ঢাকা ০১:০০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

১৫ বছরে দেশে ৭০০ মানুষ গুমের শিকার

শায়েস্তাগঞ্জের বাণী ডেস্ক ,

দেশে আওয়ামী লীগের ১৫ বছরের শাসনামলে ৭শ’ মানুষ গুমের শিকার হয়েছেন বলে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) একটি ফেসবুক পেজে দাবি করা হয়েছে।

তবে মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) তথ্য বলেছে, এ সময় দেশে গুমের শিকার হয়েছেন ৬১১ জন। অধিকার বলছে, ৬৭৭ জন গুমের শিকার হয়েছেন, এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশনের ২০২৩ সালের প্রতিবেদন মতে, গত ১৩ বছরে গুমের শিকার হয়েছেন ৬২৩ জন।

এদিকে গুমের শিকার হওয়া ভুক্তভোগীদের সংগঠন ‘মায়ের ডাক’-এর পক্ষ থেকে প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তরের (ডিজিএফআই) মহাপরিচালকের কাছে সম্প্রতি বিভিন্ন সময় গুমের শিকার ১৫৮ ব্যক্তির একটি তালিকা দেওয়া হয়েছে।

জানা যায়, গুম হওয়া মানুষের একটি বড় অংশই আর ফিরে আসেননি। আবার দীর্ঘদিন অজ্ঞাত স্থানে থাকার পর যারা ফিরে এসেছেন, তারাও এ নিয়ে ‘টু’ শব্দটি করেননি। তবে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর বদলে গেছে প্রেক্ষাপট। গুমের শিকার হওয়া ব্যক্তিদের কেউ কেউ কথাকথিত ‘আয়না ঘর’ থেকে ফিরে এসে তাদের ওপর নৃশংস নির্যাতনের কথা তুলে ধরেছেন। গুমের শিকার ব্যক্তিদের সন্ধানে দেশের অন্তর্র্বর্তী সরকার সম্প্রতি পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিশন গঠন করেছে। এ ছাড়া গতকাল বৃহস্পতিবার অনুস্বাক্ষর করেছে আন্তর্জাতিক ‘কনভেনশন ফর প্রটেকশন অব অল পারসন্স অ্যাগেইনস্ট এনফোর্সড ডিসঅ্যাপিয়্যারেন্স’ সনদে। দেশের এমন প্রেক্ষাপটে আজ বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও পালিত হচ্ছে গুমের শিকার ব্যক্তিদের স্মরণে আন্তর্জাতিক ‘গুম প্রতিরোধ দিবস’।

গুমের অভিযোগ শুধু বাংলাদেশেই নয়, এ সমস্যা বিশ্বের বিভিন্ন দেশেও রয়েছে। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের তথ্যমতে, লাতিন আমেরিকার দেশগুলোয় ১৯৭০ ও ৮০-র দশকে কেবল অবৈধ অস্ত্র কারবারি ও ভিন্ন মতাবলম্বীরাই গুম হতেন। কিন্তু বর্তমানে নৃ-তাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী, মাদক কারবারি ও মানব পাচারকারীরাও গুমের শিকার হচ্ছেন। আর বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোয় রাজনৈতিক মত দমনে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় প্রতিনিয়ত গুমের ঘটনা ঘটছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

দেশে গুম-অপহরণ নিয়ে কাজ করা দেশি-বিদেশি বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন, রাজনৈতিক দল ও ভুক্তভোগী পরিবারের দেওয়া গুম হওয়া ব্যক্তিদের সংখ্যার তথ্যে কিছুটা গরমিল থাকলেও গত ১৫ বছরে প্রায় ৭শ’ মানুষ গুমের তথ্য পাওয়া গেছে। এ পরিস্থিতি অত্যন্ত উদ্বেগের বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।

মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) তথ্য বলেছে, গত ১৫ বছরে (২০০৯-২০২৩) দেশে গুমের শিকার হয়েছেন ৬১১ জন। এর মধ্যে ৭৮ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। অপহরণের পর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে ৬২ জনকে। ৭৩ জনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। এখনো নিখোঁজ ৩৮৩ জন। ২০১৬ সালে সবচেয়ে বেশি ৯৭ জন গুম হন।

পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০০৯ সালে ৩ জন, ২০১০ সালে ৪৭ জন, ২০১১ সালে ৫৯ জন, ২০১২ সালে ৫৬ জন, ২০১৩ সালে ৭২ জন, ২০১৪ সালে ৮৮ জন, ২০১৫ সালে ৫৫ জন, ২০১৬ সালে ৯৭ জন, ২০১৭ সালে ৬০ জন, ২০১৮ সালে ৩৪ জন, ২০১৯ সালে ১৩ জন, ২০২০ সালে ৬ জন, ২০২১ সালে ৭ জন, ২০২২ সালে ৫ জন ও ২০২৩ সালে ৯ জন গুমের শিকার হন। সংস্থাটির জ্যেষ্ঠ সমন্বয়ক আবু আহমেদ ফয়জুল কবির (ফরিদ) বলেন, ‘২০০৯ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত গণমাধ্যম ও নিজস্ব অনুসন্ধানের মাধ্যমে আমরা ৬১১ জনের গুমের বিষয়ে তথ্য পেয়েছি। গুমের পর কিছু মানুষ ফিরে এসেছেন, কাউকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। আবার অনেকের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে ৩৮৩ জন এখনো নিখোঁজ। নিখোঁজের অর্থ হচ্ছে তারা ফিরে আসেননি কিংবা ফিরে এলেও আমাদের কাছে তার তথ্য নেই।’

মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের তথ্য বলছে, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের ২০০৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ৬৭৭ জন গুমের শিকার হন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৯৮ জন গুমের শিকার হন ২০১৮ সালে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বছর। এ ছাড়া ২০০৯ সালে তিনজন, ২০১০ সালে ১৯, ২০১১ সালে ৩২, ২০১২ সালে ২৬, ২০১৩ সালে ৫৪, ২০১৪ সালে ৩৯, ২০১৫ সালে ৬৭, ২০১৬ সালে ৯০, ২০১৭ সালে ৮৮, ২০১৯ সালে ৩৪, ২০২০ সালে ৩১, ২০২১ সালে ২৩, ২০২২ সালে ২১ ও ২০২৩ সালে ৫২ জন গুমের শিকার হন।

হংকংভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশনের (এএইচআরসি) হিসাবে ২০২৩ সালের এক প্রতিবেদনে জানা যায়, গত ১৩ বছরে গুমের শিকার ৬২৩ জন। সংস্থাটি বলছে, তাদের মধ্যে ৮৪ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। জীবিত অবস্থায় ফিরে এসেছেন বা পরবর্তী সময়ে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে ৩৮৩ জনকে। আর তিনজনের বিষয়ে কোনো তথ্য জানা যায়নি। এখনো নিখোঁজ রয়েছেন ১৫৩ ব্যক্তি।

এ ছাড়া ১৮ আগস্ট প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তরের (ডিজিএফআই) মহাপরিচালকের কাছে বিভিন্ন সময় গুমের শিকার ১৫৮ ব্যক্তির একটি তালিকা দিয়েছে ভুক্তভোগীদের সংগঠন ‘মায়ের ডাক’।

সংগঠনের সমন্বয়কারী সানজিদা ইসলাম বলেন, ‘রাজনৈতিক কারণে ২০১৩ সাল থেকে শুরু করে চলতি বছরের ৫ আগস্ট পর্যন্ত যত ব্যক্তিকে গুম ও খুন করা হয়েছে, তা তদন্ত করতে হবে। এসব ঘটনার সঙ্গে ডিজিএফআই, র‌্যাব, পুলিশ, ডিবিসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর যেসব কর্মকর্তা জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে।’

মানবাধিকার কমিশনের মতে, গুম একটি অপরাধ এবং তা মানবাধিকার লঙ্ঘন। যদিও বিশ্বজুড়ে মানুষকে গুম করার ক্ষেত্রে এটি একটি চর্চা হিসেবে ছড়িয়ে পড়েছে। প্রথমদিকে যুদ্ধের সময় শত্রুর মৃতদেহ স্বদেশে পাঠানো এড়াতে কর্তৃত্ববাদী শাসনের একটি নিকৃষ্ট কৌশল হিসেবে (১৯৭০ এর দশকে ল্যাটিন আমেরিকা জুড়ে যেমনটা আমরা ঘটতে দেখি), অথবা গৃহযুদ্ধের সময় শত্রু হিসেবে বিবেচিত ব্যক্তিদের সন্ত্রাসীর তকমা দিতে (স্পেন, বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা, রুয়ান্ডা, সিরিয়া এবং ইরাকে যার সবচেয়ে পরিচিত উদাহরণ রয়েছে) জোরপূর্বক গুম করা হতো। পরে সংঘটিত অপরাধ চক্রের মাধ্যমে এ ধরনের অনুশীলন আরও বেশি শাণিত ও প্রসারিত হয়েছে। এটি অত্যন্ত উদ্বেগের।

