলার জগৎপুর মাদ্রাসায় ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে ৭ লক্ষ টাকায় ২টি সেমি পাকা কক্ষ নির্মান করার কথা ছিল। কিন্তু সেখানে ওয়ার্ক অডার অনুসরণ না করে চাদের একটি কক্ষ নির্মাণ করা হয়েছে। অথচ উপ-সহকারী প্রকৌশলী সিপন কুমার দাস ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে বিল দেয়া যায় বলে প্রত্যয়ন দিয়েছেন। প্রত্যয়নে তিনি উল্লেখ করেছেন কাজ পরিদর্শন করে দেখেছেন কাজের গুনগত মান ভালো এবং ওয়ার্ক অডার অনুসরণ করে কাজ করা হয়েছে। এদিকে সদর উপজেলার বড়কাপন মুন্সীবাড়ী কবরস্থান উন্নয়নের জন্য ২০২১-২২ অর্থ বছরে একটি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়। কবরস্থানে কোনো কাজ করা হয়নি। উপ-সহকারী প্রকৌশলী সিপন কুমার দাস ওই প্রকল্পেও প্রত্যয়ন দিয়েছেন “প্রকল্পে অনুমোদিত নকশা ও প্রাক্কলন অনুযায়ী সম্মন্ন হয়েছে। পরিদর্শনকালে তিনি দেখেছেন কাজের মান সন্তোষজনক। জামানতের বিল প্রদান করা যেতে পারে”।

একটি দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, উপ-সহকারী প্রকৌশলী সিপন কুমার দাস মৌলভীবাজার যোগদানের পরই বেপরোয়া হয়ে উঠেন। প্রকল্পে অনুমোদিত নকশা ও প্রাক্কলন অনুযায়ী কাজ না করে ঠিকাদারের কাছ থেকে টাকা আদায়ই মুখ্য কাজ হয়ে দাড়িয়েছে। ঠিকাদার নামকাওয়াস্তে কাজ করার পরেও কাজ হয়েছে বলে বিল তোলে দিতে সহযোগিতা করছেন। এর বিনিময়ে ঠিকাদারদের কাছ থেকে বড় অংকের ঘুষ গ্রহণ করছেন। আবার অনেক প্রকল্পে কাজ না করেও ঠিকাদারকে বিল তোলে দিতে সহযোগিতা করছেন। সূত্র বলছে, ঘুষের জন্য তিনি বেসামাল হয়ে উঠেছেন।

মৌলভীবাজার জেলা পরিষদের উপ-সহকারী প্রকৌশলী সিপন কুমার দাস এর সাথে যোগাযোগ করা হলে এ বিষয়ে তিনি কথা বলতে রাজি হননি। এক পর্যায়ে বলেন রোববারে অফিসে আসলে কথা হবে।

মৌলভীবাজার জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শামীমা খন্দকার বলেন, “আমিও অবগত হয়েছি। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে”।

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

আপডেট সময় ০৯:১৭:৫৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৪ জুন ২০২৫
১৫ বার পড়া হয়েছে

মৌলভীবাজার জেলা পরিষদ উপ-সহকারী প্রকৌশলীর সহায়তায় কাজ না করে বিল উত্তোলনের পায়তারা

আপডেট সময় ০৯:১৭:৫৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৪ জুন ২০২৫

মৌলভীবাজার জেলা পরিষদের একাধিক প্রকল্পের কাজ না করেও বিল উত্তোলনের পায়তারা করছেন কয়েকজন ঠিকাদার। এ সিন্ডিকেটের সাথে জেলা পরিষদের উপ-সহকারী প্রকৌশলী সিপন কুমার দাস এর সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কোনো কাজ না করলেও চুড়ান্ত বিল দেয়ার জন্য সিপন কুমার দাস সুপারিশ করেছেন। অনুসন্ধানে এমন চিত্র উঠে এসেছে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, জেলা পরিষদ হতে বরাদ্দকৃত একাধিক প্রকল্পে কাজ না করেও চুড়ান্ত বিলের জন্য আবেদন করে কয়েকটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। আবার কোনো কোনো ঠিকাদার ওয়ার্ক অর্ডার অনুসরণ না করে নামকাওয়াস্তে কাজ করে বিল তোলে নিতে চাচ্ছেন। তাদেরকে এ কাজে পরোক্ষ ভাবে সহযোগিতা করছেন উপ-সহকারী প্রকৌশলী সিপন কুমার দাস। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কাজ না করলেও কাজ হয়েছে বলে তিনি সুপারিশ করছেন।

অনুসন্ধান বলছে, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মিতালী এন্টারপ্রাইজের প্রোপ্রাইটর নিত্যলাল দে। মৌলভীবাজার জেলা পরিষদের শ্রীমঙ্গল উপজেলায় ১৩ লক্ষ টাকার ৩টি কাজ পান (দরপত্র নং ০৬/২০২৩-২০২৪) । ঠিকাদার নিত্যলাল দে গেল বছরের ২৮ নভেম্বর জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে চুড়ান্তর বিলের জন্য আবেদন করেন। আবেদনে তিনি উল্লেখ করেন তিনটি প্রকল্পের পুরো কাজ সমাপ্ত করেছেন। উপ-সহকারী প্রকৌশলী সিপন কুমার দাস বিল প্রদানের জন্য আবেদনে সুপারিশর করে প্রধান নির্বাহীর কাছে পাঠিয়েছেন।

