সিলেটের ঐতিহ্যবাহী ‘ছিকর’ যাচ্ছে ইউরোপে
সিলেটের ঐতিহ্যবাহী খাবার ‘ছিকর’ একদিকে স্থানীয় সংস্কৃতির অংশ, অন্যদিকে প্রবাসী সিলেটিদের নস্টালজিয়ার প্রতীক। মাটি দিয়ে তৈরি বিস্কুটের মতো দেখতে এই খাবারটি দেশে-বিদেশে সমান জনপ্রিয়। সিলেটের চাঁদনীঘাটসহ কিছু নির্দিষ্ট স্থানে ছিকর বিক্রি হয়।
সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলা থেকে বদরুল আলম চাঁদনীঘাটে এসেছেন ছিকর কিনতে। তার চাচি যুক্তরাজ্যে থাকেন এবং তাকে বিশেষ এই খাবার পাঠাতে বলেছেন।
বদরুল বলেন, ‘আমার চাচি অনেক দিন ধরে ছিকর পাঠাতে বলছেন। তাই বিয়ানীবাজার থেকে এখানে এলাম। এক কেজি কিনেছি, আত্মীয়ের মাধ্যমে লন্ডনে পাঠাব।’
কেন ছিকর খাওয়া হয়, এ নিয়ে স্থানীয়দের নানা মত। অনেকে মনে করেন, এটি রক্তস্বল্পতা দূর করে, শক্তি বাড়ায় এবং খনিজ উপাদানের ঘাটতি পূরণ করে।
সিলেটের মদিনা মার্কেট এলাকার লাইলী বেগম বলেন, ‘গর্ভাবস্থায় এটি খাওয়ার ইচ্ছা হতো। মুরব্বিরাও খেতে বলতেন। তবে এতে উপকার হয়েছে কিনা জানি না।’
তার স্বামী মুরাদ আহমদ বলেন, ‘এটি খেতে মিষ্টি মিষ্টি লাগে। একবার খেলে আবার খাওয়ার ইচ্ছা হয়।’
দক্ষিণ সুরমার রেখা রানী দাস বলেন, ‘আগে ওষুধের অভাব ছিল। তখন রক্তস্বল্পতা দূর করতে ও শক্তি বাড়াতে গর্ভবতী নারীরা ছিকর খেতেন।’
তবে সিলেটের ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. জন্মেজয় দত্ত বলেন, ‘ছিকরের কোনো বৈজ্ঞানিক উপকারিতা নেই। বরং এতে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া থাকতে পারে। নিরাপদ খাদ্য অধিদপ্তরের অনুমোদন ছাড়া এটি খাওয়া উচিত নয়।’
ছিকর মূলত সিলেট, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ এবং মৌলভীবাজারের কিছু এলাকায় তৈরি হয়। বিশেষত, লালাবাজার, ছাতক, বানিয়াচং, বাহুবল ও মাধবপুরে এটি তৈরি হয়। মাটি সংগ্রহের পর তা ভিজিয়ে মন্ড বানানো হয়। এরপর রোদে শুকিয়ে মাটির চুলায় পোড়ানো হয়। কখনো কখনো সুগন্ধি মিশিয়ে ছিকর আরও আকর্ষণীয় করা হয়।
লালাবাজারের ছিকর কারিগর সজিব মালাকার বলেন, ‘আমরা পাহাড়ের এঁটেল মাটি দিয়ে এটি তৈরি করি। বিদেশি ক্রেতারাই আমাদের প্রধান গ্রাহক। বিশেষত যুক্তরাজ্যে এর চাহিদা অনেক।’
ছিকরের উৎপত্তি নিয়ে জানা যায়, এটি প্রথম হবিগঞ্জে তৈরি হয়। ‘ছিকর’ শব্দটি এসেছে ফারসি ‘ছিয়া’ (কালো) এবং ‘কর’ (মাটি) থেকে। অর্থাৎ ‘কালো মাটি’র খাবার। স্থানীয় দরিদ্র মানুষ একসময় খাবারের বিকল্প হিসেবে এটি খেতেন।
বর্তমানে সিলেট অঞ্চলে ছিকর খাওয়ার প্রচলন কমলেও বিদেশে থাকা সিলেটিদের কাছে এটি একধরনের নস্টালজিক খাবার।