এমন প্রেক্ষাপটে ২০০৬ সালের ২০ ডিসেম্বর গুম হওয়া সব ব্যক্তির জন্য আন্তর্জাতিক সনদ হিসেবে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে গৃহীত হয়। ২০১০ সালের ডিসেম্বরে ‘ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন ফর প্রটেকশন অব অল পারসন্স অ্যাগেইনস্ট এনফোর্সড ডিসঅ্যাপিয়্যারেন্স’ সম্মেলনে যে আন্তর্জাতিক সনদ কার্যকর হয় তাতে ৩০ আগস্টকে আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ দিবস ঘোষণা করা হয়। ২০১১ সাল থেকে প্রতি বছর ৩০ আগস্ট গুম হওয়া মানুষগুলোকে স্মরণ এবং সেই সঙ্গে তাদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানানোর জন্য দিবসটি পালন করা হচ্ছে বিশ্বব্যাপী। আর গুমের শিকার হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে রাজনৈতিক নেতাকর্মীর পাশাপাশি আছেন সাধারণ লোকজনও। বাংলাদেশেও দিবসটি পালিত হয়ে আসছে।

গুম-বিষয়ক আন্তর্জাতিক কনভেনশনে বাংলাদেশ এদিকে, ‘ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন ফর দ্য প্রটেকশন অব অল পারসন্স ফ্রম এনফোর্সড ডিসেপিয়ারেন্স’-এ বাংলাদেশের পক্ষভুক্ত হওয়ার প্রস্তাব অনুমোদন করেছে অন্তর্র্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ। বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন ও প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় যমুনায় উপদেষ্টামণ্ডলীর সভা চলাকালে কনভেনশনে সই করেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই চুক্তিতে বাংলাদেশের সইয়ের উদ্যোগটি নেয়।

সংশ্লিষ্টরা জানান, বর্তমান অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকারের অগ্রাধিকারমূলক বিষয়ের অন্যতম হলো প্রত্যেক নাগরিকের মানবাধিকার নিশ্চিত করা ও এর পরিপ্রেক্ষিত প্রয়োজনীয় প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার করা। এ লক্ষ্যে অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকার অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ‘ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন ফর দ্য প্রটেকশন অব অল পারসন্স ফ্রম এনফোর্সড ডিসেপিয়ারেন্স’ (আইসিপিপিইডি) শীর্ষক আন্তর্জাতিক কনভেনশনে বাংলাদেশের পক্ষভুক্ত হওয়ার বিষয়ে কার্যক্রম গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয়। এটি জাতিসংঘের আওতাধীন একমাত্র আন্তর্জাতিক কনভেনশন, যা বলপূর্বক গুমকে কেন্দ্র করে গৃহীত হয়েছে। যার লক্ষ্য হলো জোরপূর্বক অন্তর্ধান বা গুম প্রতিরোধ করা, ভুক্তভোগীদের জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা এবং এই গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বৃদ্ধি করা। এখন পর্যন্ত বিশ্বের ৭৫টি দেশ এই সনদে যুক্ত হয়েছে।

এ বিষয়ে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ‘ওই কনভেনশনে মোট ৪৫টি অনুচ্ছেদ আছে এবং পক্ষভুক্ত যে কোনো দেশ এর ‘এক বা একাধিক অনুচ্ছেদ মেনে চলবে না’ বলেও তাদের সিদ্ধান্ত জাতিসংঘকে জানাতে পারে। গুম কনভেনশন কী

পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন জানান, সারাবিশ্বে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য জাতিসংঘের ৯টি কনভেনশন আছে। এর মধ্যে আটটি কনভেনশনেই পক্ষভুক্ত হয়েছে বাংলাদেশ। বাকি গুম-বিষয়ক কনভেনশনেও যুক্ত হলো বৃহস্পতিবার।

