ঢাকা ০৯:০৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৫, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

হবিগঞ্জ চারটি আসনেই শক্তিশালী বিএনপি প্রচারে ব্যস্ত জামায়াত

হবিগঞ্জ প্রতিনিধি:-

উন্নতমানের চায়ের কথা মনে পড়তেই যেক’টি জেলার নাম চোখের সামনে ভেসে ওঠে, তার মধ্যে হবিগঞ্জ অন্যতম। ৯টি উপজেলা নিয়ে গঠিত এ জেলার এক পাশে হাওড়। অপরপাশে পাহাড়ি এলাকা। মাঝে শিল্পাঞ্চল, গ্রাম ও শহর। এখানে ৯ উপজেলায় ৪টি সংসদীয় আসন রয়েছে।

ফেব্রুয়ারিতে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এই নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রার্থীদের পদচারণায় মুখর জেলার শহর, হাওড়, গ্রাম ও শিল্প এলাকা। আটঘাট বেঁধে মাঠে নেমেছেন বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, গণঅধিকার পরিষদসহ বিভিন্ন দলের প্রার্থীরা। বিএনপি তিনটি আসনে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেছে। এর মধ্যে হবিগঞ্জ-২ আসনে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ডা. সাখাওয়াত হাসান জীবন, হবিগঞ্জ-৩ আসনে বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক জি কে গউছ ও হবিগঞ্জ-৪ আসনে জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি সৈয়দ মো. ফয়সাল দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন।

তবে ফাঁকা রাখা হয়েছে হবিগঞ্জ-১ আসনটি। গুঞ্জন রয়েছে, এ আসনে ড. রেজা কিবরিয়া বিএনপির হয়ে লড়তে পারেন। জামায়াত থেকে চার আসনে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা হয়েছে। তারা হলেন- হবিগঞ্জ-১ আসনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী সিলেট মহানগরের সেক্রেটারি মো. শাহজাহান আলী, হবিগঞ্জ-২ জেলা ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি শেখ জিল্লুর রহমান আযমী, হবিগঞ্জ-৩ জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি অধ্যক্ষ কাজী মহসিন আহমদ ও হবিগঞ্জ-৪ আসনে জেলা জামায়াতের আমির কাজী মাওলানা মুখলিছুর রহমান। একইভাবে গণঅধিকার পরিষদসহ বিভিন্ন দলের প্রার্থীরা মাঠে রয়েছেন।

জেলার চারটি আসনে সবচেয়ে বেশি তৎপর বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী। বিএনপির টার্গেট সব আসন নিজেদের দখলে নেওয়া। আর ন্যূনতম ছাড় দিতে নারাজ জামায়াত। তারাও আসনগুলোতে বিজয়ী হতে নির্বাচনী মাঠ চষে বেড়াচ্ছে। এই দুই দলের মধ্যে নির্বাচনে লড়াইয়ের সম্ভাবনা ক্রমেই দৃশ্যমান হচ্ছে। ভোটাররা মনে করেন, চারটি আসনে বিএনপির সঙ্গে লড়াই হবে জামায়াতে ইসলামীর। এখানে প্রতিটি আসনে বিএনপির অবস্থান শক্তিশালী রয়েছে। তবে জাতীয় পার্টি অংশগ্রহণ করলে ভোটের হিসাব-নিকাশে পরিবর্তন আসতে পারে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন।

হবিগঞ্জ-১ (নবীগঞ্জ-বাহুবল) ॥ প্রবাসী অধ্যুষিত এ আসনে নির্বাচন এলেই বিভিন্ন দেশ থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশীরা দেশে আসেন। নিজ নিজ গ্রাম, তাদের নিজস্ব বলয়, পঞ্চায়েতদের নিয়ে বৈঠক করেন। আর মনোনয়ন না পেলে আবারও ফিরে যান প্রবাসে। এবারও তার ব্যতিক্রম নয়। নির্বাচনের আওয়াজ উঠতেই দেশে আসতে শুরু করেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মনোনয়নপ্রত্যাশীরা।

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট স্বৈরাচার শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর থেকেই জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আলোচনা শুরু হয় দেশজুড়ে। দিন অতিবাহিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সেই আলোচনা আরও জোরালো হচ্ছে।

এই আসনে জামায়াতে ইসলামী দলটির সিলেট মহানগরের সেক্রেটারি শাহজাহান আলীকে প্রার্থী ঘোষণা করেছে। ২২ নভেম্বর পর্যন্ত এ আসনে বিএনপি প্রার্থীর নাম ঘোষণা হয়নি। এখানে বিএনপির রয়েছে একাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশী। এর মধ্যে আছেন বিএনপি কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক এমপি (যুক্তরাজ্য প্রবাসী) আলহাজ শেখ সুজাত মিয়া। তিনি এই আসনের হেভিওয়েট প্রার্থী। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে উপনির্বাচনে দলীয় প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হয়ে চমক সৃষ্টি করেছিলেন তিনি। বিষয়টি তখন সারাদেশে তুমুল আলোচনার জন্ম দেয়।

তবে সুজাত মিয়াকে টপকে মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো বিএনপির সভাপতি শাহ মোজাম্মেল আলী নান্টু এবং ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মুখলেছুর রহমান মুখলিস। এ ছাড়া দলে নিজের বলয় তৈরি করে শক্ত অবস্থান নিয়েছেন সাবেক পৌর মেয়র ছাবির আহমদ চৌধুরী।

