ঢাকা ০২:৪৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

হিসাব মিলছে না পকেটের, নিত্যপণ্যের দাম চড়া

কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধিঃ

ভারী বর্ষণে সবজির উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। আবার অনেক সবজি বাগান পানি জমে নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে নিত্য প্রয়োজনীয় সবজির সরবরাহ কমছে। আর সরবরাহ কমার কারণেই বাড়তি মূল্য গুনতে হচ্ছে ক্রেতা-বিক্রেতাদের। পেঁয়াজ, আলু, বেগুন, চিচিংগা, ঝিঙা, মাছসহ সব ধরনের নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম চড়া। এতে হিমশিম খেতে হচ্ছে নিম্ন আয়ের মানুষদের। দাম বেশি হওয়ার কারণে বাজারে এসে দিশেহারা হয়ে পড়ছেন অনেকেই। কেউবা পরিমাণের তুলনায় কম কিনছেন। চড়া দামের কারণে বেচাকেনাও কম হচ্ছে বলে জানান বিক্রেতারা। কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া পৌরসদরের কাঁচা বাজার ও মাছ মহাল ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।

জানা গেছে, এখন বর্ষা মৌসুম। এসময়ে সবজির পর্যাপ্ত উৎপাদন থাকার কথা থাকলেও ভারী বর্ষণ এবং একটানা বৃষ্টির কারণে সবজির উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। আবার অনেক সবজি বাগান পানি জমে নষ্ট হয়ে গেছে। এজন্য নিত্য প্রয়োজনীয় সবজির সরবরাহ কমছে। আর সরবরাহ কমার কারণেই বাড়তি মূল্য গুনতে হচ্ছে ক্রেতা-বিক্রেতাদের।

এদিকে পুকুর, ফিশারি ও জলাশয়ে পানিতে টুইটম্বুর থাকার কারণে মাছ ধরছেন না মালিকরা। এর চাপ পড়েছে স্থানীয় বাজারগুলোতে। এসব জলাশয় থেকে মাছ না ধরার কারণে টান পড়ছে। ফলে চাহিদার তুলনায় কম পাওয়া যাচ্ছে মাছ। এজন্য দামও কিছুটা চড়া।

পৌরসদর বাজারের সবজি মহল ঘুরে জানা গেছে, শুক্রবার (৫ জুলাই) আলু প্রতি কেজি ৬০ টাকা, ঝিঙা ৮০ টাকা, চিচিংগা ৬০ টাকা, ঢেঁড়স ৮০ টাকা, করলা ১০০ টাকা বেগুন ১০০টাকা, বরবটি ৮০ টাকা, টমেটো ১৮০ টাকা, কাঁচা পেঁপে ৬০ টাকা, পটল ৬০ টাকা, ধুন্দল ৫০ টাকা ও কচুর মুখি ১০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। পেঁয়াজ ১০০ টাকা, রসুন ২০০ টাকা ও আদা ২৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

মাছ মহাল ঘুরে দেখা গেছে, একমাত্র পাঙাস মাছ কিছুটা কম দামে বিক্রি হচ্ছে। তাছাড়া অন্যান্য সকল জাতের মাছ ৩৫০ টাকার ওপরে কেজি প্রতি বিক্রি হচ্ছে।

মাছ বিক্রেতারা জানান, চাহিদার তুলনায় বাজারে মাছ কম। এজন্য দাম কিছুটা বেশি। টানা ভারী বর্ষণের কারণে পুকুর, ফিশারি কিংবা জলাশয় থেকে মাছ আহরণ বন্ধ থাকায় বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি হয়েছে। বৃষ্টি কমলেই সরবরাহ বাড়বে বলে জানান তারা।

সবজি ক্রেতা নয়ন মিয়া বলেন, বাজার করতে এসেছি। এসে পড়েছি মহাবিপদে। যে টাকা নিয়ে এসেছি তা দিয়ে মাছ-সবজি কিনতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। মাছ কিনতেই ৪০০-৫০০ টাকা লেগেছে। সবজির বাজারও চড়া। বড় পরিবারে সবজি লাগে বেশি। যে দাম তাতে পরিমাণের চেয়ে কম কেনা ছাড়া উপায় নেই।

আরেক ক্রেতা আবুল হাসেন জানান, একটি পরিবারের এক বেলার খাবারের জন্য সবজি কিনতেই গুনতে হচ্ছে ২৪০-২৫০ টাকা। আমাদের মতো নিম্নআয়ের মানুষের জন্য যা অত্যন্ত কষ্টকর হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এতে হিসাব মিলছে না পকেটের।