সারাবিশ্বে রাজনৈতিক অস্থিরতার সময় বা অন্য ক্ষেত্রে গুমের সংখ্যা অত্যধিক বেড়ে যাওয়ার কারণে এই কনভেনশনটি আনা হয়। গুম বন্ধ, এই অপরাধের জন্য দায়মুক্তি প্রতিরোধ এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা ও ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের সহায়তা দেওয়ার জন্য সামষ্টিক প্রচেষ্টাই হচ্ছে এই কনভেনশনের উদ্দেশ্য।

দক্ষিণ এশিয়ায় শ্রীলংকা ও মালদ্বীপ এই কনভেনশনে অনুস্বাক্ষর করেছে; অর্থাৎ এটি তাদের অভ্যন্তরীণ আইনের অংশ হিসেবে গ্রহণ করেছে। এ ছাড়া ভারত শুধু এটি সই করেছে এবং তাদের অনুস্বাক্ষর করা বাকি আছে। অন্যদিকে জাতিসংঘের পঞ্চশক্তির মধ্যে শুধু ফ্রান্স এটিকে অনুস্বাক্ষর করেছে।

এই কনভেনশনে গুমকে মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে। এই কনভেনশনটি সঠিকভাবে ব্যবহার হচ্ছে কিনা, এটি দেখার জন্য জাতিসংঘের একটি কমিটি কাজ করে এবং এর সদস্য সংখ্যা ১০।

ওই কমিটি পক্ষভুক্ত রাষ্ট্রের বিভিন্ন রিপোর্ট পরীক্ষা করবে। কনভেনশনটির ৩৩ অনুচ্ছেদে বলা আছে, যে পক্ষভুক্ত কোনো দেশে যদি নিয়মতান্ত্রিকভাবে গুমের ঘটনা ঘটে, তবে ওই দেশের পরিস্থিতি দেখার জন্য কমিটির সদস্যরা সফরও করতে পারে। যদিও পক্ষভুক্ত অনেক দেশ এই অনুচ্ছেদটির শর্ত মেনে নেয়নি।

ন্যায়বিচার পাবেন ভুক্তভোগী ব্যক্তিরা

তৈরি হবে নতুন আইন
এই কনভেনশনে পক্ষভুক্ত হওয়ায় একদিকে যেমন ক্ষতিগ্রস্ত বা ভুক্তভোগী ব্যক্তিরা ন্যায়বিচার পাবেন ও তাদের মানবাধিকার রক্ষা করা যাবে। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বৃদ্ধি পাবে।

‘এটি বাংলাদেশের মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার প্রেক্ষাপটে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। রাষ্ট্র কর্তৃক অত্যাচার থেকে ব্যক্তিকে রক্ষা করতে এই কনভেনশন বিশেষ ভূমিকা রাখবে। রাষ্ট্রের নির্যাতনমূলক হয়রানি থেকে ব্যক্তিকে রক্ষা করার জন্য এই দলিলের উদ্ভব হয়েছে’, বলে উল্লেখ করেন সাবেক পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক।

গুম বিষয়ক কনভেনশনে পক্ষভুক্ত হওয়ার এখন নতুন আইন তৈরি করতে হবে বলেও জানান তিনি।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, আন্তর্জাতিক এই কনভেনশনে বাংলাদেশ পক্ষভুক্ত হওয়ার এর মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় গুমের জন্য সরকার বা এর কোনো প্রতিষ্ঠানকে জবাবদিহির আওতায় আনার বিষয়ে ভূমিকা রাখবে জাতিসংঘ।

মানবাধিকার কর্মীরা বলেছেন, আজ ৩০ আগস্ট ‘গুমের শিকার ব্যক্তিদের স্মরণে আন্তর্জাতিক দিবস’। এই দিনকে সামনে রেখে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সনদে স্বাক্ষর করেছে। এখন আর গুমের অভিযোগের দায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এড়াতে পারবে না। যারা এ ধরনের অপরাধের সঙ্গে যুক্ত তাদের চিহ্নিত করে বিচারের মুখোমুখি দাঁড় করাতে পারলে দৃষ্টান্ত তৈরি হবে। বাংলাদেশে ভবিষ্যতে এ ধরনের অপরাধ করার দুঃসাহস করবে না কেউ।’