লন্ডন থেকে শেখ সুজাত মিয়া ও শিকাগো থেকে শাহ মোজাম্মেল আলী নান্টু দেশে এসেছেন। ৫ আগস্টের পরই দেশে এসেছিলেন মুখলেছুর রহমান মুখলিস। তারা দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষার পাশাপাশি মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে যোগ দিচ্ছেন, গণসংযোগ করছেন। এ ছাড়া গুঞ্জন রয়েছে সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়ার ছেলে ড. রেজা কিবরিয়াও প্রার্থী হতে পারেন। তবে তিনি কোন দল থেকে নির্বাচন করবেন তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। গণঅধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবুল হোসেন জীবনও প্রার্থী।
শেখ সুজাত মিয়া বলেন, ‘আমি দীর্ঘদিন ধরে নবীগঞ্জ-বাহুবলের মানুষের সঙ্গে কাজ করে আসছি। দল-মত নির্বিশেষে সবার সঙ্গে আমার একটি সুসম্পর্ক রয়েছে। এখানে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের শক্তিশালী অবস্থান রয়েছে। দলের ক্রান্তিকালে আমি কর্মীদের পাশে থেকে কাজ করেছি। তা ছাড়া ২০১১ সালের উপনির্বাচনে এ আসনে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে হারিয়ে এমপি নির্বাচিত হই। তাই দল যদি আমাকে মূল্যায়ন করে ইনশাআল্লাহ তারেক রহমানকে এ আসন উপহার দেব।’

ছাবির আহমদ চৌধুরী বলেন, ‘আমি নবীগঞ্জ পৌরসভার দুইবারের মেয়র ও তিনবার প্যানেল মেয়র ছিলাম। সে হিসেবে জনগণের সঙ্গে আমার গভীর সম্পর্ক রয়েছে। আমি বিগত দুটি নির্বাচনে মনোনয়ন চেয়েছিলাম। এবারও চেয়েছি। আশা করি দল আমাকে বিবেচনা করবে।’
শাহ মোজাম্মেল আলী নান্টু বলেন, ‘যদি দল আমাকে মনোনয়ন দেয়, তাহলে আমি নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত আছি। আমি জনগণের সেবা করতে চাই। তাই জনগণের জন্য কাজ করে যাচ্ছি।’

মুখলেছুর রহমান মুখলিস বলেন, ‘আমি আগামী দিনে বাহুবল-নবীগঞ্জ আসনে ধানের শীষের কান্ডারি। বিগত আন্দোলন-সংগ্রামে নেতাকর্মীদের পাশে থেকেছি। আন্দোলন করতে গিয়ে স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকারের রোষানলে পড়ে আমাকে দেশ ছেড়ে পালাতে হয়েছে। আমি বিশ্বাস করি আমাকে এ আসনে মনোনয়ন দিলে আসনটি দলকে উপহার দিতে পারব।’

জামায়াতপ্রার্থী শাহজাহান আলী বলেন, ‘দল দুই বছর আগেই আমার মনোনয়ন নিশ্চিত করেছে। আমি দীর্ঘদিন ধরে জনগণের সমস্যা লাঘবে কাজ করে আসছি। দল-মত নির্বিশেষে সবার সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রেখে কাজ করছি। সুযোগ পেলে জনগণের খেদমতে কাজ করতে চাই। আমার বিশ্বাস জনগণ আমাকে মূল্যায়ন করবে।’

হবিগঞ্জ-২ (বানিয়াচং-আজমিরীগঞ্জ) ॥ আসনটি জেলার সবচেয়ে ভাটি এলাকা। ৩ লাখ ৬৮ হাজার ৩৩৪ জন ভোটারের মধ্যে এ আসনে হিন্দু ভোটার প্রায় ১ লাখ। জয়-পরাজয় মূলত নির্ভর করে তাদের ভোটের ওপরই। ১৯৮৪ সালে জেলা ঘোষণার পর থেকে এই আসনে বিএনপি একবার ও জাতীয় পার্টির প্রার্থী দুইবার জয়ী হয়েছেন। বাকি সময় আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন।

আওয়ামী লীগ মাঠে নেই। এ সুযোগে দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলেছে বিএনপি। এ আসনে বিএনপির প্রার্থী হলেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ডা. সাখাওয়াত হাসান জীবন। বেশ শক্ত অবস্থান নিয়ে তিনি মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। এতে উজ্জীবিত হয়ে উঠেছেন নেতাকর্মীরা। ইউনিয়ন, ওয়ার্ড, গ্রাম সর্বত্রই নেতাকর্মীদের মধ্যে প্রাণচাঞ্চল্য এসেছে। প্রায় প্রতিদিনই চলছে সভা-সমাবেশ, ৩১ দফা বাস্তবায়নের লিফলেট বিতরণ ও গণসংযোগ। অপরদিকে আশা ছাড়ছে না জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ ও খেলাফত মজলিস।

