হবিগঞ্জের বেশিরভাগ শিক্ষার্থী বই পায়নি
নতুন বছরের শুরুতে হবিগঞ্জের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার্থীদের হাতে বিনামূল্যের পাঠ্যপুস্তক তুলে দেওয়ার চিত্র হতাশাজনক। জেলার অধিকাংশ শিক্ষার্থী বছরের প্রথম দিনে বই না পাওয়ায় পড়াশোনার শুরুতেই হতাশা দেখা দিয়েছে।
জেলার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের বিভিন্ন বিদ্যালয়ে সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অনেক স্কুলে আংশিক বই বিতরণ করা হয়েছে, আবার কিছু স্কুলে একদমই বই পৌঁছেনি।
হবিগঞ্জের বিয়াম ল্যাবরেটরি স্কুলে প্লে থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত দেড় হাজার ছাত্রছাত্রীর মধ্যে কেউই নতুন বই পায়নি। একইভাবে, হবিগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে ১,৫৫০ জন ছাত্রের মধ্যে শুধুমাত্র তৃতীয় ও ষষ্ঠ শ্রেণির কিছু শিক্ষার্থী আংশিক বই পেয়েছে। বাকি ১,২৩০ শিক্ষার্থীকে খালি হাতেই বাড়ি ফিরতে হয়েছে।
বসন্ত কুমারী গোপাল চন্দ্র (বিকেজিসি) সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে তৃতীয় ও ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থীরা ৩টি বিষয়ের বই পেলেও অন্য শ্রেণির ১,৬০০ ছাত্রী বই ছাড়াই ফিরে গেছে।
হবিগঞ্জ শহরের রামচরণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কেবল চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের নতুন বই দেওয়া হয়েছে। প্রথম, দ্বিতীয়, এবং তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীরা কোনো বই পায়নি।
উপজেলাভিত্তিক বই প্রাপ্তি
জেলার প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের তথ্য অনুযায়ী, ৯ উপজেলায় প্রাথমিক স্তরের জন্য মোট বরাদ্দ ছিল ১৬ লাখ ৮ হাজার ৪১০টি বই। কিন্তু এর মধ্যে মাত্র ৫ লাখ ৪৮ হাজার ৫০৫টি বই সরবরাহ করা হয়েছে, যা মোট বরাদ্দের মাত্র ৩৪.১ শতাংশ।
তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, লাখাই, বাহুবল, এবং আজমিরীগঞ্জ উপজেলায় কোনো বই পৌঁছেনি। অন্য উপজেলাগুলোতে আংশিক বই সরবরাহ করা হয়েছে, তবে প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণির বই আংশিক পাওয়া গেলেও প্রাক-প্রাথমিক, চতুর্থ, এবং পঞ্চম শ্রেণির একটি বইও আসেনি।
বই না পাওয়ার এই সংকটে অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) ওয়েবসাইট থেকে বইয়ের পিডিএফ ডাউনলোড করে পড়ার পরামর্শ দিচ্ছেন। বিকেজিসি স্কুলের প্রধান শিক্ষক ফরিদা নাজমীন বলেন, “আমরা আশা করছি এক সপ্তাহের মধ্যেই সব শিক্ষার্থীর হাতে বই পৌঁছে যাবে। এর আগে শিক্ষার্থীদের পিডিএফ থেকে পড়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।”
হবিগঞ্জের সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা গকুল চন্দ্র দেবনাথ বলেন, “আমরা পাঁচটি উপজেলায় আংশিক বই পেয়েছি। তিনটি উপজেলায় এখনও কোনো বই পৌঁছেনি। বই সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথা হয়েছে, তারা জানিয়েছে দ্রুত বই পাঠানো হবে।”
বছরের শুরুতে এমন পরিস্থিতি শিক্ষার্থীদের জন্য হতাশাজনক হলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দ্রুত এই সংকট নিরসনে কাজ করছে বলে জানিয়েছে। আশা করা হচ্ছে, সব শিক্ষার্থীর হাতে প্রয়োজনীয় বই পৌঁছালে শিক্ষাবর্ষের কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে এগিয়ে যাবে।