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

আপডেট সময় ০৯:১৫:৫৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩০ অগাস্ট ২০২৪
৯ বার পড়া হয়েছে

১৫ বছরে দেশে ৭০০ মানুষ গুমের শিকার

আপডেট সময় ০৯:১৫:৫৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩০ অগাস্ট ২০২৪

দেশে আওয়ামী লীগের ১৫ বছরের শাসনামলে ৭শ’ মানুষ গুমের শিকার হয়েছেন বলে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) একটি ফেসবুক পেজে দাবি করা হয়েছে।

তবে মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) তথ্য বলেছে, এ সময় দেশে গুমের শিকার হয়েছেন ৬১১ জন। অধিকার বলছে, ৬৭৭ জন গুমের শিকার হয়েছেন, এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশনের ২০২৩ সালের প্রতিবেদন মতে, গত ১৩ বছরে গুমের শিকার হয়েছেন ৬২৩ জন।

এদিকে গুমের শিকার হওয়া ভুক্তভোগীদের সংগঠন ‘মায়ের ডাক’-এর পক্ষ থেকে প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তরের (ডিজিএফআই) মহাপরিচালকের কাছে সম্প্রতি বিভিন্ন সময় গুমের শিকার ১৫৮ ব্যক্তির একটি তালিকা দেওয়া হয়েছে।

জানা যায়, গুম হওয়া মানুষের একটি বড় অংশই আর ফিরে আসেননি। আবার দীর্ঘদিন অজ্ঞাত স্থানে থাকার পর যারা ফিরে এসেছেন, তারাও এ নিয়ে ‘টু’ শব্দটি করেননি। তবে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর বদলে গেছে প্রেক্ষাপট। গুমের শিকার হওয়া ব্যক্তিদের কেউ কেউ কথাকথিত ‘আয়না ঘর’ থেকে ফিরে এসে তাদের ওপর নৃশংস নির্যাতনের কথা তুলে ধরেছেন। গুমের শিকার ব্যক্তিদের সন্ধানে দেশের অন্তর্র্বর্তী সরকার সম্প্রতি পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিশন গঠন করেছে। এ ছাড়া গতকাল বৃহস্পতিবার অনুস্বাক্ষর করেছে আন্তর্জাতিক ‘কনভেনশন ফর প্রটেকশন অব অল পারসন্স অ্যাগেইনস্ট এনফোর্সড ডিসঅ্যাপিয়্যারেন্স’ সনদে। দেশের এমন প্রেক্ষাপটে আজ বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও পালিত হচ্ছে গুমের শিকার ব্যক্তিদের স্মরণে আন্তর্জাতিক ‘গুম প্রতিরোধ দিবস’।

গুমের অভিযোগ শুধু বাংলাদেশেই নয়, এ সমস্যা বিশ্বের বিভিন্ন দেশেও রয়েছে। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের তথ্যমতে, লাতিন আমেরিকার দেশগুলোয় ১৯৭০ ও ৮০-র দশকে কেবল অবৈধ অস্ত্র কারবারি ও ভিন্ন মতাবলম্বীরাই গুম হতেন। কিন্তু বর্তমানে নৃ-তাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী, মাদক কারবারি ও মানব পাচারকারীরাও গুমের শিকার হচ্ছেন। আর বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোয় রাজনৈতিক মত দমনে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় প্রতিনিয়ত গুমের ঘটনা ঘটছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

দেশে গুম-অপহরণ নিয়ে কাজ করা দেশি-বিদেশি বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন, রাজনৈতিক দল ও ভুক্তভোগী পরিবারের দেওয়া গুম হওয়া ব্যক্তিদের সংখ্যার তথ্যে কিছুটা গরমিল থাকলেও গত ১৫ বছরে প্রায় ৭শ’ মানুষ গুমের তথ্য পাওয়া গেছে। এ পরিস্থিতি অত্যন্ত উদ্বেগের বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।

মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) তথ্য বলেছে, গত ১৫ বছরে (২০০৯-২০২৩) দেশে গুমের শিকার হয়েছেন ৬১১ জন। এর মধ্যে ৭৮ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। অপহরণের পর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে ৬২ জনকে। ৭৩ জনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। এখনো নিখোঁজ ৩৮৩ জন। ২০১৬ সালে সবচেয়ে বেশি ৯৭ জন গুম হন।

পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০০৯ সালে ৩ জন, ২০১০ সালে ৪৭ জন, ২০১১ সালে ৫৯ জন, ২০১২ সালে ৫৬ জন, ২০১৩ সালে ৭২ জন, ২০১৪ সালে ৮৮ জন, ২০১৫ সালে ৫৫ জন, ২০১৬ সালে ৯৭ জন, ২০১৭ সালে ৬০ জন, ২০১৮ সালে ৩৪ জন, ২০১৯ সালে ১৩ জন, ২০২০ সালে ৬ জন, ২০২১ সালে ৭ জন, ২০২২ সালে ৫ জন ও ২০২৩ সালে ৯ জন গুমের শিকার হন। সংস্থাটির জ্যেষ্ঠ সমন্বয়ক আবু আহমেদ ফয়জুল কবির (ফরিদ) বলেন, ‘২০০৯ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত গণমাধ্যম ও নিজস্ব অনুসন্ধানের মাধ্যমে আমরা ৬১১ জনের গুমের বিষয়ে তথ্য পেয়েছি। গুমের পর কিছু মানুষ ফিরে এসেছেন, কাউকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। আবার অনেকের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে ৩৮৩ জন এখনো নিখোঁজ। নিখোঁজের অর্থ হচ্ছে তারা ফিরে আসেননি কিংবা ফিরে এলেও আমাদের কাছে তার তথ্য নেই।’

মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের তথ্য বলছে, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের ২০০৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ৬৭৭ জন গুমের শিকার হন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৯৮ জন গুমের শিকার হন ২০১৮ সালে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বছর। এ ছাড়া ২০০৯ সালে তিনজন, ২০১০ সালে ১৯, ২০১১ সালে ৩২, ২০১২ সালে ২৬, ২০১৩ সালে ৫৪, ২০১৪ সালে ৩৯, ২০১৫ সালে ৬৭, ২০১৬ সালে ৯০, ২০১৭ সালে ৮৮, ২০১৯ সালে ৩৪, ২০২০ সালে ৩১, ২০২১ সালে ২৩, ২০২২ সালে ২১ ও ২০২৩ সালে ৫২ জন গুমের শিকার হন।

হংকংভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশনের (এএইচআরসি) হিসাবে ২০২৩ সালের এক প্রতিবেদনে জানা যায়, গত ১৩ বছরে গুমের শিকার ৬২৩ জন। সংস্থাটি বলছে, তাদের মধ্যে ৮৪ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। জীবিত অবস্থায় ফিরে এসেছেন বা পরবর্তী সময়ে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে ৩৮৩ জনকে। আর তিনজনের বিষয়ে কোনো তথ্য জানা যায়নি। এখনো নিখোঁজ রয়েছেন ১৫৩ ব্যক্তি।

এ ছাড়া ১৮ আগস্ট প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তরের (ডিজিএফআই) মহাপরিচালকের কাছে বিভিন্ন সময় গুমের শিকার ১৫৮ ব্যক্তির একটি তালিকা দিয়েছে ভুক্তভোগীদের সংগঠন ‘মায়ের ডাক’।

সংগঠনের সমন্বয়কারী সানজিদা ইসলাম বলেন, ‘রাজনৈতিক কারণে ২০১৩ সাল থেকে শুরু করে চলতি বছরের ৫ আগস্ট পর্যন্ত যত ব্যক্তিকে গুম ও খুন করা হয়েছে, তা তদন্ত করতে হবে। এসব ঘটনার সঙ্গে ডিজিএফআই, র‌্যাব, পুলিশ, ডিবিসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর যেসব কর্মকর্তা জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে।’

মানবাধিকার কমিশনের মতে, গুম একটি অপরাধ এবং তা মানবাধিকার লঙ্ঘন। যদিও বিশ্বজুড়ে মানুষকে গুম করার ক্ষেত্রে এটি একটি চর্চা হিসেবে ছড়িয়ে পড়েছে। প্রথমদিকে যুদ্ধের সময় শত্রুর মৃতদেহ স্বদেশে পাঠানো এড়াতে কর্তৃত্ববাদী শাসনের একটি নিকৃষ্ট কৌশল হিসেবে (১৯৭০ এর দশকে ল্যাটিন আমেরিকা জুড়ে যেমনটা আমরা ঘটতে দেখি), অথবা গৃহযুদ্ধের সময় শত্রু হিসেবে বিবেচিত ব্যক্তিদের সন্ত্রাসীর তকমা দিতে (স্পেন, বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা, রুয়ান্ডা, সিরিয়া এবং ইরাকে যার সবচেয়ে পরিচিত উদাহরণ রয়েছে) জোরপূর্বক গুম করা হতো। পরে সংঘটিত অপরাধ চক্রের মাধ্যমে এ ধরনের অনুশীলন আরও বেশি শাণিত ও প্রসারিত হয়েছে। এটি অত্যন্ত উদ্বেগের।