অপরদিকে, ১৭ বছর মাঠের রাজনীতিতে অনেকটা অনুপস্থিত জামায়াত এখন নির্বিঘেœ দল গোছাচ্ছে। তারা উপজেলা, ইউনিয়ন, ওয়ার্ড কমিটি নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে। এ আসনে জামায়াত প্রার্থী হবিগঞ্জ জেলা ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি শেখ জিল্লুর রহমান আযমী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। আর খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় আমির মাওলানা আব্দুল বাছিত আজাদ এলাকায় ‘বড় হুজুর’ হিসেবে পরিচিত। হিন্দু, মুসলিম সব ধর্মের মানুষই তার ভক্ত। ধর্মীয় শিক্ষক হিসেবেও তার যথেষ্ট সুখ্যাতি রয়েছে। তাই তাকে পুঁজি করেই এগিয়ে যেতে চায় দলটি।

ডা. সাখাওয়াত হাসান জীবন বলেন, ‘আগামী নির্বাচন হবে একটি চ্যালেঞ্জের নির্বাচন। মানুষ ১৬ বছর নিজেদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারেনি। কাজেই আগামী নির্বাচনে জনগণের ভালোবাসা ছাড়া বিজয়ী হওয়া সম্ভব না। আমি ১৮ বছর যাবৎ মাঠে ছিলাম, আছি এবং থাকবো। দল আমাকে মনোনয়ন দিয়েছে। আমি তৃণমূল নেতাকর্মীদের নিয়ে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছি।’

অ্যাডভোকেট জিল্লুর রহমান আযমী বলেন, ‘বানিয়াচং ও আজমিরীগঞ্জ উপজেলায় প্রায় ১২ বছর আগে জামায়াতে ইসলামীর দুইজন ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। ১২ বছরে আমাদের দলীয় কার্যক্রম শতগুণ বেড়েছে। সার্বিক মূল্যায়নে জনপ্রিয়তার দিক থেকে জামায়াতে ইসলামী এগিয়ে আছে। ইনশাআল্লাহ এ আসনে আমরা বিপুল ভোটে নির্বাচিত হব।’

মাওলানা আব্দুল বাছিত আজাদ (বড় হুজুর) বলেন, ‘খেলাফত মজলিস কাউকে আগে থেকে মনোনয়ন দেয় না। দলের শূরা কমিটি যাকে মনোনয়ন দেন তিনি নির্বাচন করবেন। শূরা কমিটি যদি আমাকে মনোনয়ন দেন তাহলে আমি নির্বাচন করার জন্য প্রস্তুত আছি। আশা করি খেলাফত প্রতিষ্ঠায় জনগণ খেলাফত মজলিসকে বিজয়ী করবে।’

হবিগঞ্জ-৩ (শায়েস্তাগঞ্জ-হবিগঞ্জ- লাখাই) ॥ এ আসনেও চলছে নির্বাচনী ডামাডোল। এখানে ব্যাপকভাবে প্রচার চালাচ্ছেন বিএনপিপ্রার্থী দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আলহাজ জি কে গউছ। সদর আসন হওয়ায় জেলার গুরুত্বপূর্ণ আসন এটি। এখান থেকেই নিয়ন্ত্রণ হয় পুরো জেলা। এর ওপরই নির্ভর করে জেলার রাজনীতি। বিতর্কিত নির্বাচনের মাধ্যমে টানা চারবার এ আসনটি দখলে রেখেছিল আওয়ামী লীগ। তবে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দলটির নেতারা আত্মগোপনে চলে যান।

বর্তমানে এ আসনে প্রচারে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন জি কে গউছ। দীর্ঘদিন ধরেই মাঠের রাজনীতিতে সক্রিয় থেকে নিজের অবস্থান গড়ে তুলেছেন এ নেতা। হবিগঞ্জ পৌরসভায় টানা তিনবার মেয়র নির্বাচিত হন তিনি। এমনকি কারাগারে বন্দী থেকেও একবার বিজয়ী হয়েছেন। মূলত জি কে গউছ গত বছর থেকেই নির্বাচনী কার্যক্রমে নামেন।

অন্যদিকে এ আসনে জামায়াতে ইসলামী জেলা সেক্রেটারি অধ্যক্ষ কাজী মহসিন আহমদকে মনোনয়ন দেয়। এছাড়া গণঅধিকার পরিষদ দলটির কেন্দ্রীয় নেতা অ্যাডভোকেট চৌধুরী আশরাফুল বারী নোমানকে মনোনয়ন দিয়েছে। জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের প্রার্থী হাফেজ মাওলানা মাহবুবুর রহমান চৌধুরী হেলাল ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী আলহাজ মহিব উদ্দিন আহমদ সোহেল ভোট চেয়ে বিভিন্ন স্থানে গণসংযোগ এবং লিফলেট বিতরণ করছেন।

আলহাজ জি কে গউছ বলেন, ‘২০০৮ সালে একটি ষড়যন্ত্রমূলক নির্বাচন ছিল। ২০১৪ সালে ভোটারবিহীন নির্বাচন হয়, ২০১৮ সালে রাতের ভোট এবং ২০২৪ সালে হয়েছে আমি আর ডামির নির্বাচন। ২০১৮ সালে দলীয় সিদ্ধান্তে নির্বাচনে অংশ নিয়েছি। এক ঘণ্টায় আমি পেয়েছিলাম ৭০ হাজার ভোট। এবার দল আমাকে মনোনয়ন দিয়েছে। আমি তৃণমূল নেতাকর্মীদের নিয়ে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছি। মাঠে আমার পক্ষে গণজোয়ার তৈরি হয়েছে।’

জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি কাজী মহসিন আহমেদ বলেন, ‘নির্বাচন সামনে রেখে আমরা সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করছি। নির্বাচনী প্রচার অব্যাহত আছে।’

হবিগঞ্জ-৪ (চুনারুঘাট ও মাধবপুর) ॥ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মাঠে না থাকলেও বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামি দলগুলো মাঠে রয়েছে পুরোদমে। নির্বাচনকে ঘিরে দলগুলো শীতবস্ত্র বিতরণ, বিভিন্ন দিবস পালনসহ সভা-সমাবেশ করে চলেছে। নির্বাচনী কার্যক্রমও চলছে পুরোদমে।

চা বাগান অধ্যুষিত চুনারুঘাট ও মাধবপুর উপজেলার ভোট বরাবরই নৌকার পক্ষে যায়। তবে এবার প্রেক্ষাপট ভিন্ন থাকায় চা শ্রমিক ও সনাতন ভোটাররা কোনদিকে ভোট দেবেন এটাই দেখার বিষয়। আর তাদের ৪৫ হাজারের বেশি ভোটের ওপর নির্ভর করে এ আসনের জয়-পরাজয়। নির্বাচনকে ঘিরে এই আসনে মাঠে রয়েছেন বিএনপি প্রার্থী সৈয়দ মোহাম্মদ ফয়সল ও জামায়াত ইসলামীর প্রার্থী জেলা জামায়াতের আমির কাজী মাওলানা মুখলিছুর রহমান। জাতীয় পার্টির কোনো প্রার্থী কিংবা প্রচার-প্রচারণা নেই। খেলাফত মজলিস ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ প্রার্থী ঘোষণা করেছে।

নির্বাচনী পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নেমেছেন সৈয়দ মোহাম্মদ ফয়সল। তিনি নির্বাচনী পরিকল্পনার অংশ হিসেবে এলাকায় বিভিন্ন সামাজিক কর্মকা- পরিচালনা করছেন। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী পরিবর্তিত পরিস্থিতির পর থেকেই চুনারুঘাট ও মাধবপুরে মাঠ গোছানোর কাজ শুরু করেছিল। তারা বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে শুরু করে ইউনিয়ন ও উপজেলা এবং পৌর কমিটি গঠনের কাজ শেষ করেছে। জামায়াত এরইমধ্যেই জেলা আমির কাজী মাওলানা মোখলিছুর রহমান নেতাকর্মীদের নিয়ে প্রচারণা করছেন।

এছাড়া বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব অধ্যাপক আহমদ আব্দুল কাদের এ আসন থেকে নির্বাচন করবেন বলে শোনা যাচ্ছে। এর আগে ২০১৮ সালের নির্বাচনে জোটবদ্ধ হয়ে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে তিনি এ আসন থেকে অংশ নেন। সেবার মাত্র এক ঘণ্টায় ৪৫ হাজারের বেশি ভোট পেয়েছিলেন তিনি। এ ছাড়া ইসলামী আন্দোলনের নেতাকর্মীরাও মাঠে রয়েছেন।

সৈয়দ মোহাম্মদ ফয়সল বলেন, ‘আমিনুল ইসলাম ও শাম্মী আক্তারের দলীয় আনুগত্য বিরল দৃষ্টান্ত। জামায়াতের প্রার্থী মাওলানা মুখলিছুর রহমান প্রতিদ্বন্দ্বী থাকবেন, তবে আমরা সহনশীলতার সঙ্গে নির্বাচন করব। কোনো প্রতিহিংসা নয়, গণতন্ত্র ও ন্যায়ের পক্ষে কাজ করব। দল আমাকে মূল্যায়ন করেছে। আমি কৃতজ্ঞ। মাঠে প্রচার চালাচ্ছি। বিএনপির পক্ষে গণজোয়ার তৈরি হয়েছে।’

কাজী মাওলানা মুখলিছুর রহমান বলেন, ‘বিভিন্ন ইউনিটের কমিটিগুলো করা হচ্ছে। নির্বাচনের প্রস্তুতি হিসেবে মাঠে কাজ করে যাচ্ছি। চুনারুঘাট ও মাধবপুর উপজেলা ইন্ডাস্ট্রিয়াল জোন, চা বাগান অধ্যুষিত এলাকা। আমরা যদি সুযোগ পাই, তাহলে এখানে মালিক ও শ্রমিকদের মধ্যে দূরত্ব কমিয়ে নিয়ে আসার চেষ্টা করবো। মালিকপক্ষ যেন ন্যায্য মুনাফা পায় এবং শ্রমিকরাও যেন তাদের ন্যায্য মজুরি পান- সেই চেষ্টা থাকবে।’
খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় শ্রমবিষয়ক সম্পাদক প্রভাষক আব্দুল করিম বলেন, ‘আমাদের প্রার্থী আহম্মদ আব্দুল কাদের মাঠে রয়েছেন। আগামী নির্বাচনে তিনিই আমাদের প্রার্থী। নির্বাচনে বিএনপির সঙ্গে কিংবা ইসলামি দলগুলোর সঙ্গে জোটবদ্ধ হলে আমরা এ আসন চাইবো।’