সরেজমিন এ দরপত্রের শ্রীমঙ্গল শ্রী শ্রী জগন্নাথ দেবের আখড়ায় গিয়ে দেখা যায়, কয়েকটি গর্ত ছাড়া এখানে কোনো কাজ হয়নি। অথচ আবেদনে বলা হয়েছে পুরো কাজ সম্পন্ন হয়েছে। সেবা পূজার দায়িত্বে থাকা ননী গোপাল দাশ অধিকারী যুগান্তরকে বলেন, “যেখানে ঘর হওয়ার কথা সেই জায়গায় একটি কক্ষে আমি থাকতাম এবং এক পাশের একটি কক্ষ অফিস হিসেবে ব্যবহার করা হতো। সরকারি বরাদ্দের কথা শুনে কাজের জন্য ভাঁঙ্গা হয়। ৩/৪ মাস যাবত এ অবস্থায় ফেলে রেখেছেন। কিসের জন্য এ ঘর ভাঙল এবং কিসের জন্য কাজ বন্ধ হয়েছে এতোটা জানিনা। একই আইডি’র রাধানগর হারিছ মিয়ার বাড়ির সামন হতে সুজন মিয়ার বাড়ির নিকট রাস্তার উভয় পার্শে¦ গাইড ওয়াল নির্মাণ হওয়ার কথা ছিল। সরেজমিন দেখা যায়, গাইড ওয়াল নির্মাণ না করে সেখানে নিম্নমানের কাজে নামকাওয়াস্তে ড্রেন নির্মাণ করা হয়েছে। অথচ এ দুইটি প্রকল্পেই উপ-সহকারী প্রকৌশলী সিপন কুমার দাশ চুড়ান্ত বিল প্রদান করার জন্য সুপারিশ করেছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সদর উপজেলার জগৎপুর মাদ্রাসায় ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে ৭ লক্ষ টাকায় ২টি সেমি পাকা কক্ষ নির্মান করার কথা ছিল। কিন্তু সেখানে ওয়ার্ক অডার অনুসরণ না করে চাদের একটি কক্ষ নির্মাণ করা হয়েছে। অথচ উপ-সহকারী প্রকৌশলী সিপন কুমার দাস ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে বিল দেয়া যায় বলে প্রত্যয়ন দিয়েছেন। প্রত্যয়নে তিনি উল্লেখ করেছেন কাজ পরিদর্শন করে দেখেছেন কাজের গুনগত মান ভালো এবং ওয়ার্ক অডার অনুসরণ করে কাজ করা হয়েছে। এদিকে সদর উপজেলার বড়কাপন মুন্সীবাড়ী কবরস্থান উন্নয়নের জন্য ২০২১-২২ অর্থ বছরে একটি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়। কবরস্থানে কোনো কাজ করা হয়নি। উপ-সহকারী প্রকৌশলী সিপন কুমার দাস ওই প্রকল্পেও প্রত্যয়ন দিয়েছেন “প্রকল্পে অনুমোদিত নকশা ও প্রাক্কলন অনুযায়ী সম্মন্ন হয়েছে। পরিদর্শনকালে তিনি দেখেছেন কাজের মান সন্তোষজনক। জামানতের বিল প্রদান করা যেতে পারে”।

একটি দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, উপ-সহকারী প্রকৌশলী সিপন কুমার দাস মৌলভীবাজার যোগদানের পরই বেপরোয়া হয়ে উঠেন। প্রকল্পে অনুমোদিত নকশা ও প্রাক্কলন অনুযায়ী কাজ না করে ঠিকাদারের কাছ থেকে টাকা আদায়ই মুখ্য কাজ হয়ে দাড়িয়েছে। ঠিকাদার নামকাওয়াস্তে কাজ করার পরেও কাজ হয়েছে বলে বিল তোলে দিতে সহযোগিতা করছেন। এর বিনিময়ে ঠিকাদারদের কাছ থেকে বড় অংকের ঘুষ গ্রহণ করছেন। আবার অনেক প্রকল্পে কাজ না করেও ঠিকাদারকে বিল তোলে দিতে সহযোগিতা করছেন। সূত্র বলছে, ঘুষের জন্য তিনি বেসামাল হয়ে উঠেছেন।

মৌলভীবাজার জেলা পরিষদের উপ-সহকারী প্রকৌশলী সিপন কুমার দাস এর সাথে যোগাযোগ করা হলে এ বিষয়ে তিনি কথা বলতে রাজি হননি। এক পর্যায়ে বলেন রোববারে অফিসে আসলে কথা হবে।

মৌলভীবাজার জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শামীমা খন্দকার বলেন, “আমিও অবগত হয়েছি। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে”।