এমন প্রেক্ষাপটে ২০০৬ সালের ২০ ডিসেম্বর গুম হওয়া সব ব্যক্তির জন্য আন্তর্জাতিক সনদ হিসেবে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে গৃহীত হয়। ২০১০ সালের ডিসেম্বরে ‘ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন ফর প্রটেকশন অব অল পারসন্স অ্যাগেইনস্ট এনফোর্সড ডিসঅ্যাপিয়্যারেন্স’ সম্মেলনে যে আন্তর্জাতিক সনদ কার্যকর হয় তাতে ৩০ আগস্টকে আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ দিবস ঘোষণা করা হয়। ২০১১ সাল থেকে প্রতি বছর ৩০ আগস্ট গুম হওয়া মানুষগুলোকে স্মরণ এবং সেই সঙ্গে তাদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানানোর জন্য দিবসটি পালন করা হচ্ছে বিশ্বব্যাপী। আর গুমের শিকার হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে রাজনৈতিক নেতাকর্মীর পাশাপাশি আছেন সাধারণ লোকজনও। বাংলাদেশেও দিবসটি পালিত হয়ে আসছে।

গুম-বিষয়ক আন্তর্জাতিক কনভেনশনে বাংলাদেশ এদিকে, ‘ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন ফর দ্য প্রটেকশন অব অল পারসন্স ফ্রম এনফোর্সড ডিসেপিয়ারেন্স’-এ বাংলাদেশের পক্ষভুক্ত হওয়ার প্রস্তাব অনুমোদন করেছে অন্তর্র্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ। বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন ও প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় যমুনায় উপদেষ্টামণ্ডলীর সভা চলাকালে কনভেনশনে সই করেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই চুক্তিতে বাংলাদেশের সইয়ের উদ্যোগটি নেয়।

সংশ্লিষ্টরা জানান, বর্তমান অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকারের অগ্রাধিকারমূলক বিষয়ের অন্যতম হলো প্রত্যেক নাগরিকের মানবাধিকার নিশ্চিত করা ও এর পরিপ্রেক্ষিত প্রয়োজনীয় প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার করা। এ লক্ষ্যে অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকার অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ‘ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন ফর দ্য প্রটেকশন অব অল পারসন্স ফ্রম এনফোর্সড ডিসেপিয়ারেন্স’ (আইসিপিপিইডি) শীর্ষক আন্তর্জাতিক কনভেনশনে বাংলাদেশের পক্ষভুক্ত হওয়ার বিষয়ে কার্যক্রম গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয়। এটি জাতিসংঘের আওতাধীন একমাত্র আন্তর্জাতিক কনভেনশন, যা বলপূর্বক গুমকে কেন্দ্র করে গৃহীত হয়েছে। যার লক্ষ্য হলো জোরপূর্বক অন্তর্ধান বা গুম প্রতিরোধ করা, ভুক্তভোগীদের জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা এবং এই গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বৃদ্ধি করা। এখন পর্যন্ত বিশ্বের ৭৫টি দেশ এই সনদে যুক্ত হয়েছে।

এ বিষয়ে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ‘ওই কনভেনশনে মোট ৪৫টি অনুচ্ছেদ আছে এবং পক্ষভুক্ত যে কোনো দেশ এর ‘এক বা একাধিক অনুচ্ছেদ মেনে চলবে না’ বলেও তাদের সিদ্ধান্ত জাতিসংঘকে জানাতে পারে। গুম কনভেনশন কী

পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন জানান, সারাবিশ্বে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য জাতিসংঘের ৯টি কনভেনশন আছে। এর মধ্যে আটটি কনভেনশনেই পক্ষভুক্ত হয়েছে বাংলাদেশ। বাকি গুম-বিষয়ক কনভেনশনেও যুক্ত হলো বৃহস্পতিবার।