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

আপডেট সময় ০৬:৪৩:৪৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৫
১ বার পড়া হয়েছে

হবিগঞ্জ চারটি আসনেই শক্তিশালী বিএনপি প্রচারে ব্যস্ত জামায়াত

আপডেট সময় ০৬:৪৩:৪৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৫

উন্নতমানের চায়ের কথা মনে পড়তেই যেক’টি জেলার নাম চোখের সামনে ভেসে ওঠে, তার মধ্যে হবিগঞ্জ অন্যতম। ৯টি উপজেলা নিয়ে গঠিত এ জেলার এক পাশে হাওড়। অপরপাশে পাহাড়ি এলাকা। মাঝে শিল্পাঞ্চল, গ্রাম ও শহর। এখানে ৯ উপজেলায় ৪টি সংসদীয় আসন রয়েছে।

ফেব্রুয়ারিতে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এই নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রার্থীদের পদচারণায় মুখর জেলার শহর, হাওড়, গ্রাম ও শিল্প এলাকা। আটঘাট বেঁধে মাঠে নেমেছেন বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, গণঅধিকার পরিষদসহ বিভিন্ন দলের প্রার্থীরা। বিএনপি তিনটি আসনে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেছে। এর মধ্যে হবিগঞ্জ-২ আসনে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ডা. সাখাওয়াত হাসান জীবন, হবিগঞ্জ-৩ আসনে বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক জি কে গউছ ও হবিগঞ্জ-৪ আসনে জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি সৈয়দ মো. ফয়সাল দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন।

তবে ফাঁকা রাখা হয়েছে হবিগঞ্জ-১ আসনটি। গুঞ্জন রয়েছে, এ আসনে ড. রেজা কিবরিয়া বিএনপির হয়ে লড়তে পারেন। জামায়াত থেকে চার আসনে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা হয়েছে। তারা হলেন- হবিগঞ্জ-১ আসনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী সিলেট মহানগরের সেক্রেটারি মো. শাহজাহান আলী, হবিগঞ্জ-২ জেলা ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি শেখ জিল্লুর রহমান আযমী, হবিগঞ্জ-৩ জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি অধ্যক্ষ কাজী মহসিন আহমদ ও হবিগঞ্জ-৪ আসনে জেলা জামায়াতের আমির কাজী মাওলানা মুখলিছুর রহমান। একইভাবে গণঅধিকার পরিষদসহ বিভিন্ন দলের প্রার্থীরা মাঠে রয়েছেন।

জেলার চারটি আসনে সবচেয়ে বেশি তৎপর বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী। বিএনপির টার্গেট সব আসন নিজেদের দখলে নেওয়া। আর ন্যূনতম ছাড় দিতে নারাজ জামায়াত। তারাও আসনগুলোতে বিজয়ী হতে নির্বাচনী মাঠ চষে বেড়াচ্ছে। এই দুই দলের মধ্যে নির্বাচনে লড়াইয়ের সম্ভাবনা ক্রমেই দৃশ্যমান হচ্ছে। ভোটাররা মনে করেন, চারটি আসনে বিএনপির সঙ্গে লড়াই হবে জামায়াতে ইসলামীর। এখানে প্রতিটি আসনে বিএনপির অবস্থান শক্তিশালী রয়েছে। তবে জাতীয় পার্টি অংশগ্রহণ করলে ভোটের হিসাব-নিকাশে পরিবর্তন আসতে পারে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন।

হবিগঞ্জ-১ (নবীগঞ্জ-বাহুবল) ॥ প্রবাসী অধ্যুষিত এ আসনে নির্বাচন এলেই বিভিন্ন দেশ থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশীরা দেশে আসেন। নিজ নিজ গ্রাম, তাদের নিজস্ব বলয়, পঞ্চায়েতদের নিয়ে বৈঠক করেন। আর মনোনয়ন না পেলে আবারও ফিরে যান প্রবাসে। এবারও তার ব্যতিক্রম নয়। নির্বাচনের আওয়াজ উঠতেই দেশে আসতে শুরু করেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মনোনয়নপ্রত্যাশীরা।

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট স্বৈরাচার শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর থেকেই জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আলোচনা শুরু হয় দেশজুড়ে। দিন অতিবাহিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সেই আলোচনা আরও জোরালো হচ্ছে।

এই আসনে জামায়াতে ইসলামী দলটির সিলেট মহানগরের সেক্রেটারি শাহজাহান আলীকে প্রার্থী ঘোষণা করেছে। ২২ নভেম্বর পর্যন্ত এ আসনে বিএনপি প্রার্থীর নাম ঘোষণা হয়নি। এখানে বিএনপির রয়েছে একাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশী। এর মধ্যে আছেন বিএনপি কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক এমপি (যুক্তরাজ্য প্রবাসী) আলহাজ শেখ সুজাত মিয়া। তিনি এই আসনের হেভিওয়েট প্রার্থী। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে উপনির্বাচনে দলীয় প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হয়ে চমক সৃষ্টি করেছিলেন তিনি। বিষয়টি তখন সারাদেশে তুমুল আলোচনার জন্ম দেয়।

