শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৩:২৭ অপরাহ্ন

শীত জেকেঁ বসেছে নবীগঞ্জে বেড়েছে গরম কাপড়ের দাম

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ শীত জেঁকে বসায় নবীগঞ্জের সর্বত্র নি¤œ আয়ের মানুষের দূর্ভোগ চরম আকার ধারণ করেছে। সন্ধ্যার পর থেকে পরদিন সকাল ১০টা পর্যন্ত ঘন কুয়াশায় ঢাকা থাকছে প্রকৃতি। গত কয়েকদিনের শৈত্যপ্রবাহের পর নবীগঞ্জে তাপমমাত্রা কিছুটা বাড়লেও ঠা-া কমছে না। হিমেল হাওয়ায় ঠা-াজনিত রোগে শিশু ও বয়স্কদের দুর্ভোগ বেড়েছে। শীতের তীব্রতা বাড়লেও শীর্তাথ মানুষের মাঝে সরকারী বা বেসরকারীভাবে কোন শীত বস্ত্র বিতরণের খবর পাওয়া যায়নি।
এদিকে, শৈত্যপ্রবাহসহ শীতের তীব্রতা বাড়ার সাথে সাথে পুরনো কাপড়ের দোকানগুলোতে মানুষ হুমড়ি খেয়ে পড়ছে। দামও বেশি নিচ্ছে দোকানদাররা। গ্রাম-শহর সর্বত্রই উপচেপড়া ভিড় দেখা যায় শীতবস্ত্রের কাপড়ের দোকানগুলোতে। শুধু নবীগঞ্জ শহরে প্রতিদিন বিক্রি হচ্ছে কয়েক লাখ টাকার গরম কাপড়।
সরেজমিনে নবীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে চোখে পড়ে অভাবী ও শীতকাতর মানুষের দুর্ভোগ। হিমেল হাওয়ায় গায়ে কম্বল জড়িয়ে থাকা যেখানে দুঃসাধ্য, সেখানে শীতার্থ মানুষজন গায়ে শুধু একটা গেঞ্জি কিংবা লুঙ্গি জড়িয়ে আছেন। আর নারীদের সম্বল শুধু শাড়ির আঁচল।
সোমবার সন্ধ্যার পর চুলোয় ভাতের হাড়ি বসিয়ে আগুনের কাছে বসে ছিলেন কান্দিপাড়ার রতœা বেগম। তিনি বলেন, ‘চুলার আগুনই আমাদের সম্বল। কয়দিন থাকি খুব ঠা-া পড়ছে। চুলার আগুন নিভি যাইলে রাইত (রাতে) কষ্টে কাটা লাগবে।’ এমন র্দূভোগে পড়েছেন উপজেলার শীতার্থ মানুষজন।
নবীগঞ্জ শহরে শীতের কাপড়ের মার্কেট গুলোর মধ্যে শেরপুর রোডস্থ পুরাতন কাপড়ের মার্কেট, জামে মসজিদের সামন মার্কেট, ওসমানী রোডস্থ মার্কেট, নবীগঞ্জে নতুন বাজার মোড় আশ পাশে ফুটপাতের মার্কেটে সবচেয়ে বেশি কাপড় বিক্রি হয়। এই কয়েকটি মার্কেটে ছোট-বড় প্রায় ১০০টি দোকান রয়েছে। শীতকে কেন্দ্র করে অনেকেই এখানে ব্যবসা করতে আসেন। এ ছাড়া উপজেলার বিভিন্ন হাট বাজারে পুরাতন কাপড় বিক্রির দোকান রয়েছে।
শহরের বাহিরে, সৈয়দপুর, আউশকান্দি, ইনাতগঞ্জ, কাজীরগঞ্জ বাজার, ইমামবাড়ি বাজার, পানিউন্দা বাজার ঘুরে দেখা গেছে- এসব বাজারে পুরনো কাপড়ের ক্রেতা বেশি। স্বল্প আয়ের মানুষ থেকে শুরু করে সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের পদচারণায় মুখরিত নবীগঞ্জের পুরাতন কাপড়ের বাজার।
শীত মোকাবেলায় নতুন কাপড়ের চেয়ে বিদেশি পুরনো কাপড়ের চাহিদা বেশি বলে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়। বিদেশি পুরনো শীতের কাপড়ের দাম তুলনামূলক কম। তাছাড়া এই কাপড়গুলো দেখতে সুন্দর, মানসম্পন্ন ও টেকসই হওয়ায় ক্রেতাদের এসব কাপড়ে আগ্রহ বেশি।
আশপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে সাধারণ মানুষ শহরে আসছে গরম কাপড় কিনতে। পুরনো শীতবস্ত্রের দাম গতবারের তুলনায় কিছুটা বাড়লেও নতুনের চেয়ে তুলনামূলক কম দাম বলে শহর কিংবা গ্রামের সব শ্রেণির মানুষ ফুটপাত থেকে শীতের পোশাক কিনছে। কোট, জ্যাকেট, সোয়েটার, ট্রাউজার, ওভারকোট, ফুল হাতা গেঞ্জি, কম্বল, মেয়েদের কার্টিগান, হাতমোজা ও পা মোজার ক্রেতার সংখ্যা বেশি। তবে গত বছরের চেয়ে এবার পুরনো কাপড়ের দাম অনেক বেশি বলে ব্যবসায়ী ও ক্রেতারা অভিযোগ করেছেন।
ফুটপাতের ক্ষুদ্র্র ব্যবসায়ীরা জানান, গত বছরের তুলনায় এ বছর পুরাতন কাপড়ের দাম মহাজনরা বেশি করে নিচ্ছেন। ফলে তাদেরও বেশি দামে বিক্রি না করে উপায় থাকে না।
ব্যবসায়ীরা জানান, প্রতিবছর শীতের সময় মহাজনদের কাছ থেকে গরম কাপড়ের গাইট নিয়ে তা খোলা বাজারে খুচরা বিক্রি করেন তারা । গত বছর সাত থেকে আট হাজার টাকায় একটি কাপড়ের গাইট বা বেল কেনা যেতো। এ বছর একটি গরম কাপড়ের গাইট কিনতে ১৪ থেকে ১৬ হাজার টাকা লাগছে।
ওসমানী রোডের পুরাতন কাপড়ের পাইকারি ব্যবসায়ী সেকুল মিয়া বলেন, ‘শীতকে ঘিরে চীন, তাইওয়ান, জাপান, কোরিয়া ও রাশিয়া থেকে পুরাতন শীতবস্ত্র আসছে। পরিবহন খরচ ও ব্যাংক ঋণের কারণে কাপড়ের বেলের দাম বেড়ে গেছে। আমরা পাইকারি বিক্রির জন্য চট্টগ্রাম ও ঢাকা থেকে কাপড়ের বেল ট্রাকে করে আনি ও খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করি।’
ফজলুল হক জানান, ছোট ছোট ব্যবসায়ীদের বাকিতে কাপড় দেন, তারা বিক্রি করে টাকা শোধ করেন। ব্যাংক লোনের ওপর অনেকটা নির্ভরশীল হলেও ব্যাংকগুলো এক লাখ টাকার ওপরে লোন দিতে চায় না। আবার অনেক কিছু ম্যানেজ করতে খরচ বেশি পড়ে যায়। শহরের এসব পাইকারি বাজার থেকে উপজেলার বিভিন্ন হাটে ব্যবসায়ীরা কাপড় কিনে নিয়ে এলাকায় খুচরা বিক্রি করেন বলে জানান তিনি।
নতুন বাজার মোড়ের পাশে ফুটপাতের ব্যবসায়ী ফরিদ উদ্দিন জানান, কেনা কোনো কোনো গাইটের ভেতর ছেঁড়া-ফাটা কাপড় থাকে, যা মহাজনরা ফেরত নিতে চান না। এর ফলে লোকসান গুণতে হয়। একটা গাইটে বিভিন্ন ধরনের সোয়েটার, ট্রাউজার, হাফ ও ফুল হাতা গেঞ্জি এবং ছোট ছোট বাচ্চাদের কাপড় থাকে। যা বিভিন্ন দামে বিক্রি করতে হয়। এদিকে শীতের তীবত্রা বৃদ্ধি পেলেও নবীগঞ্জ উপজেলার কোথায়ও সরকারী বা বেসরকারী উদ্যোগে শীত বস্ত্র বিতরণের খবর পাওয়া যায়নি।

 

এই নিউজটি আপনার ফেসবুকে শেয়ার করুন

© shaistaganjerbani.com | All rights reserved.