সারাবিশ্বে রাজনৈতিক অস্থিরতার সময় বা অন্য ক্ষেত্রে গুমের সংখ্যা অত্যধিক বেড়ে যাওয়ার কারণে এই কনভেনশনটি আনা হয়। গুম বন্ধ, এই অপরাধের জন্য দায়মুক্তি প্রতিরোধ এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা ও ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের সহায়তা দেওয়ার জন্য সামষ্টিক প্রচেষ্টাই হচ্ছে এই কনভেনশনের উদ্দেশ্য।

দক্ষিণ এশিয়ায় শ্রীলংকা ও মালদ্বীপ এই কনভেনশনে অনুস্বাক্ষর করেছে; অর্থাৎ এটি তাদের অভ্যন্তরীণ আইনের অংশ হিসেবে গ্রহণ করেছে। এ ছাড়া ভারত শুধু এটি সই করেছে এবং তাদের অনুস্বাক্ষর করা বাকি আছে। অন্যদিকে জাতিসংঘের পঞ্চশক্তির মধ্যে শুধু ফ্রান্স এটিকে অনুস্বাক্ষর করেছে।

এই কনভেনশনে গুমকে মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে। এই কনভেনশনটি সঠিকভাবে ব্যবহার হচ্ছে কিনা, এটি দেখার জন্য জাতিসংঘের একটি কমিটি কাজ করে এবং এর সদস্য সংখ্যা ১০।

ওই কমিটি পক্ষভুক্ত রাষ্ট্রের বিভিন্ন রিপোর্ট পরীক্ষা করবে। কনভেনশনটির ৩৩ অনুচ্ছেদে বলা আছে, যে পক্ষভুক্ত কোনো দেশে যদি নিয়মতান্ত্রিকভাবে গুমের ঘটনা ঘটে, তবে ওই দেশের পরিস্থিতি দেখার জন্য কমিটির সদস্যরা সফরও করতে পারে। যদিও পক্ষভুক্ত অনেক দেশ এই অনুচ্ছেদটির শর্ত মেনে নেয়নি।

ন্যায়বিচার পাবেন ভুক্তভোগী ব্যক্তিরা

তৈরি হবে নতুন আইন
এই কনভেনশনে পক্ষভুক্ত হওয়ায় একদিকে যেমন ক্ষতিগ্রস্ত বা ভুক্তভোগী ব্যক্তিরা ন্যায়বিচার পাবেন ও তাদের মানবাধিকার রক্ষা করা যাবে। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বৃদ্ধি পাবে।

‘এটি বাংলাদেশের মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার প্রেক্ষাপটে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। রাষ্ট্র কর্তৃক অত্যাচার থেকে ব্যক্তিকে রক্ষা করতে এই কনভেনশন বিশেষ ভূমিকা রাখবে। রাষ্ট্রের নির্যাতনমূলক হয়রানি থেকে ব্যক্তিকে রক্ষা করার জন্য এই দলিলের উদ্ভব হয়েছে’, বলে উল্লেখ করেন সাবেক পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক।

গুম বিষয়ক কনভেনশনে পক্ষভুক্ত হওয়ার এখন নতুন আইন তৈরি করতে হবে বলেও জানান তিনি।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, আন্তর্জাতিক এই কনভেনশনে বাংলাদেশ পক্ষভুক্ত হওয়ার এর মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় গুমের জন্য সরকার বা এর কোনো প্রতিষ্ঠানকে জবাবদিহির আওতায় আনার বিষয়ে ভূমিকা রাখবে জাতিসংঘ।

মানবাধিকার কর্মীরা বলেছেন, আজ ৩০ আগস্ট ‘গুমের শিকার ব্যক্তিদের স্মরণে আন্তর্জাতিক দিবস’। এই দিনকে সামনে রেখে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সনদে স্বাক্ষর করেছে। এখন আর গুমের অভিযোগের দায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এড়াতে পারবে না। যারা এ ধরনের অপরাধের সঙ্গে যুক্ত তাদের চিহ্নিত করে বিচারের মুখোমুখি দাঁড় করাতে পারলে দৃষ্টান্ত তৈরি হবে। বাংলাদেশে ভবিষ্যতে এ ধরনের অপরাধ করার দুঃসাহস করবে না কেউ।’