তবে সুজাত মিয়াকে টপকে মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো বিএনপির সভাপতি শাহ মোজাম্মেল আলী নান্টু এবং ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মুখলেছুর রহমান মুখলিস। এ ছাড়া দলে নিজের বলয় তৈরি করে শক্ত অবস্থান নিয়েছেন সাবেক পৌর মেয়র ছাবির আহমদ চৌধুরী।

লন্ডন থেকে শেখ সুজাত মিয়া ও শিকাগো থেকে শাহ মোজাম্মেল আলী নান্টু দেশে এসেছেন। ৫ আগস্টের পরই দেশে এসেছিলেন মুখলেছুর রহমান মুখলিস। তারা দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষার পাশাপাশি মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে যোগ দিচ্ছেন, গণসংযোগ করছেন। এ ছাড়া গুঞ্জন রয়েছে সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়ার ছেলে ড. রেজা কিবরিয়াও প্রার্থী হতে পারেন। তবে তিনি কোন দল থেকে নির্বাচন করবেন তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। গণঅধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবুল হোসেন জীবনও প্রার্থী।
শেখ সুজাত মিয়া বলেন, ‘আমি দীর্ঘদিন ধরে নবীগঞ্জ-বাহুবলের মানুষের সঙ্গে কাজ করে আসছি। দল-মত নির্বিশেষে সবার সঙ্গে আমার একটি সুসম্পর্ক রয়েছে। এখানে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের শক্তিশালী অবস্থান রয়েছে। দলের ক্রান্তিকালে আমি কর্মীদের পাশে থেকে কাজ করেছি। তা ছাড়া ২০১১ সালের উপনির্বাচনে এ আসনে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে হারিয়ে এমপি নির্বাচিত হই। তাই দল যদি আমাকে মূল্যায়ন করে ইনশাআল্লাহ তারেক রহমানকে এ আসন উপহার দেব।’

ছাবির আহমদ চৌধুরী বলেন, ‘আমি নবীগঞ্জ পৌরসভার দুইবারের মেয়র ও তিনবার প্যানেল মেয়র ছিলাম। সে হিসেবে জনগণের সঙ্গে আমার গভীর সম্পর্ক রয়েছে। আমি বিগত দুটি নির্বাচনে মনোনয়ন চেয়েছিলাম। এবারও চেয়েছি। আশা করি দল আমাকে বিবেচনা করবে।’
শাহ মোজাম্মেল আলী নান্টু বলেন, ‘যদি দল আমাকে মনোনয়ন দেয়, তাহলে আমি নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত আছি। আমি জনগণের সেবা করতে চাই। তাই জনগণের জন্য কাজ করে যাচ্ছি।’

মুখলেছুর রহমান মুখলিস বলেন, ‘আমি আগামী দিনে বাহুবল-নবীগঞ্জ আসনে ধানের শীষের কান্ডারি। বিগত আন্দোলন-সংগ্রামে নেতাকর্মীদের পাশে থেকেছি। আন্দোলন করতে গিয়ে স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকারের রোষানলে পড়ে আমাকে দেশ ছেড়ে পালাতে হয়েছে। আমি বিশ্বাস করি আমাকে এ আসনে মনোনয়ন দিলে আসনটি দলকে উপহার দিতে পারব।’

জামায়াতপ্রার্থী শাহজাহান আলী বলেন, ‘দল দুই বছর আগেই আমার মনোনয়ন নিশ্চিত করেছে। আমি দীর্ঘদিন ধরে জনগণের সমস্যা লাঘবে কাজ করে আসছি। দল-মত নির্বিশেষে সবার সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রেখে কাজ করছি। সুযোগ পেলে জনগণের খেদমতে কাজ করতে চাই। আমার বিশ্বাস জনগণ আমাকে মূল্যায়ন করবে।’

হবিগঞ্জ-২ (বানিয়াচং-আজমিরীগঞ্জ) ॥ আসনটি জেলার সবচেয়ে ভাটি এলাকা। ৩ লাখ ৬৮ হাজার ৩৩৪ জন ভোটারের মধ্যে এ আসনে হিন্দু ভোটার প্রায় ১ লাখ। জয়-পরাজয় মূলত নির্ভর করে তাদের ভোটের ওপরই। ১৯৮৪ সালে জেলা ঘোষণার পর থেকে এই আসনে বিএনপি একবার ও জাতীয় পার্টির প্রার্থী দুইবার জয়ী হয়েছেন। বাকি সময় আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন।

আওয়ামী লীগ মাঠে নেই। এ সুযোগে দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলেছে বিএনপি। এ আসনে বিএনপির প্রার্থী হলেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ডা. সাখাওয়াত হাসান জীবন। বেশ শক্ত অবস্থান নিয়ে তিনি মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। এতে উজ্জীবিত হয়ে উঠেছেন নেতাকর্মীরা। ইউনিয়ন, ওয়ার্ড, গ্রাম সর্বত্রই নেতাকর্মীদের মধ্যে প্রাণচাঞ্চল্য এসেছে। প্রায় প্রতিদিনই চলছে সভা-সমাবেশ, ৩১ দফা বাস্তবায়নের লিফলেট বিতরণ ও গণসংযোগ। অপরদিকে আশা ছাড়ছে না জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ ও খেলাফত মজলিস।

