শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৭:০৫ পূর্বাহ্ন

স্বাধীনতার ৫১ বৎসরে উন্নয়ন বঞ্চিত বীর শহীদের গ্রাম বানিয়াচংয়ের মাকালকান্দি

সলিল বরণ দাশ,নবীগঞ্জ(হবিগঞ্জ)প্রতিনিধিঃ স্বাধীনতার পর থেকে সবকটি নির্বাচনে এই গ্রামের শতকরা নব্বই ভাগ ভোট পেয়ে ক্ষমতাসীন দল বিজয়ী হলেও বঙ্গবন্ধু প্রেমী ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুসারী দুই  হাজার মানুষের ভাগ্যের উন্নয়ন হয়নি এখনও। আশার আলো শুনতে শুনতে দিন অতিবাহিত হচ্ছে সিলেট বিভাগে মুক্তিযুদ্ধে সর্বচ্চো বীর শহীদের গ্রাম মাকালকান্দি।

হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার সীমান্তবর্তী বানিয়াচং উপজেলার কাগাপাশা ইউনিয়নের মাকালকান্দি গ্রামে নেই কোন ব্রিজ,কালর্ভাট। স্বাধীনতার ৫১ বৎসরে গড়ে উঠেনি সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা। এই গ্রামে সভ্যতার আলো না পৌছানোই নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতা নিয়ে দিন কাটাতে হচ্ছে  দুই  হাজার লোকের।

মাকালকান্দি  নামের এমন একটি কৃষি প্রধান গ্রামের যোগাযোগ ব্যবস্থার আশাতিত উন্নয়ন না হওয়ায় কৃষি নির্ভর পরিবারগুলো কৃষিপন্যের ন্যায্য মূল্য পাচ্ছে না। আবার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান না থাকায় অকালে ঝড়ে যাচ্ছে অনেকেই। মাকালকান্দি গ্রামে কোনো স্বাস্থ্যসেবাকেন্দ্র বা স্যাটেলাইট ক্লিনিক না থাকায় নেই তেমন কোন চিকিৎসা ব্যবস্থা।

নদী খাল বিলে ঘেরা এই গ্রামটি দৈর্ঘে প্রায় এক কিলোমিটার। গ্রামের এক পাশ দিয়ে বয়ে গেছে শাখা বরাক নদী। গ্রামে ডুকতেই পরে শাখা বরাক  নদী। কিন্তু এই নদী উপর একটি সেতু নির্মিত না হওয়ায় শুষ্ক মৌসুমে ডিঙ্গি নৌকার উপর ভরসা করে গ্রামবাসীকে গ্রামে প্রবেশ করতে হয়।

মাকালকান্দি গ্রামের কৃষক গৌরাঙ্গ দাশ আক্ষেপের সাথে জানান, আমাদের এলাকার কয়েকহাজার লোকজন কৃষিকাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন কিন্তু রাস্তাঘাটের উন্নতি না হওয়ায় কৃষিপন্য পরিবহনের কোন ব্যবস্থা নেই। তাই বলে  আমরা ধানের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছি না।

শতবর্ষী মালতী দাশ বলেন, মাকালকান্দি গ্রামটি  যোগাযোগ ব্যবস্থা এতোটাই খারাপ যে অন্য এলাকার মানুষ এই গ্রামে আত্মীয়তা পর্যন্ত করতে অনিহা প্রকাশ করে। ছেলে বা মেয়ে বিয়ে দিতে এ গ্রামে এলেও চলাচলের এমন দশা দেখে বিয়ে দিতে বা বিয়ে করতে চায় না। কারণ শশুর বাড়ি কিংবা জামাই বাড়ি আসতে যেতে ভোগান্তি পোহাতে হবে।

বয়স সত্তরের উপরে পৃথেশ চন্দ্র  দাশ আক্ষেপ করে জানান, মাকালকান্দি গ্রামে নেই কোনো স্বাস্থ্যসেবাকেন্দ্র বা স্যাটেলাইট ক্লিনিক। এমনকি স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মীদের তেমন  যাতায়াত নেই এই গ্রামে। ফলে রোগবালাই হলে হাতুড়ে ডাক্তার আর ওঝা-বদ্যির ঝাড়ফুঁকের ওপর নির্ভর করে থাকতে হয় এই গ্রামের সাধারণ মানুষদের। কেউ গুরুতর অসুস্থ হলে চিকিৎসা সেবাও কষ্টসাধ্য থাকায় বিনা চিকিৎসায়ও মারা যাচ্ছেন অনেকেই।

মাকালকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির  সভাপতি শোভা রানী দাশ  জানান, এই বিদ্যালয়টিতে ৬ জন শিক্ষকের পদ থাকলেও অত্র এলাকায় কোন রাস্তা না থাকার দরুন বাহিরের কোন শিক্ষক থাকছেনা আমাদের বিদ্যালটিতে বাধ্য হয়ে ১-২জন শিক্ষক দিয়ে চালাতে হচ্ছে পাঠদান যার দরুন শিশুকালেই ঝরে যাচ্ছে আমাদের ছেলে মেয়েরা। আমাদের এলাকায় প্রায় দুই  হাজার জনবসতি থাকলেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বলতে একটি মাত্র প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বাহিরে শিক্ষাগ্রহণ কারি শিক্ষার্থীদের প্রায় ০৫ কিলোমিটার পথ যেতে হয় পায়ে হেটে যেতে হয় হাইস্কুলে। এতে অনেক ছেলে মেয়ে প্রাথমিক শিক্ষার পরেই ঝড়ে পড়ছে।

প্রবীণ আওয়ামীলীগ নেতা রনধীর দাশ আক্ষেপ করে বলেন, আমরা আওয়ামী লীগ করি,আমরা শেখ সাহেবকে ভালবাসতাম, তার মেয়েকে ভোট দিয়ে যাচ্ছি কিন্তু দীর্ঘদিনেও আমাদের এলাকার উন্নয়নে কেউ এগিয়ে আসেনি।স্বাধীনতার পর থেকে মাকালকান্দির মানুষ শতকরা ৯০ ভাগ ভোট দিয়ে বারবারই আওয়ামী লীগকে জয়যুক্ত করে আসছি,  যদি আমরা আওয়ামী লীগকে শতকরা ৯০ ভাগ ভোট দিতে পারি তাহলে আমরা কেন রাস্তা পাবোনা,আমরা কেন উন্নয়ন বঞ্চিত হবো।

স্থানীয় ওর্য়াড আওয়ামীলীগ সভাপতি হারান দাশ জানান, গ্রামের প্রবেশদ্ধারে শাখা বরাক খালের উপর একটি সেতু নির্মাণ হলে গ্রামবাসী শুষ্ক মৌসুমে নৌকা ছাড়া চলাচল করতে পারবে গ্রামবাসী । এছাড়া গ্রামের দুই পাড়ার মধ্যে একটি বেইলি সেতু হলে দুই পাড়ার মানুষ স্কুল সহ বিভিন্ন কাজে এক পাড়া থেকে অন্য পাড়ায় আসা-যাওয়া করতে পারবে।

স্থানীয় ইউপি সদস্য সুজিত দাশ বলেন, জনপ্রতিনিধি হিসাবে আমি চেষ্টা করছি ওর্য়াডের উন্নয়নের।বর্তমান সরকারের নিকট আমাদের প্রাণের দাবি গ্রামটির সার্বিক উন্নয়নসহ রাস্তা-ঘাটের উন্নতি করা হোক।

এব্যপারে কাগাপাশা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এরশাদ আলী বলেন, মাকালকান্দি  গ্রামের বেশির ভাগ মানুষ হত-দরিদ্র। আমি যথেষ্ট চেষ্ঠা করছি গ্রামটির সার্বিক উন্নয়নের। সম্প্রতি স্থানীয় সংসদ সদস্য তাদের রাস্তা-ঘাট সহ সার্বিক উন্নয়নে উদ্যোগী হয়েছেন।

বানিয়াচং  উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ আবুল কাশেম চৌধুরী  জানান, স্মৃতিসৌধ সহ বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকান্ডের মাধ্যমে গ্রামের সার্বিক উন্নয়নের চেষ্টা করছি। আগামী শুষ্ক মৌসুমে বানিয়াচং থেকে মাকালকান্দি হয়ে দৌলতপুর পর্যন্ত ০৬ মাস ব্যবহার উপযোগী রাস্তাটির করতে পারবো বলে আশা করছি।এছাড়া আরো উন্নয়ন কর্মকান্ড পরিকল্পনাধীন আছে।

এই নিউজটি আপনার ফেসবুকে শেয়ার করুন

© shaistaganjerbani.com | All rights reserved.