বাজার করতে এসে বিক্রেতার কাছে সবজির দাম জিজ্ঞেস করার পর এক নারীকে বলতে শোনা গেছে, ২০-৩০ টাকা কেজির পেঁপের দাম ৬০ টাকা। অন্য সবজি কিনব কীভাবে।

বিক্রেতারা জানান, সবজির মৌসুম থাকলেও ভারী বর্ষণের কারণে অনেক জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে সবজি বাগান নষ্ট হয়ে গেছে। সেজন্য সবজির সরবরাহ কমে গেছে। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকার কারণে দাম কিছুটা বেশি। তাছাড়া বেশিরভাগ সবজিই অন্য এলাকা থেকে আমদানি করে এখানে আনছেন পাইকাররা। পরিবহন খরচ বেশি হওয়ার কারণেও দাম বাড়তি।

সবজি বিক্রেতা রুবেল মিয়া বলেন, বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। এজন্য আমাদেরকেও বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। কিছুই করার নেই। বেশিরভাগ সবজিই আমদানি করা। কাঁচাবাজারের দর একেক দিন একেক রকম। দিন ভালো হলে সবজির দাম কিছুটা কমতে পারে।

সুরুজ আলী নামে সবজি বিক্রেতা বলেন, দাম বেশি হওয়ার কারণে বিক্রিও কমেছে। বেশি দামে সবজি কিনে আনার পর ক্রেতার অভাবে প্রতিদিনই অনেক সবজি নষ্ট হচ্ছে। প্রতিযোগিতার বাজার কম-বেশি সব ধরনের সবজিই রাখতে হচ্ছে। তবে দামের কারণে বেচা কমছে, কাঁচা সবজি নির্দিষ্ট সময়ের পর আর টাটকা থাকে না। অনেক সবজিতে পচন ধরে। ফলে লোকসান গুনতে হচ্ছে।

শামীম মিয়া নামে সবজি পাইকার জানান, অধিকাংশ সবজি উত্তরবঙ্গ থেকে আমদানি করে আনতে হয়। আগের চেয়ে পরিবহন খরচ বেশি। তাছাড়া চাহিদার তুলনায় পর্যাপ্ত পরিমাণে সবজি পাওয়া যাচ্ছে না। উৎপাদন কম হওয়ার কারণে সবজির দাম কিছুটা বেশি।

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

আপডেট সময় ০৮:১১:৫০ অপরাহ্ন, শনিবার, ৬ জুলাই ২০২৪
৩২ বার পড়া হয়েছে

হিসাব মিলছে না পকেটের, নিত্যপণ্যের দাম চড়া

আপডেট সময় ০৮:১১:৫০ অপরাহ্ন, শনিবার, ৬ জুলাই ২০২৪

ভারী বর্ষণে সবজির উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। আবার অনেক সবজি বাগান পানি জমে নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে নিত্য প্রয়োজনীয় সবজির সরবরাহ কমছে। আর সরবরাহ কমার কারণেই বাড়তি মূল্য গুনতে হচ্ছে ক্রেতা-বিক্রেতাদের। পেঁয়াজ, আলু, বেগুন, চিচিংগা, ঝিঙা, মাছসহ সব ধরনের নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম চড়া। এতে হিমশিম খেতে হচ্ছে নিম্ন আয়ের মানুষদের। দাম বেশি হওয়ার কারণে বাজারে এসে দিশেহারা হয়ে পড়ছেন অনেকেই। কেউবা পরিমাণের তুলনায় কম কিনছেন। চড়া দামের কারণে বেচাকেনাও কম হচ্ছে বলে জানান বিক্রেতারা। কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া পৌরসদরের কাঁচা বাজার ও মাছ মহাল ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।

জানা গেছে, এখন বর্ষা মৌসুম। এসময়ে সবজির পর্যাপ্ত উৎপাদন থাকার কথা থাকলেও ভারী বর্ষণ এবং একটানা বৃষ্টির কারণে সবজির উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। আবার অনেক সবজি বাগান পানি জমে নষ্ট হয়ে গেছে। এজন্য নিত্য প্রয়োজনীয় সবজির সরবরাহ কমছে। আর সরবরাহ কমার কারণেই বাড়তি মূল্য গুনতে হচ্ছে ক্রেতা-বিক্রেতাদের।

এদিকে পুকুর, ফিশারি ও জলাশয়ে পানিতে টুইটম্বুর থাকার কারণে মাছ ধরছেন না মালিকরা। এর চাপ পড়েছে স্থানীয় বাজারগুলোতে। এসব জলাশয় থেকে মাছ না ধরার কারণে টান পড়ছে। ফলে চাহিদার তুলনায় কম পাওয়া যাচ্ছে মাছ। এজন্য দামও কিছুটা চড়া।