অপরদিকে, ১৭ বছর মাঠের রাজনীতিতে অনেকটা অনুপস্থিত জামায়াত এখন নির্বিঘেœ দল গোছাচ্ছে। তারা উপজেলা, ইউনিয়ন, ওয়ার্ড কমিটি নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে। এ আসনে জামায়াত প্রার্থী হবিগঞ্জ জেলা ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি শেখ জিল্লুর রহমান আযমী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। আর খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় আমির মাওলানা আব্দুল বাছিত আজাদ এলাকায় ‘বড় হুজুর’ হিসেবে পরিচিত। হিন্দু, মুসলিম সব ধর্মের মানুষই তার ভক্ত। ধর্মীয় শিক্ষক হিসেবেও তার যথেষ্ট সুখ্যাতি রয়েছে। তাই তাকে পুঁজি করেই এগিয়ে যেতে চায় দলটি।

ডা. সাখাওয়াত হাসান জীবন বলেন, ‘আগামী নির্বাচন হবে একটি চ্যালেঞ্জের নির্বাচন। মানুষ ১৬ বছর নিজেদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারেনি। কাজেই আগামী নির্বাচনে জনগণের ভালোবাসা ছাড়া বিজয়ী হওয়া সম্ভব না। আমি ১৮ বছর যাবৎ মাঠে ছিলাম, আছি এবং থাকবো। দল আমাকে মনোনয়ন দিয়েছে। আমি তৃণমূল নেতাকর্মীদের নিয়ে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছি।’

অ্যাডভোকেট জিল্লুর রহমান আযমী বলেন, ‘বানিয়াচং ও আজমিরীগঞ্জ উপজেলায় প্রায় ১২ বছর আগে জামায়াতে ইসলামীর দুইজন ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। ১২ বছরে আমাদের দলীয় কার্যক্রম শতগুণ বেড়েছে। সার্বিক মূল্যায়নে জনপ্রিয়তার দিক থেকে জামায়াতে ইসলামী এগিয়ে আছে। ইনশাআল্লাহ এ আসনে আমরা বিপুল ভোটে নির্বাচিত হব।’

মাওলানা আব্দুল বাছিত আজাদ (বড় হুজুর) বলেন, ‘খেলাফত মজলিস কাউকে আগে থেকে মনোনয়ন দেয় না। দলের শূরা কমিটি যাকে মনোনয়ন দেন তিনি নির্বাচন করবেন। শূরা কমিটি যদি আমাকে মনোনয়ন দেন তাহলে আমি নির্বাচন করার জন্য প্রস্তুত আছি। আশা করি খেলাফত প্রতিষ্ঠায় জনগণ খেলাফত মজলিসকে বিজয়ী করবে।’

হবিগঞ্জ-৩ (শায়েস্তাগঞ্জ-হবিগঞ্জ- লাখাই) ॥ এ আসনেও চলছে নির্বাচনী ডামাডোল। এখানে ব্যাপকভাবে প্রচার চালাচ্ছেন বিএনপিপ্রার্থী দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আলহাজ জি কে গউছ। সদর আসন হওয়ায় জেলার গুরুত্বপূর্ণ আসন এটি। এখান থেকেই নিয়ন্ত্রণ হয় পুরো জেলা। এর ওপরই নির্ভর করে জেলার রাজনীতি। বিতর্কিত নির্বাচনের মাধ্যমে টানা চারবার এ আসনটি দখলে রেখেছিল আওয়ামী লীগ। তবে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দলটির নেতারা আত্মগোপনে চলে যান।

বর্তমানে এ আসনে প্রচারে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন জি কে গউছ। দীর্ঘদিন ধরেই মাঠের রাজনীতিতে সক্রিয় থেকে নিজের অবস্থান গড়ে তুলেছেন এ নেতা। হবিগঞ্জ পৌরসভায় টানা তিনবার মেয়র নির্বাচিত হন তিনি। এমনকি কারাগারে বন্দী থেকেও একবার বিজয়ী হয়েছেন। মূলত জি কে গউছ গত বছর থেকেই নির্বাচনী কার্যক্রমে নামেন।

অন্যদিকে এ আসনে জামায়াতে ইসলামী জেলা সেক্রেটারি অধ্যক্ষ কাজী মহসিন আহমদকে মনোনয়ন দেয়। এছাড়া গণঅধিকার পরিষদ দলটির কেন্দ্রীয় নেতা অ্যাডভোকেট চৌধুরী আশরাফুল বারী নোমানকে মনোনয়ন দিয়েছে। জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের প্রার্থী হাফেজ মাওলানা মাহবুবুর রহমান চৌধুরী হেলাল ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী আলহাজ মহিব উদ্দিন আহমদ সোহেল ভোট চেয়ে বিভিন্ন স্থানে গণসংযোগ এবং লিফলেট বিতরণ করছেন।

আলহাজ জি কে গউছ বলেন, ‘২০০৮ সালে একটি ষড়যন্ত্রমূলক নির্বাচন ছিল। ২০১৪ সালে ভোটারবিহীন নির্বাচন হয়, ২০১৮ সালে রাতের ভোট এবং ২০২৪ সালে হয়েছে আমি আর ডামির নির্বাচন। ২০১৮ সালে দলীয় সিদ্ধান্তে নির্বাচনে অংশ নিয়েছি। এক ঘণ্টায় আমি পেয়েছিলাম ৭০ হাজার ভোট। এবার দল আমাকে মনোনয়ন দিয়েছে। আমি তৃণমূল নেতাকর্মীদের নিয়ে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছি। মাঠে আমার পক্ষে গণজোয়ার তৈরি হয়েছে।’

জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি কাজী মহসিন আহমেদ বলেন, ‘নির্বাচন সামনে রেখে আমরা সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করছি। নির্বাচনী প্রচার অব্যাহত আছে।’

হবিগঞ্জ-৪ (চুনারুঘাট ও মাধবপুর) ॥ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মাঠে না থাকলেও বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামি দলগুলো মাঠে রয়েছে পুরোদমে। নির্বাচনকে ঘিরে দলগুলো শীতবস্ত্র বিতরণ, বিভিন্ন দিবস পালনসহ সভা-সমাবেশ করে চলেছে। নির্বাচনী কার্যক্রমও চলছে পুরোদমে।

চা বাগান অধ্যুষিত চুনারুঘাট ও মাধবপুর উপজেলার ভোট বরাবরই নৌকার পক্ষে যায়। তবে এবার প্রেক্ষাপট ভিন্ন থাকায় চা শ্রমিক ও সনাতন ভোটাররা কোনদিকে ভোট দেবেন এটাই দেখার বিষয়। আর তাদের ৪৫ হাজারের বেশি ভোটের ওপর নির্ভর করে এ আসনের জয়-পরাজয়। নির্বাচনকে ঘিরে এই আসনে মাঠে রয়েছেন বিএনপি প্রার্থী সৈয়দ মোহাম্মদ ফয়সল ও জামায়াত ইসলামীর প্রার্থী জেলা জামায়াতের আমির কাজী মাওলানা মুখলিছুর রহমান। জাতীয় পার্টির কোনো প্রার্থী কিংবা প্রচার-প্রচারণা নেই। খেলাফত মজলিস ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ প্রার্থী ঘোষণা করেছে।

নির্বাচনী পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নেমেছেন সৈয়দ মোহাম্মদ ফয়সল। তিনি নির্বাচনী পরিকল্পনার অংশ হিসেবে এলাকায় বিভিন্ন সামাজিক কর্মকা- পরিচালনা করছেন। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী পরিবর্তিত পরিস্থিতির পর থেকেই চুনারুঘাট ও মাধবপুরে মাঠ গোছানোর কাজ শুরু করেছিল। তারা বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে শুরু করে ইউনিয়ন ও উপজেলা এবং পৌর কমিটি গঠনের কাজ শেষ করেছে। জামায়াত এরইমধ্যেই জেলা আমির কাজী মাওলানা মোখলিছুর রহমান নেতাকর্মীদের নিয়ে প্রচারণা করছেন।

এছাড়া বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব অধ্যাপক আহমদ আব্দুল কাদের এ আসন থেকে নির্বাচন করবেন বলে শোনা যাচ্ছে। এর আগে ২০১৮ সালের নির্বাচনে জোটবদ্ধ হয়ে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে তিনি এ আসন থেকে অংশ নেন। সেবার মাত্র এক ঘণ্টায় ৪৫ হাজারের বেশি ভোট পেয়েছিলেন তিনি। এ ছাড়া ইসলামী আন্দোলনের নেতাকর্মীরাও মাঠে রয়েছেন।

সৈয়দ মোহাম্মদ ফয়সল বলেন, ‘আমিনুল ইসলাম ও শাম্মী আক্তারের দলীয় আনুগত্য বিরল দৃষ্টান্ত। জামায়াতের প্রার্থী মাওলানা মুখলিছুর রহমান প্রতিদ্বন্দ্বী থাকবেন, তবে আমরা সহনশীলতার সঙ্গে নির্বাচন করব। কোনো প্রতিহিংসা নয়, গণতন্ত্র ও ন্যায়ের পক্ষে কাজ করব। দল আমাকে মূল্যায়ন করেছে। আমি কৃতজ্ঞ। মাঠে প্রচার চালাচ্ছি। বিএনপির পক্ষে গণজোয়ার তৈরি হয়েছে।’

কাজী মাওলানা মুখলিছুর রহমান বলেন, ‘বিভিন্ন ইউনিটের কমিটিগুলো করা হচ্ছে। নির্বাচনের প্রস্তুতি হিসেবে মাঠে কাজ করে যাচ্ছি। চুনারুঘাট ও মাধবপুর উপজেলা ইন্ডাস্ট্রিয়াল জোন, চা বাগান অধ্যুষিত এলাকা। আমরা যদি সুযোগ পাই, তাহলে এখানে মালিক ও শ্রমিকদের মধ্যে দূরত্ব কমিয়ে নিয়ে আসার চেষ্টা করবো। মালিকপক্ষ যেন ন্যায্য মুনাফা পায় এবং শ্রমিকরাও যেন তাদের ন্যায্য মজুরি পান- সেই চেষ্টা থাকবে।’
খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় শ্রমবিষয়ক সম্পাদক প্রভাষক আব্দুল করিম বলেন, ‘আমাদের প্রার্থী আহম্মদ আব্দুল কাদের মাঠে রয়েছেন। আগামী নির্বাচনে তিনিই আমাদের প্রার্থী। নির্বাচনে বিএনপির সঙ্গে কিংবা ইসলামি দলগুলোর সঙ্গে জোটবদ্ধ হলে আমরা এ আসন চাইবো।’