পৌরসদর বাজারের সবজি মহল ঘুরে জানা গেছে, শুক্রবার (৫ জুলাই) আলু প্রতি কেজি ৬০ টাকা, ঝিঙা ৮০ টাকা, চিচিংগা ৬০ টাকা, ঢেঁড়স ৮০ টাকা, করলা ১০০ টাকা বেগুন ১০০টাকা, বরবটি ৮০ টাকা, টমেটো ১৮০ টাকা, কাঁচা পেঁপে ৬০ টাকা, পটল ৬০ টাকা, ধুন্দল ৫০ টাকা ও কচুর মুখি ১০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। পেঁয়াজ ১০০ টাকা, রসুন ২০০ টাকা ও আদা ২৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

মাছ মহাল ঘুরে দেখা গেছে, একমাত্র পাঙাস মাছ কিছুটা কম দামে বিক্রি হচ্ছে। তাছাড়া অন্যান্য সকল জাতের মাছ ৩৫০ টাকার ওপরে কেজি প্রতি বিক্রি হচ্ছে।

মাছ বিক্রেতারা জানান, চাহিদার তুলনায় বাজারে মাছ কম। এজন্য দাম কিছুটা বেশি। টানা ভারী বর্ষণের কারণে পুকুর, ফিশারি কিংবা জলাশয় থেকে মাছ আহরণ বন্ধ থাকায় বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি হয়েছে। বৃষ্টি কমলেই সরবরাহ বাড়বে বলে জানান তারা।

সবজি ক্রেতা নয়ন মিয়া বলেন, বাজার করতে এসেছি। এসে পড়েছি মহাবিপদে। যে টাকা নিয়ে এসেছি তা দিয়ে মাছ-সবজি কিনতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। মাছ কিনতেই ৪০০-৫০০ টাকা লেগেছে। সবজির বাজারও চড়া। বড় পরিবারে সবজি লাগে বেশি। যে দাম তাতে পরিমাণের চেয়ে কম কেনা ছাড়া উপায় নেই।

আরেক ক্রেতা আবুল হাসেন জানান, একটি পরিবারের এক বেলার খাবারের জন্য সবজি কিনতেই গুনতে হচ্ছে ২৪০-২৫০ টাকা। আমাদের মতো নিম্নআয়ের মানুষের জন্য যা অত্যন্ত কষ্টকর হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এতে হিসাব মিলছে না পকেটের।

বাজার করতে এসে বিক্রেতার কাছে সবজির দাম জিজ্ঞেস করার পর এক নারীকে বলতে শোনা গেছে, ২০-৩০ টাকা কেজির পেঁপের দাম ৬০ টাকা। অন্য সবজি কিনব কীভাবে।

বিক্রেতারা জানান, সবজির মৌসুম থাকলেও ভারী বর্ষণের কারণে অনেক জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে সবজি বাগান নষ্ট হয়ে গেছে। সেজন্য সবজির সরবরাহ কমে গেছে। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকার কারণে দাম কিছুটা বেশি। তাছাড়া বেশিরভাগ সবজিই অন্য এলাকা থেকে আমদানি করে এখানে আনছেন পাইকাররা। পরিবহন খরচ বেশি হওয়ার কারণেও দাম বাড়তি।

সবজি বিক্রেতা রুবেল মিয়া বলেন, বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। এজন্য আমাদেরকেও বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। কিছুই করার নেই। বেশিরভাগ সবজিই আমদানি করা। কাঁচাবাজারের দর একেক দিন একেক রকম। দিন ভালো হলে সবজির দাম কিছুটা কমতে পারে।

সুরুজ আলী নামে সবজি বিক্রেতা বলেন, দাম বেশি হওয়ার কারণে বিক্রিও কমেছে। বেশি দামে সবজি কিনে আনার পর ক্রেতার অভাবে প্রতিদিনই অনেক সবজি নষ্ট হচ্ছে। প্রতিযোগিতার বাজার কম-বেশি সব ধরনের সবজিই রাখতে হচ্ছে। তবে দামের কারণে বেচা কমছে, কাঁচা সবজি নির্দিষ্ট সময়ের পর আর টাটকা থাকে না। অনেক সবজিতে পচন ধরে। ফলে লোকসান গুনতে হচ্ছে।

শামীম মিয়া নামে সবজি পাইকার জানান, অধিকাংশ সবজি উত্তরবঙ্গ থেকে আমদানি করে আনতে হয়। আগের চেয়ে পরিবহন খরচ বেশি। তাছাড়া চাহিদার তুলনায় পর্যাপ্ত পরিমাণে সবজি পাওয়া যাচ্ছে না। উৎপাদন কম হওয়ার কারণে সবজির দাম কিছুটা বেশি।